নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরাক ও সিরিয়ায় আল কায়েদার চেয়েও ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর আইএসআইএল ( ISIL) এর উৎপত্তি হল যেভাবে....

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৫

২০১১ সালে আরব বসন্তের হাওয়া তিউনিসিয়া থেকে মিসর হয়ে সিরিয়াতেও আঘাত হেনেছিল, কিন্তু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি সিরিয়াতে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে আরব বসন্তের সেই ঢেউয়ের দিক পরিবর্তন করে সিরিয়াতে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও সিরিয়াকে জঙ্গীবাদের আর এক নতুন প্রজননক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তুলে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের দাবির অজুহাতে সিরিয়ার অভ্যন্তরে যে জঙ্গীবাদের জন্ম দেওয়া হয়েছে আজ সেই জঙ্গীবাদের বিষবাষ্প শুধু সিরিয়া নয় ইরাকসহ পাশ্ববর্তী আরব দেগুলিকেও গ্রাস করার উপক্রম ! জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড হিসাবে বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতায় এযাবৎকালীন আল কায়েদার জুড়ি মেলা ভার ছিল কিন্তু আল কায়েদা থেকে উদ্ভূত ও আল কায়েদা থেকে বিচ্যুত একটি অংশ ISIL (বর্তমান নাম IS) আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির প্রভাবকের ভূমিকার কারণেই অতি দ্রুত শক্তিশালী ও বিস্তার লাভ করে। নিষ্ঠুরতায় ও বর্বরতায় এই ISIL আল কায়েদাকেও ছাড়িয়ে গেছে ! এই ISIL এর বর্বরতা সম্পর্কে আপনারা সম্যক অভিহিত। ইরাক ও সিরিয়ার বৃহত একটি অংশ এখন এই কুখ্যাত ISIL এর নিয়ন্ত্রণে !



সিরিয়া বাশার বিরোধী কয়েকটি গ্রুপ আছে। এরমধ্যে FSA এই বাহিনীটি হল মডারেট ও সিরিয়ার বাহিনীটির বিচ্যুত একটি অংশ নিয়ে গঠিত। এই বাহিনীটির উপর পশ্চিমাদের সমর্থন ও আস্থা আছে । পশ্চিমারা চেয়েছিল এই বাহিনীটিই সিরিয়ার শাসনক্ষমতা দখল করবে কিন্তু সৌদি আরবসহ সিরিয়ার প্রতিবেশী আরব রাস্ট্র, তুরস্ক ও ইসরায়েল শুধু এই বাহিনীর উপর নির্ভর করতে পারেনি কারণ তাদের এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ ছিল যে FSA কে যতই সাহায্য সহযোগিতা করা হোকনা কেন সিরিয়ার সেনাবাহিনীকি পরাজিত করা হয়তো সম্ভব হবে না তাই তারা আসাদকে হঠাতে সিরিয়াতে আল কায়েদাও নিয়ে আসে। সিরিয়াতে আল কায়েদার নুসরা ফ্রন্ট নিয়ে আসার মূল ভূমিকা পালন করেণ সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা মন্ত্রী প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান । (সিরিয়াতে সৌদি মিশন ব্যর্থ হওয়ার কারণেই সৌদি বাদশাহ পরবর্তীতে প্রিনস্ত বন্দরকে বরখাস্ত করেণ) উদ্দেশ্য ছিল আল কায়েদাকে ব্যবহার করা । উদ্দেশ্য আরো ছিল মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া সুন্নীর লড়াই বেঁধে দেওয়া কিন্তু মজার বিষয় এই আল কায়েদা শুধু সিরিয়ার আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি সঙ্গে FSA এর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছে !! কারণ আল কায়েদা বুঝতে পেরেছে তাদের মাধ্যমে আসাদের পতন হলেও তারা সিরিয়ার শাসন ক্ষমতা পাবে না যতক্ষণ না মডারেট FSA শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে । তাই সিরিয়া ভিত্তিক আল কায়েদা একই সাথে আসার সরকার ও FSA এর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ অব্যহত রাখে। অর্থাৎ সৌদি আরব আল কায়েদাকে অঢেল অস্ত্র ও অর্থ সিরিয়াতে যে উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিল আল কায়েদা পুরোপুরি সৌদি নীতিকে অনুসরণ করেনি। সৌদি ও ইসরায়েলী সহযোগিতা আল কায়েদা গ্রহন করলেও সিরিয়াতে তারা তাদের আদর্শভিত্তিক লড়াই করেছে ও করতেছে !



আসাদ যখন দেখল আল কায়েদা FSA এরও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তখন আসাদ আপাতত আল কায়েদার বিরুদ্ধে আক্রমন বন্ধ করে দিল আর এই সুযোগে আল কায়েদা তেমন কোনো বাধা না পেয়ে সিরিয়ার কিছু অংশ দখল করেছিল যা নিউজ হিসাবে আমরা মিডিয়ায় পেয়েছিলাম আর আল কায়েদা সমর্থকেরা তাদের বিরাট কৃতিত্ব হিসাবে প্রচার করত। এভাবে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী ও আল কায়েদার সম্মিলিত আক্রমনে FSA কোনঠাসা ও দুর্বল হয়ে যায়। পশ্চিমাদের সাহায্য সহযোগিতা FSA এর তেমন কাজে আসেনি। আর অন্যদিকে আলকায়েদা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে যায়। আর শক্তিশা্লী হওয়ার পর তারা আবার দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। তার একটি হল ISIL ! এদের নেতা হল আবু বকর আল বাগদাদি যিনি মুসলিম বিশ্বের স্বঘোষিত খলিফা ! এই আইএসআইএল নেতাদের সাথে আল কায়েদা নেতাদের আদর্শিক মতবিরোধ ঘটে। এরফলে এরা আল কায়েদা পরিত্যাগ করে। প্রথম দিকে এরা ছিল ISIS কিন্তু আসাদ এখানেও একটা চরম চাল চেলেছে তা হল আল কায়েদার এই দুই গ্রুপ আবার পরষ্পরকে খারেজী ( দলচ্যুত) ঘোষণা করে পরষ্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শুধু করল। তো আসাদ এই মুহুর্তে কৌশলগত কারণে আল কায়েদার চেয়ে অত্যন্ত উগ্র ISIS কে আক্রমন করল না ! এরফলে ISIS ও সিরিয়ার সরকারী বাহিনী আল কায়েদাকে আক্রমন করল ! এভাবে সিরিয়ার আল কায়েদাও দুর্বল হয়ে গেল !! কিন্তু ISIS প্রচন্ড শক্তিশালী হল।তবে কাকে রেখে কাকে আক্রমন করতে হবে ও সিরিয়া যুদ্ধের বাশার আল আসাদের পক্ষ হয়ে এই কুটকৈৗশলগুলো ছিল ইরানের কুদস বাহীনির কাশেম সোলায়মানির মাথা থেকে উদ্ভুত !! তবে ISIL বলেন আর আল কায়েদা বলেন এদের অর্থ সংস্থান করে থাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরব রাজা বাদশাহগণ এবং তাদের দেশে ধনকুবেরগণ। ISIS যখন শক্তিশালী হল তখন সৌদি, ইসরায়েল এদের টোপ দিল শুধু সিরিয়া নয় তোমরা ইরাকেও যাও আমরা তোমাদের সাথে আছি। কারণ ঐ দিকে আবার নুরী আল মালিকির সরকারের সাথে সৌদি আরবের চলছিল চরম আদর্শিক ও রাজনৈতিক লড়াই ! ইসরায়েল ও সৌদি উভয়ের প্রয়োজন ইরানকে শায়েস্তা করার ও আবার ইসরায়েলের প্রয়োজন বৃহত ইসরায়েল । এজন্য ইসরায়েলের দরকার পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা । বলে রাখা ভাল যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ভূ-রাজনীতি ইসরায়েল ও সৌদি আরবের স্বার্থ অভিন্ন ! কাজেই সৌদি আরব ও ইসরায়েল নিজ নিজ স্বার্থের কারণেই তারা অপ্রাকাশ্যে পরষ্পরের বন্ধু । যাইহোক সিরিয়ার এই ISIS এর সাথে যোগ দিল সাদ্দামের বাহিনীর একটা অংশ ! তখন এরা নাম নিল ISISL !! এটা ঠিক ISIL যে এভাবে ইরাকে রাতারাতি ঢুকবে এটা কারো মাথায় আসেনি ! সম্ভবত কাশেম সোলায়মানিও ইরাকে ISIL এর তড়িৎ সফলতা নিয়ে ভাবেননি ! পশ্চিমারা কাশেম সোলায়মানিকে শ্যাডো কমান্ডার হিসাবেই ডাকেন । তবে কাশেম সোলায়মানি শুধু সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর উপর নির্ভর করেণনি তিনি সিরিয়ার যুবসমাজ নিয়ে নতুন একটা মিলিশিয়া বাহিনীও গঠন করেছেন, সিরিয়ার জনগণকে সংগঠিত করেছেন অন্যদিকে হিজবুল্লাহকেও মাঠে নামিয়েছিলেন যার সুফল আসাদ সরকার ও ইরান এখন পাচ্ছে আর আসাদও বহাল তবিয়তে টিকে আছে। এটা কি ভাবতে পারেণ, পুরো পশ্চিমা বিশ্ব, ইসরায়েল ও পুরো আরব বিশ্ব আসাদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার পরেও আসাদ তাদের কলা দেখিয়ে নির্বাচন করে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হল !!! অপরদিকে ISIL এর বর্বরতা,নিষ্ঠুরতায় ও খেলাফত ঘোষণায় ও তড়িত সফলতায় পশ্চিমা বিশ্ব এবং আরব বিশ্ব প্রমাদ গুণলো । আসাদকে হঠানোর জন্য পশ্চিমা ও আরব বিশ্ব মিলিতভাবে যে ফ্রাঙ্কেস্টাইনের জন্ম দিল এখন সেই ফ্রাঙ্কেস্টাইনকে নি:শেষ করার জন্য পশ্চিমা ও আরব বিশ্ব জোট গঠন করল ! সবচেয়ে বড় কথা এই ISIL নামক ফ্রাঙ্কেস্টাইনে আছে পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের নানান দেশ থেকে রিক্রুট করা সদস্য। এরা জেহাদি আদর্শ নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত যাবে ও আরো জন্ম দিবে শত শত জেহাদি-পশ্চিমা বিশ্বও এ থেকে নিরাপদ নয় !!! তবে সম্মিলিত সামরিক হামলায় ISIL হয়তো আপাতত নিষ্ক্রিয় হবে কিন্তু এই ফ্রাঙ্কেস্টাইনের আর মৃত্যু হবে না কারণ একটি আদর্শের জন্ম দেওয়া যত সহজ সেই আদর্শকে ধ্বংস করা তারচেয়ে বেশি কঠিন !

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৫

আমায় ডেকো না বলেছেন: মোটামুটি ঠিকই আছে, তবে আরব সহ পশ্চিমা বিশ্ব প্রমাদ গুনেছে এ কথা শুদ্ধ নয়, ঐটা আই ওয়াশ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৬

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: পম্চিমা দুজন সাংবাদিকের শিরোচ্ছেদ করার পর পশ্চিমারা আইএসআইএল বিরোধী জোট জোরদার করে তেমনি আইএসআইএল ইরাকের কিয়দংশ দখলের পর সৌদি আরবেও হামলার হুমকি দেয়, তখন সৌদি আরব নড়ে চড়ে বসে শুধু তাই নয় এরা হোয়াইট হাউজেও তাদের পতাকা উড়াতে চেয়েছে!

আপনি যা বরেলেছেন, আমি দ্বিমত পোষণ করছি না । সিরিয়াতে ও ইরাকে হস্তক্ষেপের জন্য আইএসআইএল বিরোধী জোট আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়।

তবে পশ্চিমারা এইসব জঙ্গীদের অতীতেও টয়লেট পেপার হিসাবে ব্যবহার করেছে এখনও করতেছে ও ভবিষ্যতেও করবে । ধন্যবাদ।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯

শ্রাবণধারা বলেছেন: ভাল লিখেছেন। অনেক কিছুই জানা ছিল না, জানলাম। আতি ভয়ঙ্কর এই জঙ্গি বাহিনীর সম্পূর্ণ পতন খুব শিঘ্রই দেখতে পাব, এই আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.