নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মইন আহসান

মইন আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব-৩ "রাজা-প্রজা উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার”

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৩

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল "
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ২ " রাজনিতির দুর্বৃত্তায়ন রোধ '

(ড্রাফট প্রস্তাব - সকল নাগরিকের সুচিন্তিত সাজেশন ওয়েল কাম)
(এই প্রস্তাব উপনিবেশিক আমলাতন্ত্র উচ্ছেদে। পরবর্তী প্রস্তাব গুলো: উপনিবেশিক পুলিশ ও দুদক সংস্কার এবং বিচার বিভাগ সংস্কার।)


ভুমিকা:

আমরা স্বাধিনতার পর একটা প্রজাতন্ত্র হিসাবে সংগঠিত হওয়ার ও মৌলিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা পরিবর্তনের একটা সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছি, তারপর এরশাদের পতনের পর আরেকবার সে সুযোগ হারিয়েছি। আরেকবার এই সুযোগ হারানো হবে আমাদের জন্য চরম আত্মঘাতি। আমরা শুধু সরকারের পতন চেয়েই অভস্ত,এক দলের পরিবর্তে আরেক দল, এক নেতা/নেত্রীর বদলে আরেক, ব্যাস ও পর্যন্ত। কিন্ত আমরা জানিনা সত্যিকারের উন্নত সভ্য সমাজ ও দেশ গড়তে কোন মৌলিক পরিবর্তন আর রাষ্ট্র ব্যাবস্থার পরিবর্তন চাই। এর ফলে স্বার্থান্বেষী রাজনিতিকরা তাদের পারস্পরিক রাজনৈতিক অভিযোগ, কাদা ছোড়াছুড়ি গালাগালাগালিকে আর কিছু খুদ্র ইস্যুকেই আমাদের এজেন্ডা বানিয়েছে, আমাদের দাবি বানিয়েছে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনার ইস্যু বানিয়েছে। মৌলিক জনস্বার্থের ইস্যুগুলো নির্বাসিত হয়েছে রাজনীতি থেকে। মৌলিক রাষ্ট্রব্যাবস্থা আর জনস্বার্থের ইস্যুগুলোকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।)

আজকের বাংলাদেশের সব দুঃশাসন আর দুর্গতির মূলে আছে অবাধ দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার। আর একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এই অবাধ দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের সুনামিকে ধারন ও লালন করছে দুর্বৃত্তায়িত রাজনিতির ছত্রছায়ায় আমাদের উপনিবেশিক আমলতন্ত্র তথা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

বিশ্বের উন্নত গনতান্ত্রিক দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন:

সেখানে জনপ্রশাসন চালায় নির্বাচিত স্থানীয় সরকারগুলো, জনপ্রশাসন ক্যাডারের ছদ্মবেশে নিতান্ত ভূমিপ্রশাসন কর্মকর্তারা নন। ঐসব দেশে প্রশাসন ক্যাডার বলে কোন কিছুর অস্তিত্বই নেই। আর ভুমি প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়ন ভুমি অফিস পর্যন্ত্য্ই, সেখানেই চাকরি শেষ। কিন্তু আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রীর পর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার কেন্দ্রিকরন করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের (জেলা ভুমি প্রশাসক) কাছে। আর তারাই সেই ক্ষমতা আর রাজা-প্রজা শাসনের দম্ভে অভ্যস্ত হয়ে একদিন উচ্চস্তরের আমলা পদে অধিষ্ঠিত হন, আমাদের উপর ছড়ি ঘোরান অবাধ দুর্নীতির রাজত্ব করেন এক ইলিট উপনিবেশিক শাসক হিসেবে।

এমনকি খোদ বৃটেনেও এই ব্যাবস্থা কোনদিন ছিল না। শুধু তাদের উপনিবেশগুলোর প্রজা শাসন-দমনের জন্যই তার কালো উপনিবেশগুলোতে এই ব্যাবস্থা কায়েম করেছিল তারা। কারন তখনকার দিনে সরকারের রাজস্ব মূলত আসতো ভূমরাজস্ব থেকে আর নির্বিঘ্নে সে উদ্দেশ্য সাধনে প্রজা শাসন-দমন ছিল অপরিহার্য। তারা জেলা ও নিন্মস্তরের রাজস্ব আদায় আর ম্যজিসট্রেসি সহ আর সব ক্ষমতা একিভুত করেছিল ভুমিপ্রশাসনের ডিসি ও এসডিও (এখনকার ইউএনও) দের হাতে। আর সিনিয়র সব আমলাদেরও নিয়োগ দেয়া হত এদের থেকেই। আর এই কাজের জন্যই এদেরকে জনবিচ্ছিন্ন-জনবিরোধী এক ইলিট প্রভু গোষ্ঠী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল উপনিবেশিক প্রভুরা। তবে তাদের ছিল আমলাদের ব্যক্তিগত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের জিরো টলারেন্স।

সেই এক্ই উপনিবেশিক ধরায়্ই ২৪ বৎসরের পাকিস্তানি আমল পেরিয়ে ৪৮ বছরের স্বাধীন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে স্বদর্পে অবাধ দুর্নীতির লাইসেন্স নিয়ে আমাদের উপর রাজা-প্রজা ক্ষমতা প্রয়োগ করে দুর্নীতির রাজত্ব করছে উপনিবেশিক আমলতন্ত্র। সব রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার কেন্দ্রে তারা: তারাই সেক্রেটারি, তারাই ব্যাংকের চেয়ারম্যান, দুদকের প্রধান, নির্বাচন কমিশনের প্রধান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান, অধস্তন আদালত আর পুলিশের নিয়ন্ত্রক; এমনকি এমন আইনও পাস করিয়ে নিয়েছে যে তাদের কেউ দুর্নীতির দায়ে হাতে নাতে ধরা পড়লেও তাকে গ্রেফতার করতে তাদেরি অনুমোদন লাগবে।

অথচ পরিবর্তিত গনতান্ত্রিক ও জটিল বিশ্বায়িত অর্থনিতির পৃথিবীতে ভুমিকর এখন একটি নগন্য বিষয়, আর নাগরিকডদের প্রজা হিসাবে শাসন-দমনের ধারনা একটি স্বাধীন গনতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে অচিন্তনীয়।

উন্নত দেশে জাতীয় বা কেন্দ্রিয় পর্যায়ের আমলাদের মূল কাজ, সরকারকে পলিসি এডভাইস দেওয়া, গৃহীত পলিসি বাস্তবায়ন করা এবং সরকারের বিভিন্ন সার্ভিস দক্ষতার সাথে ব্যাবস্থাপনা করা। আর তাদের নিয়োগ প্রতিটি পদস্তরেই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে হয় এব়ং তাদের ক্ষমতা তাদের অধস্তন কর্মচারীদের তদারকিতেই সিমাবদ্ধ থাকে। পাবলিক পলিসি বা জনস্বার্থের নিতিনির্ধারনি সব সিদ্ধান্তের ক্ষমতা থাকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে।

অথচ, একটা স্বাধীন দেশের আইনগুলো আর জনপ্রশাসন ব্যাবস্থা যে রাজা-প্রজা উপনিবেশিক ধারায় থাকতে পারে না, এই সামান্য বোধটুকু পর্যন্ত আজ্ও আমাদের হয়নি, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও।

আমরা যদি পাকিস্তান ভারত সহ এশিয়া আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সব প্রাক্তন ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর বর্তমান অবস্থা পরিক্ষা করি তবে দেখতে পাব যে: যেগুলো (বেশিরভাগই) স্বাধীনতার পরেও উপনিবেশিক আমলাতন্ত্রিক ব্যাবস্থা রেখে দিয়েছে, তারা সবাই আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির করালগ্রাসে এক বিশাল বৈষম্যের চোরতন্ত্রে পরিনত হয়েছে; তাদের রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ও সমাজ ভেন্গে পড়ছে। এর বিপরীতে সিংগাপুর, কোরিয়ার মত যে গুটিকয়েক দেশ উন্নত দেশের কাতারে উঠে এসেছে, তারা সবাইই উপনিবেশিক ইনিস্টিটিউশন আর আমলাতন্ত্র ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে সব গনমুখি ইনিস্টিটিউশন আর আমলাতন্ত্র গড়ে তারপর সামগ্রিক উন্নতি অর্জন করেছে।

স্বাধীনতার পর উপরিস্তরে আমলাদের প্রভাব কিছুটা কমে গেলেও, কোন সুচিন্তিত আমূল সংস্কারের অভাবে স্থানীয় বা জেলা লেভেলে এদের গভীর ও একছত্র আধিপত্য থেকেই যায়। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক সরকারগুলো, বেসামরিক প্রশাসনে নিজেদের অনভিজ্ঞতায় এদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং এদের প্রবল পুনরুত্থানের সুযোগ করে দেয়। এই সুযোগে প্রাক্তন সিএসপিরা আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। তবে এতে প্রাক্তন ইপিসিএস দের সাথে দন্দ্ধ সৃষ্টি হলে, একসময় গোষ্ঠী স্বার্থে তারা একহয়ে ভুমি প্রশাসন ক্যাডার কে প্রশাসন ক্যাডার নাম দিয়ে আমলাতন্ত্রের একছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

এর পর আমলাতন্ত্রের সংস্কারে বহু কমিশন করা হলেও, এইসব কমিশনগুলোয় আমলা ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের প্রাধান্য থাকায় কখোনোই উপনিবেশিক কাঠামোর বাইরে কোন কঠিন সংস্কারের রেকমেন্ডেশন করে নাই; আর এসব রেকমন্ডেশনের বাস্তবায়নের দ্বায়িত্বও আমলাদের হাতে থাকায়, নানা রকম দির্ঘসুত্রিতায় ও অন্যান্য অপকৌশলে, কিছু লোকদেখানো হালকা সংস্কার ছাড়া বেশিরভাগ কঠিন রেকমেন্ডেশন্ই বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এই জনবিরোধী উপনিবেশিক আমলতন্ত্রের মূল উৎপাটন ও আমুল সংস্কারে আমি নিন্মোক্ত জরুরি ও মধ্য মেয়াদি প্রস্তাব করছি ভবিষ্যতের নতুন এক জনবিপ্লবি সরকারের কর্তৃক বাস্তবায়নের আশায়:

জরুরি ভিত্তিতে

১) উপনিবেশিকতার প্রধান লিন্চপিন, প্রশাসন ক্যাডার ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিলুপ্তি:

(১-ক) এই ক্যডারকে যথাযথ ভাবে ভুমি প্রশাসন ক্যাডার নামকরন ও সম্পূর্ণ ভাবে ভুমি প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অধীনে আনা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে এর এখনকার সকল দ্বায়িত্ব যথাযথ ভাবে এটর্নি জেনারেল, সংস্থাপন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা।

(১-খ) সকল ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার পদের বিলুপ্তি: এইসব পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতা শুধু ভুমি প্রশাসনেই সিমাবদ্ধ থাকবে এবং তাদের পদবি তদানুযায়ি হবে সহকারী, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় ভুমি কর্মকর্তা। উপনিবেশিক "কমিশনার" পদবি কোন সরকারি কর্মকর্তাদের পদবিতেই ব্যাবহার করা যাইবে না। ভুমি প্রশাসনের বাইরে, তাদের এখনকার অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতাবলি নিন্মোক্ত ভাবে হস্তান্তরিত হ্ইবে।

(১-খ-১) আইন শৃঙ্খলাসহ ও সকল প্রাশাসনিক ও বিচারিক ম্যাজিসট্রেসি দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতা নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিচারিক জেলা ও উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর ন্যাস্ত হ্ইবে, যাহারা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আইনি যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাইবেন। তাহারা শুধু সংবিধান, আইন, ও আদালত সমুহের নিকট দায়বদ্ধ থাকিয়া স্বাধীন ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করিবেন। তাহারা প্রাসশনিক ভাবে নবগঠিত এটর্নি জেনারেল মন্ত্রণালয়ের অধিনে থাকিবেন। তাহাদের নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন, বরখাস্ত করন ও আনান্য শাস্তিমূলক মুলক ব্যবস্থা গ্রহনে এটর্নি জেনারেল সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী করিতে বাধ্য থাকিবেন এবং এইসব সিদ্ধান্তে বাধ্যতামূলকভাবে তাহাকে হাইকোর্টের অনুমোদন নিতে হ্ইবে, যাহাতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটেগন সব ভয় ভিতির উর্দ্ধে থাকিয়া স্বাধীন ও আইনসম্মত ভাবে তাহাদের দ্বায়িত্ব পালন করিতে পারেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটেদের পদ অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার হ্ইবে এবং উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের পদ যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার হ্ইবে।

(১-খ-২) জেলা ও উপজেলা প্রসিকিউটর/এটর্নি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দক্ষ অরাজনৈতিক স্থায়ী পাবলিক প্রসিকিউশন ক্যাডার প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে যাহারা পুলিশের সহযোগিতায় অপরাধ অনুসন্দ্ধান, মামলা প্রস্তত ও কোর্টে মামলা দাখিল করিবেন। উ্চ্চস্তরের আদালতে এটর্নি জেনারেল ও তাহার ডেপুটিরা, অথবা সলিসিটর জেনারেল ও তাহার ডেপুটিরা এক্ই দ্বায়িত্ব পালন করিবেন।

(১-খ-৩) অন্যান্য সকল অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতাবলি যথাযথ ভাবে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত স্থানীয় সরকারগুলোর নিকট হস্তান্তরিত হবে।

২) সকল কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিকে, অবিলম্বে, এবং তারপর প্রতিবছর, হলফনামা সহ তাদের ও তাদের নিকট আত্মীয়দের সকল সম্পদ বিবরণী দাখিল করিতে হইবে এবং সেইসব সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান করিতে হইবে। প্রমানে ব্যার্থ হ্ইলে রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল " অনুযায়ী তাৎক্ষণিক চাকুরিচুত্যি ও শাস্তি প্রযোজ্য হ্ইবে।

৩) উন্নত গনতান্ত্রিক দেশগুলোর আদলে এবং বাংলাদেশের স়ংবিধান অনুযায়ি সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারি শুধু সরকারি কর্মচারী হিসাবেই পরিচিত হ্ইবেন ও নিয়োগ পাইবেন। সকল নথিপত্রে ও তাহাদের পদমর্যাদা নির্বিশেষে সরকারি কর্মচারী হিসাবেই উল্লেখ করিতে হ্ইবে।

৩-ক) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি পদে নতুন কোন নিয়োগ দেওয়া হ্ইবে না এব়ং বর্তমানে কর্মরতদের অবসরপ্রাপ্তির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে এই পদগুলো উঠিয়ে দেওয়া হবে। দপ্তর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ও ফাইল আদান প্রদান সহ এদের সকল কাজ এক্ই সাথে ক্রমান্বয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের্ই নিজের কাজ নিজেই করিতে হ্ইবে।

৩-খ) এখনকার সকল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের (কর্মচারীদের) একটি শ্রনীতে বিভিন্ন গ্রেডে একিভুত করা হ্ইবে। বিসিএস পরীক্ষায় নির্বাচিতদের প্রথম পদায়ন হ্ইবে এই একিভুত কর্মচারীদের নিন্মতম গ্রেডে, এখনকার দ্বিতীয় শ্রেণীর নিন্মতম গ্রেডে।

৪) পদ খালি না থাকিলে কোন অবস্থাতেই কোন পদোন্নতি দেওয়া যাইবে না। সকল ওসডি এবং সুপারনিউমারি কর্মকর্তাকে দ্রুত রিভিউর মাধ্যমে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হ্ইবে। তবে তাহাদের ও তাহাদের নিকট আত্মীয়দের সকল সম্পদ বিবরণী দাখিল করিতে হইবে এবং সেইসব সম্পদের বৈধ উৎস প্রমান না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের অবসরকালীন পেনশন ও ভাতা প্রদান বন্ধ থাকিবে। প্রমানে ব্যার্থ হ্ইলে রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল "" অনুযায়ী তাৎক্ষণিক চাকুরিচুত্যি ও শাস্তি প্রযোজ্য হ্ইবে।

৫) সকল ব্যাচ ও সিনিয়রিটি ভিত্তীক প্রমোশনের পরিবর্তে, সকল নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি, পদানুযায়ি সকলের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে হ্ইবে।

৬) উপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি দ্রুত উচ্ছেদে ও দ্রুত দক্ষতা ও পারফর্মেন্স বৃদ্ধির জন্য, জয়েন্ট সেক্রেটারি ও তদুর্ধ পদের (পলিসি ডেভেলপার, পলিসি বাস্তবায়ক ও এক্সিকিউটিভ) নিয়োগে, প্রথম পাঁচ বছরের জন্য যথাযথ ভাবে অভিজ্ঞ ও দক্ষ, প্রাইভেট সেক্টর ছাড়াও, প্রবাসি ও বিদেশীদের জন্য্ও উন্মুক্ত থাকিবে।

৭) ডেপুটি সেক্রেটারি ও তার উপরের সব পদেস্তরের জন্য শসশ্ত্র বাহিনীর মত পৃথক পৃথক চাকরির বয়সসীমা থাকিবে। ওইসকল পদস্তরে কাহারো চাকরির বয়সসীমা উত্তির্ন হ্ওয়ার আগে পদোন্নতি না পাইলে তাহাকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে যাইতে হইবে। UP or OUT.

৮) কোন চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের; নির্বাচন কমিশন, দুদক সহ অন্যান্য কোন সাংবিধানিক পদে এবং অন্য কোন পদে; এবং স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন পদেই নিয়োগ দেওয়া যাইবে না। ঐসব প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে অথবা নিজস্ব নিয়মে পৃথক ভাবে তাহাদের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিবেন। সরকারি কর্মকর্তারা একের অধিক সরকারি পদে থাকিতে পারিবেন না এবং পদাধিকার বলে কোন আধাসরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন পদে থাকিতে পারিবেন না।

মধ্য মেয়াদি

৯) বর্তমান পাবলিক সার্ভিসকে ভেংগে দুইভাগে বিভক্ত করা হবে: (ক) জাতীয় সার্ভিস; এবং (খ) সাধারণ পাবলিক সার্ভিস।

(৯-ক) জাতীয় সার্ভিস: সশ্রস্ত বাহিনী ও জতিয় নিরাপত্তার সকল বিভাগ ও মন্ত্রনালয়, বিজিবি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুনর্গঠিত কৃষি/খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধিন সকল মৌলিক জনসেবা ও জননিরাপত্তা "জাতীয় সার্ভিসের" অধীনে থাকিবে। জাতীয় সার্ভিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি পদ শুধুমাত্র "জাতিয় সামরিক সার্ভিস" (১০ দ্রষ্টব্য) সফল সমাপ্তকারিদের জন্যই উন্মুক্ত থাকিবে। তাহাদের মধ্যে হ্ইতে উপযুক্ত শিক্ষা মানের প্রার্থিদের এক্ই প্রাতিযোগিতামুলক বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমেই জাতীয় সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হ্ইবে।

(৯-খ) সাধারন পাবলিক সার্ভিস: জাতীয় সার্ভিস ব্যতিত অন্যান্য সকল মন্ত্রনালয় এই সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত হইবে। এই সার্ভিস সকল নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকিবে এব়ং এক্ই প্রাতিযোগিতামুলক বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমেই সাধারণ সার্ভিসের কর্মকর্তাদেরো নিয়োগ দেওয়া হ্ইবে। তবে জাতীয় সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যেকোন স্তরে সাধারন সার্ভিসে বদলি বা যোগদান করিতে পারিলেও, "জাতীয় সামরিক সার্ভিস" সমাপ্তি সার্টিফিকেট না থাকিলে "সাধারণ পাবলিক সার্ভিসের" কোন সদস্য "জাতীয় সার্ভিসে" নিয়োগ বা বদলির হ্ইতে পারিবেন না।

১০) জাতীয় সামরিক সার্ভিস: ১৮ বছর বয়সি সকল ছেলে মেয়েদের জন্য ১ বছর মেয়াদি ভলান্টারি জাতীয় সামরিক সার্ভিস চালু করা। এই সার্ভিস সামরিক প্রশিক্ষণের সাথে সাথে প্রত্যেককে কমপক্ষে দুটি উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন কারিগরি বিষয়েও উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দেবে। প্রতিরক্ষা জনবল তৈরি ও শক্ত চরিত্রের, দক্ষ জনসেবার মানসিকতার নাগরিক তৈরি করাই হবে এই সার্ভিসের লক্ষ্য।

(১০-ক) জাতীয় সার্ভিস সমাপ্তকারিরা ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই বছর অন্তর ১৫ দিনের রিফ্রেসার কোর্সে অ়ংশ নিতে বাধ্য থাকিবেন এবং যেকোন বড় দুর্যোগের সময় সার্ভিস কল-আপে সাড়া দিতে বাধ্য থাকিবেন। এই দির্ঘমেয়াদি কমিটমেন্টই তাহাদের জনসেবার দৃঢ় মানসিকতা প্রমাণ করিবে।

(১০-খ) এক বছরের জাতীয় সার্ভিস সমাপ্তির ৪ বছর পর তাহারা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যেকোন জনপ্রতিনিধিত্ব কারি নির্বাচনে প্রার্থীতার জন্য জনসেবার যোগ্যতা পূরন করিয়াছেন বলিয়া গন্য হ্ইবেন। (প্রস্তাব -২ দ্রষ্টব্য)।

(১০-গ) এই উদ্দেশ্যে প্রতিটি উপজেলায়জেলায় একটি জাতীয় সামরিক সার্ভিস ও কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় জাপান, জার্মানি, চিন ও কোরিয়ার মত কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমে উন্নত ও সফল দেশগুলোর সাহায্য নেওয়া হবে।

১১) নতুন পাবলিক সার্ভিস কাঠামো ও আইন প্রনয়নঃ: বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোর পাবলিক সার্ভিস কাঠামো ও আইন পরিক্ষা নিরিক্ষা করিয়া উপরোক্ত নতুন জনসেবক জাতীয় ও পাবলিক সার্ভিস কাঠামো ও আইন প্রনয়নের জন্য একটি উচ্চমানের কমিশন গঠন করা হ্ইবে।

(১১-ক) এই কমিশন জাতীয় ও পাবলিক সার্ভিস বিষয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞ (উন্নত দেশের) এবং দেশিয় একাডেমীক, আইন ও আনা ন্য বিশেষজ্ঞ সমন্বেয়ে গঠিত হ্ইবে। কোন বাংলাদেশী বর্তমান, প্রাক্তন আমলা বা আমলাতন্ত্রের সহিত সরাসরি যুক্ত কোন ব্যাক্তি কোনক্রমেই এই কমিশনের সদস্য, এমনকি কোন ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারিও হ্ইতে পারিবেন না।

(১১-খ) বর্তমান ক্যাডার ব্যবস্থা ও বিসিএস পরীক্ষার মান উন্নয়ন এবং নিয়োগ পদ্ধতি সম্পূর্ণ পুনর্গঠনও এই কমিশনের দ্বায়িত্ব হ্ইবে।
_______________________

রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ১ " দুর্নীতি নির্মূল "
রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাব - ২ " রাজনিতির দুর্বৃত্তায়ন রোধ '

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: ঘুষ দিয়ে সরকারি কাজ করাতে হয়, বাংলাদেশ এখন এটাকেই প্রায় 'সিস্টেম' বলে মেনে নিয়েছে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:০৮

মইন আহসান বলেছেন: রাজিব নুর, এই মেনে নেওয়াটাই চরম ভুল। এরজন্য দেশ স্বাধীন হয় নি। এই দুর্নীতির বিষ শুধু রাষ্ট্র নয় সমাজকেও ধংস করে ফেলবে অচিরেই।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অনেক চিন্তা ভাবনা করে লিখেছেন বোধ করি

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৩১

মইন আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রায় পচিশ বছর ধরেই ভাবছি , স্বাধীন হলাম অথচ মৌলিক রাষ্ট ব্যবস্থার কিছুই পরিবর্তন হলো না, আর কুশাসন ও দুরনিতির জ্যামিতিক অগ্রাসনে আমরা রসাতলের দিকে ধাবিত। স্কুলের বাচ্চাদের "রাষ্ট্র মেরামতের" দাবি চোখে আঙ্গুল দিএয়ে আমাকে দেখিয়ে দিল মূল সমস্যা কোথায়। তারপরই আমার চিন্তা ভাবনাগুলি গুছিয়ে সাবার বিবেচনার জন্য এই প্রস্তাবগুলো লেখা শুরু করেছি।

আমি মনে করি এই রাষ্ট্রকাঠামোগত মৌলিক ইস্যুগুলো রাজনিতির মূখ্য আলোচনায় আনা এখন অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রকাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশের এগুনোতো দুরের কথা, বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েই যাবে।

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো ভাবনা।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২৬

মইন আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৪:২৩

এম.জে. রহমান বলেছেন: প্রস্তাবনার সাথে একমত। কলোনিয়াল শাসন পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত এদেশে সুশাসন বাস্তবায়িত হবে না।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩২

মইন আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ। উপনিবেশিক শাসনব্যাবস্থা উচ্ছেদ ছাড়া এই দেশের মানুষ কখোনোই নাগরিকের মরযাদা, শুশাসন আর সুবিচার পাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.