নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হামিদের ব্লগ

হামিদ আহসান

ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে ...

হামিদ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিও ছিলাম ............ (গল্প)

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১২

খুঁজতে খুঁজতে রাইনা কেন্টিনে গিয়ে পেয়ে গেল রাইয়ানকে। দুই হাত প্রার্থনার ভঙ্গিতে করে গালে দিয়ে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে বসে আছে। সামনে একটা পিরিচের মধ্যে দু’টা সিঙ্গারা রাখা।

‘আমার জন্য সিঙ্গারা নিয়ে বসে আছিস?’

‘হুম, খা।’

‘মন খারাপ নাকি, এমন চুপচাপ বসে আছিস? আচ্ছা অহনা কোথায় রে?’

অহনা কোথায় জানি না। মন খারাপ কিনা তা্ও জানি না! আসলে সিঙ্গারা সামনে নিয়ে বসতেই পরশুর একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। পরশু হয়েছে কি, প্রথম ক্লাসের পর অহনাকে খুঁজছিলাম। ক্লাসরুম, ল্যাব, ক্যান্টিন কোথাও না পেয়ে বাইরে গেলাম। অহনাকে দেখি মামার চায়ের দোকানে তার গ্যাংসহ চা খাচ্ছে আর বিড়ি ফুঁকছে। গ্যাং মানে রবিন, রাইসা আর আরমান। চার জন একটা ট্যাবের দিকে ঝুঁকে পড়ে কী নিয়ে যেন গভীর মনোযোগ দিয়ে কথা বলছে। ঠোঁটে সিগারেট, হাতে চায়ের কাপ। আমি যে আশেপাশে আছি আমার কোনো বেইলই নাই।

‘বেইল কী?’

‘কথা শেষ করতে দে। কথার মধ্যে বাম হাত দিবি না।’

‘আমি আবার হাত দিলাম কোথায়?’

পাকামি করিস না তো! তারপর কী হল শুন, তখন আমি কী করি? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আমাদের মাঞ্জা মাসুমা গেট দিয়ে বের হচ্ছে। বললাম, চলতো মামা কিছু খেয়ে আসি! ক্ষিধা পেয়েছে, একা একা খেতে যেতে ভাল লাগছে না। ও বলল চল, আমারও ক্ষিধে পেয়েছে।

আমরা গেলাম রাস্তার ওপারের ঐ ক্যান্ডিফ্লসে। ঐযে বনানী সুপার মার্কেটের সিঁড়ির সামনের ফাস্ট ফুডের দোকানটায়। জিজ্ঞেস করলাম ভেজিটেবল রোল খাবে কিনা। বলল খাবে। আমি দুইটা ভেজিটেবল রোলের অর্ডার করলাম। ওখানে তো বসার জায়গা নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেতে হয়। ওরা একটি প্লেটে দুইটা রোলকে কেটে চার টুকরা করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। প্লেটটা ওর সামনে ধরতেই দুই হাতে প্লেটটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিল। তারপর আমাকে বলে, তুই কী খাবি?

বাদ দে তো রাইয়ান! মানুষের নামে বাজে কথা বলা ঠিক না। এটা চূড়ান্ত রকমের অভদ্রতা। অমন একটা ফুটফুটে মেয়ের নামে এরকম বাজে কথা ছড়াচ্ছিস খামাখা!

ফুটফুটে ঠিক আছে। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস? স্বাভাবিক কিংবা মুচকি হাসিতে তাকে যতটা সুন্দর লাগে জোরে হাসলে তাকে ঠিক ততটাই অসুন্দর লাগে। মানে হাসিটা যখন একটু প্রশস্ত হয় তখন কিন্তু তাকে মোটেও ভাল লাগে না। প্রাণখোলা প্রশস্ত হাসিতে ওকে মোটেও সুন্দর লাগে না। 

মানে কি! তুই মেয়েদের এতকিছু খেয়াল করিস কেন? আচ্ছা বলতো আমাকে হাসলে কেমন লাগে।

তোকে হাসলে পেত্নীর মতো লাগে।

হুম, এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস।

না, ঠিক বলি নি। ঠিক কথা হল তোর হাসি অনেক সুন্দর। আর সেই হাসি যত প্রশস্ত হয় তোকে ততই সুন্দর লাগে।

আচ্ছা দোস্ত বাদ দে। যে কথা বলতে এসেছি সে কথা বলি। ইন্টামিডিয়েট পাশ করে বনানীর এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম তখন আমরা নিতান্তই ছেলে মানুষ। এর মধ্যে কতগুলো বছর পার হয়ে গেল। আমরা কিছু ছেলেমেয়ে একসাথে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে মাস্টারস শেষ করেছি এবং আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই এখান থেকে বিদায় নিব। এখন আমরা অনেক পরিণত। এর মধ্যে তুইও বুঝে গেছিস অহনাকে ছাড়া তোর চলবে না আর অহনাও বুঝে গেছে তোকে ছাড়া তার চলবে না।

বাজে বকিস নাতো রাইনা! অহনার তো এখন আর আমাকে দরকার নেই! তার তো এখন সেই বিরাট গ্যাং আছেই! ইদানীং মামার চায়ের দোকানে তার ঐ গ্যাং এর সাথে আড্ডা দিতে দিতে তার সেই সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য হজম করার শক্তি আমার নেই দোস্ত।

আমাদের ভার্সিটির অনেক মেয়েই তো সিগারেট খায়।

অনেকে খেলে খেতে পারে। বাট আই হেট ‍সিইং হার স্মোকিং। কেউ সিগারেট খেয়ে আমার সামনে এলে আমার মাথা ধরে। তামাকের গন্ধে আমার ওয়াক আসতে চায়! ওয়াক বুঝিস তো? মানে বমি।

তাহলে শোন, তুই যে গ্যাং এর কথা বলছিস তারা আসলে একটা মহৎ কাজের সাথে জড়িত। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা কত কথা বলি কিন্তু তুই কি জানিস ভাষা আন্দোলনের সৈনিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও আমাদের হাতে নেই? তোর কি মনে হয় না একটা তালিকা আসলেই দরকার?

সরকার বলছে সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে অসংখ্য মানুষ সম্পৃক্ত ছিল।তাদের সবার তালিকা তৈরী করা কঠিন। শেষে হাইকোর্টের নির্দেশে একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলা ভাষা আন্দোলনে জড়িতদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে করা এক রিটের প্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। সরকার সেসময় প্রাথমিকভাবে ৬৮ জনের একটি তালিকা পেশও করেছিল। কিন্তু সরকারও স্বীকার করছে আদালতে পেশ করা তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় এবং সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সরকার মনে হয় নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ দিতে চাইছে না তাই আর এগোচ্ছে না এনিয়ে।

এই তালিকা  বের করা  আসলেই বেশ কঠিন কাজ একথা অস্বীকার করা যাবে না। কারণ তখন মিছিলগুলাতে মানুষ একটি আদর্শ নিয়ে আসতো। এখনকার মিছিলগুলোর মত না যে  পঞ্চাশ এক  শ’ টাকা করে দিলেই মানুষ চলে আসবে। কাজেই মিছিলে অংশগ্রহণকারী সবাইই এক একজন ভাষা সৈনিক। তবে যারা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন অথবা পরবর্তীতে তাদের কর্মের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছিলেন তাদের একটি তালিকা তৈরী করতে উদ্যোগ নিয়েছে একটি সংগঠন। কাজটি যত কঠিনই হোক তারা একটু চেষ্টা করে দেখতে চায়। প্রতিটি জেলা থেকে তারা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করছে। অহনারা সেই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছে।

যাই হোক, অহনার যেমন উচিৎ ছিল তোর কাছে সবকিছু খুলে বলা আর তোরও দরকার ছিল তোর যা যা জানার দরকার সে ব্যাপারে ওকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা। তা না, দু’দিন ধরে তুই এমন একটা ভাব ধরে আছিস যেন চিনিসই না ওকে। জানিস তো কেমন অভিমানী মেয়ে ও। অযথা্ কেন কষ্ট দিচ্ছিস মেয়েটাকে? 

‘কষ্ট পাচ্ছে মানে! তোকে বলেছে নাকি?’

অবশ্যই বলেছে। আমি ছাড়া আর কাকে বলবে। ক’দিন পর পর তোদের এই মান অভিমান তো আমাকেই ভাঙ্গাতে হয়। আমি তো সেই চিন্তা করি যে, আমি যখন কাছে থাকব না তখন তোদের কী হবে! ছেলেমানুষি অভিমান করিস না রাইয়ান! তুই নিজেও জানিস ও তোকে কতটা ভালবাসে। তুই এখনি চলে যা তার কাছে। গিয়ে হাতটা ধর। ওকে সরি বলার সুযোগ তো দিবি? কতবার চেষ্টা করেছে ও তোর কাছে আসতে। কিস্তু তুই পাত্তাই দিচ্ছিস না। আবেগে কিছু একটা করে বসবে তখন বুঝবি!

অহনা যেমন কষ্ট পাচ্ছে তুইও কম কষ্ট পাচ্ছিস না। মামার চায়ের দোকানেই আছে। একলাই আছে। ঐ গ্যাং সাথে নেই যাদেরকে তুই দুই চোখে দেখতে পারিস না। এমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? যেতে বলছি যা। সিঙ্গারার বিল আমি দিচ্ছি, তুই যা!

রাইয়ান বের হয়ে যেতেই দ্রুত বেসিনের কাছে চলে গেল রাইনা। চোখের পানি কেউ দেখে ফেললে বিরাট লজ্জার ব্যাপার হবে। প্রথম প্রেম হারানোর কষ্ট তাকে কাঁদালেও তার অতি প্রিয় দুইজন মানুষের সুখই তার কাছে বেশি চাওয়ার। 

‘না, বিদেশ যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। তারপরও আমাকে চলে যেতে হচ্ছে জার্মানীতে। ছোট খালার কাছে। খালা সব ব্যবস্থা করাতে আর না করি নি। আপাতত পিএইচডি নিয়েই চিন্তা। তারপর ওখানেই থেকে যাব। কী করব বল রাইয়ান? আমি যে অনেক স্বার্থপর। তোর সামনে এলে তোকে পেতে ইচ্ছে করে। না পাওয়ার বেদনা হাহাকার তোলে বুকের ভেতরটায়। অথচ তুই এবং অহনা দুজনই আমার অতি কাছের মানুষ। আমি তোদের সুখি দেখতে চাই। তাই বলতে পারিস নিজের কষ্ট আর না বাড়াতেই পালিয়ে যাচ্ছি। তোদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য যত অভিনয়ই করতে হোক না কেন আমি করব। তোরা সুখে থাকিস। জানি না মনে পড়বে কিনা, হাসিখেলার এবেলায় আমিও ছিলাম, তোদের কাছের একজন ছিলাম, বন্ধু ছিলাম’ -অনেক্ষণ ধরে চোখে পানির ঝাপটা দিতে দিতে ভাবছিল রাইনা৷

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

বাতায়ন এ আমরা কজন বলেছেন: ভালবেসে সুখী হতে নেই, সুখী করতে হয়। তাইতো ভালবাসা এতো সুন্দর।
কিন্তু আমরা ভালোও বাসিনা, সুখীও করিনা, পরিনামে সুখীও হইনা।

ভাল লাগল।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

হামিদ আহসান বলেছেন: বাহ, সুন্দর বললেন ত........।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: গল্প ভাল লাগল। ধন্যবাদ হামিদ ভাই।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই .....।

৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০০

হামিদ আহসান বলেছেন: ......

৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গল্প মোটামুটি লাগলো :)

ভালো থাকুন হামিদ ভাই, শুভকামনা জানবনে।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০৮

হামিদ আহসান বলেছেন: শুভকামনা নিরন্তর৷ ভাল থাকুন ..........।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০৬

হামিদ আহসান বলেছেন: .......

৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: এত তাড়াতাড়িই শেষ করলেন!! তবুও ভাল লেগেছে।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১

হামিদ আহসান বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন ............

৭| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ছোট্ট হলেও সুখপাঠ্য , লিখককে ধন্যবাদ ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৭

হামিদ আহসান বলেছেন: শুভেচ্ছা নিন .........।

৮| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: এত নিঃস্বার্থ বন্ধুতা এখন জগতে দূর্লভ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য ..........।

৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২৮

হামিদ আহসান বলেছেন: ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.