নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কেবলই ফুরিয়ে যায়।

মোঃ মাইদুল সরকার

একদিন জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও অনেক কিছু করার সাধ জাগে..............

মোঃ মাইদুল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প- শোধ-প্রতিশোধ

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫০



এবারের ডিসেম্বরের মত ১৯৭১ সালেও ডিসেম্বর এসেছিল। কিন্তু সেই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছে। শীত ছল, শিশির ছিল আর ছিল যুদ্ধ। খাকি পোশাকের পাকি হানাদারদের পরাজীত করে পৃথিবীর বুকে নতুন এক মানচিত্র একে দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা, মায়েরা, বাবারা, মেয়েরা।

শির দিয়েছে দেয়নি আমামা। এমন হিম্মত বাঙালির ছিল বুঝতে পারেনি পাকিস্তানীরা। পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে মুক্তির স্বাদে রাঙিয়ে দিয়েছে বাংলার আকাশ -বাতাস। ডিসেম্বরের সেই বিজয়ের উল্লাশে মেতে উঠেছিল কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মানুষেরাও। যুদ্ধ জয় শেষে নতুন মনোবলে আহত, পঙ্গু, অর্ধ পঙ্গু ও বীর সেনারা ফিরতে শুরু করে যার যার আবাসভূমে। স্বজনদের ফিরে পেয়ে যেমন খুশীর ঢেউ উঠে বুকে তেমনি অনেকের চিরবিদায়ে এক অন্ধকার শোকার্ত রাত যেন ঘিরে ধরে তাদের আর থেকে থেকে বুকের ভিতর শেল সম আঘাত হানে।

ঝড়ের পর বিহঙ্গ যেমন আবার নতুন করে বাঁচার আশায় ঘর বাঁধে তেমনি যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত দেশ ও জাতি আবার ঘুড়ে দাড়াতে শুরু করে। শুরু হয় নতুন পথ চলা। এমনি এক সময়ে শোনা গেল মাথা ভাঙ্গা গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার ফিরে এসেছে। যুদ্ধের পর সে আত্মগোপনে ছিল। এখন সব স্বাভাবিক হয়ে এসেছে দেখে -সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে গ্রামে এসে হাজির হয়েছে। প্রথমে ভয়ে ঘর থেকে বের হতোনা। রাতের বেলা বের হয়ে কাছের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করতো।

কিন্তু এ খবর রাষ্ট্র হতে দেরি হলনা। যারা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছে তাদের মাথায় যেন আগুন ধরে গেল, রক্তে যেন খুনের নেশা চাপল। গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফিরতে লাগলো তার কু-কীর্তির কথা। মুক্তি যোদ্ধাদের অবস্থান পাকিদের জানিয়ে দেওয়া, নারী নির্যাতনে সহায়তা, লুন্ঠন, গবাদি পশু অবহরণ, ভয়-ভীতি প্রদর্শন অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ এহেন কোন কাজ নেই সে করেনি। যুদ্ধের পুরোটা সময় সে ভয় আর আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

কেটে গলে কয়েক মাস। শামসু রাজাকার এখন আর নিজেকে রাজাকার মনে করেনা। সেও এখন বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম থেকে গ্রামে। তবুও মানুষ তাকে দেখলে ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। যথা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।

এদিকে তার এই দেশদ্রোহীতার শাস্তি তাকে পেতেই হবে বলে এক মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা দেন। নয়তো শহীদের আত্মা কোন দিন আমাদের ক্ষমা করবেনা বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন। তাকে সমর্থন করে এগিয়ে আসে অন্য সবাই । শুরু হয় দেশ দূষণ মুক্তির প্রস্তুতি।

ঝিঁ ঝিঁ ঢাকা এক গরমের রাতে তার এক সাগরেদকে দিয়ে তাকে গোপনে ডেকে আনা হয় নদীর ধারে। অপেক্ষায় থাকে শামসু রাজাকার কিন্তু কেউ তার সাথে দেখা করতে আসেনা। তাকে কেন ডেকে আনা হয়েছে সে কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখে তার সেই সাগরেদ পলাতক।

-কি শামসু রাজাকার দিনকাল কেমন যাচ্ছে ?

হঠাৎ কারো কন্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে উঠে শমসু। দেখে পাঁচ-সাতজন লোক তার পিছনে দাড়িয়ে। কারো কারো মুখ চাঁদরে ঢাকা। ভীষণ ভয় পায় সে। ঢুক গিলে, চোখ বড় বড় করে এদিক সেদিক তাকায়।

-কি মিয়া কথা কওনা ক্যান । ভয় পাইছো ? ভয়ের কিছু নাই। আজকে তোমারে জামাই আদর করুম।

এ কথা শুনে শামসু ঘামতে থাকে। সে বুঝে যায় আজকে হয়তো তার শেষ দিন। হঠাৎ করেই সে ভয় পাওয়া হরিণের মত দৌড় দেয় আউলা পাথারি নদীর পার ধরে ।

-ধর। ধর শালারে বলে চিৎকার করে উঠে একজন। আর তার পরই অনেকগুলো মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। শামসু বেশি দূর এগোতে পারেনা। ধারালো দায়ের কোপে তার পিঠ ফানা ফানা হয়ে যায়। সে পড়ে যায় মাটিতে। ক্ষমা চায়, বাঁচতে চায়। কিন্তু এক জন প্রচন্ড হুংকারে ‘না’ বলে চিৎকার করে উঠে।

-তোকে ক্ষমা করলে আমারা আমাদের ক্ষমা করতে পারবো না কোন দিন। বাংলার স্বাধীন মাটিতে কোন রাজাকারের ঠাঁই নাই।

মূহুর্তেই একের পর এক ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় শামসু রাজাকার। তার অস্তিত্বের শেষ আর্তনাদ মিলেয়ে যায় রাতের বাতাসে। লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। প্রতিশোধের আগুন নিভে আসে সকলের মনে। আরেকটি অর্জন নিয়ে তার গিরে যায় গাঁয়ে। পিছনে পড়ে থাকে নদীর গর্জন।

ছবি-নিজের তোলা।
তথ্য কৃতজ্ঞতা-জামান।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১০

ডার্ক ম্যান বলেছেন: সব রাজাকারকে এভাবেই মেরে ফেললে ভাল হইত । তাহলে নতুন নতুন রাজাকেরের জন্ম হত না

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে তা সম্ভব হয়নি। মানুষ তার কাজের জন্য হয় দুনিয়াতে নয় আখারাতে জবাব দিহি করবে।

ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যে।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে । যথেষ্ট শিহরিত হলাম । কিন্তু বাস্তবটা ভয়াবহ ; হাড় হিম করা সন্ত্রাস আরকি।


শুভকামনা ও ভালবাসা প্রিয় মাইদুলভাইকে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কোন কোন রাজাকারের ভাগ্যে বাস্তবে এমনটাই ঘটেছিল।

পদাতিকদা আপনার মূল্যায়ন মনে থাকবে। ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

বাংলার মেলা বলেছেন: অন্যায় হল, নিরস্ত্র একজন মানুষকে দা বটি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে। এটাতো মানুষের সমাজ - পশুর নয়।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
পাকিরা যখন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে বধ্যভূমি বানাচ্ছিল তখনও এদেশে মানুষের সমাজই ছিল।

সেই তুলনায় এটা দুধভাত।

ধন্যবাদ।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। গোছানো লেখা।
আমার খালু যুদ্ধের পর-পর এক রাজাকারকে ধরে কলিজা বের করে ফেলেছিলেন। এই গল্প একদিন বিস্তারিত লিখব সামুতে।

ছবিটাতে কোণ নদী?

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই।

আপনার গল্পটা পড়ার আগ্রহ রইল।

ছবিতে কর্ণফুলী নদী দেখতে পাচ্ছেন।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩

নীল আকাশ বলেছেন: ১৯৭১ সালের শেষে সব রাজাকারদের বিচার করলেই আজকে এত ঝামেলা হত না। কিছু মানুষের স্বার্থের জন্যই এই রাজাকাররা পরে দেশে আশ্রয় পায়।
গল্প ভালো হয়েছে।
শুভ কামনা রইল!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আর তখন থেকেই বুঝি এদেশে বিচারহীনতা সংস্কৃতি চালু হয়েছে।

গল্প পাঠে পর মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ গল্পকার।

ভাল থাকুন।

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সুন্দর লেখা.....
কাহিনীটাকে বিস্তারিত লিখতে পারতেন.....

এভাবেই যুগযুগ ধরে পার পেয়ে যায় রাজাকাররা....

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:

বিস্তারিত লেখা যেত কিন্তু এটাকে অনুগল্পই রাখতে চেয়েছি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

কেউ কেউ পার পায় কেউ কেউ ধরা খায়।

৭| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮

নীলপরি বলেছেন: ভালো লিখেছেন । আগে একবার এসেছিলাম । নেট স্লো বলে মন্তব্য করতে পারিনি ।

শুভকামনা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ দিদি।

এই ভাল ভাল নয়, আরও ভালোর চেষ্টা করবো।

ভাল থাকুন।

৮| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

বলেছেন:
দারুণ লেখা!!
এটা তো গেলো ৭১ নব্য রাজাকারদের নিয়ে কিছু লিখতে অনুরোধ রইলো।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাই।

দেখি কিছু করা যায় কিনা।

ভাল থাকুন।

৯| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৯

হাবিব বলেছেন: এখনো পড়িনি.....

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
পড়ে মতামত দিন।

ধন্যবাদ স্যার।

১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৫

আরোগ্য বলেছেন: আসলেই রাজাকার নামটা শুনলেই এক ধরনের ঘৃণার উদ্রেক হয়।
আশা করি আগামী ব্লগ ডেতে ঢাকায় সবাই একত্রিত হবো।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আসলেই রাজাকাররা ঘৃণিত সবসময়।

দেখা যাক ঢাকায় যাওয়া হয় কিনা আগামীবার।

ধন্যবাদ ভাই।

১১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১১

কালীদাস বলেছেন: চমৎকার, সরকার সাহেব :)
আপনার আমার এই স্বপ্ন সত্য হোক, এই কামনায় ....

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ কালীদাসদা ।

অনেক অনেক দিন পর ব্লগে এলেন।

আপনি পোস্ট দিন নতুন কিছু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.