নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহবুব । সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগারপাঠকভাইবোনদের আমার পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা । আশা করি আপনাদের আমি আবহমান বাংলার সব সুন্দর রচনা উপহার দিতে পারবো ।।

সৈয়দ মেহবুব রহমান

আমি মেহবুব । সামহোয়্যারইন ব্লগের সকল ব্লগার ভাইবোনদের আমার পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা । আশা করি আপনাদের আমি আবহমান বাংলার সব সুন্দর রচনা উপহার দিতে পারবো ।।

সৈয়দ মেহবুব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিনোদনের বিবর্তন – বিনোদনের সেকাল একাল ও করনীয়

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩৭

বিনোদন বা এন্টারটেইনমেন্ট শব্দটি আমাদের ও সারা বিশ্বের সকল মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । নিত্যদিনের অপরিহার্য প্রয়োজনীয় কাজ কর্মের মতোই বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা আমাদের জীবনে অপরিহার্য । ধরুন সারাদিনের কাজ কর্মের পর আপনি মানসিক ভাবে পরিশ্রান্ত । আপনি আপনার পছন্দের সুরেলা একটা গান শুনলেন , অনেকাংশে আপনার মানসিক প্রশান্তি এসে গেলো । হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে , বাইরে প্রচন্ড গরম বা প্রচন্ড বৃষ্টি । হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে । দেখে নিতে পারেন আপনার পছন্দের কোন ফিল্ম । বিনোদনের জন্য সঠিক কোন ছকে বাধা কাজ ভাগ করা নেই । বিনোদনের উদ্দেশ্য হলো সারাদিনের কর্মক্লান্তি শেষে বা অনির্দিষ্টকালের রুটিনবাধা ব্যস্তজীবন শেষে আমাদের মনে নিরেট প্রশান্তি এনে দেওয়া যা আমাদেরকে পুনরায় কর্মশক্তি অর্জনে সহায়তা করা ।

বিনোদনের রকমফের বদলেছে যুগে যুগে । একেক সময়ে একেক রুপে মানুষ বিনোদনের নতুন নতুন পথ উদ্ভাবন করেছে । তবে বিনোদনের মূল উদ্দেশ্য মনে আনন্দ দেওয়া , এই উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়নি ।

সুদুর অতীত থেকে মানুষ আনন্দের জন্য লাঠিখেলা , বাঁশি বাজানো , পুঁথিপাঠ , গান বাজনা করতো । মধ্যযুগের মোঘল ইতিহাসের বিনোদনের সঙ্গাতো আরো ব্যাপকার্থে মোঘলাই আয়োজনের ইতিহাসে পাওয়া যায় । আজকের নাচ গান , বিরিয়ানী সবই মোগলদর অবদানে । যাত্রাপালা-থিয়েটার-সার্কাস তো সেই প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে এখনো কমবেশী টিকে আছে । কিন্তু যেটাই থাকুক না ক্যামেরা আবিষ্কার না হলে বিনোদন জগতের পরিপূর্নতা আসতো না কখনো । সেই ১৮৯৫ এর লুমিয়ের ব্রাদার্স থেকে শুরু । আর বাংলাতে মুখ আর মুখোশ ।


একটা সময় সিনেমা দেখাটা ছিলো মানুষের কাছে এক বিরাট আমেজ এর ব্যাপার । দলবেধে সিনেমার টিকেট কেটে সিনেমা দেখতে যাওয়া , সিনেমার টিকেট কেনার জন্য ধান বিক্রি করে আনা টাকা , বা টিফিনের টাকা বাচিয়ে গ্রাম থেকে সিনেমা দেখতে আসতো গ্রামের কিশোর যুবারা । এখনকার সময়ের সিনেমার কথা বলবার মত কিছু নেই । সিনেমার স্বর্নযুগ ও নেই ।

মনে আছে সেই বিদ্যুত ও টেলিভিশন বিহীন গ্রামের কথা ? মিটিমিটি করে জ্বলা সেই কেরোসিনের বাতি , ঘড়িতে রাত আটটা বাজতে না বাজতেই সারা গ্রাম গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতো । বুড়ি দাদী – নানীদের মুখে নানা রকম রূপকথার গল্প , গা ছমছম করা সব আধিভৌতিক গল্প শুনতে শুনতে কখন ঘুম এসে যেতো । সন্ধ্যার সাথে ঝিঝি পোকার ডাক , ঘরের আনাচে কানাচে গা ছমছম একটা ভাব , কখনো ভরা পূর্নিমার চাঁদের মোহনীয় জ্যোছনাতে উঠানে পাটি বিছিয়ে গ্রামের বৌঝিদের গল্পের আসর বসানো , উঠানে বাচ্চাদের হই হুল্লোড় সেটা এক অন্য রকম বিনোদন বা আনন্দের উপলক্ষ্য ।

অনেক সময় চৈত্র বা বৈশাখের শুকনো আবহাওয়াতে যখন সারাদিন পর একটু সস্তির আশাতে সবাই গা এলিয়েছে বা ঘুমিয়েছে হয়তো গ্রামীন কোন বৈশাখে আধা শুকনা নদীর তটে নৌকার উপর বসে বা মাঠের ফুরফুরে হাওয়াতে কোন বংশীবাদক তরুনের মন পাগল করা সুরেলা বাঁশির সুর ভেসে আসতো । আবহমান গ্রাম বাংলার এক চিরন্তন রোমান্টিক ক্লাসিকের নাম এই বাঁশির সুর । চাঁদনী রাত আর বাঁশির সুর আবহমান গ্রাম বাংলার ক্ল্যাসিক রোমান্সের এক অবিচ্ছদ্য অনুসঙ্গ ।
মনে পড়ে সেই গানটা

ওরে ও কিশোরী
বাজাবো বাঁশরী
একেলা আইসো নদীর কিনারায়
দেখবো তোমায় চাঁদের জো্ছনায়

অথবা প্রানসখী ……
ওই শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে

গানের শিল্পীর নাম আপনারাই বলুন না ।

বাঁশি নিয়ে আছে আরো কত আধিভৌতিক গল্প । গভীর রাতে বাঁশি বাজানোর তরঙ্গের ও সুরের তারতম্যের কারনে রহস্য জগতের অশরিরীদের উপস্থিতি নিয়ে কত শত গল্প রয়েছে , সেটা না হয় পরবর্তী কোন লেখায় নিয়ে আসবো ।


আসলে আপনি যদি সৌন্দর্যের কদর করতে জানেন , আপনার চোখ যদি জহুরীর চোখ হয় তো বাংলার প্রকৃতি , এর উপকথা আপনার চোখে আর কিছুর সাথে তুলনীয় হতে পারেনা । এ কোন ইট কাঠের লন্ডন বা নিউইয়র্কের গল্প নয় , এ আপনার আমার বয়সে হারাতে হারাতে বিলুপ্তপ্রায় এক প্রকৃতির রাণী বাংলার কথা ।

মনে পড়ে সেই বৈশাখী মেলাতে গ্রামে নাগরদোলা চড়া , মাটির তৈরি খেলনা , গ্রামে তৈরি মিষ্টি । ঈদের দিনে আত্বীয় স্বজন প্রতিবেশীময় সেই দিন গুলোর কথা । সারাদিনে আনন্দ যেন শেষ হতে চাইতোনা । এখনকার সময়ে তো ঈদের নামাজের পর যার যার বাসায় গিয়ে গুরুপাক ভোজন পর্যন্তই ঈদের আনন্দ শেষ হয়ে যায় ।

গল্পের বই পড়া , ফিতা ক্যাসেটের লিমিটেড গান শোনা , মাছ ধরা , ভিসিআর বা ভিসিডি ভাড়া করে এনে সিনেমা দেখা সেই লিমিটেড বিনোদন সুবিধার আনলিমিটেড আনন্দ এখন আর কোথায় পাবেন ?

এখন আমাদের কাছে ইন্টারনেটের কল্যানে ফেসবুক , ইউটিউব সব আছে । কিন্তু আমাদের মাঝে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ এর গল্পগুচ্চ্ছ , বিদ্রোহী কবি নজরুলের রিক্তের বেদন , পাভেল বাঝোভের রুশ ক্ল্যাসিক মালাকাইটের ঝাপি ,, একজন উত্তম-সুচিত্রা জুটি , সালমান শাহ এর মত সুপার স্টার , হলিউডের স্ট্যালোন , ব্রুসলীর মত কিংবদন্তী , টম এন্ড জেরী , ওয়াল্ট ডিজনীর স্রষ্ঠা নেই । নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় বা প্রানের মত বিখ্যাত কমিকস কিংবদন্তী নেই শিশুদের জন্য । আর সত্যজিত রায়ের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই । তাঁর ফেলুদা তারপর ছোট গল্প গুলোতে অসাধারন প্রতিভার ছাপ । মনে পড়ে স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস , বা লস্ট ওয়ার্ল্ডের কথা ।

টেলিভিশন বিনোদন বলতে বর্তমানে স্টার জলসা ও জি বাংলার সিরিয়াল নামক অদ্ভুত এক ভুত সন্ধা ছয়টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত গ্রাম বাংলার ললনাদের হিপ্নোটাইজড করে রেখেছে । পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধির জন্য এর মত ভাইরাস আর নেই । এই মহিলারা কি জানেন তাদের এই সিরিয়াল চলা টেলিভিশনটাতে ডিসকভারী , ন্যাশনাল জিওগ্রাফী তে আল্লাহর সৃষ্টি প্রকৃতি ও মাখলুকাতের নানা সৌন্দর্য্য দেখানো হয় ? টেন স্পোর্টসে রেসলিং দেখানো হয় , সনি আট এ আদালত ও ক্রাইম পেট্রোল এর মত জীবনভিত্তিক অনেক প্রোগ্রাম দেখানো হয় ? ইউটিউবে সারা পৃথিবীর সকল জাতির , সকল ভাষার সংগীত ও মুভি কালেকশন রয়েছে ? আপনারা নারীরা মুক্তির কথা বলেন , সারা পৃথিবী দেখতে চান , চার দেয়ালে বন্দী থাকতে চাননা , কিন্তু কয়েকটা সিরিয়ালের চ্যানলের গাজাখুরী বস্তাপচা গল্পে বন্দী না হয়ে থেকে একটু অন্য চ্যনেল ঘুরুন , ইউটিউব যান । দেখবেন সিরিয়াল দেখে নষ্ট করা সময়ের জন্য অনুশোচনার শেষ থাকবেনা ।

যুগ পরিবর্তনশীল , যুগের সাথে সব পরিবর্তনের সাথে আমাদের মানিয়ে নিতে হয় । এর নামই ছুটে চলা , এর নামই জীবন । জীবন চলে তার নিজস্ব গতিতে । অবশ্যই ইন্টারনেট , ফেসবুক , ইউটিউব আমাদের জীবনে মহা আশীর্বাদ । এই লেখাটাও তো লিখছি ইন্টারনেট ব্যবহার করে । ইউটিউবে সহজেই আমরা পছন্দের সিনেমা দেখছি , অনেক বিষয়ের উপর অনেক অসাধারন টিউটোরিয়াল দেখে সেই বিষয় শিখতে পারছি । আপনি কোন ফসলের চাষ করতে চান ? ইউটিউবে সার্চ করুন , দেখবেন আপনার পছন্দের ফসলের ডিটেইলস চলে আসবে । আপনি রান্না শিখতে চান ? যে রান্না করতে চান ইউটিউবে সার্চ দিন , দেখবেন পাকা রাধুনীর হাতে স্টেপ বাই স্টেপ শিখতে পারবেন । অনলাইনে আর্ন বা আপনার ক্লাসের বিষয়ভিত্তিক অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন । ফেসবুকের কল্যানে মিডিয়া সাধারন মানুষের হাতে । আপনার এলাকার কোন ভালো খবর বা অসংগতির কথা সহজেই প্রকাশ করতে পারছেন । আসলে প্রযুক্তি কখনোই অভিশাপ নয় , আশির্বাদ । প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি রোবট আবিষ্কার করে রোবটকে দিয়ে সব কাজ করাতে গিয়ে নিজে অচল হয়ে যাবেন কিনা বা আপনার হাতের ছুরি দিয়ে ফল কাটবেন না মানুষ কে আঘাত করবেন , ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার করে সমাজের কল্যান করবেন , নাকি কারো একান্ত মুহুর্তের ছবি ছেড়ে দেবেন , নাকি অপরিচিত ছেলে বা মেয়ের সাথে পরকীয়া করবেন , সেটা ব্যবহারকারীর দোষের ভিতর পড়ে । দোষটা আমাদেরই । মোবাইল , ইন্টারনেট থাকা সত্ত্বেও , অতি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমাদের আগের মত আত্বীয় –স্বজনের বাড়ি যাওয়া হয়না ,, ফেসবুকে হাজার ফ্রেন্ড কিন্তু একজন প্রকৃত বন্ধু নেই , অগনিত উচ্চ শিক্ষিত মানুষ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে , কিন্তু প্রকৃত মানুষের অভাব সবখানেই ।বড় হবার অসুস্থ প্রতিযোগিতা না করে উন্নত প্রযুক্তিকে সঙ্গী করে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও সুস্থ বিনোদনের চর্চা করি । আসুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলার সৌন্দর্য্য বিশ্বে তুলে ধরি । বাংলা ভাষাতে ইন্টারনেটে তথ্য ভান্ডারও সীমিত । আসুন বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ব্লগ ও বাংলা উইকিপিডিয়াতে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাতে লিখে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষারতথ্য ভান্ডার স্বয়ংসম্পূর্ন করি । আর যান্ত্রিকতার ভিতর দিয়ে হলেও আমরা যেন আবহমান বালার অবারিত সবুজ , কথাসাহিত্য , লোকগাথা হারিয়ে না ফেলি । ওয়েস্টার্ন এর ভালো দিক গুলো নিন । তাদের জীবনের উশৃঙ্খল দিক গুলো নিয়ে অতি আধুনিক হবার দরকার নেই ।এগিয়ে যান গর্ব করে বলার জন্য যে আপনি বাঙালী , অলস ও নেশাগ্রস্থ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যুব সমাজ গঠনের জন্য নয় ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.