![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতি কৃষি হওয়ায় এদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং আবাসন গড়ে উঠায় কৃষি চাষাবাদের জমি দিনের পর দিন হ্রাস পাচ্ছে। আবার দেখা যায় চাষাবাদের পর ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার দরুন চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় কৃষি এবং কৃষক এর সমস্যাই মূলত আমাদের জাতীয় সমস্যা। কিন্তু আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের দ্বারা এই খাতটি দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকছে। বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও এর ন্যায্য মূল্যের সন্ধান তারা পায় না কৃষক। এবারও রোদে পুড়ে কৃষকদের শ্রম ঘামের বিনিময়ে ধান উৎপাদনে রেকর্ড পরিমাণ। একদিকে বিনাশূল্কে ভারত থেকে চাল আমদানী অন্যদিকে সরকার দাবি করছে চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে প্রশ্ন থেকে যায় খাদ্যে দেশ সয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও কেন বিনা শূল্কে চাল আমদানী করা হচ্ছে? এ অবস্থায় ভারতীয় চালের অতিরিক্ত আমদানীতে ন্যায্য দামে ধান, চাল বিক্রি করতে পারছেন না কৃষক। এ বিষয়ে তৎপর রয়েছেন বলে সরকারী মহল দাবি করলেও কার্যত সুফলের দেখা পাচ্ছেন না কৃষকেরা। যে টাকায় ধান উৎপাদন সেই অংকেই পৌঁছাতে পারছেন না তারা। এতে সংশ্লীষ্ট নীতি নির্ধারকের সদ ইচ্ছা কিংবা চৌকোষ ভূমিকার অভাবে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের উৎপাদন মূল্য ৮০০ টাকা হলেও কার্যত বাজারে কৃষককে বিক্রি করতে হচ্ছে গড়ে ৫০০ টাকা দরে। আমদানিকারকরা বিনাশুল্কে বিপুল পরিমান চাল আমদানি করায় ভারতীয় চালে এখন বাজার সয়লাব। সরকার ৮৮০টাকা মূল্য নির্ধারণ করলেও বাজারে অতিরিক্ত চাল আমদানি হওয়ায মিল মালিকরা এবং ব্যবসায়ীরা এই দামে তা কিনতে অনাগ্রহী। এই সুযোগে মধ্যস্বত্ব্যভোগী মিল মালিক এবং ফরিয়াদের দৌরাত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের প্রয়োজনে কিংবা ঋণের টাকা পরিশোধ করা জন্যে নাম মাত্র মূল্যে কৃষক ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও উৎপাদন খরচের চেয়ে সরকারীভাবে মূল্য নির্ধারণ এবং বাজারে ধানের মূল্য কম থাকায় তাদেরকে লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থার উপক্রম হয়েছে। যা কৃষকদের জন্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও দেখা যায় গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সার, বীজ, কীটনাশক সহ কৃষি পণ্যের দাম, ধান কাটায় শ্রমিকের মজুরি কয়েক দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথাপি তাদের মুনাফাতো দূরের বিষয় উৎপাদন খরচই উঠছে না। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) এক জরিপে জানায়, দেশের ৩৪ শতাংশ কৃষকই ধান চাষে লাভ পায় না। বিশেষ করে ভূমিহীন কৃষকরা এই লসের শিকার হচ্ছেন বেশি। বর্তমানে দেশের এক তৃতীয়াংশ কৃষক ভূমিহীন। শুধু ধান নয় বিগত বছর দেখা যায় বাংলাদেশে এক সময়কার খ্যাত “সোনালী আঁশ” পাট উৎপাদন করে কৃষকদের কী নির্মম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন এভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের দেশে পাট শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের দেশের সিংহভাগ কৃষক দরিদ্র হওয়ায় তারা (কৃষক) জোতদার-মহাজন, অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এনজিও গুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ফসল ফলানোর দরুণ ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় ঋণগ্রস্থ হতে হতে অন্য উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে একমাত্র সম্বল কৃষি জমিটুকু বিক্রি করে ভূমিহীন কৃষকে পরিনত হয়। এরাই আবার হয়তো ভাগচাষী (বর্গাচাষী) হয় নয়তো ভাগ্যান্বেষণে শহরে পাড়ি জমিয়ে গার্মেন্টস কিংবা বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। এভাবে মানুষ ধীরে ধীরে কৃষির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ১৯৮৩-৮৪ সালের শুমারিতে দেখা যায়, গ্রামীন পরিবার গুলোর মধ্যে ৭২.৭০ শতাংশ কৃষির সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে এসে এর সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৫৬.৭৪ শতাংশে। স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমানে এর সংখ্যা আরো বেশি হবে বলেই ধারণা। এছাড়াও দেখা যায়, বর্তমান সরকার টিকফা চুক্তি (ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) করার প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে এদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। তবে তারা সরাসরি কোন উৎপাদনে যাবে না। এতে করে আমাদের সেবা খাত গুলোকে মার্কিনিদের বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সমূখীণ হবে আমাদের কৃষি খাত। কারণ টিকফা চুক্তির ১৮ নং ধারায় বলা হয়েছে কৃষিতে ভর্তুকির পরিমান কমাতে হবে। এতে করে বর্তমান পর্যায়ে যতটুকু রয়েছে তার চেয়ে উৎপাদন খরচ আরো দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে আমাদের দেশের কৃষি ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও ভর্তুকি কমানোর জন্য দাতা সংস্থা (বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি) গুলোর ক্রমাগত চাপ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দেখা যায় প্রতি বছর বাজেটের মধ্যে দিয়ে ভর্তুকি কাটছাট করা হচ্ছে। এখন টিকফা চুক্তির কার্যকর হলে তা আরো ত্বরান্বিত হবে। তাছাড়া মেধাসত্ব্য আইন অনুযায়ী আগে যেখানে কৃষক পরেরবার ধান উৎপাদনের জন্য বীজ সংরক্ষণ করে রাখতো এখন তা সম্ভব হবে না। বহুজাতিক কোম্পানী থেকেই তাদের বীজ কিনতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানী অতি মুনাফার জন্যে বীজের দাম বাড়িয়ে দিবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য উপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য একটি রপ্তানী বাজার সৃষ্টি হবে। তাই সরকারের উচিত এই সকল সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি কৃষক যাতে তার ন্যায্য মূল্য পায় এবং কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় সেক্টরে যথাযথ ভর্তুকি প্রদান করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যায় সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এছাড়া দেশের কৃষি খাত ধ্বংস হবে এধরনের চুক্তি বাতিল করা। নতুবা এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষক যদি উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে তাহলে এক সময় কৃষি ধ্বংস অবশম্ভাবী। বিশেষ করে বলতে হয় যেখানে দেশের প্রধান অর্থনীতি কৃষি এপ্রেক্ষিতে প্রতিনিয়ত কৃষকের সমস্যা নিয়ে এবং তারা কিভাবে ভাল ফসল ফলাতে পারবে তা নিয়ে রাষ্ট্রের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। সেখানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন মৌসুমে বীজের সংকট এবং এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্বারা বীজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া যা কৃষি মন্ত্রনালয়ের অসারতাই প্রকাশ পায়। মনে রাখা প্রয়োজন বর্তমান বিশ্বে অর্থ সংকটের পাশাপাশি যে হারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে তাতে আমাদের মত আমদানী নির্ভর দেশের কৃষক যদি খাদ্য উৎপাদনে বিমুখ হয় তাহলে ব্যাপক বিপর্যয়ের নেমে আসবে এবং খাদ্য সংকটের মুখে পরবে। তাই কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমদানি বন্ধ করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কেনা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে অভিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে
©somewhere in net ltd.