নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈত্রিক সম্পত্তি

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

পৈত্রিক সম্পত্তি
--------------------------------------

(পর্ব-০৩)

আসগর আলী চেচিয়েই যাচ্ছে এ্যা এ্যা  হারামজাদা। এইডা কি করলি। ঐ তুই বাতি জ্বালাস না কে?

বুড়ি অন্ধকারে হাতিয়েই যাচ্ছে। সে বাতি জ্বালানোর জন্য ম্যাচ খুজে পাচ্ছে না। পাবেই বা কি করে গেন্দুর  এই ছেলেটা তো তাকে জ্বালিয়ে খেলো। এর অত্যাচারে কোথাও কোন কিছু ঠিকমত থাকে না।

ঘুমানোর আগেই ভাঙ্গাচোরা এই টেবিলের উপরই তো ম্যাচ টা রেখেছিলো।কিন্তু পুরো টেবিল হাতিয়েও সে এখন তা খুজে পাচ্ছে না।

ও দিকে গেন্দুর ছেলের মেশিনের তেল মনে হয় শেষ,  তাই তার মেশিন খানা আপাদত বন্ধ করে দিয়েছে।কিন্তু মাঝ রাতে আবার তেল ভরে মেশিন চালু করবে,  এটা সে প্রায় প্রতিদিনই করে।তার মেশিনের পানি দিয়ে ফসলি জমিতে পানি না দেওয়া গেলেও অন্তত বুড়োর গায়ের কাপড় চোপর ভিজিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট পানি তার মজুদ থাকে।

কই রে বাতি জ্বালাস না কে?
এতো চিল্লাও কে, দেখনা ম্যাচ খুজি।
তোর ম্যাচ থুস কুন্টি ঠিকঠাক মতো থুবের পাসনে ।

টেবিলের উপরেই তো থুচিলেম। এই বান্দর ছাওয়ালের জন্য কি কিছু থুইয়া শান্তি আছে কও।

হাতাতে হাতাতে অবশেষে ম্যাচ বুড়ি খুজে পেলো টেবিলের ঠিক নিচে বেড়ার কোলঘেষে।
তারাতারি ম্যাচ জ্বালিয়ে সে কুপি বাতি জ্বালিয়েছে। বাতিখানা বুড়োর চৌকির দিকে এগিয়ে নিতেই বুড়ির চোখে পড়লো গেন্দুর ছেলেটা এক দৃষ্টিয়ে বুড়োর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।

এ ছেড়া মুতার চাপ দিলে ডাকপের পাস নে। এতো বড় হচু এখনো বিছনেত মুতা লাগে।
গেন্দুর ছেলের কোন কথা নাই সে চুপচাপ, মনে হয় মেশিন চালিয়ে সে বেশ আরামেই আছে।
এদিকে বুড়োর গায়ের সব কাপড় মুতে ভিজে গেছে।

বুড়োর ছেলেদের ঘরে কারেন্টের আলো আছে।বাড়ির অন্যান্য ঘর এমন কি গরুর গোয়াল ঘরেও আলো থাকলেও শুধু বুড়োর ঘরের কারেন্টের আলো দেওয়া হয়নি। এ ব্যপারে গেন্দুর বউয়ের কড়া নির্দেশ আছে সে কারেন্টের ওতো বিল দিতে পারবে না। বুড়ো বুড়ি তো শুধু রাতেই ঘরে শোয় বাকি সারাদিন এদিক ওদিক গল্প গুজব করেই কাটিয়ে দেয়। তাদের আর কারেন্টের কি দরকার। তাছাড়া তাদের তো কুপি বাতি হ্যারিকেনের আলোতে থাকারও অভ্যাস আছে।আগে কি বাপু এই কারেন্টের আলো ছিলো?

 আবার বিপদের আশঙ্কাও তার মনে মাঝে মাঝে চেপে বসে। বলা তো যায় না কখন কি হয়! 

বুড়ো মানুষ যদি সুইচ চাপতে গিয়ে কারেন্টে শক খায়?
যদিও সপ্তাহে দুই তিনদিন শাশুরির সাথে ছোট খাট বিষয়াদি নিয়ে  ঝগড়া লেগেই থাকে কিন্তু শশুর শাশুরি হচ্ছে বাপ মায়ের সমতূল্য সেদিক থেকে তাদের প্রতি তার মায়া মমতা নেহাতই কম নয়।

অবশ্য এ মায়া তার চোখে দেখা যায় যখনই তার শশুর বলে কেরে গেন্দু এনা এডা বাল্ব হামার ঘরোত দেওয়া যায় না?

আতোত উটে নামাজ পড়ি। আলো থাকলে সুবিধে হয়।
কিন্তু বউয়ের পারমিশন ছাড়া  গেন্দুর পক্ষে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই গেন্দু বরাবরই বলে দেখি দিমোনি।
কিন্তু বুড়োর ঘরে কারেন্টের আলো আর জ্বলে না।
বুড়ি মাঝে মাঝে অবশ্য আসগর আলীকে সান্তনা দিয়ে বলে

এ্যা!  কি করবে কারেন্টের আলো দিয়ে।কারেন্ট ছাড়াই জিবন শেষ হয়া গেল,  এই বুড়ো বয়সোত আর কি হবি উল্লে দিয়ে। তুমি সুইচ টিপপের পাও?

কুন্টি টিপতে যায়া কুন্টি টিপপে হিনি।

বুড়ো অবশ্য এতে কোন উত্তর দেয় না। সে চুপচাপ বুড়ির এই প্যাচাল শুনে যায়।প্যাচাল শোনা ছাড়া আর উপায় কি, বুড়ি তো ঠিকই কয়,  সেতো এসবের কিছুই বোঝে না।

এদিকে বুড়োর চেচানিতে গেন্দুর বউ জাগনা পেয়েছে। গেন্দুর বউয়ের আবার কান খুবই খাড়া।রাতে বিরাতে বাড়ির আশে পাশে কোন শব্দ হলেই সে শুনতে পায়, 

খেকিয়ে বলে কে কে কেডা রে কেডা?

তার এমন খাড়া কানের জন্য গেন্দু এক প্রকার খুশিই, কেননা বাড়িতে তার তিনটে দামড়া গরু আছে।  সে তো মরনের ঘুম ঘুমায় কিন্তু তার বউ সে ব্যপারে খুবই সজাক।তাই বাড়িতে চোড়ছেচড় আসার সম্ভাবনা খুবই কম,  কেননা গেন্দুর বউয়ের এই কান খাড়ার কথা এ তল্লাটের ছেলে বুড়ো সকলেরই জানা, সেখানে চোড় আসবে কোন সাহসে।

কি হইছে আম্মা কি হইছে। আব্বা ওতো চিল্লায় কে?
ও ঘর থেকে গেন্দুর বউয়ের গলা।

না কি আর হবি। তোমার ছোল নিত্তিদিন যা করে তাই হছে।এই হেলের দিনোত মুতে মাতে শেষ করলো। বুড়ো মানুষডা একন থাকপি কেমনে এ্যা।
ছোলক তো আক্কেল হিঞ্জের কিছুই শিকেলে না।

এই আক্কেল হিঞ্জেরের কথা খান গেন্দুর বউয়ের ঠিক  বুকের  বাম পাশে সোজাসুজি গিয়ে পেরেকের মতো গেথে যায়।সে এই পেরেকের ব্যথ্যা আর কোনভাবেই সহ্য করতে না পেরে সেও ওপাশ থেকে চেচিয়ে বলে -

এ্যা হামার আক্কেল হিঞ্জের নাই, এ্যা? হামি আক্কেল আলা ঘরের ছোল নই, হামি হামার ছোলক বলে আক্কেল শিকেই নি। এত্তো বড় কতা।

হামার দুধের ছোল না বুঝে যদি এনা মুতেই থাকে তালি কি মানুষক আক্কেল হিঞ্জের দেখা নাগবি।

কে গো তুমি কিছু কবা না। এ মরদ আজ যদি তুই এর বিচের না করিচ্চু তা দেক।
তোর মাও কিসোক কবি হামার আক্কেল হিঞ্জের নাই। কেরে এ মরদ বিয়ের আগে হামার আক্কেল দেকে বিয়ে করিস নি।তকন হামার খুব আক্কেল আছিলো আর একন হামার আক্কেল নাই তাই নে।তোর বাপ মাও এতো আত্তিরে হামার আক্কেল হিঞ্জের দেকিচ্চে?


কেরে এ মরদ উঠিস নে ক্যা?

বলেই সে গেন্দুর গায়ের লেপখানা এক টানে খাটের নিচে ফেলে দেয়।
গেন্দুর ঘুম ভেঙ্গেছে তো অনেক আগেই। কিন্তু সে নিজ ইচ্ছাতেই কথা আর বাড়াতে চায় নি।কিন্তু এই শীতের মাঝরাতে গায়ের লেপ টান দেওয়ায় তার মেজাজ চরমে উঠেছে।

সে কোন কিছু না ভেবেই কষে দুইডা চড় বসিয়ে দিলো বউয়ের গালে।

এ মাগী পাছু কি এ্যা পাছু কি?
তোর আত নাই দিন নাই এতো ঘো ঘো করিস কে।

সে যে তার বউকে  যথেষ্ট ভয় করে সে কথা কিন্তু এ পাড়ার সকলেই জানে।কিন্তু আজকে এই শীতের রাতে গা থেকে লেপ টান দেওয়ায় সে প্রচন্ড চটেছে। কিন্তু চটলে কি হবে একটু পর বউয়ের দাপানিতে তার এই ক্ষনিকের রাগ বা পুরুষত্ব সবই মহা বন আমাজানের গহীনে হারিয়ে যাবে।

আজ তার কপালে শনির দশা।রাগের মাথায় সে বউকে কষে দুটো চড় মেরেছে।এর ঘানি যে তাকে কতোদিন পোহাতে হবে আল্লাই জানে!

এ মরদ তুই হামার গাওত হাত তুললু।তোর এতো সাহস হছে। তুই এতো সাহস কোন মাগির কাছে পাচু ক।
আজ তোর একদিন কি হামার একদিন।

তোর মায়ের বাপের পক্ক হয়া তুই হামাক মারিস।
জাওরে মরদ, বেজন্মা মরদ।
বলেই সে গলা ফাটিয়ে কান্না জুড়ে দিলো।

একদিকে গলা ফাটানো কান্নার আওয়াজ অপর দিকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ সমান তালে চলছে।কিন্তু গেন্দু আর রা টি পর্যন্ত করার সাহস পেলো না।এমনিতেই আজ সে যা করেছে তার খেসারত কতোদিনে শেষ হবে এই ভাবনায় সে অস্থির।

ছেলেকে বেজন্মা বলায় বুড়িও এবার বেজায় চটেছে।

সেও ওঘর থেমে চেচিয়ে -

কি কি ওই মাগির বেটি মাগি কি কলু। হামার বেটা বেজন্মা এ্যা বেজন্মা।হামি বেজন্মা ছোল পেটত থুছি রো মাগী।দশ মাস দশ দিন পেটত থুয়ে ছোল বিয়েছিরো মাগি।

তুই -বেজন্মা মাগি? তোর মায়ের সাত ভাতার আছিলো সিল্লে কি আর মানুষ জানে না। বিয়ের আগে তোর মায়ের হিস্টিরি শুনলে তুরি নাগাল মাগিক ঘরোত তুলি রো ।খান্নস মাগী - হামার সংসারডা ধ্বংস করলু।হামার বেটার মাতা গিলে খাচু।

এই শীতের রাতে ঝগড়া চলতে থাকে সমান তালে। কারোই থামার কোন লক্ষন নেই। ঝগড়ার এমন ক্ষিপ্রতা শুনে নান্দু, নান্দুর বউ, নান্দুর মেয়ে ফুলিজান,   বুড়ো আসগর,  নান্দুর দুই ছেলে, গেন্দুর বেটা,  পাশের বাড়ির রইতন বুড়ি সকলেই চুপচাপ ঝগড়া শুনছে কিন্তু কারো মুখে রা নেই।

দরজার খিল খোলার আগেই নান্দু তার বউকে বলে দিয়েছে -
এই মাগী তুই বেন কোন কথা কস।
তাই সে আচলে মুখ ঢেকে দরজার চৌকাঠ ধরে চুপচাপ জা আর শাশুরির মধ্যেকার অশ্লিল বাক্য বিনিময় শুনে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝে অবশ্য রইতন বুড়ি ঝগড়া থামানোর জন্য বলে যাচ্ছে -
কেরো কি শুরু করলু তোরা এই হেলের আতোত। মানসে শুনলে কি কবি।থামেক তো। এ গেন্দুর বউ থামেক তো। এল্লে কি এ্যা।

অবশ্য ইতিমধ্যে দু চার ঘরের মানুষ যে এই অকথ্য ঝগড়া শুনে নাই তা কিন্তু নয়।রাত বলেই কেউ আর লেপ ছেড়ে উঠতে চাচ্ছে না। এদিকে আজ ঠান্ডাও জেকে বসেছে খুব। নইলে এতোক্ষনে এবাড়িতে লোকজনে বিশেষ করে মেয়ে মানুষে ভরে যেতো।


(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫২

আতিক রহমান (স্বপ্ন) বলেছেন: খুবই মজার গল্প

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

একজন সত্যিকার হিমু বলেছেন: মজা পেলাম পড়ে ।

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৬

মো: মেহেরুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩৬

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: কমেন্ট করার জন্য লগইন হলাম। পর্বটা ভালো লেগেছে। আগের দুটো পড়ে আসি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.