![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
মেয়েদের সমস্যা
-------------------------------------
অনেকদিন ধরেই এই ইস্যুটা নিয়ে কিছু লিখবো লিখবো ভাবছিলাম কিন্তু, সময়ের অভাবে লিখতে পারি নি ।
মেয়েদের মাসিক নিয়ে ছেলেদের উৎসাহ সেই ছোট থেকেই দেখে আসছি । স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে "সেক্স" আর "মেয়েদের মাসিক" এই দুটি বিষয় নিয়ে এতো আগ্রহ যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় । ক্লাস এইটে পড়ার সময় এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করেছিল, "বল তো, মেয়েদের মাসিক কেন হয়?" সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম মাসিকের কারণ । ব্যাপারটা আমাদের কাছে সাধারণ মনে হলেও অধিকাংশ ছেলের চেহারায় কেমন যেন একটা বিশ্রী ভঙ্গি দেখেছিলাম। আর এসব নিয়ে কিছু ছেলের মাথাব্যথা তো আকাশচুম্বী । কোচিং এ কোন মেয়ে এক-দুই দিন না এলেই ছেলেগুলোর মুখে মুচকি হাসি চলে আসতো, চুপিচুপি কি যেন বলে নিজেরাই হাসতো । আর "মাসিক" নিয়ে নানা জোকস এর তো অভাব নেই । জ্যাম-পাউরুটির জোকস শোনেনি এমন মানুষ হয়তো খুব কম রয়েছে । রাস্তায় কোন মেয়ে যদি পা একটু ফাঁক করে হেঁটে যায়, তবে ছেলেদের মাথায় একটা কথাই আসে "মাসিক" । কয়েক মাস আগে এক মেয়ে ফেসবুকে "Happy to bleed" লিখেছিল দেখে কিছু মানুষ তাকে বিদ্রূপ করে নাম দিয়েছিল "ঋতুস্রাব সেলিব্রেটি।" আসলে মেয়েটার সাহস ও সৃজনীতে আমি বিমুগ্ধ। তার চাইতেও বেশী মুগ্ধ, অনাগত সন্তানের মায়ায় একজন নারী নিজে মা না হয়েও এক অমানুষিক স্যাক্রিফাইস করতে শুরু করেছে তার কিশোর বয়সেই । আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল কয়েক বছর আগে । বাস্তব কিনা জানিনা তবে এক ট্রল পেজে পড়েছিলাম আমি । জোকস টি ছিল এমন, অষ্টম শ্রেণির একটি মেয়েকে তার ক’জন পুরুষ সহপাঠী জিজ্ঞাসা করে – ‘বল তো স্যানিটারি ন্যাপকিন আর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মধ্যে মিল কোথায়?’ মেয়েটা মাথা নাড়ে৷ ‘এটাও জানিস না? উত্তর হলো – গিভ মি ব্লাড, আই উইল গিভ ইউ ফ্রিডম ।’ ব্যাপারটা লজ্জাজনক হলেও খুব বাস্তব । আমাদের সমাজে আরেকটি "প্রথা"-র প্রচলন আছে । রোজা'র সময় কিছু ছেলে ইচ্ছে করেই তাদের মেয়ে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে বসে, "কিরে, তুই কি রোজা রেখেছিস?" মেয়েটা হয়তো মাসিক হওয়া সত্ত্বেও বলে সে রোজা রেখেছে । কারণ মেয়েটাও জানে "না" বললেই ছেলেটার মুখে সেই পশুত্বের হাসি ভেসে আসবে । এছাড়াও ফার্মেসিতে গিয়ে খুব কম মেয়েই আছে যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলে যে তার প্যাড লাগবে । মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের ছেলেদের এসব নোংরামির কারণ কী ? শিক্ষার অভাব নাকি নৈতিকতার অভাব ? আসলে আমরা ছেলেরা কজন জানি মাসিক হওয়ার প্রকৃত কারণ ? কেন আমরা কোন মেয়ের মাসিক হলে ওভাবে হাসি ? প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই মেয়েদের মাসিক বা ঋতুচক্র বলে।মেয়েদের মাসিক এর তিনটি অংশ, ১মটি চারদিন স্থায়ী হয় (৪-৭ দিন) এবং একে মিনস্ট্রাল ফেজ, ২য়টি ১০দিন (৮-১০ দিন) একে প্রলিফারেটিভ ফেজ এবং ৩য়টি ১৪ দিন (১০-১৪ দিন) স্থায়ী হয় একে সেক্রেটরি ফেজ বলা হয়। মিনস্ট্রাল ফেজ এই যোনি পথে রক্ত বের হয়। ৪-৭ দিন স্থায়ী এই রক্তপাতে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকণিকা ছাড়াও এর সাথে শ্বেত কণিকা, জরায়ু-মুখের মিউকাস, জরায়ুর নিঃসৃত আবরনি, ব্যাকটেরিয়া, প্লাজমিন, প্রস্টাগ্লানডিন এবং অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে থাকে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের যৌথ ক্রিয়ার মেয়েদের মাসিক এর এই পর্বটি ঘটে। প্রলিফারেটিভ ফেজ ৮-১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শুধু ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এটি হয়। এই সময় জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বাণুকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্ততি নেয়। মেয়েদের মাসিক এর সেক্রেটরি ফেজ টা সবচেয়ে দীর্ঘ, প্রায় ১০ থেকে ১৪ দিন। একে প্রজেস্টেরন বা লুটিয়াল ফেজ ও বলা হয়। এটিও ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন উভয় হরমোনের যৌথ কারণে হয়। এই সময় নিষিক্ত ডিম্বাণুর বৃদ্ধির জন্য জরায়ু সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়ে থাকে।
অনেক বছর আগে একজন বয়োবৃদ্ধ নারী বলেছিলেন যে, মাতৃগর্ভে সন্তান তার মায়ের মাসিকের রক্ত খেয়ে ৯ মাস বেঁচে থাকে। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পিরিয়ড কিন্তু বন্ধ হয় না, নারী ডিম্বাণুসহ রক্ত ঠিকই পরিশোধিত হয়, তবে সেটা আর বাইরে বের হয় না। কারণ সেই রক্ত দিয়েই পেটের ভ্রনটা জীবনধারণ করে। মজার ব্যাপার হলো, সেই রক্ত আমাদেরকে মুখ দিয়ে খেতে হয়নি। নাভির নালি দিয়ে প্রকৃতি খাবার দেবার ব্যবস্থা করেছে। মায়ের মাসিকের রক্ত সেই নালি দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করেছে। আমি জানি না তিনি সঠিক বলেছেন কিনা। সত্য হলে সৃষ্টিকর্তার বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। মাসিকের সময় একটা মেয়েকে কি পরিমাণ নিদারুণ agony এর ভেতর দিয়ে যেতে হয়, সেটা আমাদের সমাজের অনেক ছেলেই জানে না। জানলে হয়তো তারা মাসিক নিয়ে টিজ করতো না। মেয়েদের জন্য পিরিয়ড অবশ্যই আনন্দদায়ক কিছু না! ব্যাথাদায়ক। কিছু কিছু কিশোরী মেয়ের জন্য তীব্র যন্ত্রণাদায়ক। ছেলেদের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, কোন কোন মেয়ে ব্যথায় অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যায়। (পিরিয়ডের এই তীব্র-অমানুষিক ব্যথাকে "ডিসমেনুহরিয়া"/Dysmenorrhea বলা হয়!) এমনকি আমার এক বান্ধবীকে জানি, যে শুধুমাত্র পিরিয়ডের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তড়িঘড়ি করে বিয়ে করেছে। কারণ তাকে বলা হয়েছিলো, বিয়ের পর ব্যথা সেরে যায়। যত ব্যথাই হোক না কেন, তবু কিছু নারী হাসিমুখে এটা মেনে নিচ্ছেন অনাগত সন্তানের কথা ভেবে। কারণ ডাক্তার বলেছিলো, বার্থ কন্ট্রোল পিল খেলে ব্যথা কমবে। বিয়ের পর হয়তো অধিকাংশ মেয়ের পিরিয়ডজনিত ব্যথা খানিকটা সেরে যায়, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসের ৪-৭ দিন ধরেই এই অমানুষিক যন্ত্রণা আর স্যাঁতস্যাঁতে-অস্বস্তিকর অবস্থার ভেতর দিয়ে তাদের যেতে হয়। মাসিকের হওয়া না হওয়া, স্থায়িত্বের পরিমাপ সবটাই মানব নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পৃথিবীর মনুষ্য প্রজাতির বংশ বিস্তারের জন্য এই ব্যাপারটা খুবই প্রয়োজনীয়। এষ্ট্রজেন নামক বিশেষ এক ধরনের হরমোনাল ডিসচার্জের কারণে এই সময়ে মেয়েদের ভেতরকার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সিগনিফিকেন্ট পরিবর্তন হয়; ঘন ঘন মুড সুইং করে; মেজাজ খিটখিটে থাকে, স্তনে ও তলপেটে অসহ্য ব্যথা হয়। মেয়েদের গলার স্বর বদলে যায়, শরীর স্ফীত হয়, যোনী ও স্তনের আকার বড় হয়। এমনকি অনেক মেয়ের ডায়রিয়া ও প্রচণ্ড মাথাব্যথাও হয়। ( অর্থাৎ, টিভি বিজ্ঞাপনে আমরা যেমনটা দেখি যে মাসিকের সময় মেয়েরা লাফ ঝাপ করে দৌড়াদৌড়ি করে, বাস্তবে মনে হয় ব্যাপারটা অমন নয়) । এই সময়ে মেয়েদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিধ্বস্ত থাকে বলে, প্রেমিক বা স্বামী পুরুষটির উচিত তার সঙ্গিনীর প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও আন্তরিক আচরণ করা। তাকে বোঝার চেষ্টা করা, বিনা কারণে ঝাড়ি খেলেও হাসিমুখে হজম করে ফেলা। পিরিয়ডের সময় একটা মেয়ের জন্য এটা বিশাল একটা উপকার।
আমাদের ছেলেদের যখন খৎনা হয়, তখন তো কোন মেয়ে টিজ করে না আমাদের । তবে আমাদের ছেলেদের মানসিকতা এমন কেন ? যেখানে একটি মেয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মান তথা "মা" হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে সেখানে আমরা ছেলেরা তাদের নিয়ে বিদ্রূপ করি । এমন ছেলেদের লজ্জা হওয়া উচিত । প্লিজ নিজেদের নোংরা মানসিকতা বদলান । মনে রাখবেন, আপনার মায়েরও মাসিক হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতেই আপনি এই পৃথিবীতে এসেছেন ।
তথ্য: ডাঃ সুরাইয়া শবনাম, ডাঃ (হবু) চৈতি খন্দকার এবং উইকিপিডিয়া ।
©somewhere in net ltd.