নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি....\n\nআরেকদিন লিখব

প্রীতি পারমিতা

প্রীতি পারমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তটিনী

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

ক্যাম্পাসের গেইটে পা দিতেই তটিনীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ সে বাবাকে খুব মিস করছে।যার হাত ধরে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে আজ সে বাবাকে আর বাবার হাতটাকে সে খুব মিস করছে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরার আগেই তাল গাছের মতো লম্বা একটা ছেলে ওর কাছে জানতে চাইল,"Excuse me, BBA এর প্রথম বর্ষের ক্লাশ কোথায় হচ্ছে বলতে পারবেন?"

"sorry,আমি বলতে পারব না।actually,আমি নিজেই খুঁজছি BBA এর ক্লাশ কোথায় হচ্ছে।" ছেলেটার দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে উত্তর দিল তটিনী।

মনে মনে ভাবল, " ভাগ্যিস,ছেলেটা তাল গাছের মতো লম্বা।তা না হলে ওর চোখের জল ছেলেটা দেখে ফেললে আজ ভীষণ লজ্জায় পরতে হতো।

" ঠিক আছে,চল আমরা একসাথে খুঁজে দেখি। আর তুমি করে বললাম কিছু মনে করো না।" হড়বড় করে কথা গুলো বলল ছেলেটা ।

"না না ঠিক আছে।" বলেই চুপচাপ হাঁটতে লাগল তটিনী।

"আমি তন্ময়।তুমি?"

"আমি তটিনী"

"wow,nice name.তা নদীর জলের সাথে বুঝি খুব ভাব?"

"মানে?" তটিনী চমকে উঠল তন্ময়ের কথায়।

"মানে নদীর সব জল চোখের মধ্যে দেখতে পেলাম তো তাই",বলেই একটা ছোট্ট হাসি দিল তন্ময়।

এতক্ষন ধরে যাও ভালো লাগছিল তটিনীর কিন্তু এখন আর ছেলেটাকে ওর সহ্য হচ্ছে না।তাই কিছু না বলেই হাঁটতে লাগল। শেষ পর্যন্ত ওরা ক্লাশ খুঁজে পেল।দ্বিতীয় সারিতে একটা মেয়ের পাশে বসে পড়ল তটিনী। মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচল ।

আর তন্ময় বসল সবার পিছনে।কিছুক্ষনের মাঝেই ক্লাশের কয়েকজনের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলল সে। এইদিকে তটিনীর মনটা আবার কেমন যেনও করতে লাগল বাবার জন্য।

স্যার আসলেন। প্রথম দিন তাই সবার সাথে পরিচিত হলেন। তটিনীর নামটা শুনে স্যার খুব আগ্রহ নিয়ে এই নাম রাখার কারন জানতে চেয়েছিলেন। তটিনী নামটা রাখার পিছনে একটা সুন্দর কারন আছে কিন্তু সেটা না বলে তটিনী ছোট্ট করে বলল , "বাবা রেখেছেন।" বাবার কথা বলতেই ওর ভিতরটা আবার কষ্টে ভরে উঠল।





আজ মতিন সাহেবের মন আর শরীর দুটোই খারাপ। তারপরও হেঁটে হেঁটে অনেক দিন পর নদীর পাড়ে এলেন।পাশে কেউ একজনের অনুপস্থিতি খুব বেশি অনুভব করছেন। সে হল উনার একমাত্র মেয়ে তটিনী। তটিনীর মা মারা যাবার পর এই তটিনীই উনার সব। তটিনী শহরে চলে যাবার পর আর নদীর পাড়ে আসা হয়নি। নদীতে অনেক স্রোত। আজকাল নদীটাকে বড্ড অচেনা আর অশান্ত বলে মনে হয়। তটিনীর জন্মের আগে নদীটা কতো শান্ত আর ছোট্ট ছিল। এই নদীটাকে এতটাই ভালবাসতেন যে মেয়ের নাম শখ করে রেখেছেন তটিনী। তারপর তটিনীর সাথে সাথে দিন দিন ছোট্ট নদীটাও বড় হয়েছে একটু একটু করে।কিন্তু আজকাল যেনও নদীটা বড় হয়ার জন্য বড্ড তাড়াহুড়ো করছে।তর যেনও আর সইছে না!!!!







ক্লাশ আর পরীক্ষার এত্ত চাপ যে তটিনীর দম ফেলার কোনো ফুরসত নেই। বাবার সাথে কথা বললেই শুধু জিজ্ঞেস করেন,"কবে আসবি রে মা?" কথাটা শেষ হয়ার আগেই তটিনীর ইচ্ছে করে ছুটে যেতে বাবার কাছ। চুলোয় যাক সব ক্লাশ-পরীক্ষা। কিন্তু বাবার কষ্ট সার্থক আর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তাকে এইটুকু ত্যাগ করতেই হবে। নিজের মন খারাপ লুকিয়ে রেখে তটিনী বাবার প্রশ্নের উত্তর দেয়," কি যে বলো না বাবা? পরীক্ষা- ক্লাশ বাদ দিয়ে বাড়ি যেয়ে বসে থাকলেই হবে?এখন কি আর আমি ছোট আছি? " "হুম,তাই তো দেখতে পারছি। আমার ছোট্ট মেয়ে তটিনী আজ আমার মা হয়ে গেছে।" বলেই হাসতে থাকেন মতিন সাহেব। এভাবেই বাবা-মেয়ের ফোনালাপ চলতে থাকে প্রতিদিন। হাজার ব্যস্ততার মাঝে এটুকুই তটিনীকে প্রশান্তি দেয়।





"হাই,কেমন আছো?"

"ভাল।তুমি?"

"আমি তো সেইরাম ভালো আছি। তা নদীতে কি খরা চলছে?" বলেই দুষ্টুমির হাসি দিল তন্ময়।

তটিনীর চরম মেজাজ খারাপ হলো। কিন্তু কিছু না বলেই চুপ করে রইল।

"আচ্ছা, নদীর নাম বললেই এমন চুপ হয়ে যাও ক্যান?" তন্ময় হাসি বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলো।তারপর সাথে সাথে আবার বলল,

"আরে বাবা,আমি তো দুষ্টুমি করে বলি।তাতেও তুমি কেমন সিরিয়াস হয়ে যাও। আরে,তুমি দুষ্টুমিও বুঝো না?"

এইবার আর তটিনী মেজাজটা প্রকাশ না করে পারল না। "তোমার সমস্যাটা কি?বারবার কেনো আমার সাথে এসে এমন প্রশ্ন করো?"

তন্ময় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল।ভাবতে পারেনি যে তটিনী এতটা react করবে। নিজেকে সামলে নিয়ে তন্ময় জবাব দিল, "একটা কথা বলার ছিল।"

"না কোন কথাই শুনতে চাই না।তুমি যাও আমার সামনে থেকে", তটিনীর রাগে ফুসতে লাগল।

"প্লিজ কথাটা শুনো", তন্ময়ের অনুরোধ।

"ঠিক আছে। এক মিনিট সময় দিলাম। যা বলার তাড়াতাড়ি বলে আমার সামনে থেকে যাও।" তটিনী কিছুটা শান্ত হয়ে বলল।

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তন্ময় বলা শুরু করল, " তটিনী নামটা যে দিন শুনেছি সে দিন এই নামের প্রেমে পড়ে গেছি।আজ এই নামের মানুষটার প্রেমে একটুর জন্য পিছলে পড়িনি।কিন্তু তুমি এমন করলে আবার পড়ে হাত-পায়ের সাথে কোমরও ভাংতে পারি। কারন রাগলে তোমাকে বাচ্চা লাগে ",বলেই উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো ঝড়ের গতিতে।

তটিনী কি বলবে বুঝতে পারল না। পুরো statue হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।





তিন দিন ধরে তটিনীর কোন খবর নেই।এই দিকে তটিনীদের গ্রামে দিন দিন মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থার এত অবনতি হচ্ছে যে প্রতিবার কল দিতে গেলে অসম্ভব মেজাজ খারাপ হয় নেটওয়ার্কের উপর। তন্ময়ের কিছুই ভালো লাগছে না। আগামিকাল থেকে ক্লাশ শুরু । অথচ তটিনীর কোন খোঁজ খবর নেই। "দাঁড়াও না,এইবার আসলে তিন দিন কথা না বলার শাস্তি দিব।সব সময় আমাকে শাস্তি দাও কল দিতে একটু দেরী হলেই।এইবার আমিও শোধ নিব।" একা একা কথা গুলো বলতে লাগল। তবে মুখে এক কথা বললেও মন তো ঠিকই জানে যে সে কিছুই করতে পারবে না। তটিনীর আসল রাগের কাছে তার এসব নকল রাগ নস্যি। এসব ভাবতে ভাবতেই আজকের নিউজপেপারটা হাতে নিল। খেলার খবর পড়া শেষ করে বাকি পৃষ্ঠা গুলোতে চোখ বুলাতে লাগল।ভালো লাগে না দেশের খবর পড়তে। এসবের মাঝে শুধু নোংরা রাজনীতি,গুম,হত্যা,মারামারি এই সবের খবর। হঠাৎ ছোট্ট একটা হেডলাইনের উপর চোখ পড়ল "হারিয়ে গেলো মনিপুর ইউনিয়ন" । মনিপুর নামটা কএমন যেনও পরিচিত লাগছে। হঠাৎ মনে পড়ল তটিনীর গ্রাম ওখানে। তারপর তটিনীর খবর আর বুঝতে বাকি রইলো না। তড়িঘড়ি করে ও বাসা থেকে বের হয়ে গেলো হারিয়ে যাওয়া মনিপুরের উদ্দেশ্যে তন্ময়ের তটিনীর উদ্দেশ্যে।





নদীর পাড়ে বসে ছোট ছোট মাটির ঢেলা গুলো তন্ময় নদীর জলে ছুঁড়ছিল । যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। "আচ্ছা, নদীর ওপারে কি কোনো চর জেগেছে? স্কুলে থাকতে পড়েছিল "নদীর এপার ভাঙ্গে অপার গড়ে" ওপারে কি আছে তটিনী? নাকি এবার নদীর জলের সাথে পাকাপাকি ভাব হয়ে গেছে? " এসব ভাবতে ভাবতে তন্ময়েরই যেনও নদীর জলের সাথে ভাব হয়ে গেলো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৬

অনবদ্য অনিন্দ্য বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটি । সব কিছুর শেষ থাকতে নেই, কিছু গল্পে আক্ষেপ থাকলে গল্পের সার্থকতা থাকে । আমার কাছে এই গল্পটি এমনি মনে হলো ।

ভালো থাকবেন নিরন্তর । শুভকামনা :)

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২০

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ :)
আপনিও ভালো থাকবেন :)

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

লেখোয়াড়. বলেছেন:
আপনার খবর কি? তটিনীর খবর কি?
আপনিই কি তটিনী? তটিনী আর তন্ময় নাম দুটি ভাল লাগে।

আরো লিখুন বেশি বেশি, মন্তব্য করুন বেশি বেশি।
ভাল থাকুন।

৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২০

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: আমার খবর ভালো :)
তটিনীর খবর নাই
তটিনী গল্পের একটা চরিত্র মাত্র :)
ধন্যবাদ
চেষ্টা করব
আপনিও ভালো থাকবেন :)

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল গল্প। আরো লিখবেন সেই শুভকামনাই।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৪

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.