![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্বয়ের পড়ার টেবিলটা দেখলে লোকে আর যাই ভাবুক না কেনো “পড়ার টেবিল” বলে কেউ ভুলেও ভাববে না।কি নেই টেবিলটার উপর? হেডফোন, মোবাইলের চার্জার, ল্যাপটপের চার্জার, মালন্ঞ বাসের টিকিট থেকে শুরু করে কিছুক্ষণ আগে খাওয়া কলার খোসা পর্যন্ত আছে। শুধু নেই বই-খাতা। ওর নাকি পড়ার জন্য বই-খাতার প্রয়োজন হয় না। ল্যাপটপ হলেই যথেষ্ট। যত কাজ,পড়াশুনা সব ঐ ল্যাপটপের মধ্যে। ইউনিভার্সিটি জীবনে গত ৪বছরে শেষ খাতা যে কবে কিনেছে তা ও ভুলেই গেছে।লাল মলাটের একটা খাতা দিয়েই গত কয়েক বছর ক্লাশ চলচ্ছে। বন্ধুরা দুষ্টুমি করে এই খাতার নাম দিয়েছে “টালি খাতা”।
কাল একটা প্রজেক্ট জমা দিতে হবে সেটা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে কখন ওর মা এসে ওর ঘরে ঢুকলেন তা টেরই পেল না অন্বয়। পিছন থেকে ওর মাথার চুলগুলো আলতো করে টানতে টানতে জানতে চাইলেন,”কিরে খুব ব্যস্ত?পরীক্ষা নাকি?”। মায়ের এই চুল টেনে দেয়ার ব্যাপারটা অন্বয়ের খুব ভাল লাগে।ল্যাপটপ কোল থেকে রেখে মাকে জড়িয়ে ধরল ঠিক একটা বাচ্চা ছেলের মত। সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে একটু প্রশান্তি খুঁজে পেল। জবাব দিল,”না।প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। “কি জানি বাবা,আমি ওতশত বুঝি না।” মায়ের কথা শুনে একটু হাসল অন্বয়।”আচ্ছা,যে কথার জন্য এসেছি তা হল, লিয়ার সাথে আজ দেখা হয়েছিল।ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী মাসে। তোকে বলেছে কল দিতে। বেচারি, কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।প্রথমে তো চিনতেই পারিনি।” মায়ের কথা শেষ হতেই অন্বয় একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গেল।
আবার ল্যাপটপটা কোলে নিয়ে কাজ শুরু করল।অন্বয়ের মা ব্যাপারটা খেয়াল করলেন।কিন্তু কিছু বললেন না। শুধু “ঠিক আছে। তুই কাজ কর। আমার সিরিয়ালের সময় হয়ে গেছে ” বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। ল্যাপটপ নিয়ে চুপচাপ বসে রইল অন্বয়। মা এমন একটা খবর দিলেন যা কোনো ভাবেই সুখবরের পর্যায়ে পড়ে না। আবার খারাপ খবরও না। লিয়া ওর ছোটবেলার সব থেকে ভাল বন্ধু। ফোনটা হাতে নিয়ে একবার ভাবল কল দিবে। আবার পরক্ষণেই একটু রাগ হল এই ভেবে যে,'' আমি কেন তোকে কল দিব? তুই নিজে দিতে পারিস না?বিয়ের কথা বলতে বুঝি লজ্জা করে? তাহলে বিয়ে করবি কিভাবে?” ফোনটা রেখে প্রজেক্টের কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করল।কিন্তু পারল না। কাজ বাদ দিয়ে ল্যাপটপের personal folder এ রাখা ওর আর লিয়ার পুরনো ছবি গুলো দেখতে শুরু করল।'' মুটিটা নাকি শুকিয়ে গেছে? দেখতে কেমন লাগে কে জানে?কতদিন তোকে দেখি নারে লিয়া ” – মনে মনে কথাগুলো আউরাতে লাগল অন্বয়।
স্কুল জীবনের প্রথম থেকে লিয়া আর অন্বয় খুব ভাল বন্ধু। সব সময় একসাথে বসত ক্লাশে। কিন্তু অন্বয় যখন তার অন্য বন্ধুদের সাথে বসত তখন লিয়ার সে কি অভিমান।অন্বয়ের মায়ের কাছে এই নিয়ে যে কত অভিমান। মায়ের বকা খেয়ে উল্টো অন্বয় লিয়ার সাথে অভিমান করত। তখন লিয়াকেই অন্বয়ের রাগ ভাঙ্গাতে হত প্রিয় চকলেট দিয়ে।বাসা থেকে অন্বয় কিছুতেই টিফিন আনতে চাইত না। কিন্তু লিয়ার সাথে ঠিকই ভাগ করে খেত লিয়ার টাফিন। এমন করেই কেটে গেল ওদের স্কুল জীবনটা। কলেজে প্রবেশের পর নতুন অনেক বন্ধু হল।অন্বয় বরাবরই ছিল careless। নতুন বন্ধুদের সময় দিতে যেয়ে লিয়ার থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছিল তা ওর খেয়াল ছিল না। লিয়া ঠিকই অন্বয়ের care নিত।নোট দেয়া, birthday wish করা, gift দেয়া, টিফিন share করা, অন্বয়ের ভাল লাগার সব কাজ গুলো করত। কিন্তু অন্বয়ের এসবে নজর দেয়ার সময় ছিল না। লিয়ার birthday_র কথা পর্যন্ত সে ভুলে গেল।আশ্চর্য,তাতে লিয়ার কোন অভিযোগ ছিল না।
HSC পরীক্ষার পর হঠাৎ লিয়ার পুরো পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়।কারণটা আজও অন্বয় জানে না। লিয়ার অনুপস্থিতি প্রথমে টের না পেলেও আস্তে আস্তে তা টের পেল অন্বয়। নিজের ভুল বুঝতে পারল। কিন্তু লিয়া যোগাযোগ কমিয়ে দিল। লিয়ার এই অবহেলা অন্বয় সহ্য করতে পারল না। টের পেল লিয়ার জন্য ওর মনের কোণে অদ্ভুত এক টানের।একেই ভালবাসা বলে কিনা কে জানে?
যখনই লিয়ার সাথে যোগাযোগ হত তখনই ও নানা ভাবে বুঝাতে চাইত ওর মনের কথা।কিন্তু লিয়া যেন কিছুই বুঝত না। অন্বয় ভেবেছিল লিয়া ইচ্ছা করেই ঢং করছে।প্রতিশোধ নিচ্ছে ওকে অবহেলা করার জন্য। খুব রাগ হত। তারপরও অন্বয় হাল ছাড়েনি। তবে শেষ পর্যন্ত যখন লিয়ার দিক থেকে কোন সাড়া পেল না তখন অন্বয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিল লিয়ার সাথে। লিয়াও আর যোগাযোগ করল না।
জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আজকের দিনের কথা ভাবছিল লিয়া।আজ একটা বিশেষ দিন ওর আর ওর পরিবারের জন্য একটা বিশেষ দিন। প্রতি বছর এই দিনটা এলেও এই তারিখটা আসে চার বছর পর পর। সেই দিনটার কথা ভাবতে ভাবতে ওর চোখের কোণ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ওর গাল বেয়ে।হঠাৎ ওর মোবাইলের রিংটোনের শব্দ পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল। স্ক্রিনে নামটা দেখতেই লিয়ার ভিতরে যেন একটা বিদ্যুৎ চমকের! অন্বয় তাকে কল দিয়েছে এত দিন পর! রিসিভ করতেই,
অন্বয়: কিরে মুটি,কেমন আছিস?
লিয়া: ভাল। তুই? (লিয়ার কথায় আগের মত উচ্ছ্বাস নেই।)
অন্বয়: আমি তো all time joss. শুনলাম তোর নাকি বিয়ে? ঢাকায় এলি কবে? বাসায় আসলি না কেন?লিয়া কথায় স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
লিয়া: গত সপ্তাহে এসেছি। বিয়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত। তাই সময় পাচ্ছি না।
অন্বয়: ও। আচ্ছা, তুই পড়াশোনা ছাড়লি কেন? তোর না কত স্বপ্ন ছিল?
লিয়া: মাঝে মাঝে সবার খুশির জন্য নিজের স্বপ্ন, চাওয়া পাওয়া গুলোকে বির্সজন দিতে হয়। আমিও পরিবারের আর সবার কথা ভেবে তাই করলাম।
অন্বয়: বাহ্, কত্ত লক্ষ্মী মেয়ে!! তা তোর হবু বর আমার থেকেও খুব handsome নাকি যে আমাকে বাদ দিয়ে ঐ ব্যাটার গলায় ঝুলতে যাচ্ছিস?
লিয়া: মানে? আর তোকে দেখিনা চার বছর হল।
অন্বয়: তাও তো কথা।এখনকার অন্বয়কে দেখলে আর ঐ ব্যাটাকে বিয়ে করতে চাইতি না। জানিস,আমার উপর কত মেয়ে crash খেয়েছে?
লিয়া: অন্বয়,প্লিজ চুপ কর। ভাল লাগছে না এসব শুনতে।
অন্বয়: তুই তো দেখি সেই আগের মতই হিংসুটি আছিস।
লিয়া: তুই তো বরাবরই careless.
অন্বয়: ভুল বললি। careless হলে তোর চলে যাওয়াটাকে মেনে নিতাম।কখনো তোকে ফিরাতে চাইতাম না।
লিয়া: আচ্ছা এসব কথা বাদ দে।অন্য কথা বল।
অন্বয়: লিয়া,আমি তোকে ভালবাসি। তুই জানিস না? বুঝিস না?
লিয়া: না।বুঝি না। আর আমি তোকে ভালবাসি না।আচ্ছা,আমি এখন রাখছি।
অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে লিয়া লাইনটা কেটে দেয় অন্বয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। লাইনটা কেটে যেতেই অন্বয় প্রচন্ড রাগে ওর মোবাইলটা মেঝের উপর আছাড় মারে। এদিকে লিয়া ওর বেডরুমের দেয়ালে টানানো ওর আর পিয়ার ছবিটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে।
“আপি, আমি তো তোর মত স্বার্থপর না যে নিজের ভালবাসার জন্য বাবা-মা,সবাইকে ছেড়ে চলে যাব। আমি ছাড়া বাবা -মা যে এখন বড্ড একা। আমিই তো এখন তাদের শেষ আশা। তুই তো জানিস, আমি অন্বয়কে কতটা ভালবাসি। তা সত্ত্বেও আমি এ কথা ওকে আজও বলিনি।Sorry, অন্বয়। আমি আপির মত স্বার্থপর হতে পারলাম না। হয়তো তোর কাছে স্বার্থপর। কিন্তু আজও আমি তোকে অনেক ভালবাসিরে অন্বয়। অনেক বেশি ভালবাসি।”
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫
প্রীতি পারমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ
চেষ্টা করব
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১০
অনবদ্য অনিন্দ্য বলেছেন: অস্থির হয়েছে । কিপ ইট আপ