নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘপিয়ন

মেঘপিয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাগজের নৌকা...আর জননী

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩

কাগজের নৌকা

কেউ বানিয়েছে তা

চুপচাপ ভাসিয়েছে জলে,

রেলগাড়ি ঝমাঝম

কেউ বেশি কেউ কম

নিজস্ব কথাটুকু বলে।



সন্ধ্যের মুখোমুখি

কার মুখ দেয় উঁকি

কার কথা আজো বাজে কানে,

কেনো এতো খোঁজাখুঁজি

এতোদিন পরে বুঝি

জননী শব্দটার মানে।



সেই ঘর সেই বাড়ি,

দুষ্টুমি বাড়াবাড়ি—

তাঁর কথা কখনো শুনিনি,

অবাধ্য ছেলেটাকে

স্মৃতি কেনো পিছু ডাকে

ভালোবাসা মানেই জননী।



মা...ও...মা, মা...ও...মা

পাগলা ঘোড়া ছুটে ছুটে যায়

দিনটা কাটে শুধু ব্যস্ততায়,

রাতটা কাটে গানে গানে—

রাতটা কাটুক গানে পানে.....



- কাগজের নৌকা , অতল জলের গান।



আমাদের দ্বোতালা বাসার বারান্দা থেকে আমি আর আম্মা নৌকা বানিয়ে বানিয়ে বৃষ্টির পরে নিচে রাস্তার জমে থাকা পানিতে ফেলতাম। আর পানি না থাকলে অবশ্য প্লেন বানাতাম। মা'রও সব মনে আছে।



আর জন্মের পর থেকেই আমার দুষ্টুমি এতো বেশি ছিল সকালে উঠে বাবা আমাকে রাখতেন আর মা সেই ফাকে রান্না, ঘর পরিস্কার, গোসল সব শেষ করে রাখতেন কারণ সারাদিন আমি তাকে আর কিছুই করতে দিতাম না। রাতে আমাকে পায়ের উপর বালিশ দিয়ে শুইয়ে নিজে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে থাকতেন কারণ বিছানায় শুইয়ে দিলেই আমি নাকি কেঁদে উঠতাম।



আর একটু বড় হবার পর এতো বেশি বাঁদর হয়ে গিয়েছিলাম যে মা দৌড়ে আর পারতেন না আমার সাথে। পুরা পাঁচতলা বিল্ডিং এর সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে করতে খাওয়াতে হতো নাকি আমাকে। আর মার্কেটে নিয়ে গেলে কোন একটা গাড়ি পছন্দ হয়ে গেলে কিনে না দেয়া পর্যন্ত শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে সে কি কান্না। তাই বাবা-মা আমাদের দুই ভাই কে পাশের বাসায় রেখে যেতেন।



একদিন রোজার সময় ইফতারের আগ দিয়ে আব্দার করে বসলাম আজকে আমার রূহআফজার লাল শরবত লাগবে। বাবা বললেন, আজ নয় কাল আনবেন। আমার কথা হলো আজকে খেতে ইচ্ছা হয়েছে, কাল তো আর ইচ্ছা না হতেও পারে। রাগ করে ইফতার না করেই চলে গেলাম ঘরে। একটু পর শুনতে পেলাম মা বাবাকে বলছেন রূহআফজা না আনলে তিনিও আর খাবেন না। কি আর করা, বাধ্য হয়ে বাবা এক ঘন্টা পর কিনে আনলেন সেই রুহআফজা!



আর ক্লাস টু-তে ওঠার পরে চলে এলাম কলোনিতে। ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হতাম খেলতে, ফিরতাম দুপুর ২টায় খাবার আর গোসলের জন্যে, তারপর বিকাল ৪টায় আবার নিচে। সন্ধ্যেবেলা আজান দিলে ঘরে ফিরে নামাজ পড়তেই হবে, মা'র আদেশ। তবে রাতে কারেন্ট গেলেই বোনাস হিসেবে আবার নিচে নেমে অন্ধকারে টিলোএক্সপ্রেস (লুকোচুরি) খেলা। মা'র কথাই আসলে শুনিনি। মেয়ে নেই বলে তার আফসোসটা এখন বুঝি, ছেলে হিসেবে মায়ের বন্ধু হবার বদলে শুধু আব্দার করেই শেষ।



৫২১ দিন আগে শেষ মা'কে দেখেছিলাম! মাত্র হিসেব করে বের করলাম। সব দোষ ঐ দূরে থাকা মেঘ এর, কারণ তার অনুরোধেই আজ রাতটা মা'কে ভাবতে ভাবতে গানটা শুনতে শুনতে মন খারাপ করে কেটে গেলো। আবার ধন্যবাদ তাকেই, কারণ তার জন্যেই এই ভোরবেলায় মা'কে ফোন করে আমাদের ছোটবেলার একসাথে নৌকা বানানোর স্মৃতিচারণ করে তারপর গানটা দিলাম। মা'কে নিয়ে সেই পিছু ডাকা স্মৃতিগুলো এই গানটাকে সাথে করে আমার আজকের রাতটা নিয়ে গেলো, আবার ব্যস্ত একটা দিন আসছে সামনে। আজকেও ঘুমটা কম হবে।



আবার যে কবে দেখবো মা তোমায় জানি না। মন খারাপ হলেই প্লেন থেকে নেমেই তোমায় আর বাবাকে কিভাবে এয়ারপোর্টে দেখবো, সেই দৃশ্য কল্পনা করেই কাটাই। আরো ১৭৫, কিংবা ৩৫০ দিন হয়তো এভাবে কল্পনা করতে হবে এবারের মতো। তারপর ৩০ দিন স্বপ্নের মতো কেটে যাবে, এরপর আবার শুরু হবে কল্পনা আর দিন গুনে প্রবাসের জড়-জীবন।



ভালবাসি মা তোমায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৪৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:


চমৎকার লিখেছেন। ভালবাসি মা তোমায়।

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:৩৫

মেঘপিয়ন বলেছেন: :)

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

মাক্স বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিকথা।
আর গান গুলাও সুন্দর!

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:৩৫

মেঘপিয়ন বলেছেন: ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্যে।

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০২

দূরে থাকা মেঘ বলেছেন: আরে,আমাকে ক্ষমা করুন। আমি নিজেই কি জানতাম আপনি এরকম ভাবে মিস করবেন?
আমি ও বাসা থেকে দূরে থাকি,তবে আপনার মতোন এতো দূরে না। তবুও নিজের ভালবাসাটা এত সুন্দর করে প্রকাশ করতে পারিনা। মা ফোন দিলেও আমি কথা বলতে পারিনা।শুনি। আপনি এত সুন্দর করে লিখলেন! ধন্যবাদ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:৩৪

মেঘপিয়ন বলেছেন: আমি নিজেই কি জানতাম নাকি! গানটা শুনতে শুনতে দেখি সবগুলো লাইন আমার সাথে মিলে যাচ্ছে।

ক্ষমা কেন! শুধুমাত্র ধন্যবাদ বুঝে নিন, কারণ আপনি বলাতেই আমি গানটা সেইদিন সারারাত ধরে শুনে স্মৃতিকাতর হতে পেরেছিলাম। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.