![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
আমার পারুল ভাবনা
-----------------------------------------------
রুপকথার গল্পতে দাদি-নানিদের মুখে সেই ছোটবেলা হতে সাত ভাই চম্পা আর পারুলের গল্প শুনে শুনে পারুল নামটার সাথে পরিচয় ছিলো ছোট থেকেই।বিশেষ করে বিখ্যাত গান "সাত ভাই চম্পা জাগরে জাগরে, ঘুম ঘুম ঘুমেতে ঘুমেরই ঘোরে, একটি পারুল বোন আমি তোমাদের, ডেকে ডেকে সাড়া"।
যা হোক সেটাতো গেলো গান আর রুপকথার পারুল।কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে আমার জন্মস্থান মানে সোনাতলাতেই যে পারুলের অস্তিত্ব আছে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত সেটা ছিলো আমার কাছে সম্পূর্ন অজানা।পারুল কে নিয়ে হয়েছে গবেষণা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, ইত্যাদি ইত্যাদি, সবই মুখে মুখে শোনা।স্বাভাবিকভাবে পারুলের এতো গল্প শুনে মনে একধরনের আগ্রহ জন্মাতেই পারে।পারুল ঠিকই, কিন্তু রুপকথার পারুলের সাথে রয়েছে এর বিস্তর ফারাক।কেননা রুপকথার পারুল একটি চরিত্র আর সরকারি নাজির আখতার কলেজের পারুল একটি ছায়া সুনিবিড় বিশাল বৃক্ষ।কিন্তু এতো ফারাক থাকলে কি হবে! বৃক্ষ পারুলও স্থানীয় লোকালয়ে রুপকথার পারুলের মতোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।যখন ২০০৮ সালে এই কলেজে আমি শিক্ষা গ্রহনের উদেশ্য পদার্পন করি তখন থেকেই এই পারুলের সাথে একটি বলতে গেলে আত্নার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।যদিও অনেক গবেষক এই গাছটি কে সরাসরি পারুল বলতে নারাজ।তাদের মতে এটি পারুল প্রজাতির একটি বিরল গাছ, যা উপমহাদেশে বিরল।কিন্তু গবেষকদের মত যাই হোক স্থানীয়রা এটি পারুল নামেই ডাকতে পছন্দ করে।
সে যাই হোক ঐ যে বলছিলাম পারুলের সাথে আমার পরিচয়ের গল্প সেখানেই ফিরে আসি।কলেজের লাইব্রেরিয়ান সম্পর্কে আমার চাচা মো: মহসীন মিয়া ওনার কাছ থেকেই প্রথম পারুলের কথা জানতে পারি।কেন মানুষ পারুল কে নিয়ে এতো আগ্রহী ইত্যাদি।তিনি আমাকে বললেন যে, এই পারুল গাছ দেখার জন্য অনেক গবেষক এসেছিলেন এখানে।অনেক তথ্য নিয়ে গেছে।সেই সাথে কলেজ থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন পারুলের একটা কপিও আমাকে ধরিয়ে দিলেন।তার কাছ থেকে একপ্রকার যেচেই পারুল সম্পর্কে অনেক কথাই শুনলাম।তার কথা শোনার পর পারুল সম্পর্কে আমার অনুসন্ধিৎসা জেগে উঠলো।আসলেই এটি কি গাছ বা কেমন গাছ আমাকে জানতে হবে।লাইব্রেরী থেকে সোজা চলে গেলাম পারুল গাছের নিচে।খুব ভালো করে চারপাশ দেখতে লাগলাম, মনে হলো আমি পারুল নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছি(আজাইরা চিন্তা করলে যা হয় আর কি)।
প্রতিদিন পারুল গাছের চত্তরে জমে ওঠে শিক্ষার্থীদের জম্পেস আড্ডাবাজি।সকাল থেকে দুপুর আবার বিকালে স্থানীয়দের খোশ গল্প তো আছেই।হয়তো এভাবেই গল্প চলতে থকবে অনন্তকাল। পারুলের ফুল গুলো সাদাটে, পাতা হালকা চেপ্টার মতো সবুজ আভা, পাতার ফাকে ফাকে সরু সরু লম্বা বীজ ঝুলে আছে সর্বত্র। কিন্তু পারুল সম্পর্কে তথ্যগত দিক দিয়ে বিস্তর জানার কোন মাধ্যম তখন সেখানে ছিলো না।এখন অবশ্য তথ্য সম্বলিত একটা প্যানা সেখানে আগত সকলের জানার আগ্রহকে পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করছে।যা কিনা বছর খানিক আগেও ছিলো না।
সে যাই হো শুনেছিলাম পারুলের বীজ, ডাল কোন কিছু থেকেই কোন নতুন অঙ্গকুর জন্মায় না।খেয়ালও করেছি গাছের নিচে এতো সরু সরু বীজগুলো পড়ে আছে অথচ আশে পাশে একটিও নতুন অঙ্কুর নেই।
ঐ যে বললাম অগত্যতা পারুল গবেষক হওয়ার ইচ্ছা থেকেই একদিন গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙ্গে বাড়িতে নিয়ে আসলাম, এই ভেবে যে, দেখি না এর থেকে আমি চারা তৈরি করতে পারি কিনা(পাগলের ঘি খাওয়ার শখের মতো আর কি)।ডালটি বাড়িতে নিয়ে আমার দাদুকে দেখালাম।অবশ্য তিনি আগে থেকেই পারুল গাছ সম্পর্কে অবগত ছিলেন।তাই আর আমাকে নতুন করে বেশি কিছু বলতে হয়নি।তাকে বললাম আমি এর ডাল দিয়ে চারা বানাবো।তিনি বললেন জিবনেও সম্ভব না।এতো বড় বড় গবেষক কিছুই বের করতে পারলো না আর তুই করবি এর চারা।কথাটা তিনি আমাকে একটু টিপ্পনি কেটেই বললেন।কিন্তু ঐ যে বললাম আমি পারুল গবেষক হতে চাই।তাই তার কথা আর কর্ণপাত না করে আমার ডাল থেকে চারা কলম তৈরির যতো পদ্ধতি আছে সেগুলো সম্পর্কে বই পড়ে জানার চেষ্টা করতে থাকলাম।কেননা আমার মনে জেদ আমাকে পারুল গবেষক হতেই হবে।কয়েকটি চারা কলম তৈরির বই পড়া সমাপ্ত করে ডাল টা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে কলম চারা করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ন করলাম।এভাবে দিন যায় আর আমার অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে।প্রতিদিন কলেজ শেষে বাড়িতে এসেই আগে পারুলের কলম পর্যবেক্ষণ করি যে, অঙ্কুর জন্মালো কিনা।এভাবে প্রায় মাস খানিক পর আমার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। দেখলাম ডালে ছোট ছোট কুড়ি বের হচ্ছে।দৌড়ে দাদুকে গিয়ে বললাম দেখেন ডালে অঙ্কুর বের হয়েছে।কিন্তু দাদু কিছু মন্তব্য করলেন না।কিন্তু তাতে কি আমার খুশি দেখে কে।এভাবে কুড়ির পাতা বড় হলো কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে ডালে কোন শিকড় নেই।আর বের হওয়ার কোন লক্ষন ও দেখা যাচ্ছে না।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।পাতা বেশ অনেক বের হলো কিন্তু শিকড় নেই। আস্তে আস্তে পাতাগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। সাথে সাথে আমার গবেষণার ও সমাপ্তি।সেই থেকে পারুল গবেষণায় আমার ক্ষান্ত।
তবে কলেজ জিবনের সৃতিতে পারুল একটি অংশ হয়েই আছে ও থাকবে।কেননা পারুল গাছের নিচে সেই জম্পেস আড্ডার কথা কি ভোলা যায়।
সময়ের আবর্তে হয়তো আমরা পারুল চত্তরের আড্ডা থেকে হারিয়ে গেছি কিন্তু আমাদের অনুজ প্রতিম হাজারো শিক্ষার্থীর আনাগোনায় আর আড্ডা বাজিতে অম্লান হয়ে থাকুক আমাদের চিরচেনা পারুল চত্তর।আর স্ব-মহিমায় উচু শিরে দাড়িয়ে থেকে পারুল যুগিয়ে যাক তার সম্পর্কে জানার অনুসন্ধিৎসা কে।?
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৪
মো: মেহেরুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৪৪
ওমেরা বলেছেন: ভাল লাগল আপনার পারুল গবেষনা । ধন্যবাদ