![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।
মুক্তির স্বাদ
“ বাবারে মরে গেলাম রে--- ,কে কুন্টি আছুরে----হামাক ধর---রে--?
আর পারিনে রে--- ও বাবা গো – ও মা গো ,হামাক নিয়ে যাও গো-।
আর পারিনে – উ-আহ-উ-আহ-ইস ওরে------------------------?
ওরে বাবাগো-------- মরে গেলেম রে---!
আহারে-----আহারে----।
বিষ দেও গো, হামাক এনা বিষ দেও---উহ –আহ--- মরে গেলেম রে—!
এ ধররে---------------------------?”
এমন নানান শব্দের চেঁচানিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাশের বাড়ির রইচ উদ্দিন মোল্লার । সে ঘুম ঘুম চোখে কান খাড়া করে শুনতে চায় শব্দের গভীরতা । কেননা রাত যতো ভারী থেকে ভারী হয়, চাঁদ থেকে দুধের জোস্ন্যা যখন ঝলমল করে টিনের চালে , তখন জামিলা বুড়ির এমন তীব্র পা-ভাঙ্গার ব্যাথার চেঁচামেচি বাড়তেই থাকে । একটু পরে কানের ঝাঁপি নামিয়ে রইচ উদ্দিন মোল্লা লেপ মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি হয়ে গভীর নিদ্রা যায় । সে জানে এমন চেঁচামেচি জামিলা বুড়ি প্রায় রাতেই করে থাকে । এতে ওতোটা চিন্তিত হবার কিছুই নাই । তার চেঁচানিতে উতলা হতে থাকে মধ্যে রাতের বাঁকা চাঁদের হাসি । সেও বিরক্ত হয় কিছুটা রইচ উদ্দিন মোল্লার মতো । আর তাইতো মাঝ রাত্রিতে মেঘের আড়ালে মুখ লুকোতে চায় বারবার ।
কিন্তু জামিলা বুড়ির চিৎকার-চেঁচামেচি থামে না কিছুতেই । বরং রাতের সাথে পাল্লা দিতে দিতে এর প্রখরতা আরো বাড়তে বাড়তে ঠিক ফজরের আগে এসে নিস্তেজ হয়,সতেজ হয়,প্রশান্তিতে ঘুমোয় জামিলা বুড়ি ।
অবশ্য গরমকালে তার চেঁচামেচি কিছুটা কম থাকলেও শীত বাড়ার সাথে সাথে তার চেঁচামেচি সমান তালে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে । তখন রইচ উদ্দিনরা বে-ভোরে সারারাত ঘুমোয় । ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে কাজে বেরিয়ে পড়ে । কিন্তু জামিলা বুড়ির বিছানা ছাড়ার কোন প্রশ্নই আসে না । কেননা এই এক বিছানা ছেড়ে বাইরে যাবার কোন সুযোগ তার জন্য এখন আর বরাদ্দ নেই । খোদার উপর এই আক্ষেপ নিয়ে সে বসে বসে তসবিহ গোনে দিনের পর দিন , বছরের পর বছর ।
এভাবেই স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় ভাঙ্গা পা নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে সে দীর্ঘ ৯ টি বছর ।
জামিলা বুড়ির বিছানার কোন পরিবর্তন হয় না । পড়ে থাকে ,থাকতে হয় দিনের পর দিন ,এক বিছানা , এক চাদর,এক বালিসে । জানালার পাশে আতা গাছে বাসা বাঁধা টুনটুনি পাখিটাই তার একমাত্র সাথী ।
কথা বলার ,দুঃখ বোঝার ,গাল বেয়ে অঝর ধারায় বয়ে চলা অশ্রু মুছে দেবার একমাত্র সাথী । তাই তো সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি জানালার শিকের ফাঁক গলিয়ে ,উকি দিয়ে ,এদিক ওদিক তাকিয়ে টুনটুনির সাথে কথা কয়,গল্প করে । সুখ-দুখের গল্প,পায়ের অসহ্য যন্ত্রনার গল্প,মনের ব্যাথ্যার গল্প । গল্প বলতে বলতে চোখে জ্বল নামে , সে জ্বলের পানি তীব্র গরম । মনের ব্যাথ্যার সকল আগুন পানি হয়ে চোখ দিয়ে ,গাল হয়ে,চিবুক হয়ে বঙ্গোপোসাগরের মোহনায় গিয়ে মিশতে চায় । কখনো মেশে ,আবার কখনো গায়ের ছেড়া কাথায় গিয়ে হারিয়ে যায় ,শুকিয়ে যায় ।
জামিলা বুড়ির চোখের জ্বলে টুনটুনিও জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে থাকে,সেও কাঁদে ।
জামিলার ব্যাথ্যায় ব্যাথিত হয়ে মাঝে মাঝে সেও ডুকরে কেঁদে ওঠে !
শুধু খেয়াল করে না,দেখতে পায়না ,সামান্য ব্যাথ্যাও অনুভব করেনা জামিলার কাছের ,অতি কাছের কেউ । যাদের সে খাইয়েছে ,পড়িয়েছে, বড় করে আলাদা সংসার গড়িয়ে দিয়েছে । ঠিক টুনটুনির মতো করে । দিনরাত কি পরিশ্রম আর নিদারুণ কষ্টই না করতে হয়েছে তাকে । খেয়ে না-খেয়ে , নিজের মুখের খাবার উগলিয়ে দিয়েছে ওদের,নিজে না খেয়ে পেট ভরিয়েছে । টুনটুনি যেমন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোজে । সারাদিন খোজাখুজি শেষে মুখে কিছু নিয়ে ভেতর থেকে উগলিয়ে খাইয়ে দেয় ওর বাছাদের ।
উগলিয়ে শান্তি পায় সে,সেকি প্রচন্ড শান্তি !
জামিলা বুড়িও তো এই ভাঙ্গা পায়ে দাঁড়িয়ে এই হাতে হাত ধরে ওদের হাটা শিখিয়েছে ।
টুনটুনির বাসায় এখন দুটি ছানা । এই দুটি ছানাকে বড় করতে টুনটুনির কতো পরিশ্রমই না করে যাচ্ছে দিনরাত । নিজের মুখের খাবার উগলিয়ে দিচ্ছে বাছাদের মুখে, ওদের সুখেই টুনটুনির যতো সুখ ।
জামিলা বুড়ি এসব দেখে ফিরে যায় তার যৌবনে । ভাবতে থাকে যৌবনের কথা , বাপের বাড়ির কথা,শশুর বাড়িতে আসার কথা । কতো সহজেই না বাপের বাড়ির বদলে শশুর বাড়িকে আপন ,অতি আপন করেছিলো সে ।
সারাদিন কতো ব্যাস্ততা !
সামান্য বসে থাকার ফুসরত ছিলো না তার । সংসারের ভালো মন্দ সবই ছিলো তার ঘাড়ে । সারাদিন কাজ আর কাজ । কিন্তু আজ তার হাতে অফুরন্ত সময় ,কোন কাজ নেই টুনটুনির সাথে গল্প করা ছাড়া । বাড়ির সবাই প্রচন্ড ব্যাস্ত আর ব্যাস্ত । শুধু ব্যাস্ততা নেই জামিলা বুড়ির । তাইতো নিথর মনে একনাগাড়ে দীর্ঘ ৯ টি বছর এই এক বিছানাতেই কাটিয়ে দিচ্ছে সে । খাওয়া-দাওয়া , হাগা-মুতা সবই এখানে । সামান্য পরিশ্রমের সুযোগও রাখা হয়নি তার জন্য । এমনকি হাগা-মুতা কমানোর জন্য দিনে তিনবেলার জায়গাতে দুই বেলা খায় সে । সে কিছুতেই চায়না তার জন্য অন্যরা বিরক্ত হোক । কিন্তু তার চাওয়া না চাওয়াতে কিছু যায় আসে না । অন্যরা এমনিতেই বিরক্ত হয় , প্রচন্ড বিরক্ত হয় ।
জামিলা বুড়ি শুয়ে-বসে ভাবে এভাবে বসে বসে আর কতো ?
আর কতো অন্ন ধ্বংস করবে সে । এবার সে মুক্তি চায়,একেবারে মুক্তি ।
তাইতো রাত নেমে এলেই বিষ চায় সে ।
বিষ খেয়ে চিরদিনের কষ্ট,যন্ত্রনা থেকে মুক্ত হয়ে টুনটুনির মতো স্বাধীনভাবে পাখনা মেলে উড়তে চায় মুক্ত আকাশে । কিন্তু কেউই তাকে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে দেয় না । মুক্তি দেয় না কিছুতেই । মুক্তি দেবার বদলে প্রতিদিন ৫০০ পাওয়ারের ডাইক্লোফিন ট্যাবলেট খাইয়ে তার যন্ত্রনাকে বইয়ে নিয়ে যায় দিনের পর দিন ।
কিন্তু মনের ব্যাথ্যা দূর করবার কোন চেষ্টাই করে না কেউ । বরং যতো পারে ,যতো দীর্ঘ করে , মনের কষ্টকে বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ ।
প্রথম প্রথম তীব্র ব্যাথ্যা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধপত্র চাইতো সে । এখন আর ওষুধ চায় না । এখন চাওয়া শুধু একশিশি বিষ । কারন সে এরি মধ্যে বুঝে গেছে মরণ ছাড়া তার মুক্তি নেই । কিন্তু মরণ যেহেতু তার হাতের বিষয় নয় সেহেতু বিষ-ই তার একমাত্র ভরসা ।
জামিলা বুড়ি ডুকরে ডুকরে কাঁদছে । জানালার ওপাশে হয়তো টুনটুনিটাও জেগেছে । সেও জামিলার ব্যাথ্যায় তীব্র ব্যাথ্যা অনুভব করছে । তারও বোধহয় চোখে জ্বল ছলছল করছে । শুধু জামিলার চেচানিতে সাড়া নেই পাশের ঘরে থাকা তার স্বজনদের । বেভোরে ঘুমোচ্ছে তারা । সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর প্রশান্তির ঘুম । জামিলার ব্যাথ্যায় বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথ্যা নেই তাদের ।
অবশ্য প্রথম প্রথম কিছুটা ব্যাথ্যা তারাও অনুভব করেছিলো । তাদেরও যন্ত্রণা হচ্ছিলো খানিকটা । দু-একদিন চোখের জ্বল তারাও ফেলেছিলো অনেককটা । দূরের আত্বীয়-স্বজন পথ্যি-খাবার নিয়ে যাতায়াত করেছিলো মাসখানিক ।
তারপর !
তারপর সব আস্তে আস্তে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে । আসা-যাওয়া কমেছে ধীরে ধীরে । কমতে কমতে এখন শূণ্যর কোঠায় ঠেকেছে সব । হাসপাতাল-ডাক্তার-ওষুধ এসবও চলেছে বছর খানেক । আস্তে আস্তে সবই বদলেছে । নিয়মে বদলেছে ,অনিয়মে বদলিয়েছে । হিংসায় বদলিয়েছে ,ব্যাস্ততায় বদলিয়েছে, কারনে–অকারনে বদলিয়েছে । হাসপাতাল-ডাক্তার-ওষুধের বদলে চলছে শুধু ডাইক্লোফিন দিয়ে ।
ব্যাথ্যা কমানোর ওষুধ ।
কিন্তু ব্যাথ্যা তো কমেনি কিছুতেই । বরং সময় যতো গড়িয়েছে-
ধাপে ধাপে ,পাল্লা দিয়ে ,প্রচন্ড গতিতে মনের ব্যাথ্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে ।
প্রতিদিন ফজরের আগে জামিলা বুড়ির ব্যাথ্যা কিছুটা কমে, কমতে কমতে আস্তে আস্তে সুস্থির হয় । শান্তিতে ঘুমিয়ে যায় সে । কিন্তু ব্যাথ্যা আজ কিছুতেই কমছে না । বরং বেড়েই চলছে । অবস্থা এমন দেখে টুনটুনি আজ কিছুটা অস্থির । সেও চিন্তিত জামিলার অবস্থায় । তার কাছেও ব্যাপারটা অন্যরকম ঠেকছে । আর তাই এই মাঝ রাতেও নিজের বাসা ছেড়ে জানালার কাছে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে । জানালা বন্ধ তাই নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে আপন নিড়ে । কিন্তু মন কিছুতেই স্থির করতে পারছে না । বুকে সেও প্রচন্ড ব্যাথ্যা অনুভব করছে । জামিলা বুড়িকে এক নজর না দেখার ব্যাথ্যা । কিন্তু এই রাতে জামিলা কে দেখার কোন সুযোগ নেই তার হাতে । সেও আজ কাঁদছে , প্রচন্ড জোরে কাঁদছে, বুকের সকল শক্তি খাটিয়ে কাঁদছে । কেঁদে-কুটে বুক ভাসাচ্ছে । আজ সে একা হতে যাচ্ছে ।
দীর্ঘ দিনের গল্প বলার সাথী হারাচ্ছে সে । আর তাই তার মনে এতো ব্যাথ্যা ।
জামিলা বুড়ি সমান তালে চিল্লাচ্ছে । ব্যাথ্যার এমন তীব্রতা দেখে খানিক বাদে পাশের ঘরের বড় বউ উঠে আসে । গলা উচিয়ে,খেকিয়ে,ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে আজ তার কি হয়েছে ? কেন সে তাদের শান্তির ঘুম হারাম করে দিচ্ছে । এতো চেঁচামেচি কেন ?
শান্তিতে কি একটু ঘুমাতেও পারবো না ?
ওষুধ খাওয়ার পরও এতো ব্যাথ্যা কিসের ?
কিন্তু জামিলা উত্তর দিতে গিয়েও দিতে পারে না । বোঝাতে পারে না এ ব্যাথ্যা কিসের ব্যাথ্যা ।
এ কষ্ট কিসের কষ্ট ।
কিন্তু সে জানে আজ তার মুক্তি হবে ,চিরদিনের মুক্তি । যে মুক্তির স্বাদ পেতে অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর । আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । আজ মুক্তি মিলবে সকল কষ্ট থেকে ,সকল যন্ত্রনা থেকে ।
জামিলার গলার আওয়াজ কমতে থাকে ,ধীর থেকে আরো ধীর হতে থাকে । নিস্তেজ হয়, সতেজ হয় , কোমল-মলিন হতে হতে অসাড় হয় । প্রতিদিন সে সারা রাত চীৎকার চেঁচামেচি শেষে ফজরে শান্তিতে ঘুমোয় । আজও ব্যাতিক্রম কিছুই ঘটছে না । ফজর হতে না হতেই তার দু-চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসে ,তীব্র ঘুম । সুখের ঘুম ,প্রশান্তির ঘুম ,স্বাধীন হবার ঘুম ।
ব্যাতিক্রম শুধু একটাই !
প্রতিদিন ফজরে ঘুমোনোর আগে পাশে কেউই থাকে না ,এমনকি টুনটুনিও না । আজ সবাইকে পাশে রেখে ,সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে সে ঘুমোচ্ছে । ওদিকে টুনটুনিটাও ডুকরে ডুকরে কাঁদছে , স্বজন হারানোর কান্না সে কিছুতেই থামাতে পারছে না ।
এম এম মেহেরুল
লেখক ও চেয়ারম্যান,আলোর প্রদীপ ।
ই-মেইল- [email protected]
২| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৫
কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: এই ঘুম একদিন সবাইকে ঘুমোতে হবে। জেগে উঠে দেখবেনা আর এ সুন্দর পৃথিবীর মায়াভরা ময়ের আঁচল। কী বিভৎষ্য ! কী ভয়ংকর সে কথা।
৩| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১০:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
৪| ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১০:০৬
আবু আফিয়া বলেছেন: ভাল লাগল, আসলে সবাই স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে, চায় মুক্তি
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৩
শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল