নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদের মান ও জনপ্রিয়তা নিয়ে কিছু কথা

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬

মুজিব রহমান

বাংলা সাহিত্যের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয়তম উপন্যাসিক ছিলেন- হুমায়ুন আহমেদ এটা মিমাংশিত সত্য। তার মতো জনপ্রিয় আর একজন উপন্যাসিক ছিলেন তিনি হলেন শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়। দুই কালের দুই জন লেখকের মধ্যে জনপ্রিয়তা তুলনা করা কঠিন। হুমায়ুন কতটা জনপ্রিয় তা বুঝা যায় ফেব্রুয়ারির জাতীয় গ্রন্থ মেলায়। তাঁর বই কেনার জন্য স্টলে সর্বক্ষণ ভীর লেগেই থাকে, কখনো কখনো লাইন ধরেও বই কিনতে হয়। বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে রাড়িখালে একটি বইয়ের স্টল দেয়; সেখানেও অধিকাংশ বিক্রি করা বইয়ের লেখকই হুমায়ুন আহমেদ। অর্থাৎ সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকটই তিনি জনপ্রিয়। তিনি জনপ্রিয় হলেও অনেকেই তাঁর লেখা নিয়ে ব্যঙ্গ করেন, বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করেন। মৃত্যুর পরও এবছর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে তার বই। সৈয়দ শামসুল হক এবং হুমায়ুন আজাদের সাথে তাঁর দীর্ঘ বাহাসও হয়েছে। হুমায়ুন আজাদ তাকে অপন্যাসিক বলতে চেয়েছেন। এই অপন্যাসিক শব্দটি তাঁর বিরোধীরা অহরহ ব্যবহার করেন। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকে সমালোচনা করে অনেকে নিজেকে ভাল পাঠক হিসাবে প্রমান করতে চেষ্টা করে। তার নির্দিষ্ট কিছু যুক্তি ব্যবহার করেন, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়ে উঠে না। তাঁর সাক্ষাৎকার হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারের মতো আকর্ষণীয় না হলেও তা নিয়েও তাঁর বিরোধীরা বিতর্ক তৈরি করেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে তাঁর ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে তিনি বিপুলভাবে প্রশংশিত হন। অনেকে তাঁর প্রথম প্রকাশিত এই উপন্যাসটিকেই শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসাবে মনে করেন। তাঁর পরবর্তী উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ও পাঠক মহলে প্রশংশিত হয়। এরপরেই সাধারণ পাঠকরা তাঁকে বিপুলভাবে গ্রহণ করলেও বুদ্ধিজীবী টাইপের কিছু পাঠক তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। হুমায়ুন সাহিত্য নিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, আমার সাহিত্য পড়লে লোকে আনন্দ পাবে। পড়ার আনন্দটা পাবে এটুকু বলতে পারি। কিন্তু সে যে পড়ে বিশাল জ্ঞানী হয়ে যাবে, আমি সেটা মনে করি না। বিশাল একটা বোধ তৈরি হবে, সেটাও আমি মনে করি না। আমি লিখে লিখে নিজে আনন্দ পাই এবং এমনবাবে লেখার চেস্টা করি যাতে করে পাঠক পড়ে আনন্দ পায়। জ্ঞান দেওয়ার কিছু নেই।
বই বাণিজ্য ও সাহিত্যকে পণ্য করেছেন: এই অভিযোগটি হাস্যকর। অভিযোগটি তিনি জনপ্রিয় ছিলেন, তাঁর বই বেশি বিক্রি হয় সেই প্রেক্ষিতে বলা হয়। তিনি সাহিত্যকে সবশ্রেণির পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি অসংখ্য চরিত্র তৈরি করেছেন। মিসির আলি, হিমু, শুভ্র, বাকের ভাই এর জনপ্রিয়তা বিস্ময়কর। এগুলো পাঠকরা লেখকের যোগ্যতাতেই গ্রহণ করেছেন।
হালকা, চটুল ও সুড়সুড়ি মার্কা বিনোদন: হুমায়ুন আহমেদের রচনা সস্তা জনপ্রিয় বলেই কারো কারো দাবী। এগুলো কোনভাবেই কালজয়ী হবে না। হুমায়ুন আহমেদের অনেক বই ছোট পরিসরে লেখা। কিন্তু বড় পরিসরে লেখা তার বইয়ের সংখ্যাও কম নয়। অনেকে বলেন, তিনি দ্রুত উপন্যাসের সমাপ্তি টেনে ফেলেন। এর অর্থ পাঠক আরো পড়তে চায় কিন্তু পৃষ্ঠা আর নেই। তার লেখা কালজয়ী হবে না বলেও কেউ কেউ এখনই মন্তব্য করেন। পৃথিবীতে কালজয়ী উপন্যাস কয়টি? কালজয়ী লেখক কয়জন? সেক্সপিয়র কালজয়ী, রবীন্দ্রনাথ কালজয়ী। রবীন্দ্রনাথতো সারা পৃথিবীতে সেক্সপিয়রের মতো কালজয়ী নন। হিমু বা মিসির আলীর পাঠকরা বাংলা ভাষায় দীর্ঘদীন পাঠ করবেন বলা যায়। এই সব উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ লেখে না। হুমায়ুন কালজয়ী না হলেও অসুবিধা কি? তিনি কি দাবী করেছেন তিনি কালজয়ী উপন্যাসিক। তার ঐ বইটা কালজয়ী। তাকে কালজয়ী নয় এজন্যই ব্যর্থ বলা হবে? তিনি সেক্সপিয়র নন এজন্য ব্যর্থ বলবো? তিনি আমাদের হুমায়ুন আহমেদ, বাংলা সাহিত্যের জাদুকর।
অল্প শিক্ষিত ও কমবয়েসি পাঠক: সারা পৃথিবীতেই কম বয়েসি পাঠকরাই বেশি বই পড়ে। বুড়ো হলে বই পড়া কঠিন হয়ে যায়। আমাদের সমাজে ৬০ উর্ধ্ব কতজন পাঠক রয়েছেন যারা একটি বড় মানসম্মত বই পড়ে শেষ করতে পারবেন। অল্প শিক্ষিত বলতে এখানো বুঝানো হয় বয়স কম বিষয়টিকেই। যার বয়স ১৮ সেতো মাস্টার্সে পড়বে না। এই অভিযোগের সত্যতাও আংশিক। অনেক বয়ষ্কপাঠককেও দেখা যায় হুমায়ুন আহমেদের বই কিনতে পড়তে। পাঠাগারগুলো গেলে কিংবা যারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ে যার উপর জরিপ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। অনেক অধ্যাপককেও এখনো হুমায়ুনের বই পড়ার জন্য নিতে দেখা যায়।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাল লেখা নেই: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাসাহিত্যেই ভাল কোন উপন্যাস লেখা হয়নি। হুমায়ুন আহমেদ অনেকগুলো উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি আলোচিত হয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেন তিনি উপন্যাসে রাজাকার চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলেন না কিংবা তিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। অন্য কেউতো মুক্তিযোদ্ধাদেরও ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। তার অধিকাংশ উপন্যাসই মুক্তিযুদ্ধের একটি ছোট অংশ নিয়ে লেখা। যেমন- আগুনের পরশমনি। এখানে স্বল্পপরিসরে কতো গভীরভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এইসব অভিযোগের জন্য অভিযোগ খোঁজে বের করাটাও প্রমাণ করে হুমায়ুন কতটা শক্তিশালী। অতি উৎসাহী দুই একজন দাবী করে বসেন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে লিখেছেন। জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের শেষ পর্যায়ে জয় বাংলার পরে বলেছেন, পাকিস্তান জিন্দাবাদ। অনেকেই এই সত্যটা মানতে পারেন নি। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে মৌলবাদ এখনো বড় কোন সমস্যা হয়ে দেখা দেয়নি। জাহানারা ইমাম খুন হননি, ক্যান্সারে মারা গেছেন। এসবের বিরোধীতাও করতে হয় কাউকে কাউকে।
মেধাবী সাহিত্যিক নন: একাত্তরে বিপদগ্রস্থ হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আহমেদ ছফা। আহমদ ছফা নাকী কোন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হমায়ুন আহমেদের মেধা নিমাই ভট্টাচার্যের সমান। সেটাকেই হুমায়ুন বিরোধীরা ঐশিবাক্য ধরে নিয়েছেন। ছফা নিজেও উপন্যাসিক ছিলেন। হুমায়ুন আজাদ একবার শামসুর রাহমানকে বলেছিলেন, প্রধান কবি। এর পর অনেকবারই এই বাক্য প্রত্যাহার করেছেন। বলেছিলেন, তিনি একা প্রধান কবি নন, রফিক আজাদ, হুমায়ুন আজাদসহ কয়েকজন কবিও প্রধান কবি। তিনি অন্যত্র বলেছেন, আমি শুধু শামসুর রাহমানকে প্রধান কবি বলায়, অন্যকবিদের স্বীকৃতি দেয়ায় এবং নিজেকে প্রধান কবি বলিনি বলেই অনেকে প্রধান কবি হিসাবে আমাকে ভাবতে চায় না। ঠিক এই ভুলটি ছফা করতে চাননি। তিনি হুমায়ুন আজাদের সাথেও দীর্ঘ বাহাসে জড়িয়ে পড়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ তাঁর মূল্যায়ন করেছেন।
জনপ্রিয় থাকার চেষ্টা: সব লেখকই জনপ্রিয় হতে চান। পাঠক না পড়লে স্বার্থকতা থাকে না। এখানে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে প্রায়ই এই অভিযোগটি শুনতে হয়। জনপ্রিয় থাকার জন্য তিনি বিতর্কিত হন না, ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেন না, নাস্তিকদেরও আঘাত দেন না। যদি এগুলো করতেন তাহলে বলতো জনপ্রিয় থাকার জন্য তিনি বিতর্কিত হচ্ছেন। হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে এসব কথা বলা হয়। তিনি শিক্ষিত- অশিক্ষিত, আস্তিক- নাস্তিক, ছোট- বড় সবার কাছেই জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা লেখার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। জনপ্রিয় থাকার চেস্টা করে জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে সব লেখকই আগে জনপ্রিয় হওয়ার চেস্টা করতো।
একই জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখছেন: হিমু, মিসির আলী তো একই বিষয়। ঘুরিয়ে ফিরিয়েতো আসবেই। এর পরও অনেক বৈচিত্র। হিমু কখনো ব্যাবের সাথে, কখনো লঞ্চে, কখনো ঢাকার বাইরে। হিমুর পাঠকরা কিন্তু হিমুর মধ্যে একঘেয়েমি দেখেন না। এ বিষয়ে হুমায়ুন আহমেদ সচেতন বলেই মনে হয়। এবারের বই মেলায় লিখেছেন, মেঘের উপর সাদা বাড়ি, দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই। আচ্ছা এর আগে তিনি এভাবে কোথায় এভাবে লিখেছেন? একজন মৃত ব্যক্তির চোখে সময়টা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাংলাসাহিত্যেই এই বিষয়টি নতুন। তিনি বাদশাহ নামদার লিখেছেন। মোগল স¤্রাট হুমায়ুন আকবরকে নিয়ে লেখা। এটি তার নিজেরও পছন্দের বই। তিনি নিউ ইয়র্কেও এই বইটি উপহার দিয়েছেন, তাকে দেখতে যাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। উল্টো বিস্মিত হতে হয়, এতো উপন্যাস তিনি লিখছেন অথচ একটা ভিতরে আরেকটা ঢুকে যাচ্ছে না।
তিনি অহংকারী: এটা তার নিকট জনেরা স্বীকার করেন না। যারা তার কাছাকাছি যেতে পারেন নি, এ অভিযোগ তাদের। তিনি যে পরিমাণ জনপ্রিয় ছিলেন তাতে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব ছিল না। এটাকে অহংকারী বলা যায় না।
অরাজনৈতিক থাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে তিনি জরিয়ে পড়েন শিক্ষক রাজনীতির সাথে। ড. আহম্মেদ শরীফ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. হুমায়ুন আজাদের সাথে সাদা দল গঠনে ভূমিকা রাখেন, নির্বাচন করেন। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষক-ছাত্রদের রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ হন, এই রাজনীতির বিরোধীতা করেন। উন্নত দেশগুলোতেও রাজনীতিবীদদের বেশির ভাগ মানুষ ভাল চোখে দেখে না। ওরা মিথ্যা বলে এটা সবদেশের মানুষই জানে। দলীয় ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের মতো অন্যদেশগুলোতে নেই, ব্যতিক্রম ছাড়া।
হিমু তরুণ-তরুণীদের সর্বনাশ করছে: হিমু বোহেমিয়ান ধরনের চরিত্র। হুমায়ুন আহমেদ বলেন, হিমু এন্টি লজিক লোক। সে ভালো লাগার উপরে চলে। সমাজে এরকম লোকও প্রচুর আছে। এদের বেশিরভাই হয়তো হিমু পড়েই নি। অনেকেই হিমুকে নিজের মধ্যে লালন করে, হিমু সাজতে চায়। এবিষয়ে হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন, আমি মজা পাই। আবার দুঃখও পাই আরেক সেন্সে। আমাদের এখানে সাই-কিয়াট্রিস্টরা অনেক ওয়ার্ড ব্যবহার করে। আর সেখানে একটি ওয়ার্ড আছে হিমু ওয়ার্ড। তার মানে হিমু হইয়া পাগল হইয়া গেছে। আমার একবার যাইতে হইছিল ওদের কাছে। বাচ্চারা যারা হিমু হইয়া পাগল হইয়া গেছে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ওদের বোঝানোর জন্য যে, এতে পাগল হওয়ার কিছু নেই। আমি মনে খুবই কস্ট পেলাম এদেরকে দেখে । এরা হিমু সেজে পাগল হয়ে বসা। আমি ওদেরকে বুঝাইয়া বলতে গেলাম, শোনো এই হিমুগুলি আমার লেখা। কাজেই আমি জানি, এটা ফিকশন। এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কিছু নেই। এরা আমার দিকে এমনবাবে তাকালো যেন আমি কিছু বুঝি না। কিছু জানি না।
অপবিজ্ঞানচর্চা ও কুসংস্কার জিয়ে রাখা: সেক্সপিয়র অনেক নাটকই লিখেছেন যা বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। তার ট্যাম্পেস্ট বা ম্যাকবেথকে কি বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। হালে হ্যারি পটার কতটা বিজ্ঞানসম্মত। হ্যারি পটার জনপ্রিয়তায় বিশ্বব্যাপী শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস এবং চলচ্চিত্রে। আর আমাদের ঠাকুমার ঝুলিতো পুরোটাই ভূতপ্রেতে ভরপুর। এটাকে গাঁজাখোরি গল্পবলে উড়িয়ে দেব? শিশু-কিশোররা এ ধরণের বই পড়েই তাদের চিন্তার রাজ্য প্রসারিত করে। হুমায়ুন আহমেদের ভূত নিয়ে অনেকগুলো বই রয়েছে, শিশুমহলে খুবই জনপ্রিয়। এসব বইয়ের অনেক সংকলনও রয়েছে। তাঁর ‘নীল হাতি’ কে কি ফেলে দেবো? উপন্যাস রচনার লক্ষ্য মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক হিসাবে গড়ে তোলা নয়, এজন্য আলাদা ধরনের বই রয়েছে। ধর্মবিরোধী হওয়ার জন্যও রয়েছে আরজআলী, প্রবীর ঘোষসহ অনেক লেখকের বই; এগুলো উপন্যাস নয়। আধিভৌতিক বা পরাবাস্তব নিয়ে লিখে নোবেল বিজয়ী হয়েছেন। আর হুমায়ুনের আধিভৌতিক উপন্যাসগুলো সুখপাঠ্য এবং চিন্তার খোরাক যোগায়।
মিসির আলীর মধ্যেও যুক্তিহীনতা রয়েছে: হুমায়ুন আহমেদ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পুনর্জন্ম থাকলে মিসির আলী হয়ে ফিরতেন। কারণ লজিক। মিসির আলী লজিক্যাল লোক। আমার লজিক পছন্দ। এর মানে এই নয় তিনি পুনর্জন্ম বিশ্বাস করতেন। প্রশ্নে উত্তর দেয়ার জন্য কল্পনা করে বলা। মিসির আলী কখনো কখনো লজিক ধরতে পারে না বা তার লজিক কাজ করে না। এখানেই হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়। মনে করা হয় হুমায়ুন আহমেদ ইচ্ছা করেই শেষপর্যন্ত ব্যখ্যার বাইরের বিষয়টা রেখে দেন। তবে একারণে মিসির আলীর পাঠকদের উপভোগ কম হয় না বলেই এই সিরিজটি এতো জনপ্রিয়। আরেকটি বিষয় হুমায়ুন আহমেদ নাস্তিক বা আস্তিক নন, তিনি সংশয়বাদী মানুষ বলেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন। মিসির আলীর মতো লজিক্যাল লোক কিন্তু আমাদের সমাজেও অনেক রয়েছেন।
এই সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, হুমায়ূন আহমেদের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই তাকে নিয়ে কিছু মানুষ বিতর্ক তৈরি করেছেন। আজ তিনি বেঁচে নেই। তাঁর সাহিত্যর মৃত্যু হয় নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.