নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি....\n\nআরেকদিন লিখব

প্রীতি পারমিতা

প্রীতি পারমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুতুল

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৩

১.
বাইরে থেকে এসে পড়ার টেবিলের ওপর ব্যাগটা রাখতেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।পড়ার টেবিলে পড়ালেখার অনুষঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু দেখলেই ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।তার উপর এই মাথা ভাঙা ভয়ানক পুতুলটাকে দেখে মেজাজ তিন ডিগ্রি বেশি গরম হয়ে গেল।সাথে সাথে মেঝে ছুঁড়ে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলাম,"মা,মা।" রান্নাঘর থেকে মা উওর দিল,"কি?""আরে তুমি এখানে আসো।" রান্নাঘর থেকে একটা খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে ঘরে ঢুকতেই মেঝেতে পড়ে থাকা পুতুলটাকে দেখে জানতে চাইলো,"এইটা এখানে কেন?" আমি মাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,"এইটা আমার টেবিলে রেখেছে কে?" মা এক হাত দিয়ে পুতুলটাকে মেঝে থেকে তুলে খাটে রেখে বললেন,"আমি রেখেছি।কেন?" আমি আরো রাগ দেখিয়ে বললাম,"তুমি জানো না পড়ার টেবিলে উল্টাপাল্টা কিছু রাখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়?আর এইটা রাখার কি জায়গা নাই? না থাকলে ফেলে দাও।" মা এইবার রেগে বলল,"ফেলব কেন?দেখিস না এটাকে কি সুন্দর করে গোসল করিয়েছি,চুলে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করেছি?তোদের সমস্যা কি?" মায়ের পুতুলের প্রতি এতো যত্ন দেখে রাগে কান্নাা চলে এলো।কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কান্না শুরু করে দিলাম।এই একটা বদ অভ্যাস রাগে কিছু বলতে না পারলে কান্না চলে আসে।

২.

অনেক আগে আমার এক দুসম্পর্কের কাকা বিদেশ থেকে ছোট বোনের জন্য পুতুলটা পাঠিয়েছিল।পুতুলটা দেখতে ভয়ানক লাগত তাই বনু খেলত না।তাই এর জায়গা হয়েছিল মায়ের আলমারিতে।মা এই পুতুলটার খুব যত্ন নেয়।একবার একটা ছোট্ট কাজিনকে পুতুলটা দিয়ে খেলতে দিয়েছিল।সে পুতুলটা দেখে ভয়ে এর মাথাটা ভেঙে ফেলে।তারপর এটাকে যতবার ফেলতে বলেছি মায়ের যত্ন তত গুণ বেশি বেড়ে গেছে।খুব রাগ হতো।এখনো হয়।মা পুতুলটার জন্য দুটো জামাও বানিয়েছে দর্জিকে দিয়ে।প্রথম প্রথম আমি আর বনু হাসাহাসি করতাম।তারপর আস্তে আস্তে সেটা রাগ থেকে হিংসাতে পরিণত হলো।এতো আদিখ্যেতা করার কি আছে এটাকে? তাও আবার একটা মাথা ভাঙা পুতুল।মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের ভালোবাসায়ও ভাগ বসিয়েছে।পুতুলটাকে সামনে পেলে যত রকম অত্যাচার আছে করি মায়ের অনুপস্থিতিতে।বোবা পুতুলটা সব সয়ে যায়।তাও যেনো ওর প্রতি রাগটা মিটে না।এটাকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে পারলে শান্তি পেতাম।কিন্তু করি না কারণ দেখা যাবে মা এটাকে ঝুড়ি থেকে তুলে আবার গোসল করিয়ে সাজিয়ে রাখবে।মায়ের তো দরদ সবকিছুর জন্য বেশি।

৩.

না আজ আর কোনো বাধা শুনব না।আজ পুতুলটাকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলেই ছাড়ব।চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বের হলাম।তারপর খাটের উপর থেকে পুতুলটা নিতেই মা জানতে চাইলো কি করব।আমি কোনো উত্তর না দিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।মা আমার পিছন পিছন এসে বারবার জানতে চাইলো কি করব?কোথায় নিচ্ছি পুতুলটাকে? আমি ময়লার ঝুড়ির সামনে দাঁড়াতেই মায়ের বুঝতে বাকি রইলো না কি করতে যাচ্ছিলাম।মা আমার হাত থেকে পুতুলটা কেড়ে নিয়ে বলল,"পাগল হয়ে গেছিস?" আমি চিৎকার করে বললাম,"পাগল আমি না তুমি? এই পুতুলটার জন্য এতো দরদ কেন?সামান্য একটা পুতুলের জন্য তুমি আমাদের বকা দাও।" মা পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়ানো কন্ঠে বলল," মায়ের খবর নাও? সারাদিন শুধু মোবাইল,পড়া,বন্ধু,ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত।মায়ের দিন কাটে কেমন করে সেটা জানো? শুধু খাবার দেবার বেলায়, টাকা দেবার বেলায় আর প্রয়োজনের বেলায় শুধু মাকে দরকার।" বলেই মা আমার সামনে থেকে চলে গেলো।মাকে অনেক দিন পর এমন কর কাঁদতে দেখলাম।আর কথাগুলো কখনো শুনব বলে আশা করিনি।আসলেই তো আমরা মায়ের কতোটুকু খবর নেই।জানতেও চাই না ঘরের কাজ শেষ করে মা কি করে সময় কাটায়।হঠাৎ নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হতে লাগল।আবার নিজের উপর রাগে কান্না চলে এললো।আস্তে আস্তে মায়ের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম মা পুতুলটাকে নতুন টুকটুকে লাল একটা জামা পড়াচ্ছে। এখন কেনো যেনো আর কষ্ট, হিংসা হলো না এই প্রথমবারের মতো।মায়ের হাতের ছোঁয়াতে ভয়ানক পুতুলটাকে হঠাৎ পরীর মতো মনে হলো।আমি আর তাকাতে পারলাম না।মনে মনে "সরি মা" বলে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভালবাসার বিমূর্ত অনুভূতি স্পর্শতে প্রাণ জাগায় ৷ অপ্রকাশিত সম্পর্কহীন প্রচলিত জীবন ৷

প্রকাশভঙ্গি ভাল লাগলো ৷

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.