নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাঁওতাল পল্লীতে

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০০

সাঁওতাল পল্লীতে
-------------------------------------------------

(পর্ব-৩)

মৃদু হেসে বাবা নেন পানি খান। হাসির কারনে তার ঠোট দুটো যতটুকু ফাক হয়েছে তাতেই তার সাদা ঝকঝকে দাতগুলো দেখা যাচ্ছে।জি আচ্ছা বলে তার হাত থেকে গ্লাসটি নিজের হাতে নিয়ে নিলাম। গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে তৃষ্ণা নিবারন করে মনে হলো মরুভূমিতে পানি ঢালছি।কত জনম ধরে এখানে কোন বৃষ্টির দেখা নেই সব খা খা করছে।বাবা এই নেন গরিব গো বাড়িতে শুধু খালি পানিই খাইবেন। এই চাল ভাজা টুকু খান। আমরা গরিব মানুষ বাবা, এর বেশি ঘরে কিছু নাই।আমার সাথের বন্ধুরা সবাই হা করে এসব দেখছে। কারো মুখে কোন কথাই নেই।কথা থাকবে কি করে ওদের মতে আমি তো ভিন গ্রহের কারো বাড়িতে অতিথিয়তা গ্রহন করছি।সেখানে ওদের সামিল হওয়ার প্রশ্নই আসে না।বাটি হাতে নিয়ে দু মুঠ চাল ভাজা মুখে পুরে চাবাতে চাবাতে বাটিটা ওনার হাতে দিয়ে বললাম, নিন আর খেতে পারছি না। কিন্তু পেট তো ভিন্ন কথা বলে। সেই সকাল ৭ টার সময় বাড়িতে একটু নাস্তা করে বেরিয়েছিলাম।পথে কলেজের পিকনিক আয়োজকদের তরফ থেকে একটা পাউরুটি, একটা লাড়ু,আর একটা কলা সকালের নাস্তা হিসেবে পেয়েছি সবাই।সে নাস্তা তো সেই গাইবান্ধা পার হতে হতেই সাবাড়।তারপর পেটে আর কিছু পড়েনি।এখন বিকাল ৩ টার কাছাকাছি। এতোক্ষন না খেয়ে পেট খালি চো চো করছে।কিন্তু উপায় নেই জঙ্গলে তো আর শহরের মতো খাবারের দোকান নেই যে মন চাইলেই কিছু কিনে পেটের রাক্ষস টাকে ঘুমাতে পাঠাবো।পাবোই বা কি করে এখানে একটা লজেন্স যে কিনবো সে রকম দোকানও কোথাও দেখলাম না।পেট ভরাতে হলে আবার সেই বন বিভাগের স্পটে যেতে হবে। কেননা ওখানেই আমাদের জন্য খাবার রান্নার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে।গেলেই গরম গরম প্লেটে ঢালবে,আর তাতেই পেটের রাক্ষস ক্ষান্ত।সেতো এই জঙ্গলের ঐ--- পাড়ে।

যাই হোক বাটিটা ওনার হাতে দিয়ে বললাম আর খাবো না।উনার প্রশ্ন এই দুই মুঠ খেয়েই কি হয় বাবা আর একটু নেন।আমি না না আর না, বলে গ্লাসের বাকী অর্ধেক পানিটুকু গলায় ঢাললাম। আমার ফেরত দেওয়া চাল ভাজা উনি তখন বাকিদের খেতে বলতেই সব না না করে উঠলো।না না আমরা খাবো না।কয়েকজন তো আমার দিকে এমন ভ্রু কুচকে বারবার তাকাচ্ছে যেন আমার সাথে ওদের কয়েক জন্মের শত্রুতা।

এবার আমরা সাঁওতাল পাড়ার অন্য বাড়িতে যেতে চাইলে বাড়ির অন্য এক সাঁওতাল পুরুষ জানালো এখন পাড়াতে কেউ খুব একটা নেই।সবাই জমিতে আর জঙ্গলে কাজে গেছে।তারাও কাজে গেছিলো দুপুরে খাবারের জন্য বাড়িতে এসেছে।এখন খাওয়া শেষে আবার সবাই জঙ্গলে আর জমিতে কাজে যাবে।ওদের কথা শুনে এটা নিশ্চিত হলাম যে, সাঁওতাল পুরুষ নারী সবাই খুব কর্মঠ।ঘরে বসে থাকার মতো মানুষ এরা নয়।অবশ্য সে প্রমান সাঁওতাল পাড়ায় আসার আগেই তো দেখেছি।মাঠে আর জংগলে সবাই কিভাবে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। জঙ্গলে আসার সময় জেনেছিলাম সাঁওতালরা নাকি খুবই ভয়ংকর,এরা আমাদের মতো বাঙ্গালীদের দেখতে পারে না।দেখলেই বড় বড় দা নিয়ে তেড়ে আসে। কিন্তু এখানে এসে এদের অতিথিয়তা দেখে মনেই হচ্ছে না আমরা অন্য একটা জাতির বাড়িতে পারমিশন ছাড়াই ঢুকে ওদের দেয়া চাল ভাজা গিলছি আর ওরা আমাদের দেখে কিছুই বলছে না।বরং তারা আমাদের ভালো কিছু খাওয়াতে পারলো না বলে আফসোসের শেষ নেই। এবার তাদের ঝামেলা আর না বাড়িয়ে আমরা বিদায় নিলাম। সাঁওতাল বাড়ির বাইরে এসে ছবি তোলার লোভ আর সামলাতে পারছি না।সাথে ৩০ নেগেটিভ ওয়ালা ফিল্মের ক্যামেরা নিয়েগিয়েছি কি সাধে।সেতো ছবি তুলবো বলেই নাকি! এখানে একটা ঘটনা আছে।ক্যামেরা আমার, ফিল্মও কিনে নিয়ে গিয়েছি আমি, কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর রাসেল আর রনি ভাগ বসালো। ওদের কথা ওরাও ছবি তুলবে আলাদা আলাদা করে।কিন্তু ওদের কাছে কোন ক্যামেরা নেই।তাই আমার এখান থেকে ওদের দুজন কে ৭টা ৭টা করে ১৪ টা ধার দিতে হলো।অবশ্য ১৪ টা ছবি তোলার বিপরীতে পরে টাকা দেওয়ার চুক্তিতেই কেবল রাজি হয়েছিলাম।

সাঁওতাল বাড়ির বাইরে ঘরের দেওয়ালে যেসব কারুকার্য খচিত লতাপাতা, পাখি আকা ছিলো সেগুলোর সাথে দাড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।ওরাও ছবি তুললো বিভিন্ন স্টাইলে দাড়িয়ে।তবে গ্রুপ ছবির চাইতে একক ছবিই তোলা হলো বেশি। কেননা সবাইকে যে হিসাবের মধ্যেই ছবি তুলতে হবে।আমরা সাঁওতাল পাড়ার অন্য বাড়িগুলোতে আর গেলাম না, সোজা আবার সেই মাটির সরু রাস্তা ধরে জঙ্গলের দিকে হাটা শুরু করলাম।তবে এবারের যাত্রা ঠিক জঙ্গলের অন্য পথে মানে দূর থেকে দেখাই যাচ্ছে জঙ্গলের ও ধারে একটা উচু পাড় বাধানো পুকুর।

একটু এগতোই বাঙ্গালীদের মতো শাড়ি পরিহিত এক সাঁওতাল মহিলার সাথে দেখা।তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন যে আমরা কোথা থেকে এসেছি? বিপুলের দোলনের উত্তর আমরা বগুড়া থেকে পিকনিকে এসেছি।আর এখানে সাঁওতাল পাড়া বেড়াতে এসেছি।তিনি বললেন ও আপনাগো সাথে তালে আরো অনেকে আছে।চার্চ এর ঐদিকে দেখলাম আরো কয়জন।আপনাগো পিকনিকেরই হইবো।চার্চ ----? মানে এখানে চার্চ ও আছে আমাদের বিস্মিত প্রশ্ন? মহিলা উত্তর দিলো হুম ঐ যে পুকুর পাড় দেখতাছেন না,? ওর ঐ পাড়ে আমাগো চার্চ আছে।তার মানে আপনারা সবাই খ্রীষ্টান? প্রশ্নটি আমার অজান্তেই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো।হুম আমরা যারা এই পাড়াই আছি তারা সাবাই খ্রীষ্টান। আগে আছিলাম না।এখন সগলেই খ্রীষ্টান হইছে।এতোক্ষন কিন্তু আমাদের মাথায় এ প্রশ্ন আসেনি তারা কোন ধর্মের।কিন্তু এখন এই মহিলার কাছে জানতে পারলাম এরা সবাই খ্রীষ্টান ধর্মের।কিন্তু সেই সাথে এটাও জানা হলো এরা আগে অন্য ধর্মের ছিলো।কিন্তু এখন খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করেছে।কিন্তু আগে কোন ধর্মের ছিলো সেটা জিজ্ঞেস করার কথা বেমালুম ভূলে গেলাম।কারন আমাদের চোখের সামনে তখন খ্রীষ্টান চার্চ দেখার প্রবল আগ্রহ বারবার দৃশ্যপট হয়ে ভেসে চলছে।এর আগে কখনো খ্রীষ্টানদের উপাসনালয় বা চার্চ দেখার সৌভাগ্য হয়নি।আর দেরি না করে ওনার থেকে চার্চে যাবার রাস্তাটা দেখিয়ে নিয়ে সোজা সেদিকে হাটা শুরু করলাম।

পুকুরের পাড় পার হয়ে আমরা আরেকটা রাস্তার দেখা পেলাম।সেটেও সেই আগের রাস্তার মতোই সরু অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা আর মাটির ধূলোর কারখানা।আমরা সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই চার্চের মাথায় স্থাপিত যোগ চিহ্নের মতো দেখতে পেলাম।যেটা একদম চার্চ টা ঠিক কোথায় সেটাই নির্দেশ করছে। চার্চের চারিদিকে কাটাতার দিয়ে ঘেরা।কাটাতার গুলো বেয়ে বেয়ে অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির লতাপাতার গাছ একধরনের সবুজ দেয়ালের সৃষ্টি করেছে।দেখে মনে হবে কোন সুদক্ষ কারিগর ওগুলো কাটাতারের সাথে ঝুলে দিয়েছে।---------------

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.