নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনপ্রিয়তা হারিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০১

জনপ্রিয়তা হারিয়ে অসামরিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় অতিরিক্ত সময় টিকে থাকা অসম্ভব। সামরিক শাসকদের পক্ষেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভয় হয় না। এরশাদ, পারভেজ মোশারফ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। এসময় সদিচ্ছায় জনগণকে খুশি করার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও তা সুফলদায়ক হয় না। বিরোধীদল শক্তি অর্জন করে দাপুটে অবস্থায় তাকে। তাদের কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এতে সরকারি দল আরো চাপে পড়ে যায়। প্রথম দিকে তারা একরোখা আচরণ করে, বিরোধীদলকে পাত্তা দিতে চায় না। শেষে ছাড় দিতে বাধ্য হয়। রাজনীতিতে একবার ছাড় দিলে ক্ষমতা হারানো পর্যন্ত ছাড় দিয়ে যেতেই হয়। নব্বই পরবর্তীতে একই চিত্র বারবারই দেখেছে বাংলাদেশ।

রাজনৈতিক ভাষ্যকরদের অনুমান প্রধানত ৪টি কারণে সরকারি দল জনপ্রিয়তা হারিয়েছে- (১) হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের প্রচারণা এবং ইসলাম বিদ্বেষ মিথ্যা প্রচারণা। (২) বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি এবং সংবিধান সংশোধন করে তত্তাবধায়ক সরকার আইন পরিবর্তন। (৩) হলমার্ক-বিসমিল্লাহ, ডেসটিনি-ইউনিপেটুইউ, পদ্মাসেতু, শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারি এবং (৩) সরকারী দলের ছাত্র, যুব সংগঠনের দুর্বৃত্তপরায়ন আচরণ। বিরোধী দলও সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে একই রকম দাবী করছে। গত ২৫ অক্টোবর সরওয়ার্দী উদ্যাদে প্রদত্ত ভাষণে বিরোধী দলীয় নেত্রীও একই ধরণের বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান সরকার দাবী করছে তারা ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তা কমেছে। গত নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জের তিনটি আসনেই আওয়ামীলীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। এখন অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে তিনটি আসনই ক্ষমতাসীনরা হারাতে পারে। সারাদেশেই একই অবস্থা। পরবর্তী নির্বাচনেগুলোতে সরকার গঠনকারী দল প্রত্যেকবছরই ভরাডুবির সন্মুখীন হয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না। সারা দেশে একই কারনে এটি হচ্ছে তাহল, দেশব্যাপী সরকারি দলের পান্ডাদের সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন ও অসম্মান। দেশের উন্নয়ন দেখানো হল জুতা মেরে গরু দানের মতো। জুতোটা জনগণকে বড্ড জ্বালায়।

সাম্প্রতিক সময়ের প্রথমআলো, ইত্তেফাক এবং যুগান্তর পত্রিকার জরিপও দেখাচ্ছে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকাগুলো অনলাইন জরিপ করছে বিভিন্ন ইস্যুতে। এখান থেকেও সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাসের অনুমান করা যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একই দিন দুই দল জনসমাবেশ করেছে তাতেও সরকারি দলের লোক সমাগম অনেক কম দেখা গেছে। এছাড়া ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকেও মাপা গিয়েছিল জনপ্রিয়তার পারদ। বিশেষ করে গাজীপুরকে বলা হত আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘাটি; সেখানেও পরাজিত হওয়াটা নিশ্চিত করে দেয় সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। সর্বশেষ একটি জরিপ অনুযায়ী আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মিলিত ভোট ৩৬+৭= ৪৩ শতাংশ। বিপরীতে বিএনপি ও জামাতের ভোট ৫০+৩=৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ভোটে বিরোধী জোট এগিয়ে রয়েছে। একটি বিষয় লক্ষণীয় জোটগুলোর মধ্যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির স্থায়ী ভোট বৃদ্ধিমুখী এবং জাপা ও জামাতসহ ছোটদলগুলোর ভোট হ্রাসমুখী। বিভিন্ন বিশ্লেষণে মনে হয় বিএনপি ও আওয়ামীলীগের স্থায়ী ভোট রয়েছে ৩০-৩৫ শতাংশ করে। এই ভোট সামান্য হেরফের বাদে তারা সবসময় পেয়ে থাকেন। সমস্যা হচ্ছে ৫-১০ শতাংশ ভোট স্যুয়িং হচ্ছে। এই স্যুয়িং ভোটগুলো সরকারি দলকে ছেড়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। যদি ১০ শতাংশ ভোট গতবার আওয়ামীলীগকে দিয়ে থাকে এবং এবার বিএনপিকে দেয় তাহলে ভোটের ব্যবধান হয়ে যাবে সর্বোচ্চ ২০শতাংশ। বর্তমানে জরিপ মতে ভোটের ব্যবধান ১৪শতাংশ।

সরকারি দলের ব্যাপক উন্নয়নের দাবী আংশিক সত্য হলেও মানুষ উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া না। নব্বই পরবর্তী প্রতিটি সরকারই কমবেশি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। শহর এবং গ্রামের দিকে তাকালেই তা বুঝা যায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ পত্রিকা পড়ে না। তারা হেফাজত, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, পদ্মাসেতু বুঝে না। তারা তাদের পারিপার্শিক অবস্থা দেখে সমর্থন পরিবর্তন করে। এগুলোই জনপ্রিয়তা পরিবর্তনের মূল কারণ। মুন্সীগঞ্জের সর্বপশ্চিমের উপজেলা শ্রীনগর দিয়েই উদাহরণ দেই। সম্প্রতি সরকারি শ্রীনগর কলেজের অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগের নেতারা মারধর করে মাথা ফাটায়। তাদের এই অপকর্মর কথা সারা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ বিষয়টিকে ধীক্কার জানায়। কদিন পরে তারা দেখে আসামী নেতারা পোস্টার দিয়ে পুরো উপজেলা ভরে ফেলেছে। তারা কি মেসেজটা পেল? মিথিলা দে নামক একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। সারা শ্রীনগরবাসী জানে এটা হত্যা অথচ হতভাগী শিক্ষিকার খুনের একটি মামলাও করা গেল না। পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা করে আসামীদের খালাস করে দিয়েছে। মানুষ জানে এই খুনের অভিযোগ উঠেছে একজন যুবনেতার বিরুদ্ধে। ভাগ্যকুল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিিেক ৫০ শয্যার হাসপাতাল করে দেয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু মানুষ দেখল হাসপাতালের ডাক্তারের থাকার ঘরটি দুর্বৃত্তরা ভেঙ্গে নিয়ে গেল, গাছ কেটে নিয়ে গেল, পুকুরটি ভরে প্লট করে দোকান বানিয়ে বিক্রি করে দেয়া হল। এই ইউনিয়নের প্রায় ১২জন বিশিষ্ট নাগরিককে শারিরিকভাবে দুর্বৃত্তরা নাজেহাল করল। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে নির্বাচন হতে দেয়নি। বিষয়গুলো মুখেমুখেই সবাই জেনে গেছে। এছাড়া সরকারি গাছ কাটা, পুকুর দখল, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা দখল, টেন্ডার নিয়ে কাজ না করেই বিল তোলা, ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনভাবেই মামলা করা যায় না, পুলিশ ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়ালের মতো কাজ করে, শুধু সরকারি দলের লোকেরাই চাকুরি পায় এসবতো মানুষ প্রত্যক্ষ করে। শীর্ষ নেতারা এসব জেনেও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ায়নি। দুর্বৃত্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের রক্ষা করেছে। এই অবস্থা মুন্সীগঞ্জের সব উপজেলাতেই এবং সারা বাংলাদেশেই কমবেশি রয়েছে। এখন এই স্যুয়িং করা ৫-১০ ভাগ মানুষ যদি বাঁচতে চায়, অপরাধিদের হাত থেকে মুক্তি চায় তাহলে পথ কি? পথ হল সরকার বদলে দেয়া। এভাবেই তারা ৯৬, ০১ এবং ০৮এ সরকার বদলে দিয়েছে। নব্বই পরবর্তী প্রতিটি সরকারই শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। মানুষের অধিকারগুলোর বিষয়ে তারা একেবারেই সচেতন নয়। শুধু ভাতে মানুষ আর সন্তুষ্ট নয় তারা সম্মানও চায়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্ত কর্মীরা মানুষের অধিকারগুলো ভোগের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। একারণেই প্রধাণত মানুষ তাদের নির্বাচনের সময় শিক্ষা দেয়। কিন্তু বিরোধীদল ক্ষমতায় গিয়ে এই শিক্ষাটা ভুলে যায়। আসলে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব দুর্বৃত্তদের পালেন ক্ষমতায় গিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এই দুর্বৃত্তরাই মিছিল করে, মিটিং করে, হরতাল সফল করে, অবরোধ করে, গাড়ি পোরায়, মানুষ মারে, নিজেরা মরে এবং নেতাদের হয়ে জীবনের ঝুঁকি নেয়, বিরোধী দলে থাকাকালীন নির্যাতিত হয়। ক্ষমতায় গিয়ে এই দুর্বৃত্তরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায়। তারা অধিকাংশই অর্থ আয়ের পথ চেনে না ফলে ছিনিয়ে নিতে চায়। দখল করে, সন্ত্রাস করে অর্থ উপার্জন করতে চায়। চাঁদাবাজি করে, ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, গরুর হাট ছিনিয়ে নিয়ে তারা ধনী হতে চায়। থানা-পুলিশ নিজেদের পকেটে রাখে। সাধারণ মানুষ চোখের সামনে ঘটা এগুলো মেনে নিতে চায় না। আত্মসম্মান ও নিরাপত্তার জন্যই সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীন সরকারকে সরাতে বাধ্য হয়েছে। তাদের না সরিয়ে ভালভাবে বাঁচার কথা মানুষ চিন্তা করতে পারেনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় থাকতে চাইলে দলীয় দুর্বত্তদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরা দল ও দেশের বোঝা সেটা বুঝতে হবে। এটা সত্য কথা হলেও ক্ষমতাসীনরা এখানে ষড়যন্ত্র খুঁজেন। যদি তারা তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে কোন বারই সুষ্ঠুভোটে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারবেন না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.