নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈত্রিক সম্পত্তি

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

পৈত্রিক সম্পত্তি
------------------------------------

(পর্ব-০১)





মাঘ মাসের কনকনে হাড় কাপানো শীত।প্রবাদ আছে মাঘের শীতে নাকি বাঘ পালায়।কথাটা কতটুকু সত্য বলতে পারবো না, বা মাঘের শীতে বনের বাঘ কে, কেউ পালাতে দেখেছে কিনা সেটাও জানি না।কি দিন আর কি রাত, সব সময়ই একই অবস্থা। আকাশের কোন পরিবর্তন নেই চারিদিকে ঘন পুরু কুয়াশার আস্তরন পুরো গ্রামটাকে ঢেকে দিয়েছে।এই অতি ঘন কুয়াশা ভেদ করে যেকোন সু-তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পূর্ন মানুষেরও সবকিছু ঠাওর করাটা প্রায় অসম্ভব।সেখানে আসগর আলীর মতো আধমরা, চোখে ছানি পড়া মানুষের পক্ষে মাঘ মাসে দিন রাতের পার্থক্য নির্নয় করাটা প্রায় কেবল কষ্টসাধ্য নয় বরং দূরহ ব্যপারও বটে।তবুও সে চোখ থেকে ভাঙ্গা ফ্রেমের চশমাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করে আর গায়ে জড়ানো শালের এক কোনা দিয়ে চশমা মুছে দিনের কোন সময়টা চলছে সেটা নির্নয় করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। গায়ের শালটা তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া।এই বেশি দিনের  কথা না তার দাদা সেই পাকিস্তান পিরিয়ডে কলকাতা থেকে ১১ টাকা দিয়ে এই দামি শালখানা কিনে এনেছিলেন।দাদা মারা যাবার পর তার বাপ আর তার বাপ মরার পর সে এই শালখানার মালিক হয়েছে।সারা বছর অবশ্য সুটকেসে তোলাই থাকে খালি এই মাঘ মাসের কনকনে শীত এলেই কেবল সে শালখানা গায়ে জড়ায়।বহু সৃতি আছে তার এই শাল খান নিয়ে।

বুড়ো চোখের মাথা খেলে কি হবে দিনের সময় নির্ধারনে বেশ পাকা।বেলার দিকে মানে আকাশে সূর্যের দিকে তাকিয়েই বুড়ো বলে দিতে পারে এখন জোহরের ওয়াক্ত নাকি আসরের।মাগরিবের ওয়াক্ত ও সে দিব্যি বলে দিতে পারে।খালি এশার ওয়াক্ত ঠিকমত ঠাওর করতে পারে না, আর সে জন্যই মাঝে মধ্যি ফজরের আগেও সে এশার নামাজ আদায় করে।বড় ছেলের বউ যেদিন মনে করিয়ে দিতে ভূল করে কেবল সেদিনই তার এশার নামাজ আদায়ে এমন বিঘ্ন ঘটে।
বুড়োর বয়স যখন সবে সাত কি আট হবে তখনই তার দাদা  জমি জিরাতের ব্যাপারে কি জন্য জানি কলকাতা গিয়েছিলো, আর তখনই শখের বসে অতো দাম দিয়ে এই শাল খানা কিনেছিলো,  বুড়ো শুনেছে তার দাদা নাকি শখের বসে তার দাদীর জন্য একখান নদ কিনে এনেছিলো।কিন্তু দাদি  শরমে সেই নদ খানা কোন দিনই নাকে তোলেনি।সেকি আজি কালের কথা বাপু এমন গপ্প বুড়ো প্রায়ই তার নাতিদের শুনায়।বুড়োর বয়স যে ঠিক কতো সে ঠিকঠাক বলতে পারে না।কখনো বলে এই ধর নব্বই আবার কখনো সত্তর আবার কখনো চল্লিশ।বুড়োর বয়সের এমন হের ফেরের গপ্প শুনে নাতিরা হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খায়।এতে অবশ্য বুড়ো খুবই বিরক্ত আর লজ্জিত বোধ করে।মনে মনে ভাবে বয়স আমার যাই হোক বাপু জন্ম আমার পাকিস্তান পিরিয়ডে। এই জম্মে তিন কাল দেখনু।সেকি আজি কালের কথা!
বুড়োর দাদা যখন এই শাল খানা কিনেছিলো তখন কি তাদের জমি জিরাত, গরু বাছুর কম ছিলো? এই যে তাদের বাড়ির আন্দনঘরের পাছে খাড়া হলে যতোদূর চোখ যায় ততদূর আছিলো তার বাপদাদার জমি।বাড়ির উত্তরে আছিলো মস্ত গোলা ঘর।সেটি সারাবছর চাকর বাকরদের আনাগোনা থাকতো।বেশির ভাগ চাকর বাকর সে গোলা ঘরের পাশেই আলাদা খাংকা ঘরে থাকতো।সেকি আজি কালের কথা বাপু? এখন অবশ্য বাড়ির এই কয়েক শতক জায়গা আর তিন চালা পুরোনো টিনের তিনটে বসত ঘর আর দক্ষিনে রান্নাঘর, রান্নাঘরের পাশে দুটো বাছুরের থাকার ব্যবস্থা ছাড়া আর তেমন কিছুই নাই।সব গেছে কপাল দোষে এ নিয়ে বুড়ো প্রায়ই বহু আক্ষেপ নিয়ে চোখের পানি ঝড়ায়।

সবই এখন বুড়োর নাতিদের কাছে শোনানো গপ্প ছাড়া আর কিছুই নয়।নাতিদের অবশ্য প্রতিদিন এই একই গপ্প শুনতে আর ভালো লাগে না, মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে চেংটু বলেই বসে এ দাদা এক গপ্প আর কতো করবু এ গপ্প তো মেলা শুনলেম অন্য গপ্প করেক না।কিন্তু বুড়োর অন্য গপ্পে মন আসে না তার কাছে তার বাপদাদার জমি জিরাতের গপ্প করতেই ভালো লাগে।বুড়ো প্রতিদিনই শোবার আগে নাতিদের তার বাপদাদার জমি জিরাতের গপ্প না শুনিয়ে ঘুমায় না।নাতিদেরও এক গপ্প প্রতিদিন না শুনে উপায় নেই, কেননা বাড়িতে থাকার ঘর মাত্র তিনখানা। একটাতে বুড়োর বড় ছেলে নান্দু আর তার বউ বড় বউয়ের মেয়ে ফুলিজান অন্য একটাতে ছোট ছেলে গেন্দু আর গেন্দুর বউ থাকে।এ ঘরে অবশ্য বুড়ো আর বুড়ি দুজনে থাকতো কিন্তু এক বছর হলো নান্দুর দুই ছেলে থাকছে।নান্দুর দুই ছেলের দেখাদেখি গেন্দুর বউও বড় বউয়ের সাথে ঝগড়া করে আড়ি পেতে তার ছোট তিন বছরের ছেলেকেও রেখে দিয়েছে বুড়োর ঘরে।গেন্দুর বউয়ের সোজা কথা বড় বউয়ের যদি দুইজনের জায়গা হয় তালে পরে আমার একখানের জায়গা হবিনে কে? আমারডা কি বানের জ্বলে ভাইসা আসিছে নাকি। অগত্যা বুড়ি দুই মাস হলো মাটিতে খড় বিছিয়ে ঘুমায়।এ নিয়ে বুড়ো প্রথমে আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত সব মেনে নিয়েছে, কি করবে বড় ছেলে আলাদা খায়, বুড়ো বাপ মায়েক এই গেন্দুই তিনবেলা অন্ন দিচ্ছে।সেখানে কাইজা কেচাল না করাই ভালো, হাজারো হোক কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়, বুড়োবুড়ি সব মেনে নিয়েছে।
ছোটখাটো চকিতে দুজনের জায়গাই হয় কোনমত সেখানে চারজন থাকা অনেক কষ্টের আর তাই বুড়ো নাতিদের নিয়ে চকিতে পাতাল হয়ে ঘুমায়।এতে বুড়োর পা ধরে না,  তার পা বেরিয়ে পড়ে না, হয় গুটিসুটি মেরে থাকতে হয়।কিন্তু নাতিদের অবশ্য সেই সমস্যা হয়না তারা বুড়োর বাপদাদার গপ্প শুনতে শুনতে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়ে।


 (চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪১

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: এটা আপনার জন্য।

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৫

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: পড়লাম। পরের পর্বে যাই...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.