![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
এক টুকরো কাগজ, যার নাম নকল?
----------------------------------------------------
ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম নাকি খারাপ ছিলাম সে বিবেচনার ভার আমার শিক্ষাগুরুদের হাতেই অর্পণ করছি।তবে নিজ হতে বিচার করলে যতদূর জানি নিজের মগজে যতোটুকু ধারন ক্ষমতা ছিলো ঠিক সেই সম্বল নিয়েই এগিয়েছি।কারো কাছে কখনো মগজ ধারের স্বভাব সেই বাল্য শিক্ষা বয়স হতেই ছিলো না।কখনো চেষ্টাটিও করিনি কারো মগজের একটু অংশ ধার নেই যা পরে সময় সুযোগ বুঝে পরিশোধ করবো।অবশ্য এমন মগজ ধারের রীতি আমাদের ছাত্র সমাজে নেহাতই কম নয়।
আমিও যেহেতু এই মগজ ধার করা সমাজের ই একজন বাসিন্দা সেহেতু মগজ ধার গ্রহন না করলেও ভিন্নতর কিছু করেছিলাম সেই প্রাইমারি বয়সেই।সেই প্রথম সেই শেষ। জানিনা ওমন ছোট বয়সেও মাথায় ওমন কুবুদ্ধি চেপে বসেছিলো কি করে।হয়তো কুবুদ্ধি মাথার রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্য কেউ প্রবেশ করাতে অনুপ্রেরনা দিয়েছিলো।যেটা কিনা আজকালকার অবিভাবকরা হার হামেশাই পালন করে থাকেন অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে।
২য় শ্রেণীতে যখন ফাইনাল মানে বার্ষিক পরিক্ষা চলছিলো তখন সব কটা পরিক্ষাই দিয়েছি নিজের বুদ্ধিতে।কিন্তু গনিত পরিক্ষার দিন আমার গুরুজনের হাত হতে পেয়েছিলাম পরিক্ষায় কমন পড়া হুবহু দেখতে একটা নকল প্রশ্নপত্র।তাও পরিক্ষার দিন সকালে, প্রথমে নিতে চাইনি কিন্তু গুরুজন আমার ভালো চিন্তা করে একপ্রকার জোরজবরদস্তি করেই সেই নকল প্রশ্নপত্র গলধকরন করিয়েছিলেন। কিন্তু তার শত চেষ্টাতেও একটা সহজ অংক আমার মগজে কিছুতেই ঢুকাতে পারছিলাম না। ও দিকে গুরুজনের এতো খাটুনির পরও যদি ১০০ তে ১০০ না পাই তাহলে কপালে শনির দশা আছে নির্ঘাত।তাই তো অংক টা ছোট্ট একটা সাদা কাগজের টুকরোতে ইকোনো কলমের কালো কালি দিয়ে নকল করে প্যান্টের পকেটের ভিতরে একটা গোপন পকেট থাকে সেটাতে পুরে পরিক্ষার হলে নিয়ে গিয়েছিলাম।যেহেতু পরিক্ষার আগেই সকালে নকল একটি প্রশ্নপত্র পেয়েছিলাম সেহেতু ঘট ঘট করে সব অংক দু ঘন্টার আগেই করে ফেললাম। কিন্তু ঐ অংক টা তখনো বাকি আছে।মানে ১০০ নম্বরের কেবল ঐ ৫ নম্বরের উত্তর করাই হয় নি।
কড়া গার্ড চলছে। অন্যদিন যেমন তেমন গার্ড হলেও অংক পরিক্ষার দিন কড়াকড়ি আরোপ হতো পরিক্ষা কেন্দ্রে।এদিকে আবার সেদিন গার্ডে আছেন স্কুলের সবচাইতে কড়া মেজাজের মোর্শেদা আপা(তখনো ম্যাডাম বলাটা আমাদের রীতিতে ছিলো না।আমরা আপাই বলে শিক্ষিকাকে সম্বোধন করতাম)।উপায় বেগতিক! আবার ১০০ নম্বরের উত্তর ও করেই বাড়িতে যেতে হবে।
শেষে আর কি করার।আপার উপর বেশ ভালো করে নজর দিয়ে খানিক পড়ে খুব কষ্টে পকেট থেকে বের করি সাদা কাগজের নকল টা।আস্তে করে রেখে দেই পরিক্ষার খাতার নিচে।কোত্থেকে যে ওতো সাহস সেই ছোট বয়সেই যুগিয়েছিলাম বলতে পারবো না।দিনে দিনে অনেক বড় হয়েছি অনেক পরিক্ষাই দিয়েছি কিন্তু ঐ নকল, পকেটে নিয়ে পরিক্ষার হলে যাওয়ার সাহস টুকু আর কোনদিনই ভাগ্য জোটেনি।
পেছনের সিটে বসা জাহিদুল আমার নকল দেখে ফেলে।একে তো ভয়ে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে কখন না ধরা পড়ি সেটা ভেবে।তারউপর আবার জাহিদুলের চাপ তাকে অংক না দেখালে সে নকলের কথা আপা কে বলে দেবে। অগত্যা ওকে বেশ কয়েকটা অংক দেখাতে বাধ্য হই।শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ভয়ে ভয়ে নকলের অংক টা পরিক্ষার খাতায় তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম।কিন্তু বিপত্তি বাধে, এখন এই নকলের কাগজ কি করে খাতার নিচ থেকে পকেটে ঢুকাই।যদি আপা দেখে ফেলে তাইলে তো সর্বনাশ?
পরিক্ষার খাতা বাতিল তো হবেই সেই সাথে উপুড়ি বেতের বাড়ি আর বাড়িতে বিচার। এ ব্যাপারে বাড়িতে বিচার গেলে আমার আর রক্ষে নেই।
কি করি কি করি---?
অনেক ভেবে চিনতে কাগজের টুকরো পুরে দেই নিজের মুখের ভিতর।তারপর নিচ হয়ে আস্তে আস্তে চাবাতে থাকি আর আপার দিকে নজর রাখি।এভাবে চাবাতে চাবাতে আমার দাতের যাতার নিচে পড়ে কাগজের টুকরো টি একেবারে আলু ভর্তা হয়ে যায়। তারপর সেটা গিলে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু সহজে আর তা গলা দিয়ে পেটে চালান হতে চায় না।এমনিতেই ভয়ে গলা শুকে কাঠ তার উপর এই শুকনো কাগজ?
গলায় একেবারে লেপ্টে দম বন্ধ করার জোগাড়। এভাবে চুপচাপ কেটে যায় খানিক সময়।উপায়ন্ত না দেখে আপার কাছে অনুমতি চাই বাইরে গিয়ে পানি খাওয়ার জন্য। আপা অনুমতি দিলেন।মুখের দু পাটি শক্ত করে চেপে টিউবলে গিয়ে দুই গেলাস পানি দিয়ে কাগজের ভর্তা চালান করে দিলাম পেটে।সেই দিন আরো একটা কাজ করেছিলাম।সেটা হলো পরিক্ষার খাতা জমা দিয়ে নিজেই নিজের দুই কান দুই হাত দিয়ে চিমটি কেটে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কোনদিন নকল করবো না। করিও নি আর কখনো, যা পেয়েছি, যা ছিলো মগজে তাই ঢেলে দিয়ে এসেছি পরিক্ষার খাতায়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো, বুঝতে পেরেছেন যে, নকল করা অন্যায়।
তবে, ২য় শ্রেণীতে পড়ার সময় কেন আপনার কোন গুরুজন এভাবে একাজ করলো, এই গরুজনগুলো অমানুষ। ৫ম শ্রেণী অবধি আমরা খেলাধুলা করে কাটিয়েছি।