নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাঁওতাল পল্লীতে

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৬

সাঁওতাল পল্লীতে
-----------------------------------------------

(পর্ব -২য়)

সরু মাটির কাচা রাস্তাটি সোজা চলে গেছে সাঁওতাল পাড়ার মধ্যে দিয়ে।এই সরু কাচা রাস্তার দু ধারেই সাঁওতালদের ছনের চালা আর মাটির দেওয়ালের ছোট ছোট ঘর।দুটো কি তিনটে করে এরকম ঘর নিয়ে একেকটি বাড়ি।আর বাড়ির ফাকা অংশগুলো কলার পাতার বেড়া দিয়ে ঢাকা।আমরা পাড়ার ঠিক প্রথম মানে আমাদের যাবার পথে রাস্তার সাথে প্রথম যে বাড়িটা সেটাতে গেলাম।বাড়িতে ঢোকার পথেই দুটো জবা ফুলের গাছ।গাছে বেশ লাল লাল জবা ফুল পুরো বাড়ির শোভা বর্ধনেই যেন নিয়োজিত।ও দিকে দীর্ঘক্ষন কাচা মাটির রাস্তায় চলার ফলে আমাদের সবার পায়ের সাথে মোটা ধূলোর আস্তরন। সেগুলোও ধুয়ে পরিষ্কার করাটা বেশ জরুরী বলেই সেই মহূর্তে মনে হয়েছিলো।তাই সাঁওতাল বাড়িতে প্রবেশ না করে উপায় নেই। আমরা সাঁওতাল বাড়িতে কোন রকম বাধার বা প্রশ্নের সম্মুখীন ছাড়াই প্রবেশ করতে পেরেছিলাম।কেননা তখন সেই বাড়ির সকল সদস্যই বাড়ির ভিতরে তাদের দুপুরের আহার গ্রহনে ব্যস্ত।তাই প্রশ্ন কর্তা কেউ তখন উপস্থিত নেই।বাড়ির ভিতরে প্রথমেই একটা গভীর নলকূপের দেখা পেলাম।দ্রুত সেখানে গিয়ে আমরা যে যার মতো করে হাত মুখ ধোয়ার কাজ শেষ করলাম, কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনটুকু মনে করি নাই, যেন এ বাড়ি আমাদেরই।হাত মুখ ধোয়া শেষে পিছনে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন চুলার পাড়ে বসে খাবার খাচ্ছে।পাশে ছোট একটা ছেলে দু পা ফাক করে পাছা মাটিতে ঠেকিয়ে কাসার থালায় দেয়া খাবার চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে কতোই না আনন্দ পাচ্ছে।সবার সামনেই সোনালী রংগের কাঁসার প্লেট। প্লেটের সামনে একটা করে কাঁসার গ্লাস।পাছার নিচে কাঠের ছোট ছোট টুকরো সেটে দিয়ে ব্যাঙ মোড়ার মতো বসে একেকজন খাচ্ছে।কাঠের টুকরো এজন্য বলছি কেননা আমাদের এখানে সাধারনত এরকম কাঠের টুকরোর নিচে দুপাশে দুটি খুড়া থাকে যা কাঠের টুকরা গুলোকে একটু উচু করে রাখে।যাকে আমরা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় পিড়ে বলে থাকি।কিন্তু ওটার নিচে সেরকম কিছু ছিলো না।পুরোটাই মাটির সাথে সেটে ছিলো।

আমাদের দেখে খাওয়া শেষ না করেই একজন মেয়ে মানুষ, সম্ভবত তিনি ঐ বাড়ির কর্তৃ টাইপের কেউ হবেন, তিনি উঠে এসে আমাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন।আমরা কে, কোথা থেকে এসেছি, এখানে কি চাই ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন? আমাদের বৃহৎ দলের পক্ষে এক এক করে তার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রইলো।যেন কোন কিছুতেই প্রশ্ন কর্তার কোন প্রশ্নের উত্তর মিস্টেক না হয়ে যায়।কেননা মিস্টেক হলেই নির্ঘাত ফেল করার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিলো।আসার আগেই কিছুটা শুনেছি যে, এসব সাঁওতালরা নাকি আমাদের মতো বোকাসোকা বাঙ্গালীদের একদম সহ্য করতে পারে না।দেখলেই মারার উদ্দেশ্য তেড়ে আসে। যেখানে দেখা না দেখার প্রশ্ন আর সেখানে আমরা ওদের কোন পারমিশন ছাড়াই একেবারে বাড়িতে ঢুকে পড়েছি।ভয় একটাই একটু এদিক ওদিক হলেই সব শেষ। কিন্তু কি অবাক ব্যাপার কোথায় তারা তাদের বাড়িতে বিনা পারমিশনে প্রবেশের দায়ে একহাত নিবে তা নয়।উল্টো ওরকম আরো কয়েকটা কাঠের টুকরো এনে তাদের মাটির বারান্দায় পেতে আমাদের বসতে অনুরোধ করে যাচ্ছে!

আমাদের দলের কেউ কেউ নিজেদের একটু জাহির করার জন্য হোক আর ভাব বা ভয় যেটাই হোক না কেন তদের অনুরোধের প্রতি উত্তরে বলেই যাচ্ছে, থাক লাগবে না আমরা বসবো না।এখনি চলে যাবো। আমার কিছুটা পানির পিপাসা পাওয়ায় পানি খাওয়াটা জরুরি।তাই ঐ কর্তৃকে বললাম আমাকে একটু পানি খাওয়াবেন। আমার এমন পানি খাওয়ার কথা শুনে দলের কয়েকজন তো মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে আগমন করলো।একটু ভ্রূ কুচকে, কি তুই এখানে পানি খাবি? ওর প্রশ্নের ধরন শুনে মনে হচ্ছে আমি কি না কি খেতে চেয়েছি যা এরা কোনদিন দেখেওনি আর তার নাম ও শুনেনি।একটু পর আমার জন্য মানে অতিথিয়তার উদ্দেশ্যে সাঁওতাল বাড়িতে একটা কাসার গ্লাস মাজা ঘষার কাজ শুরু হয়ে গেলো।সাথে সাথে ওদের সাঁওতালী ভাষায় একজন কে কি যেন নির্দেশ করা হলো আমরা কেউই সেটা বুঝতে পারলাম না।নির্দেশ শুনে একটা ছোট মেয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো।ঘরে কোন জানালা নেই তাই বারান্দায় বসে ঘরের ভিতরে কি কি আছে তা দেখা মোটেও সম্ভব না।একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার।শুনেছি সাঁওতালরা নাকি ভ্রমর খুব ভয় পায়।সে জন্যই ঘরে কোন জানালা রাখে না যাতে জানালা দিয়ে ভ্রমর ঘরে ঢুকে না পড়ে।

সাঁওতাল বাড়িতে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, ওদের বাড়ির উঠোন, বারান্দায় বসার জায়গা, চুলোর পাড়, বাড়ির বাহিরের জায়গা সব কিছুই অনেক পরিপাটি গোছানো। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনার চিহ্নমাত্র নেই।লেপে পুছে একেবারে সব তকতক করছে যেন মাটিতে গড়াগড়ি খেলেও এক চিমটি ধূলোও গায়ে জড়াবে না।ঘরের উচ্চতা কিছুটা খাটো।মাটির দেয়াল, ছনের চালা, বারান্দার খুটি গুলোও মাটি দিয়ে পেচানো পেচানো ডিজাইন করে তৈরি।মাটির দেয়ালে লতা -পাতা,ফুল,পাখির প্রতিকৃত কারুকার্য।সাথে লাল আর বিশেষ এক ধরনের রং দিয়ে এসব প্রতিকৃতি জীবন্ত করা হয়েছে।সত্যিই বিমোহিত করার মতো দৃশ্য ঘরের চারদিকের দেওয়ালের সর্বত্র।না দেখলে শুধু বর্ণনা করেই এর রুপ তুলে ধরা যাবে না।আরও একটা উপকরন দেখে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম আর সেটা হলো সাঁওতালদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত ঝাড়ু।ঘাস জাতীয় একপ্রকার গাছের ফুলের ডাটা দিয়ে বুবুন তারপর পেচিয়ে পেচিয়ে এমন একটা আকৃতি দিয়ে বানানো যা দেখলে অবাক হতে হয়।অনেক ইচ্ছা হচ্ছিলো ওদের কাছ থেকে ঝাড়ুটা চেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি।আমার আবার এমন অভ্যাস অনেক আগে থেকেই আছে।কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার বিশেষ কোন জিনিস কিনে ঘরে রাখা।তাদের কাজের জন্য ব্যাবহৃত ঝুড়িগুলোও বিশেষভাবে তৈরি।

ইতিমধ্যেই ঘর থেকে মেয়েটি কাসার একটা বাটিতে কিছু চাল ভাজা আর গুড় এনে আমার সামনে ধরেছে।বাটিটা বেশ পুরোনো বলে মনে হচ্ছে, কেননা বাটির গায়ে কয়েক জন্মের আস্তরন লেগে আছে তা থেকে এর বয়স অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।ওদিকে চাল ভাজা কি করবো ভাবতে ভাবতেই চকচকে কাসার গ্লাস ভর্তি পানি সহ একটা কালো খসখসে চামড়ার মোটা বেড়ি পরিহিত হাত এসে উপস্থিত।মাথা উপরে তুলতেই দেখি ঐ বাড়ির সেই কর্তৃ যিনি গ্লাসটি মেজে ঝকঝকে করতে গেছিলো-------

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.