নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেখার জন্য বাঁচতে চাই।

মিরাজ উল কবির

আমি মিরাজ। পুরো নাম মিরাজ-উল-কবির। আমি একজন এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী (২০১৫)।আমি মিরাজ। পুরো নাম মিরাজ-উল-কবির। আমি একজন এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থী (২০১৫)।

মিরাজ উল কবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মৃত্যুর চিঠি"

২৬ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭

- আপনি এখানে বসে আছেন কেন?
- তাহলে কি দাঁড়িয়ে থাকবো?
- থাকুন...
- কোমরে ব্যথা
- তো, আমি কি করতে পারি?
- আপনার কাছে বাম হবে? ঝান্ডু বাম?
- নাহ।
- এত বড় একটা ব্যাগ সাথে রেখেছেন আর ছোট্ট একটা কৌটা রাখতে পারেন নি?
- না, রাখি নি। তাতে আপনার সমস্যা কি?
- কোন সমস্যা নেই। বরং আপনার পাশে বসে ভালোই লাগছে।
- উঠুন!
- কেন?
- দূরে গিয়ে বসুন!
- কোমরে ব্যথা যে...
- তাহলে আমিই উঠে যাচ্ছি।

দীপা উঠতে যাবে, সেই মুহূর্তে অয়ন তার হাত টেনে ধরে। অয়নের ওপর রাগ করলে দীপা এভাবে 'আপনি' করে বলে। আপনি বলে অয়নের মধ্যে একটা শূণ্যতা জাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। সেই শূণ্যতা অয়নকে অস্থির করে তোলে। দীপার রাগ ভাঙানোর জন্য উঠে-পড়ে লাগে।

অসহায়ের মতো মুখ করে অয়ন বলল,"সরি, এর পরেরবার আর এমন করবো না।"

দীপা বসে পড়ল। সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের ওপর সে ভীষণ রেগে আছে। আজ সকাল ৮টায় অয়নের একটা চাকুরীর ইন্টার্ভিউ ছিল। সে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। তাই রাতে ঘুমাতে যাবার আগে দীপা তাকে বারবার বলেছে ফোন খোলা রেখে ঘুমাতে। অয়ন তাই করেও ছিল। কিন্তু ঘুমের ঘোরে সে বার বার ফোন কেটে দিয়েছে। শেষে ফোনের ব্যাটারি খুলে রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।

আজ হয়ত অয়নের চাকুরীটা হয়েই যেত। আর হয়েই গেলেই দীপা চাপমুক্ত হয়। সে বাড়িয়ে তাদের সম্পর্কের কথা বলতে পারে। কিন্তু অয়নের এসব ব্যাপারে কোন সিরিয়াসনেস নেই। সে ছন্নছাড়া হয়ে থাকতে পছন্দ করে। এমন একটা ছেলেকে দীপা কিভাবে এত ভালোবেসে ফেললো তা সে নিজেও জানে না।

- দীপা।
দীপা নিশ্চুপ।

- ও, দীপা। আমার চাকুরীটা হয়ে গেছে। ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েছিলাম।

- মিথ্যা কথা।

- না, মিথ্যা নয়। একদম সত্যি। ওরা কাল থেকেই চাকুরীতে জয়েন করতে বলেছে।

দীপা অয়নের দিকে ফিরে তাকালো। তার মুখে হাসি, চোখে অশ্রু। কি অদ্ভুত ব্যাপার!

দিনটা বেশ আনন্দে কাটলো দীপা আর অয়নের। সারাদিন রিক্সায় ঘোরাঘুরি, রেললাইনের স্লিপারে একে ওপরের হাত ধরে হাঁটা, ফুটপাতের চায়ের দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে চা খাওয়া আরো কত কি।

অয়ন শহরের রাস্তায় হাঁটছে। রাত অনেক হয়েছে। সে আজ মেসে ফিরে যাবে না। অনেক বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছে অয়ন। দীপাকে চাকুরী পাওয়ার মিথ্যা কথা বলেছে।

অয়ন দীপাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। কিছু মানুষের মুখে সর্বক্ষণ হাসি দেখলেও ক্লান্তি আসে না। বরং একটা অন্য রকম প্রশান্তি পাওয়া যায়। দীপার হাসিমুখ অয়নের কাছে প্রশান্তির বার্তা।

অয়ন হাঁটতে স্টেশনের কাছেকাছি চলে এসেছে। এই আলোছায়ার শহরে সে আর থাকবে না। শহর ছেড়ে, কোলাহল ছেড়ে, দীপাকে ছেড়ে সে অনেক দূরে চলে যাবে।

সকালে দীপা যখন ফোন দিচ্ছিল তখন সে ডাক্তারের চেম্বারের। ডাক্তার তখন তাকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটি দিচ্ছিল,"আপনি একজন এইচ.আই.ভি পজেটিভ"

অয়ন এইডস'এ আক্রান্ত। এক দুর্ঘটনায় এইডস রোগীর রক্ত তার দেহে প্রবেশ করে। রক্ত গ্রহনে অয়নের জীবন বেঁচে গেলেও সেই বেঁচে যাওয়া যে তার দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ হবে তা কি সে জানতো?

কথায় আছে,"বিধাতার বিধান কেউ বদলাতে পারে না।"
বিধাতা অয়নের ভাগ্যে মৃত্যু লিখে রেখেছেন। তা বদলানোর ক্ষমতা কারুর নেই।

স্টেশন পাড় করে চলে এসেছে অয়ন। এখন সে রেললাইনের মাঝখান দিয়ে হাঁটছে। তার শূণ্য হাতে একটা অদৃশ্য চিঠি। মৃত্যুর চিঠি।

অয়ন আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। আদিমকালের মানুষদের মতো আকাশের তারা দেখে হাঁটার চেষ্টা করছে।

রাত আরো গভীর হয়েছে। স্টেশন থেকে কয়েক গজ দূরে অয়ন শুয়ে আছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার নিথর দেহখানা গভীর ঘুমের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অয়ন ঘুমিয়ে আছে। তার ঘুমের সঙ্গী হয়ে আছে আশেপাশের নিরব প্রকৃতি আর তার রক্তমাখা শরীর।

---------------------------------

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.