নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কেবলই ফুরিয়ে যায়।

মোঃ মাইদুল সরকার

একদিন জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও অনেক কিছু করার সাধ জাগে..............

মোঃ মাইদুল সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের- ডেথ রেলওয়ে

০৭ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:৫১




জাপানী শিবিরে যুদ্ধবন্দীদের মানবেতর জীবন।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য জাপানীদের হাতে বন্দী হয়েছিল এবং থাইল্যান্ড থেকে বার্মা পর্যন্ত এক রেল লাইন নির্মাণে শ্রম দিতে তাদের বাধ্য করা হয়েছিল।

এই রেলওয়ের নাম দেয়া হয়েছিল 'ডেথ রেলওয়ে' অর্থাৎ মরণ রেলওয়ে, কারণ এটি তৈরি করতে গিয়ে অনাহার, রোগ-বালাই, বৈরি আবহাওয়া আর জাপানী সৈন্যদের নৃশংস আচরণে বহু যুদ্ধবন্দী প্রাণ হারায়।

এমনি একজন ব্রিটিশ যুদ্ধবন্দী ছিলেন সিরিল ডয়। বিবিসির ক্লেয়ার বোওজকে তিনি বলছিলেন যুদ্ধবন্দী হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা।

"সেটা ছিল এক আদিম জীবন," বলছেন তিনি, "আমরা সভ্যতা থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিলাম। ঢুকে পড়েছিলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতে।"

জাপানীরা যখন সিরিল ডয়কে আটক করে তখন তার বয়স মাত্র ২১ বছর।

বন্দী অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গভীর জঙ্গলে। সেখানে তার পরনের সামরিক পোশাক খুলে ফেলা হয়।

তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র সব জব্দ করা হয়। পরনের জন্য তাকে দেয়া হয় শুধুমাত্র একটি লেংটি।


বন্দী জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলছিলেন, "আজকাল আমরা যাকে খুব সাধারণ ব্যবহার্য জিনিসপত্র বলে মনে করি, যেমন খাবার প্লেট, টুথব্রাশ, তোয়ালে কিংবা গরম পানি - এসব কিছুই আমাদের ছিল না। আমাদের কাছে যা ছিল তাও সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ১৯৪২ সালের শুরুর দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশদের শক্ত ঘাঁটি সিঙ্গাপুরের পতন ঘটে। সেই যুদ্ধে জাপান ছিল হিটলারের মিত্র-দেশ।

সে সময় যে ৬০,০০০ ব্রিটিশ সৈন্য যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক হয় সিরিল ডয় ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

জনবসতি থেকে বহু দূরে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে তাকে শ্রম-দাস হিসেবে আটক রাখা হয়।

তিনি বলছেন, "প্রতিটি ক্যাম্পে ছিল একজন করে কমান্ডেন্ট। ক্যাম্পগুলোকে পাহারা দিত কোরিয়ান সৈন্যরা। ক্যাম্পের চারিদিক ঘিরে ছিল না কোন কাঁটাতারের বেড়া।~

"কিন্তু তারপরও আপনি সেখান থেকে পালাতে পারবেন না। কারণ সেখানে আশে পাশে কোন কিছু ছিল না। আমি যে ক্যাম্পে ছিলাম সেখানে তিন জন বন্দী পালানোর চেষ্টা করেছিল।"

"কিন্তু তিনজনই পরে ধরা পড়ে যায়। তাদের হত্যা করার আগে তাদের দিয়েই কবর খোঁড়ানো হয়। ঐ ধরনের মানুষই ছিল ক্যাম্পগুলোর দায়িত্বে।"


থাইল্যান্ড থেকে বার্মা পর্যন্ত একটি রেল লাইন তৈরির কাজে জাপানীরা এই যুদ্ধবন্দীদের ব্যবহার করেছিল।

এই রেলপথ দিয়ে তারা সৈন্য, খাবার, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ-পত্র আনা নেয়া করতো।

এটা ছিল বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। পাহাড়-পর্বত কেটে, পাথর ভেঙে, জঙ্গল পরিষ্কার করে এই রেললাইন বসানো হয়েছিল।

"জাপানীরা কোনভাবে ইংরেজি শব্দ 'স্পিড' (গতি) ব্যবহার করতে শিখেছিল। তাই তারা সব সময় 'স্পিডো, স্পিডো' বলে আমাদের ধমকা-ধমকি করতো।"

"তাই আমাদের সব সময় কাজ করে যেতে হতো। সরাতে হতো টনকে টন মাটি আর পাথর। বর্ষাকালে কাজ করতো হতো কাদা আর পানির মধ্য দিয়ে।"

সিরিল ডয়-এর দায়িত্ব ছিল কোয়াই নামের এক নদীর আশেপাশে গাছ কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করা। সারা দিনে খাবার দেয়া হতো মাত্র আধা-কাপ ভাত।


"আমার পাশে যে শুয়ে ছিল তার সারা গা ভরা ছিল ফোঁড়ায়। সেগুলোতে পোকা দেখা দিয়েছিল। বড় বড় মাছি ঢুকে যেত ফোঁড়ার মধ্যে।"

"প্রচণ্ড সে জ্বরে প্রলাপ বকতো। আমার পাশের বিছানাতেই সে মারা যায়।"

থাই-বার্মা রেললাইনটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল মোট ১৪ মাস।

এই রেল লাইনটি তৈরি করতে গিয়ে এক লক্ষেরও বেশি এশীয় শ্রম-দাস প্রাণ হারায়।

তাদের পাশাপাশি ১৬,০০০ ব্রিটিশ, আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান এবং ডাচ যুদ্ধবন্দী মারা যায়।

এই রেল রাইনের প্রতি চারটি স্লিপারের মধ্যে একটি একজন করে মানুষের মৃত্যুর প্রতীকী বহন করছে।

"সে সময়টাতে যারা আমদের প্রতি এধরনের আচরণ করেছিল তাদের প্রতি আমার ছিল প্রচণ্ড ঘৃণা।"

যুদ্ধবন্দী হিসেবে সিরিল ডয় আটক ছিলেন প্রায় চার বছর।

হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ওপর আণবিক বোমা নিক্ষেপের পর জাপানীরা আত্মসমর্পণের রাজি হয়।

আর তার মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের।

সিরিল ডয় বলছেন, "মানুষের বেঁচে থাকার তাগিদ এমনই যে কোনভাবেই আপনি আপনার বিশ্বাস হারাতে চাইবেন না। সবসময় আপনার মাথায় ঘুরতে থাকবে কোন না কোন একদিন আপনি নিশ্চয়ই মুক্ত হবেন।"

সিরিল ডয় এখন থাকেন পূর্ব ইংল্যান্ডে।

স্ত্রী, দুই সন্তান, চার নাতি-নাতনী এবং নয় জন পৌত্র-পুত্রী নিয়ে তার সংসার।


তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলার ইতিহাসের সাক্ষী থেকে নেয়া।

ছবি-অন্তজাল।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:২১

জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট!

০৭ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৪২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ধন্যবাদ। যুদ্ধ মানে বিভীশিখা।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:৪৫

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বুঝতে পারছি সেই জন্য পারমানিক বোমা মেরেছিল

০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:১৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ। বর্তমানে জাপানীরা অন্যতম সভ্য জাতি।

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: নিশ্চয়ই ''লাইফ ইজ বিউটিফুল'' মুভিটা দেখেছেন?

০৭ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:৪৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
হ্যা। ধন্যবাদ।

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৪২

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: কিচ্ছু না, চরম অভদ্র জাতির দুই গালে দুইটা থাপ্পড় (দুইটা পারমানবিক বোমা) মারায় তারা পুরা সিধা হয়ে গেছে। এখন দরকার আম্রিকায় ৪টা, রাশিয়ায় ৪টা আর চীনে ৭টা ফালানোর। সাথে ইরানে একটা দুইটা ফালাইতে পারলে হয়।

সব সোজা হয়ে যাবে।

০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:০৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
রাইট। বোম খেয়ে মানুষ হয়েছে জাপানীরা। এখন আমেরিকা, রাশিয়া, চীন বা ইরানে কে ফেলবে বোম?

ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৫৪

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। ++

০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:০৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.