নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেখার জন্য বাঁচতে চাই।

মিরাজ উল কবির

আমি মিরাজ। পুরো নাম মিরাজ-উল-কবির। আমি একজন এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী (২০১৫)।আমি মিরাজ। পুরো নাম মিরাজ-উল-কবির। আমি একজন এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী (২০১৫)।

মিরাজ উল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একজন অর্বাচীনের গল্প"

২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

মফস্বল শহরগুলো আঁকাবাঁকা সরু গলিতে পরিপূর্ণ। দিনের বেলা এসব সরু গলিতে সূর্যের আলো খুব একটা
পৌঁছায় না। আর রাতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে ছাড়া বাকি অংশ ঘুটঘুটে অন্ধকার।

ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু করছে। কিন্তু ল্যাম্পপোস্টের নিচে ঘুমানো বেশ কষ্টসাধ্য। তার ওপর মশা বাহিনীর লাগাতার আক্রমণ। সারাদিনের অভুক্ত কুকুরের মতো আমার শরীরে কামড় বসিয়ে যাচ্ছে।
সাইজে ছোট হলেও নৈশজগতের রাজত্ব এদেরই হাতে।
তবে আশার কথা, আমার সহ্য ক্ষমতা প্রবল। এদের চেয়ে বড় প্রানীর অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে পেরেছি, সে হিসেবে এরা তো চুনোপুঁটি।

দুই আঙুলের ফাঁকে একটা সিগারেট। যেমন কেনা হয়েছিল, ঠিক তেমনি আছে। এখন জ্বালানো হয় নি। পকেটে একটা দিয়াশলাইও আছে। কিন্তু জ্বালাতে ইচ্ছা করছে না। ঠিক ইচ্ছে করছে না বললে ভুল হবে, আসলে জ্বালাতে পারছি না। কি যেন একটা অদৃশ্য বাঁধা হাতটাকে চেপে ধরে রেখেছে। সেই বাঁধাকে উপেক্ষা করার শক্তি বা সাহস কোনটিই আমার নেই।

সময় পাল্টায়, মানুষও পাল্টায়। পাল্টে যায় তাদের আচরণ আর পাল্টায় কিছু সম্পর্ক। একসময়ের কাছে থাকা মানুষগুলো চলে চলে যায় দূরে, বহু দূরে। চোখের সামনে
থেকেও মনে হয় কত অচেনা!

বছর শেষে যখন ফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে দেখি তখন সেখানে শুধু গুটি কয়েক বন্ধু
ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ একসময় যাদের মুখ থেকে মধুমাখা
কথার বুলি ঝরে পরত, ভাই ভাই রবে চারিদিক মাতিয়ে রাখতো যে মানুষগুলো, সেই মানুষগুলো
আজ হারিয়ে গেছে ব্যস্ততার নির্মম বাস্তবতায়। তাদের জগতে এখন নতুন সব মানুষের আনাগোনা,
আর আমি বুড়ো না হয়েও হয়েছি বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা।
দুর্ভাগ্য এই যে,এই বৃদ্ধাশ্রমে আমার একাকী বসবাস।

সময়ের সাথে সাথে আমার কাছের মানুষগুলোও সব পাল্টে গেছে। যে বাবার হাত ধরে হাঁটতে শিখেছি,
সাইকেল চালানো শিখেছি সেই বাবা আজ আমাকে দেখলে অনিহায় মুখ ফিরিয়ে নেন। একই বাড়িতে
থেকেও যেন আমরা দু'জন ভিন গ্রহের বাসিন্দা।

বই পড়ার খুব শখ ছিল আমার। একদম নেশার মত। একদিন বই না পড়লে রাতে ঘুম আসতো
না।
আমার এই শখটা বাবা খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না। তার কাছে,সাহিত্যের বই পড়ে মেধার বিকাশ ঘটানো অপেক্ষা পাঠ্যবই পড়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ বাড়ানোটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ- টিপিক্যাল বাঙালী প্যারেন্টস।

কলেজে ওঠার পর থেকে কবিতা লেখার ভূত মাথায় চাপলো। রোজ পড়ার ফাঁকে একটা না একটা কবিতা লিখতামিই। রাত ১২টায় যখন
মায়া ফোন দিত, ওকে কবিতা শোনাতাম। মায়ার আদেশ ছিল আমি যেন প্রতিদিন ওর জন্য কবিতা লিখি।

একদিন কলেজ থেকে ফিরে এসে দেখি বাবা আমার কবিতা লেখার খাতা পুড়ে ফেলেছেন। সেদিন আমি অনেক কেঁদেছি।
কলেজ পড়ুয়া ছেলের চোখে কান্না, বড়ই অদ্ভুত!

আজকাল বাবা আমাকে দেখলে চিনতে পারেন না। বাবা কি অসুস্থ হয়ে পড়লেন! কিছুই বুঝতে পারছি না।
কেউ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,"আমার একটিমাত্র মেয়ে, ক্লাস এইটে পড়ে।"

আমার কথা বাবা ভুলে গেছেন। কিন্তু কি দোষ করেছি আমি??
কোনদিন একটা সিগারেটও মুখে দেই নি। ভদ্র ছেলে বলতে যা বুঝায় তাই ছিলাম। তবুও বাবা আজকাল আমার দিকে
এমন ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকান যেন আমি পাঁচ খুনের আসামি, সবেমাত্র তার সামনে আমার ছয় নম্বর খুনটা করলাম।

মা'ও আজকাল আমার সাথে কথা বলা একরকম বন্ধই করে দিয়েছেন। সেদিন তিনি আমার রুমের দরজায় এসে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁর চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তিনি মুখে আঁচল রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি ফ্যালফ্যাল
করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা'কে আহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন,মা??
মা কোন জবাব দিলেন না। অশ্রুভরা নয়নে তাকিয়ে রইলেন দেয়ালে টাঙানো আমার ছোটবেলার ছবিটার দিকে।
আমার দিকে একটিবার ফিরেও তাকালেন না।

সবাই কেমন পাল্টে গেছে। এখন আর মায়াও ফোন করে না। আমি প্রতিদিন ওর জন্য কবিতা লিখে বসে থাকি। ওর ফোন আসে না। আচ্ছা, ও কি এখন তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ে?? কিন্তু ও তো বলেছিল আমার কবিতা না শুনলে ওর ঘুম আসে না।
তাহলে কি হল মেয়েটার? ও-ও কি আমাকে ভুলে গেলো?? নাকি বাবার মত সেও আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে??

কি এমন দোষ ছিল আমার?? কেন আমাকে এত বড় শাস্তি পেতে হচ্ছে?? শুধুমাত্র একটা পরিক্ষা আমার পুরো জীবনটাই ওলোট-পালোট করে দিলো। কোনো ভার্সিটিতে টিকতে পারি নি বলে কি আমি খুব বড় কোন অন্যায় করে ফেলেছি??

আমারও তো খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন। কষ্টটা সবার চেয়ে তো আমারই বেশি লাগার কথা। কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয়েছিল তো আমাকেই। স্বপ্ন তো শুধু বাবা-মা'র ভাঙে নি, আমারও ভেঙেছে।
অথচ কেউই আমার কষ্টটা বুঝলো না। সবাই সবার রাগ আমার ওপর ঝারতে শুরু করলো। মুখের ওপর তো সেদিন বাবা বলেই দিলেন, তোর মত ছেলে আমার দরকার নেই।

আমাকে আজ কারূরই দরকার নেই। পৃথিবীও আমাকে তার কোলে এতটুটু জায়গা দিলো না।

রাত বাজে প্রায় সাড়ে বারোটা। হাতে ঘড়ি নেই। কিন্তু আন্দাজ করতে পারছি। মশাদের আক্রমণ এখনও অব্যাহত আছে। নাহ, এখন সিগারেটটা লাগানো দরকার। খুব টেনশন হচ্ছে। শুনেছি টেনশন-নাসক হিসেবে সিগারেট টানার জুড়ি নেই। আমার এক হাতে সিগারেট আর এক হাতে একটা বিষের বোতল। অনেকক্ষণ থেকে বোতলটা হতে রেখে কচলাচ্ছি আর একবার করে বোতলের ছিপি খুলছি আর বন্ধ করছি।

অষ্টমবারের মতো বোতলের ছিপিটা খুললাম।
এবার আর হার মানবো না, কাজটা সেরেই ফেলবো। মাথার কাছে এসে কিছু কথা খুব ধাক্কা দিচ্ছে। ধাক্কা দিচ্ছে বাবার ঘৃণাত্বক চাহনি, তার অবজ্ঞাসূচক কথাগুলি। ধাক্কা দিচ্ছে মায়ের অশ্রুসিক্ত চোখের ছলছল চাহনি। ধাক্কা দিচ্ছে মায়ার সেই হাতটি,যে হাতটি এখন অন্য কারো হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।
আজ আর এসব নিতে পারছি না। সহ্যের একেবারে শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছি আমি।

"Dear Earth,listen to me. You are cruel. You have throne me to the winds. Because you need the fittest only who will survive. The fits are those who have achieved something. Sorry Earth, I beg your pardon, I have given nothing to you.
Good bye!"

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,
"কেনো দূরে থাকো, শুধু আড়ালে রাখো,
কে তুমি, কে তুমি, আমায় ডাকো"

এত রাতে ফোন দেওয়ার মত আমার কেউ নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা পকেট থেকে বের করলাম।
মোবাইলের স্ক্রিনে যে লোকটির চেহারা ভেসে উঠেছে সেই লোকটি প্রায় চার ঘন্টা আগে অকর্মণ্য, কুলাঙ্গার, ইতরসহ বাংলা ভাষার প্রায় সব গালি খরচ করে আমাকে ধিক্কার দিয়েছেন। শেষে, তোর মতো ছেলে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো এবং তুই এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা - বলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছেন।
বুঝতেই পারছেন, যিনি ফোন করেছেন তিনি আমার হতভাগ্য বাবা।

কিন্তু আমি জানি, ফোন রিসিভ করলে বাবার কন্ঠ শুনতে পাবো না। ফোনটা করেছেন আমার মা। বরাবরের মতো এবারো হয়ত তিনি বলবেন,"ফিরে আয় খোকা, আমরা তোর জন্য না খেয়ে বসে আছি। আর মন খারাপ করিস না, বাবা। ফিরে আয়! "

আমার বাবার মধ্যে আবেগ-ভালোবাসা বলে কিছু নেই -ব্যাপারটা ঠিক এমন না। তার মধ্যেও আবেগ আছে, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা আছে কিন্তু তার প্রকাশভঙ্গী আমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিস্কের প্রানীর বোধগম্যের বাইরে।

ফোনটা রিসিভ করলাম।

- তুই কই, বেটা?? এত রাতে বাহিরে কি করিস! তাড়াতাড়ি বাসায় আয়, তোর মা তোর জন্য খিচুড়ি রান্না করেছে। তারাতারি আয়, বাপ-বেটায় মিলে খাবো।

ফোনে বাবার কণ্ঠ শুনে আমি চমকে উঠলাম। তিনি ফোনে কি বললেন তা বুঝতে একটু সময় লাগলো। আমি আমার চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। প্রবাহমান ঝর্ণাধারার মত তা ঝরতে শুরু করল। আমি নিশ্চুপ, নির্বিকার।

- কিরে, কথা বলিস না কেন??

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,আমি আসছি, বাবা...।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

জেন রসি বলেছেন: আত্মকথন ভালো লেগেছে :)

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

মিরাজ উল কবির বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আবেগের বিষয়টা দারুন!

এরকম এখন হরহামেশাই ঘঠছে।

কেউ কাউকে বুঝতে চাইছেনা।
সবা্ই চা্ইছে তার মতো করে তাকে বুঝুক! ফলে অনাকাংখিত কত শত ঘটনা!!!

গল্পে +++++++++++++

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭

মিরাজ উল কবির বলেছেন: একদম সঠিক কথাটি বলেছেন।

আমাদের বেশিরভাগ সমস্যার একটাই কারণ, আমরা কেউ কারোটা বুঝতে চাই না। নিজেরটাকে গুরুত্ব দেই বেশি।

আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১৯

জিসান১২৩ বলেছেন: বাবাদের ভিতরেও ভালবাসা থাকে তবে তাদের প্রকাশভঙ্গী ভিন্ন

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

মিরাজ উল কবির বলেছেন: বাবা'রা আবেগ প্রকাশ করাকে দুর্বলতা মনে করেন।
সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তারা ভালোবাসা গোপন করে গাম্ভীর্য প্রদর্শন করেন।

অধিক ভালোবাসা হয়ত সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে। এটা ভেবেই হয়ত তারা ভালোবাসা গোপন করেন।

আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩৩

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: হুমমম পড়লাম, লেখনী ভাল হয়েছে --------

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

মিরাজ উল কবির বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

লেখালিখিতে আনাড়িপনা এখনো কাটে নি।

আমার জন্য দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২৪

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর গল্প । বাবা মা দের এইসব ব্যাপারে একটু সহনশীল হওয়া উচিত । অনেক সময় আজীবনের কান্না ও চলে আসতে দেরী হয় না ।

১২ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

মিরাজ উল কবির বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

হুম, ঠিক বলেছেন। বাবা-মা'এর মধ্যে একজন যদি একটু বন্ধুভাবাপন্ন হন তাহলে হয় শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ব্যাধি অনেকাংশে কমে যাবে।

আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.