![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এবার পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন সিলেট নগরবাসী। সকল শংকা, আশংকা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পেছনে ফেলে অভূতপূর্ব রায় দিয়েছেন নগরবাসী। তাদের রায়ে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৩শ ৩০ ভোট পেয়ে সিলেটের নতুন নগরপিতা নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। টানা দুইবারের মেয়র ও দুইবারের পৌর চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে রেকর্ড ৩৫ হাজার ১শ ৫৭ ভোটে পরাজিত করে নগরীর প্রধান চেয়ারের মালিক হয়েছেন তিনি। তার এ জয়ের ফলে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর নতুন অধিপতির সন্ধান পেলো সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
দিনভর ভোটগ্রহণ ও দীর্ঘ গণনা শেষে রাত পৌনে ১২টায় আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার এসএম এজহারুল হক। ঘোষিত ফলাফলে আরিফুল হক চৌধুরী ‘টেলিভিশন’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ লক্ষ ৭ হাজার ৩শ ৩০ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ১শ ৭৩ ভোট। এছাড়া অপর প্রার্থী সালাউদ্দিন রিমন তালা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ২২ ভোট।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, আরিফুল হক চৌধুরী ভোট পেয়েছেন শতকরা ৫২ দশমিক ৪৫ ভাগ। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন শতকরা ৩১ দশমিক ৯৮ ভাগ। সর্বমোট ১শ ২৮টি কেন্দ্রে সর্বমোট ভোট কাস্ট হয়েছে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬শ ৬৩ ভোট। এর মধ্যে ৩ হাজার ১শ ৩৮টি ভোট বাতিল হয়েছে। ফলে সর্বমোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫শ ২৫ ভোট বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। ভোট কাস্টের শতকরা হার ৬২ দশমিক ৬ ভাগ। ফলাফলে দেখা গেছে, ১শ ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২১টি কেন্দ্রে আরিফের চেয়ে এগিয়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। আর বাকী ১শ ৭টিতেই এগিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী। স্বয়ং নিজ ভোট কেন্দ্রেও হেরেছেন কামরান। তিনি নিজ কেন্দ্র সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সকালে ভোট দেন। কিন্তু ঘরের কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ৬শ ৮৭ ভোট। এর বিপরীতে আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৮শ ২৩ ভোট।
অপরদিকে, আরিফুল হক চৌধুরী তার নিজ কেন্দ্র রায়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৩শ ৮ ভোট। এর বিপরীতে কামরান পেয়েছেন মাত্র ৪শ ৯৭ ভোট। গতকাল সকালে আরিফ তার ঘরের কেন্দ্রে ভোট দেন। ফলাফল ঘোষণার আগে শনিবার দিনভর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোট দেন ভোটাররা। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নগরীতে ভোটগ্রহণ হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। পুরুষ ভোটারের পাশাপাশি নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। মধ্য দুপুরে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও সকালে ও শেষ বেলায় ভোটারদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে সকলের। সিলেটের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৯১ হাজার ৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ১শ ৮১ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮শ ৬৫ জন। তবে মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার জনই ভোট প্রদান করেননি। এদিকে, ভোট গ্রহণ শেষে বিকাল ৫টা থেকেই স্ব স্ব কেন্দ্রে ফলাফল গণনা শুরু হয়। কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা শেষে একে একে তা চলে যায় আলমপুরস্থ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। সেখানে ফলাফল যাওয়া মাত্রই সন্ধ্যা ৬টা থেকেই মেয়রদের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ক্রমান্বয়ে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত ১শ ২৮টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। এর আগে ১শ ২৬টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয় ১১টার মধ্যেই। বাকী ২টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করতে সময় নেয়া হয় প্রায় ৪৫ মিনিট। এক পর্যায়ে হলের মধ্যে হৈ চৈ শুরু হলে ১১টা ৪৪ মিনিটে বাকী ২টির ফল ঘোষণা করা হয়। সবকটি কেন্দ্র শেষে রিটার্নিং অফিসার মাইকে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, আরিফুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে রোববার ২টায়। এ ঘোষণার সাথে সাথে সামনের সারিতে বসা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মহানগর সভাপতি এম এ হক, সাবেক এমপি নাসের রহমান, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলনসহ নেতারা চেয়ার থেকে উঠে এর প্রতিবাদ করেন। শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। এসময় সবাই হাততালী দিয়ে হল ত্যাগ করেন। বিজয়ী ঘোষণার বিরল এ দৃশ্য ধারণ করতে এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রায় শতাধিক মিডিয়া কর্মী। তবে বিজয়ী ঘোষণা করলেও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয় মিছিলের বিরুদ্ধে কঠোর আচরণবিধির কথা স্মরণ করিয়ে দেন রিটার্নিং অফিসার।
©somewhere in net ltd.