![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
হালখাতা
------------------------------
"বাকির নাম ফাঁকি "
প্রায়শই কথাটি শোনা যায়। অথচ এ কথাটির সাথে বাঙ্গালী জাতি স্বত্তার এক অনন্য সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের মাধ্যমটি হলো শুভ হালখাতা। বাকি না থাকলে যে আমাদের হাল খাতা থাকতো না। আর হাল খাতা না থাকলে বৈশাখের উৎসব কেমন যেন একঘেয়োমি হয়ে যেত। আর বৈশাখের উৎসব না থাকলে যে বাঙ্গালী তার প্রানের অস্তিত্ব হারাতো।
বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে সুপ্রাচীনকাল ধরেই হালখাতার আয়োজন করে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
তাই বৈশাখ এলেই ব্যবসায়ীরা খুশিতে বাগবাগ হয়ে ওঠে। যদিও এতে পত্র প্রাপকের পকেটের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। কারণ পাওনাদারের পত্র শুধু পত্রই নয়, চরমপত্র ও সচরাচর এ চিঠিটি এক পাক্ষিক হয়ে থাকে।
হালখাতা একটি বিশেষ্য পদ।যার অর্থ চলতি হিসাবের খাতা, নূতন খাতা বা নূতন বৎসরের হিসাবের খাতা।
অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পূণ্যাহ’ প্রচলিত ছিলো। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্যমতো ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন (পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা সম্প্রদায়ের মাঝে এখনো এ প্রথা প্রচলিত)। খাজনা পরিশোধকারীদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় ‘পূণ্যাহ’ বিলুপ্ত হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নববর্ষে হালখাতার আয়োজন করে আজও। বাংলা সনের প্রথম দিন দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করায় এ প্রক্রিয়া পালন করা হয়। ব্যবসায়ীরা এদিন তাদের দেনা পাওনার হিসাব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের আগের বছরের সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় শুভ হালখাতা পত্রের মাধ্যমে। আগে একটি মাত্র মোটা খাতায় ব্যবসায়ীরা তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিন নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করার এ রীতি থেকেই উদ্ভব হয় হালখাতার। একসময় বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিলো হালখাতা। এ উপলক্ষে দোকানে দোকানে মিষ্টি বিতরন করা হতো। পাশাপাশি থাকতো সুগন্ধি পানের আয়োজন। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে মিষ্টান্ন পাঠাতেন। হালখাতার হাল আগের মতো না থাকলেও চিরায়ত এ অনুষ্ঠানটি কিন্তু হারিয়ে যায়নি এখনও। কি শহর বা গ্রাম সবখানেই কমবেশি হালখাতার অনুষ্ঠান এখনো প্রচলিত।তবে জায়গা ভেদে হালখাতা আয়োজনে ভিন্নতা আছে।গ্রামগঞ্জে হালখাতা উপলক্ষে ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান বা ছোট ছোট দোকান গুলো রঙ বেরং এর রঙিন কাগজে সাজানো হয়, বাজানো হয় মাইক। কিন্তু ধীরে ধীরে সামাজিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটের হাত ধরে মাইক বাজানো বা রঙিন কাগজে দোকান সাজানোর রীতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। যদিও এখন কেবল স্বর্ণালঙ্কারের দোকানেই এ প্রথা পালিত হতে দেখা যায় বেশি। বিশেষ করে ঢাকার আদি ব্যবসায়ী পরিবারে মহাসমারোহে পালিত হয় এ রীতি। পুরান ঢাকার বাজারগুলোতে লাল মলাটের খাতা খুলে বসেন ছোট ছোট দোকানিরা। নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা টাকা পরিশোধের তাগিদ না দিয়ে হালখাতার দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে অনেকে বাহারি কার্ডের ব্যবস্থা করেন। কেউবা মুখে মুখেই সারেন দাওয়াত পর্ব। পুরান ঢাকার হিন্দু পরিবারগুলো পূজার শুভক্ষণ অনুযায়ী লাল মলাটের নতুন খাতা খোলে। বর্তমানে হালখাতার খাবারের আয়োজনে মিষ্টির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অন্যান্য খাবার। ক্ষীর, হালিম, কোমল পানীয় থেকে শুরু করে অনেকে বিরিয়ানি কিংবা তেহারির ব্যবস্থাও করে থাকে হালখাতায়।
©somewhere in net ltd.