নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও অনেক কিছু করার সাধ জাগে..............
আমাদের ছোট ভাইটা যখন পৃথিবীতে এলো আমরা যার পর নাই খুশী হলাম। সে দেখতে হয়েছে একেবারে ইংরেজদের বাচ্চার মত সাদা ও সুন্দর। আরেকটু বড় হলে দেখলাম তার চুলগুলোও ইংরেজদের মত লাল রঙের।
তার নাম যখন রাখা হলো তখন আমরা ও আমাদের সমসমায়কি ছেলে মেয়েরা বেশ টাসকী খেলাম। আমাদের নামের তুলনায় তার নাম ছিল বেশ আধুনীক। দ্বীল মোহাম্মদ নাম রাখা হলেও সহজে সবাই দ্বীল নামেই ডাকা শুরু করল। ৯০ এর দশকের শুরুতে এই নাম আধুনিক বলেই গন্য হল।
সে যখন হাটতে শিখলো তখন তাকে একজায়গায় স্থির রাখাটা বেশ মুশকিল হলো। একবার বৃষ্টির দিনে সুযোগ পেয়ে সে ঘর থেকে বেরুতে চাইলে ঘটল বিপত্তি। যেইনা দরজা থেকে পা বাহিরে বারিয়েছে তমনি পিছল খেয়ে গড়িয়ে উঠানে পড়ল। একপাশে খুটিতে লেগে তার সদ্য গজানো দাত পড়ে গেল। তার কান্না শুনে আম্মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দারুণ বকা-ঝকা করতে লাগলেন।
এই ঘটনার বছর দুয়েক পর ঘটল এক অবাক করা ঘটনা। ভরা বর্ষার দিনে নৌকা নিয়ে মেহমান এলো বেড়াতে আমাদের বাড়িতে। বাড়ির সবাই মেহমানদারীতে ব্যস্ত। এই বৃষ্টি এই রোদ ছিল সেদিন। সকলের অগোচরে দ্বীল চলে গেছে ঘাটে যেখানে দুটি নৌকা বাধা আছে। অনেকক্ষণ পর আমি কি মনে করে যেন ঘাটে গেলাম হয়তো নৌকা দেখার জন্য। কিন্তু ঘাটে গিয়ে যা দেখলাম তা সারা জীবনের জন্য স্মৃতি হয়ে রইল। দেখলাম আমার ছোট সোনা মানিক ভাইটি দুই হাত দুই নৌকায় আকড়ে ধরে আছে আর তার বুক পর্যন্ত খালের পানি থৈ থৈ করছে। হাত ছেড়ে দিলেই খালের পানিতে তার সলিল সমাধী ঘটবে। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঘাট বৃষ্টির পানিতে পিছল হয়ে আছে বিধায় আমার একার পক্ষে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব ছিলনা।
নিরুপায় হয়ে আশা নিয়ে বাড়ির দিকে তাকালাম। যদি কাউকে দেখা যায় তবে সাহায্যের জন্য ডাকবো। আল্লার অশেষ রহমত আমি দেখতে পেলাম আমার দাদী ঘর থেকে বেরুচ্ছে, তখন বিকট চিৎকার করে বলে উঠলাম-”দাদীগো দ্বীলে খালের পানিতে পড়ে গেছে”
আমার কথা শুনে দাদী হাহাকার করে ছুটে আসলেন। দাদীর বয়স হলেও তখনও শক্ত সামর্থ ছিলেন। তিনি এসে চিৎকার জুড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন- হায়! হায়! আমার নাতী মইরা যায়গো, আমর নাতী মইরা যায়। তিনি দ্রুত এক নৌকায় চড়ে হাত দিয়ে ওকে ধরে ফেললেন। আর আমারক অন্য নৌকাটি শক্ত করে ধরে রাখতে বললেন। ওকে তুলে কোলে নিয়ে শাড়ীর আচল দিয়ে মুছে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন।
ততক্ষণে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। একেক জন একেক কথা বলতে লাগলেন। একজন বলল-এত ছোট বাচ্চা কি করে এতক্ষণ দুই নৌকা ধরে ঝুলে থাকলো, নিশ্চয় আল্লাহ ফেরেশতা দিয়ে ওকে রক্ষা করেছেন। অন্যজন বলল- ওর মাথায় এই বুদ্ধি কি করে এলো যে নৌকা ধরে ঝুলে থাকলে বেঁচে থাকা যাবে। অপর জন-বলল-মাসুম বাচ্চা বইলাই আল্লায় বাঁচাইছে। ইতিমধ্যে মা অশ্রু বিসর্জন বন্ধ করে তার বুকের ধনকে বুকে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। পরে মেহমান বিদায় হওয়ার পর আমাদের শাসালেন কেন আমারা ওকে চোখে চোখে রাখিনি। আজও মনে পড়লে শরীরের পশম দাড়িয়ে যায়।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ধেয়ে আসে আরেক বিপদ। গ্রামে বাড়িতে তখন মাটির চুলায় রান্না করলে প্রচুর ছাই জমা হতো। এভাবে ছাই জমা হয়ে চুলা ভরে গেলে ছাইগুলো বাড়ি থেকে একটু দূরে স্তূপ আকারে রাখা হতো। তো একদিন দুপুরে মা রান্নার পর যখন গরম ছাইগুলো সেই স্তূপে ফেলে পুকুর পাড়ের দিকে যাচ্ছে তখন দ্বীলও তার পিছু পিছু গিয়েছে কিন্তু কোন শব্দ না করায় মা বুঝতে পারেনি। সে ছাইয়ের স্তুূপে পা দিয়ে দারিয়ে আছে এবং গরমে তার পা পুড়ে যাচ্ছে সে কান্না শুরু করলে আমি দূর থেকে দেখতে পেয়ে দ্রুত এসে তাকে সেখান থেকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসি। ততক্ষণে তার পা পুড়ে প্রায় কালো হয়ে গেছে। মা কে জানালে তিনি হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে এসে ওর পায়ে পানি ঢেলে তারপর ঘরে নিয়ে ডিম ভেঙ্গে প্রলেপ দিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে দ্রুত ডাক্তরের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসার পর ডাক্তার বলেন একটা ভাল বিদেশী ক্রিম আছে ওটা ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি ক্ষত ভাল হবে। পরে কার মাধ্যমে যেন তা বিদেশ থেকে আনিয়ে ব্যবহার করা হয়। প্রায় ২ মাস পর্যন্ত সে হাটতে পারেনি। এখনও অল্প অল্প বুঝা যায় সেই আগুনে পোড়ার দাগ।
আমার সেই ছোট্ট ভাইটি অনেক বড় হয়ে গেছে সে হাফেজ হওয়ার পর এবার দাওড়া শেষ করেছে এবং মুফতি হওয়ার জন্য পড়ছে
ছবিঃ দ্বীলের অবয়ব।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
পূর্বদিকের অংশ ভরাট হয়ে গেলেও বাড়ির পিছনে খাল এখিনও আছে।
২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে, প্রতিটা মানুষকে পৃথক পৃথক ভাবে জানতে হয়—মোটাদাগে ভাগ করে নিলে মানুষকে জানার কাজটা সহজ হয়তো হয়ে যায়—সে জ্ঞান সবসময় কাজে আসে না, আর সঙ্কটকালে সে জ্ঞান কোনো কাজেই আসে না।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দারুন একখান কথা কইছেন।
অবশ্যই ধন্যবাদ গ্রহণ করুন।
৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭
:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগল।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অনুপ্রাণিত।
৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫০
সিগন্যাস বলেছেন: আহা মাইদুল ভাই আপনার স্মৃতিকথা পড়ে দারুণ ভালোলাগায় মন ভরে গেলো । মাঝে মাঝে এমন সব পোষ্ট করা দরকার । আমার ছোটবেলাও গ্রামে কেটেছে । আহ কি দিনছিলো
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: আমার মনে হয় যাদের ছেলেবেলা গ্রামে কেটেছে তাদের ভাগ্য ভাল। তারা অনেক সুখের ও সুন্দর দিনের দেখা পেয়েছে।
ধন্যবাদ।
৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
পল্লী স্মৃতি তুলে ধরেছেন। বেশ ভাল লাগলো। শৈশবের কত স্মৃতি যে মনের গহীনে উঁকি দিয়ে যায়, তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে! আহা, সেই দিনগুলো কতই না মধুময় ছিল! পোস্টে লাইক।
১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আসলেই ভাই সবার শৈশবই রঙিন।
মন্তব্যে ও লাইকে ধন্যবাদ।
৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৯
লায়নহার্ট বলেছেন: {যাক}
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
যাক বাঁচা গেল।
৭| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭
চঞ্চল হরিণী বলেছেন: ভাইয়ের প্রতি আপনার স্নেহ মমতা ফুটে উঠেছে। আপনার স্মৃতিচারণ পড়তে পড়তে প্রায় কাছাকাছি আমারও কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আপনার ও আপনার ভাইয়ের জন্য শুভকামনা মাইদুল ভাই। ভালো থাকুন আপনারা।
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনার স্মৃতিকথাও চানতে চাই। সময় করে পোস্ট দিয়েন।
পাঠ ও মন্তব্যে ধন্যবাদ।
৮| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:২৫
করুণাধারা বলেছেন: পড়তে ভালই লাগলো ভাইকে নিয়ে আপনার স্মৃতিকথা। শুভকামনা রইল, আপনি এবং আপনার ভাই দুজনেই ভালো থাকুন।
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ আপু।
ভাল থাকুন।
৯| ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৫৮
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আমাদের দ্বীল ভাইয়ার জন্য শুভকামনা।।
ভালো থাকবেন প্রিয় মাইদুল ভাই।
২২ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ মন্ডল ভাই।
সুন্দর নিক নিয়ে ফিরে আসুন।
দারুন ব্লগিং হোক।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে খাল এখনো আছে?