![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(আমি কয়েক বছর আগে এই লেখাটি বিভিন্ন ব্লগে পোষ্ট করেছিলাম আমার "নিরবোধ" ব্লগ ছদ্মনামে। রাষ্ট্র মেরামত প্রস্তাবগুলোর সাথে এই লেখাটার একটা নিবিড় সম্পর্ক থাকায় আবার পোষ্ট করলাম এই ব্লগে।)
দেশি বিদেশি অনেকের মতেই বাঙ্গালী মাত্রই আয়েসি, আরামপ্রিয়, গপমারা, আড্ডাবাজ, অলস, তাঁবেদার, তোঁয়াজকারি, সুবিধাবাদী, চতুর, ধূর্ত। অনেক বাঙ্গালিই এই নিয়া আত্মগ্লানিতে আর হতাশায় ভোগেন দেশ ও জাতির ভবিষ্যত ভাইবা।
তাদের বলি, বেশি হতাশ হইয়েন না, এই বাঙ্গালি চরিত্রাবলির বেশিরভাগই প্রকারভেদে সাধারন ভাবে ভারতিয় উপমহাদেশের জনসাধারনের বেলায়ও ব্যাবহ্রিত হয়, দেশে এবং বিদেশে। আর ভারতের নিচু কাষ্টের মানুষেরাও হাজার হাজার বছরের নিস্পেষন ও বিজিতের গ্লানি মাথায় নিয়া আরো বেশি হতাশায় আর হিনমন্যতায় ভোগে। ইংলিশ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান,গ্রিক, আইরিশ, স্লাভ সবারই আছে এইরকম স্টেরিও টাইপ চরিত্রের লিস্ট। মানুষের মৌলিক চরিত্রে দেশ-জাতি ভেদে পার্থক্য বেশি নাই, একই ডি-এন-এ তো। যতটুকু পার্থক্য তা প্রকৃতি আর পরিবেশের দির্ঘস্থায়ি প্রভাব মাত্র - সেই দির্ঘস্থায়ি প্রভাবই নিয়ন্ত্রন করে কোন বেসিক ট্রেইট বা ইন্স্টিকন্টগুলি ডমিনেট করবে বিভিন্ন জাতিকে ইতিহাসের বিভিন্ন খন্ডে।
History and nature works in great sweeps of time – মানুষ এক জীবন অথবা বেশি হইলে দুই তিন পুরুষের সাধারন অভিজ্ঞতার রেফারেন্সে এর বিচার করতে যাইয়া ইতিহাসের বিভিন্ন বিন্দুতে হয় নিজেদের হিনতায় হতাশ হয় আথবা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্যে উল্লাসিত হয়।
আমারা বা আমাগো পুর্ব পুরুষরা হারতে হারতে মাইর খাইতে খাইতে বা বিদ্রোহি হইয়া বা অন্য যেইভাবেই হোক এই জলাভুমির বদ্বিপে আইসা আস্তানা গাড়লো ইতিহাসের কোনো এক সময়ে। আস্তে আস্তে আমরা পানি আর আদ্রতায় অভ্যস্ত হইয়া গেলাম, তারপর এক সময় ওয়েট রাইস চাষাবাদও শিক্ষ্যা ফালাইলাম। পুকুরে নদিতে মাছ, মানুষ কম, বছরে তিন চাইর মাস আবাদ করলেই ফসলে বছর চলে; আবার খাল-বিল নদি নালা ভাইংঙ্গা বেশি কেও হামলাও করে না - পাইয়া গেলাম সোনার বাংলা। আমরা হইতে শুরু করলাম আয়েসি, আরামপ্রিয়, গপমারা, আড্ডাবাজ, অলস বাঙ্গালি। আয়েসি সহজ জিবনধারনে প্রয়োজন নাই, আবার কোনো মারকুট্টা বহিরআগতের ধাওয়াও নাই তাই আমরা হইয়া গেলাম ঘরকুনা বাঙ্গালি - static, immobile, innovation less, adventure less, risk averse বাঙ্গালি।
এতো আরামে এতো অবসরে আর সহজলভ্য খাদ্যের প্রাচুর্য্যে মাঝে মধ্যেই জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঘইটা সোনার বাংলা যায় যায় হইতো। কিন্তু প্রকৃতিই তার সমাধান কইরা দিত - মা শেতলার দাক্ষ্যিন্যে ওলাওঠায় (কলেরায়) গ্রামকে গ্রাম উজাড় হইয়া যাইতো - জনসংখ্যা ধ্বইসা আবার সোনার বাংলা ফিরা আসতো। বাঙ্গালির চরিত্রের শেকড়ও গভির হইতে লাগলো।
এই আয়েসি প্রাকৃতিক সাইকেলে বাগড়া দিল আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান – মা-শেতলা আর তার ওলাওঠাসহ বহু সংক্রামক ব্যাধি বিদায় নিল, শিশু মৃত্যুর হার কমতে থাকলো, বুড়া বুড়িরা আরো বুড়া হইয়া মরার অভ্যাস করলো, আর জন্ম হার বাড়তে থাকলো। ফলে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকলো - ১৯৪৭ শে সাড়ে তিন কোটি, ১৯৭১ এ সাড়ে সাত কোটি আর ২০১৯ এ - কে জানে সাড়ে সতেরো কোটি না আরো বেশি (সবকিছুর মত আদম শুমাড়িতেও ভেজাল)।
এই জনসংখ্যার ক্রমাগত বিস্ফোরনে স্বাভাবিকভাবেই জমি ও অন্যান্য বেসিক সম্পদের প্রতিযোগিতা শুরু হইলো বাঙ্গালির মধ্যে, আর তা ধিরে ধিরে বাড়তেই থাকলো। এই প্রতিযোগিতার প্রতিক্রিয়ায় অলস, আয়েসি, আরামপ্রিয়, গপমারা, আড্ডাবাজ বাঙ্গালির চরিত্রে যোগ হইলো ধুর্ততা আর শঠতা। তার বুদ্ধিমান হওয়ার কোনো সম্ভবনাই ছিল না, প্রকৃতি তারে বুদ্ধিমান হওয়ার মতো কোনো পরিবেশই দেয় নাই।
চিন্তা কইরা দেখেন ধুর্ততা-শঠতা আর বুদ্ধি এই দুইটার মৌলিক পার্থক্য কই? একই সমস্যায় ধুর্ততা-শঠতা খোজে স্বল্প মেয়াদি একবারের সমাধান; আর বুদ্ধি খোজে দির্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান - বাস, এইটুকুই পার্থ্যক্য। এখন বাংলার পকৃতি নরম, এর মোটামুটি সব সমস্যাই সাধারন আর স্বল্প মেয়াদিঃ সামান্য মাত্রার ঋতু পরিবর্তন আর কিছু বাৎসরিক বন্যা আর ঝড় যা তেমন কোনো সমস্যাই ছিল না স্বল্প জনসংখ্যার যুগে। তারমধ্যে নদি নালার জলাভুমিতে ছিল না বহিশত্রুর আক্রমন আর যুদ্ধ বিগ্রহ, এবং তার পরিনামে mass dislocation of population. প্রকৃতি আর পরিবেশ বহুযুগ বাঙ্গালিরে দেয় নাই mobile, innovative, adventurous, risk taker হওয়ার প্রয়োজন। বাঙ্গালি ধুর্ত শঠ না হইয়া বুদ্ধিমান হইবো কোন দুঃখ্যে।
হাজার হাজার বছর পরে স্বাধিন হইয়া, স্বাভাবিক ভাবেই ধুর্ততম আর শঠতম বাঙ্গালিরাই হইয়া গেলো আমাগো শাসক শ্রেনি। সব দেশেই সব কালেই সাধারন মানুষ তার চরিত্র মাজা ঘষা করে তৈরি করে শাসককুলের অনুকরনে। আমরাও তাই করলাম, মগ্ন হইলাম আমাগো ধুর্ততা আর শঠতার উৎকর্ষতা সাধনে।
একাত্তরের স্বাধিনতা যুদ্ধ একটা সুযোগ দিছিল আমাগো চরিত্র পরিবর্তনের, আমাগো ডি-এন-এ রে একটা বড় আর দির্ঘস্থায়ি মোচোড় দেওয়ার। কপাল খারাপ, কারা জানি মাত্র নয় মাসেই যুদ্ধটার এবর্শন করাইয়া দিল। না পারলাম আমাগো ডি-এন-এ রে একটা বড় আর দির্ঘস্থায়ি মোচোড় দিতে, না পারলাম মৌলিক সমাজ আর রাষ্ট্র সংস্কার করতে - খালি ধুর্ততম আর শঠতম কতোগুলিরে লুটপাট আর কাইজ্জ্যা করার কায়েমি ব্যাবস্থা কইরা দিলাম।
আশা হারাইয়েন না। আমরা বইসা থাকলেও প্রকৃতি বইসা নাই। তারে খানিকটা বাগড়া দিতে পারি আমরা বিজ্ঞান আর চিকিৎসা বিজ্ঞান দিয়া, কিন্তু তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নাই আমাগো, কারন আমরা প্রকৃতিরই অংশ। সে ধিরে ধিরে কিন্তূ অবধারিত গতিতে আমাগো যৎসামান্য ডি-এন-এ রে একটা প্রচন্ড আর দির্ঘস্থায়ি মোচোড় দেওয়ার আয়োজন করতেছে।
ঊপরের বাংলাদেশের মানচিত্রটি ভাল করে দেখু্ন। উত্তরে পৃথিবীর সর্ব উচ্চ হিমালয় পর্বতমালার নিচে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র গড় ৩০ ফুট উচ্চতার এক সমতল ভুমি, যার পুব আর পশ্চিমও পাহাড় ঘেরা। এই সমতল দিয়েই প্রায় সমগ্র পূর্ব ও মধ্য হিমালয় ও উত্তর ভারতের সব বরফ গলিত ও বৃষ্টির পানি নামে বঙ্গোপোসাগরে; আবার দক্ষিন থেকে আছে শুধু বঙ্গোপোসাগরের বাৎসরিক সাইক্লোন আর জ্বলোচ্ছাসের হমকিই নয়, আরো আছে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারেনে প্রায় অবধারিত সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধির বিশাল জীবন-মরন হুমকি। কিন্ত এখানেই শেষ নয়, আমাদের রয়েছে আরো বড় একটি জিবন-মরন ঝুকি - ভয়াবহ ভুমিকম্পের ঝুকি; বাংলাদেশের উত্তর সিমান্তে রয়েছে ভারতের ৩ কিঃ মিঃ উচ্চতার শিলং ম্যাসিফ আর এর সাথে, এর দক্ষিনে আমাদের সিমান্ত বরাবর রয়েছে ৩০০ কিঃ মিঃ বিস্ত্রিত ডাউকি ফল্ট বা ভুচ্যুত্যি; আর পূব সিমান্তে আর চট্টগ্রাম উপকুল জুড়ে রয়েছে বার্মা আর আরাকান মেগা থ্রাষ্ট (যাকিনা ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ফল্ট পর্যন্ত বিস্তৃত)। পূব সিমান্তের উত্তর দক্ষিন মুখি পাহাড়্গুলি অতিতের ভয়াবহ ভুমিকম্পের সৃষ্ট সাক্ষ্য। বিশেসজ্ঞদের মতে এই দুটি মেগা থ্রাষ্ট এবং ডাউকি ফল্টে যেকোন সময় বড় ধরেনের ভুমিকম্প হতে পারে, ইদানিগকার ঘন ঘন ছোত ভুমিকম্পগুলি সেই ইংগিতই দিচ্ছে। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত এর উপরে আছে আমাদের অতি জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব, যা যেকোন প্রাক্রিতিক দুর্যোগে অতি ক্ষয়ক্ষতির কারন। আমাদের ১৬/১৭ কোটি মানুষের অতি অল্পসংখ্যকেরই দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে - বাকিদের জন্য এই বিশাল প্রকৃতি বৈরিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাচা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর এই যুদ্ধে নিজেদের নিশ্চিন্ন হওয়া থেকে বাচতে আমাদের সমস্ত সম্পদ ও শক্তি নিয়ে সংগঠিত ভাবে যুদ্ধে নামতে হবে।
_____________________
মইন আহসান
০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ২:৪৭
মইন আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০২ রা মে, ২০১৯ রাত ৯:০১
আহমেদ জী এস বলেছেন: মইন আহসান,
বাঙালী চরিত্রের সুন্দর ক্রোনলজি। চমৎকার বিশ্লেষণ। তবে আমাদের ডিএনএ'র মোচড় খাওয়ার কোমরটি ভেঙে গেছে অনেক আগেই। ভাঙা কোমরে কি আর নতুন করে মোচড় খেতে পারবে?
আমরা নিজেরাই প্রকৃতিকে মোচড়াচ্ছি রোজ, সে প্রকৃতি আমাদের আর কতোটুকু মোচড়াবে কে জানে!!!!!!!!!!!!!
০৩ রা মে, ২০১৯ রাত ২:৪৬
মইন আহসান বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
প্রকৃতি আর পরিবেশ যখন খুব প্রতিকুল হয়ে পড়ে তখন নিজের বাচার স্বার্থেই মানুষ তার চরিত্র বদলায়, অথবা বলতে পারেন প্রকৃতি আর পরিবেশ তাকে তার ডি এন এ তে মোচড় দেয় বাচার স্বার্থে বদলে যেতে।
আপনি ঠিকই বলেছেন "আমরা প্রকৃতিকে মোচড়াচ্ছি রোজ" - কিন্ত প্রকৃতি অনেক অনেক শক্তিশালি, আমরা প্রকৃতির এক ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র; হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা বলে - প্রকৃতি সবসময়ই তার ভারসাম্য পুনপ্রতিষ্ঠা করে, তা প্রাক্রিতিক শক্তির বলেই; হয় তার অংশ হিসাবে ইন্ডাইরেক্টলি আমাদের মাধ্যমে যুদ্ধ বিগ্রহ হানাহানি বা কোন মহামারি দ্বারা আমাদের সংখ্যা কমিয়ে, অথবা ডাইরেক্টলি সাইক্লোন ভুমিকম্প ইত্যাদি হঠাত বিপরযয়ে, অথবা পরিবেশ বিপরযয়ে।
শুধু প্রকৃতিই জানে কখন আমরা তার সহ্যের সিমা অতিক্রম করবো। তবে তা মনে হয় বেশি দূরে না।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৯ রাত ৮:৪১
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পড়লাম।