নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রানার,ডাকঘর ও কিছু কথা

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

“রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা
বাজছে রাতে,
রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে রানার।
রাত্রির পথে পথে চলে
কোন নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।”
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায় রানারের কথা উল্লেখ থাকলেও আজ বর্তমান সমাজে এসে রানার হারিয়ে গেছে।পর্দার অন্তরালে হারিয়ে গেছে রানার রা। ডিজিটাল ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পোস্ট অফিস গুলোর জৌলুস,কর্মচাঞ্চল্যতা আর গুরুত্ব। এখন আর রানার কে নতুন খবর পৌছাতে লন্ঠন হাতে নিয়ে ছুটে যেতে হয়না মানুষের দ্বারে দ্বারে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকতার ছোয়ায় দিনে দিনেই হারিয়ে যাচ্ছে পোস্ট অফিস(ডাকঘর)। একসময় মানুষের বার্তা বাহক এর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতেন এই রানার রা। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দূর দূরান্ত থেকে প্রিয় মানুষের খবর পৌছে দিতেন প্রিয় মানুষগুলোর কাছে। শুধু তাই নয় প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের সাথে চিঠির মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন। পাঠাতেন অর্থ , আর সেই অর্থ ,তথ্য আসতো পোস্ট অফিস গুলোতে। যদিও এখন আর কেউই চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করেন না বিজ্ঞানের আশির্বাদের ফলে। হাতে লেখা চিঠি না আসায় বেশির ভাগ অলস সময় কাটান পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ। পোস্ট অফিস গুলো ফাকা আর চিঠি ফেলার বক্সগুলোয় ধরেছে মরিচা। যদিও সরকারি অনেক দাপ্তরিক কাজ আজও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় কিন্তু সাধারনের প্রতিদিনকার আনাগোনা নেই আগের মতো। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সেকেন্ডের মধ্যেই যখন খবর পৌছানো যায়, সেখানে রানার আর পোস্ট অফিসের কথা তো ভূলে যাবারই কথা। কালের বিবর্তনে সবই হারিয়ে যায়,যেমন হারিয়ে গেছে রানার। একসময় প্রেম নিবেদনের একমাত্র মাধ্যম ছিলো চিঠি , সীমান্তের এ পাড় থেকে ও পাড় ,টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সবই ছিলো পোস্ট অফিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। হয়তো এজন্যই তখনকার প্রেমে ছিলো অফুরন্ত ভালোবাসার পরশ।একটা চিঠি ভিনদেশ থেকে এদেশে আসতে কেটে যেতো কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস, কিন্তু তাই বলে তাতে ভালোবাসার কমতি ছিলো না ।বরং সেই চিঠির প্রতিটি শব্দে প্রতিটি অক্ষরে মিশে থাকতো নিবিড় ভালোবাসার পরশ। স্বজনরা মুখিয়ে থাকতেন কবে আসবে চিঠি, রানারের অপেক্ষা কবে আসবে চিঠি তার হাতে ,কবে পৌছাবে সেই চিঠি প্রিয়জনের নিকট। প্রযুক্তি আজ সেই অপেক্ষার প্রহরটাকে এতটাই সহজ করেছে যে, আজ সেই পোস্ট অফিসের কথা ভুলতে বসেছে প্রিয় প্রজন্ম। এখন আসি ডাক বা এই চিঠি আদান প্রদানের ইতিহাসে। যখন ছিলো না ডাক বিভাগ বা পোস্ট অফিস নামক কোন শব্দের অস্বিত্ত্ব। তখন কেমন ছিলো চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যম বা তখন কি মানুষ দূরে অবস্থানকারী কারো নিকট তথ্য আদান প্রদান হতে বিরত ছিলো? উত্তর হচ্ছে না। সেই প্রাচীন আমল থেকেই চিঠি আদান প্রদানের প্রচলন ছিলো।তখন চিঠিগুলো পাঠানো হতো দূতের মাধ্যমে। তার আগে পায়রার পায়ে বেধে চিঠি আদান প্রদানের প্রচলনও ছিলো ।আর পায়রা কিন্ত খুব ভালো ডাকপিয়ন।একটা জায়গা চিনে ফেললে ঠিকঠাক সেখানে নিয়ে চিঠি পৌছে দিতে পারতো।তবে এই উপায়গুলো ছিলো খুবই সময়স্বাপেক্ষ আর ঝামেলার। চিঠির আদান প্রদান সহজ এবং দ্রুত করার জন্যই ডাকবিভাগ চালু করা হয়। শেরশাহের আমলে তিনি ঘোড়ার ডাক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তার রাষ্ট্রীয় কাজের সুবিধার জন্য,কিন্ত ব্যাক্তিগত বা জনসাধারনের তথ্য সেখানে প্রেরনের কোন সুযোগ ছিলো না। “রয়্যাল মেইল” নামে প্রথম ডাক বা পোস্টাল সার্ভিস চালু হয় ১৫১৬ সালে। এটি চালু করেন হেনরি অষ্টম। এরপর ১৬৬০ সালে প্রথম সাধারন ডাক বা জেনারেল পোস্ট অফিস চালু করেন চার্লস দ্বিতীয়। ১৮৩৫ সালে রোল্যান্ড হিল আধুনিক পোস্ট অফিসের ধারনা দিয়ে “পোস্ট অফিস রিফর্ম” প্রকাশ করেন। সেখানে আধুনিক ডাকবিভাগের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারনা ছিলো। যার মধ্যে ছিলো যেখানে দূরত্ব যাই হোক , যেকোন চিঠি পাঠানোর জন্য প্রেরক কে একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দেয়ার ধারনা এবং ডাকটিকিটের ধারনা। রোল্যান্ড হিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোঝাতে সক্ষম হন যে, এই পরিবর্তন গুলোর খুব দরকার ছিলো। ১৮৪০ সালে ব্রিটেনে “ইউনিফর্ম পেনি পোস্ট” চালু হয় যার মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়ে ওঠে আরো সহজ,দ্রুততর ও নিরাপদ। ব্রিটেনেই প্রথম ডাকটিকেট চালু হয় যার নাম ছিলো “পেনি ব্ল্যাক” আর ১৮৫০ সালে প্রথম চালু হয় ডাকবক্স। বিশ্বে প্রথম সমুদ্র ডাক চালু হয় ১৬৩৩ সালে, ঘোড়াগাড়ির ডাক ১৭৮৪ সালে, মূদ্রিত খামের প্রচলন করা হয় ১৮৩০ সালে ,পোস্টাল মানি অর্ডার চালু করা হয় ১৮৩৮ সালে,স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হয় ১৮৪০সালে,রেজিস্ট্রি ডাক সার্ভিস চালু হয় ১৮৪১সালে,বুকপোস্ট সার্ভিস উন্মুক্ত হয় ১৮৪৮সালে,পোস্ট কার্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৯সালে এবং এয়ার মেল বা বিমান ডাক শুরু করা হয় ১৯১১সালে। অবশ্য এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশেও ডাক ব্যবস্থায় এসেছে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছোয়া। উপমহাদেশে প্রথম ডাক সার্ভিস চালু করা হয় ১৭৭৪ সালে।বাংলাদেশ প্রায় ১৫০ বছর ধরে ডাক বিভাগের ঐতিহ্য ধারন করে চলেছে।স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই দশকের শেষদিকেও ডাক বিভাগের ব্যবস্থার কোন কমতি ছিলো না।ডাকপিওন,রানার,পোস্টমাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারি মিলিয়ে লোকবল ছিলো প্রায় চল্লিশ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু বর্তমানে ডাকঘর বা পোস্ট অফিসের সেই কর্মকর্তা কর্মচারি থাকলেও নেই আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য বা জৌলুস। কারন হিসেবে আমরা বলতে পারি যুগের সাথে প্রযুক্তির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা এগিয়েছি অনেকটা পথ, কিন্তু সরকারের উদাসিনতাই হোক আর অন্য যেকোন কারনেই হোক ডাক ঘর বা পোস্ট অফিসের সেবা আধুনিকতার সাথে তালমিলিয়ে নিতে পারিনি। পিছিয়ে রাখা হয়েছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে। আজ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে ফেইসবুক,টুইটার,স্কাইপ,ট্যাংগো,ভাইভার,ইমো,ই-মেইল সহ নানা প্রযুক্তি। প্রিয় প্রজন্মের জানা উচিত কেমন ছিলো একসময়কার যোগাযোগ,কেমন ছিলো অপেক্ষার মূল্য। ভূলে গেলে চলবে না এই পোস্ট অফিস’ই আমাদের একমাত্র যোগাযোগের সম্বল ছিলো, আর রানার রা ছিলো আমাদের প্রান।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


ডাকঘরগুলো এখন কি কাজ করে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.