নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈত্রিক সম্পত্তি

২০ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪০


পৈত্রিক সম্পত্তি
-----------------
পর্ব-৪


ওদিকে বুড়ি রইতনের কথায় কারোই কোন কর্ণপাত নেই।
এ রইতন বুড়ি ও কম কিসে!
এলাকার শ্রেষ্ঠ ঝগড়াটে বুড়ি। এমন কোন দিন নাই যে, নিজের ছেলের বউয়ের সাথে এই রইতন বুড়ি ঝগড়া করে না। কি দিন আর কি রাত। সমান তালে চলতে থাকে রইতনের ঝগড়ার বাহাস। বুড়ির কুটনামির কথা এ তল্লাটের ছোট বড় সকলেরই জানা।

কিন্তু এখন তো সে আর ঝগড়া করতে আসেনি , এসেছে বরং ঝগড়া কিভাবে থামানো যায় সেই কাজটি করতে।
কিন্তু তার কথায় বা অনুরোধে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না দেখে অগত্যা সে নিজের বাড়ির পথে পা বাড়ালো। যেতে যেতে বুড়ি বিড়বিড় করে একাধারে বলেই চলেছে---
কি খান্নাস বউ গো , কি খান্নাস-
জাও জোয়ালি মানে না, শশুর ভাসুর তাও মানার নাম নাই। আল্লার গজব পড়বি রো দেখিস, শওরিক যা তা কস, তোর মুকোত পোকা দিবি।
কি দিন আলো রে –
কি দিন আলো?
কিয়েমতের নক্কন ,কিয়েমতের নক্কন।
নি নজ্জ্বা মাগী, বেল্লোত মাগী---।
নি মদ্দা গেন্দুর এটি দেকেই তোর ভাত হচ্ছে রো – তা না হলি দুনের আর কুন্টি তোর ভাতারের ভাত হলো হিনি না। না খায়া পাছলু এই নি মদ্দা ভাতার।

পথের এই বিড়বিড়ানির শ্রোতা অবশ্য একমাত্র রইতন বুড়ি ,আশেপাশে শুধু ঘুটঘুটে কুয়াশাচ্ছন্ন ঘন অন্ধকার।আর একটু পর পর শরির কাপানো হীমেল বাতাস।
দেখতে দেখতে রইতনের বাড়ি এসে যাওয়ায় সে কুপিবাতি হাতেই বাড়ির সরু গলি দিয়ে ভিতরে আড়াল হয়ে গেলো।

ও দিকে ঝগড়ার এমন গতি দেখে শেষমেশ নান্দু লেপ ছেড়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতেই দরজার চৌকাঠে বসা তার বউকে একটু ধমকের সুরে-
ভিতরে যা।এটি কি সারাআত বসে থাকা নাগবি নাকি? এতো ঝগড়া শোনার হুজুক কে তোমার
এ্যা-
নিজে কি কম জানে নাকি?
নান্দুর এমন উক্তি তার বউয়ের মান সম্মানে কিছুটা কপাঘাত দিয়ে গেলো। সে কিছুটা ভ্রু কুচকে –
ই মরদ উঠে আবার হামার সাথে নাগিচ্ছে কে?
এ্যা-
হামি কি করনু।
কিছু করা নাগবি নে তুই ভিতরে যা।
হুম যাচ্চি-
এ মরদ খালি হামাক নিয়েই মরে দেকি।
বলেই নান্দুর বউ ঘরে চলে গেলো। সাথে নান্দুর মেয়ে ফুলিজান ও মায়ের সাথে সাথে ঘরে গেলো।

এ মা তোরা এল্লে কি শুরু করছু ক তো।এই হেলের আতোত কি এল্লে ভাল নাগে। উই না হয় বউ মানুষ কচ্চে কক তাই বলে তোক তার সাতে যোজা নাগবি? তুই এনা মুকখান বন্ধ থোবার পাস নে। আব্বা আপনে কিছু কন না কে।
না ইল্লে তো আর ভাল নাগিচ্চে না।
কি গেন্দুর বউ তুমি কি এনা চুপ থাকপের পাও না অ্যা। কিরে গেন্দু তুই তোর বউয়েক থামাবের পাস নে।
এ্যা-
আসগর বুড়ো কিছুই বলে না , সে চুপচাপ নিজের ঘরে চৌকিতে গিয়ে শোয়। ছেলের কথায় পরিবানু কিছুটা ক্ষান্ত দিয়ে রাগে ঘরের খিল সেটে দিয়ে আস্তে আস্তে বিড়বিড় করতে থাকে ।কিন্তু সে বিড়বিড়ানির আওয়াজ বাইরে থেকে শোনা যায় না।
কিন্তু গেন্দুর বউয়ের গলার আওয়াজ ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।মনে হতে পারে তার বাপ এই ইহকাল ত্যাগ করেছে ।আর তার শোকেই তার এতো আহাজারি।
দাদির ঘরের খিল দেও্য়া দেখে নান্দুর দুই ছেলেও চোখ ডলতে ডলতে বাপের ঘরে গিয়ে অগত্যা ফুলিজানের বিছানায় আশ্রয় নেয়।তারা ভালো করেই জানে এমন পরিস্থিতিতে তাদের কি করতে হবে।এতো আর নতুন কিছু নয়।প্রায়ই তাদের এমন শোবার জায়গা বদল করতে হয়। কখনো নিজের মায়ের সাথে দাদির ঝগড়া ,আবার কখনো বাপের সাথে দাদার। দু একদিন পর আবার তারা দাদার সাথে ঘুমাতে পারবে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।
মাঘ মাসের শীত বলে কথা। ঝগড়ার বাহাস থাকলেও শীতের কারনে তা আর ঠিকমত জমে উঠছে না। বাইরে এখন শুধু নান্দু আর গেন্দুর ছেলে।
এ বাবা যা তুই তোর বাপের কাছে যায়া শোতেক।ই হেলের আতোত ছোল গুলোও তোগেরে জন্য কি কষ্ট করিচ্ছে। এ গেন্দু তোর বেটাক ঘরত নিয়ে যা।যা বাবা যা ঘরত যা –
বলে নান্দু নিজের ঘরে গিয়ে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লো।
গেন্দু ছেলেকে কোলে নিয়ে –
এ বাবা মুতপু নাকি?
মানিক মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলো দাদার শালখান ভিজিয়েও তার মেশিনের পানি এখনো শেষ হইয় নি। এখনো যে পানি আছে তা দিয়ে দু চার বিঘা জমির সেচ দিব্যি দেওয়া সম্ভব।
গেন্দু আর দেরি না করে মানিকের লেওড়াটার মুখ বের করে দাড় করিয়ে দিতেই মানিক ছেড়ছেড় করে মেশিন চালিয়ে দিলো।
মুতার কাম শেষে গেন্দু মানিক কে নিয়ে ঘরে খিল দিলো ঠিকই কিন্তু গেন্দুর বউয়ের গলার আওয়াজ থামার কোন ভাবগতি নেই।
আল্লাহ হুয়াকবার---
আল্লাহ হুয়াকবার-----
আসসাদু আল্লাহ—ই ল্লাহ – ইল্লাহ লা----
ভেসে আসছে গনিদের বাড়ির মসজিদের আযানের সুর।টিনের চালে ঘন পুরু কুয়াশা পড়ার শব্দ।টুপ টুপ করে পড়ছে ঘন কুয়াশা,চাল থেকে মাটিতে।কুয়াশার চোটে মাটি ভিজে একাকার।সাথে শির শির করা ঠাণ্ডা বাতাস তো আছেই।চারিদিকে ঠাণ্ডা নিস্তব্ধতা, নিরবতা ।পাশের গোয়াল ঘর থেকে ভেসে আসছে গরু বাছুরের নড়াচড়ায় খড়ের আর গরুর জাবর কাটার শব্দ।খোয়ারের পাঠা মোরগ তখনো ঘুমিয়ে ,একটু পরেই হয়তো কুক্কুরু কু-- কুক্কুরু কু-- শব্দে জানান দেবে তার অস্থিত্ব। আযানের সুরে ঘুম ভাঙ্গে আসগর আলীর।ধুড়মুড় করে উঠেই চলে যায় বাড়ির পেছনের টিউবয়েলে এর কাছে। গায়ে তখনো তার শালখানা জড়ানো আর চোখে ভাংগা চশমা। একহাতে শালখানা ভালো করে গায়ে মুড়িয়ে সে চশমাটা খুলে রেখে দেয় টিউবয়েল এর বেড়ার সাথে লাগানো কাঠের তক্তার উপর।একটু এগিয়ে ঘিয়ে রঙের প্লাস্টিকের বদনাটা হাতে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে কল চাপতে থাকে। বদনা ভরে নিয়ে সোজা সে ছোট ঘরে চলে গেলো। হাগা মুতা শেষ করে আবারও বদনা ভরাতে কলের কাছে গিয়ে দু চারবার আল্লার নাম জপে বা হাত দিয়ে কল চাপছে আর দক্ষিণের ধূ ধূ মাঠের দিকে তাকিয়ে একমনে নিশ্বাস ফেলছে।গা শির শির করা ঠান্ডা বাতাস বুড়ো দেহটাকে নাড়িয়ে যাচ্চে।তাতে করে আসগরের মনে হচ্ছে হাড়গোড় সব এক হয়ে যাবে।বদনা ভরিয়ে সে কলের থেকে একটু সরে দুই হাটু মুড়িয়ে বসে পড়লো নামাযের অযু করতে।
প্রথমে দুই হাতের কব্জি বদনার নলের পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেয়, তারপর কুলি করে,নাকে পানি দেয়,মুখ ধোয়।অযু শেষ করে আল্লাহ রসুলের নাম মুখে নিতে নিতে তক্তার উপরে রাখা চশমাটা চোখে দেয়। তারপর ঘরের দিকে পা—
ঘরে এসে দেখে পরিবানুও বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছে।
কি গো কুন্টি গেছিলে?
কুন্টি আর যামো, অযু করবের গেছনু।যা তুই যায়া অযু করে আয়, হামি বদনা ভরে থুয়ে আসিছি।
আল্লাহ মাবুদ—
যাই-
তোমার নামাজের চকিত জায়নামাজ দেও্যাই আছে।
যা তুই যা হামি দেকিচ্চি।
বুড়িও চলে গেলো অযু করতে।
আসগর নামাজের চৌকিতে দাঁড়িয়ে দোয়া দরুদ পড়ে নামাজ শুরু করে দিলো। বুড়োর নামাজ শেষ হতে না হতেই বুড়িও এসে হাজির।বিছানার এককোনে বসে বুড়ি নামাজ শুরু করে দিয়েছে। দুই জনের নামাজ শেষে আল্লাহ রসুলের নাম জপছে।
ইতিমধ্যেই খোয়ারের পাঠা মোরগ কুক্কুরু কু—কু , কুক্কুরু –কু -কু চেচাতে শুরু করে দিয়েছে।
বুড়িকে উদ্দেশ্য করে -
দেখতো হামার তছবি ডা কুন্টি?
তছবি খান উটি থুতে কি হয়। টেবিলোত যে থোও গেন্দুর বেটা কি উল্লে ঠিক থোয়।সারাদিন উ ছোড়া তছবি নিয়ে বান্দারামি করে।
তুই ভালো করে থোবার পাস নে-
নেও—বলে টেবিলের উপর থেকে সাদা কাঠির তছবিখান আসগরের হাতে এগিয়ে দিলো বুড়ি।আর মুখে বিড়বিড় করে আল্লাহ রসুলের নাম জপে চলেছে একাধারে।
তছবি গুনতে গুনতে-
চেচিয়ে-
কিরে নান্দু গেন্দু উঠা নাগবি নে ,ফজর হছে ককন।নামাজ কালাম না হয় নাই পড়লু এনা ফজর ফজর তো উঠপের পাস নাকি?
বেলা কি কম হলো রে, গরু গুলান বার করা নাগবি নে-
এ্যা-
এতো বেলা গরু গলোত থাকলে অসুখ বিসুখ হবি-
এ্যা-
বুড়োর এমন চেচামেচিতে নান্দু গেন্দুর কিছুই আসে যায় না।প্রতিদিন সকালে আসগর বুড়ো এমন চেচায়।এ সবে নান্দু গেন্দুর অভ্যাস হয়ে গেছে।
বুড়ি আবার বুড়োর চেচানিতে খুবই বিরিক্ত।সে বিরিক্তির সুরে-
এতো চেচাও কে?
চেংড়া পেংড়া মানুষ,সারাদিন কাম করে আসে আতোত শোতে, এনা শান্তি করে নিন পারবের দিবে না নাকি।তোমার না হয় কাম নাই।

( চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.