![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
সাঁওতাল পল্লীতে
----------------------------------------------
(পর্ব-১)
সময়টা ২০০৭ সাল।তখন আমি নাজির আখতার কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের ছাত্র।কলেজের বার্ষিক বনভোজনে সেবার আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো দিনাজপুরের সিংড়া শাল বনে। ঠিক কবে গিয়েছিলাম দিন তারিখ মনে নেই।অবশ্য আমার পুরনো ডায়েরি খুজে দেখলে সেটাও বের করা সম্ভব।কেননা ছোট থেকেই আমার একটা স্বভাব ছিলো যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন সাথে একটা প্যাড খাতা অথবা ডাইরি থাকতো ভ্রমনের খুঁটিনাটি সেখানে লিপিবদ্ধ করে রাখতাম। কিন্তু ইচ্ছা করেই পুরনো ডাইরি আর খুলতে চাচ্ছি না।যথারীতি আমাদের ভ্রমনের উদ্দেশ্য কলেজ চত্তর থেকে ৪ টি বাস রওনা হলো সকাল ৭/৮ টার দিকে।দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ১১ টার নাগাদ আমরা সিংড়া বনে পৌছলাম।সবাই যে যার মতো করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রবেশ করলাম শাল বনের মধ্যে।বনে সেকি লম্বা লম্বা শাল গাছ, সব খানেই একধরনের নিস্বব্ধতা।একটা পাখির ডাক যে শুনবো সেটাও নেই।শুধু আমাদের কথাগুলোই বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে কানে।আর কিছুদূর পর পর উচু মাঝারি ধরনের উই পোকার টিবি।তবে সেগুলো আকারে বেশ বড় ও এবড়ো থেবড়ো।আবার মাঝে মাঝে আমরা ছোট বেলায় কলাপাতা দিতে যেরকম ঘর বানাতাম ঠিক তেমন শাল গাছের পাতা দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানানো।কিন্তু সেগুলো কিসের জন্য তৈরি বা কারা বানিয়েছে তা জানাটা ছিলো দূরহ।কেননা জংগলের এদিকটায় আমরা ছাড়া কোন জনমানবের চিহ্ন নেই।ভয়ে ভয়ে আমরা প্রায় বনের মধ্যে চলে গেলাম। আর অগত্যা সেসব উই টিবির সাথে তখনকার ফিল্মের ক্যামেরার গুনে গুনে ছবি তোলা চলছে।গুনে গুনে এই জন্য বলছি কেননা তখন একটা ফিল্মে ৩০ টির বেশি ছবি তোলা যেত না।ভাগ্য যদি সুপ্রশন্ন থাকতো তবে ফিল্মের ৩০ টি নেগেটিভ এর জায়গায় ৩২ টা পর্যন্ত থাকতো।অবশ্য এখনকার কথা ভিন্ন।এখন তো ইচ্ছা করলেই হাতের মুঠোফোন দিয়েই শতশত আইকন ছবি তোলা যায়।তো আমরা বনের মাঝামাঝি গিয়ে একটু জনমানবের সাড়া শব্দ পেলাম। দূরে কেউ একটা কিছু করছে আর সেখান থেকে কুঠার দিয়ে গাছে আঘাত করার শব্দ কানে আসছে।আমরা এগিয়ে যেতেই তারা ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আমরাও তাদের দেখে কিছুটা ইস্তত।কেননা ওদের কয়জনের হাতেই ছিলো লম্বা হাতল ওয়ালা একধরনের দা প্রকৃতির অস্ত্র। যেটা আমাদের এখানকার অস্ত্র গুলোর সাথে আকার আকৃতির দিক দিয়ে কোনভাবেই মেলানো যাবে না।দুজন মহিলা আর তিনজন পুরুষ মানুষ।পুরুষের একজনের পরনে খুব খাটো করে ধুতি পড়া আর দুজনের পরনে লুংগির মতো খাটো করে পেচানো কাপড়।তবে সবার গা উদোম।আর মহিলা গুলো তাদের সীনা থেকে হাটু পর্যন্ত একটা লম্বা কাপড় দিয়ে পেচিয়ে রেখেছে।শরীরের বাকি অংশ তাদেরও উদোম। গায়ের রং কিছুটা পোড়া বেগুনের মতো কালচে ধরনের।তবে দেহ গুলো বেশ সুঠাম।মহিলাগুলোর গলায় বেরির মতো গয়না আর হাতে দাবনাতে সেই একই রকম গয়না।নাকে নাকের সাইজের চাইতে মস্তবড় একটা করে নাকফুল। তাদের দেখে আমরা যতোটা ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু তারা সে ভয় অভয়ে পরিনত করে ফেললো কিছুক্ষনের মধ্যেই। তাদের হাতের অস্ত্র নামিয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করলো যে আমরা কোথা থেকে এসেছি।কিন্তু তার আগে তারা তাদের নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলাপ সেরে নিলো তাদের ভাষায়।যে ভাষা আমাদের বোঝা মোটেও সম্ভব না।প্রথমে ভেবেছিলাম তারা হয়তো বাংলা বলতে পারবে না, কিন্তু না তারা আমাদের সাথে অনর্গল বাংলায় কথা বলে যাচ্ছিলো।আমরা বললাম যে আমরা বগুড়ার একটা কলেজ থেকে পিকনিকে এসেছি।আরো অনেকেই আছে।পিকনিকে এসেছি শুনে তারাও কিছুটা আন্দিত বলে মনে হলো।"ও আপনেরা তাইলে পিকনিকে আসছেন। অনেকেই তো আসে "। অনেক কথা শেষে তাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম এ জংগলের শেষ প্রান্তে তাদের পাড়া আছে।যেটা সাঁওতাল পাড়া।সাঁওতাল পাড়ার গল্প শুনে সেখানে না গিয়ে কি আর থাকা যায়।তাদের কাছ থেকে সাঁওতাল পাড়া যাবার রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে আমরা মানে আমাদের গ্রুপে যারা ছিলাম তারা সবাই সাঁওতাল পাড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।কিছুদুর যাবার পর আমরা বনের জংগলের ফাঁকফোকর দিয়ে সাঁওতাল পাড়ার অস্তিত্ব খুজে পেলাম।জংগল পেরিয়ে দেখলাম সাঁওতাল পাড়াতে যাবার জন্য একটা সরু কাচা রাস্তা।আর রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট ক্ষেতের জমি।যে জমিগুলোতে মহিলাদের কাজ করতে দেখলাম।মহিলারাই নিড়ানী দিচ্ছে,ফসল কাটছে আবার কেউ কেউ সেগুলো মাথায় চাপিয়ে তাদের বাড়িতেও নিয়ে যাচ্ছে।---------
(চলবে)
©somewhere in net ltd.