নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ কর্তাবাবু

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭

কামারগাঁয়ের কর্তাবাবু হরপ্রসাদ সেনে উঠানে চেয়ার পেতে বসে তামাক খাচ্ছিলেন। আরো কিছু জমি কেনার তার খায়েস হয়েছে। কেদারপুরের শহর আলী ও সাহেদ আলীর কিছু জমি তিনি, পরপর দুই বছরের খরায় যে আকাল লেগেছিল, তখন কিনে নিয়েছিলেন। বাকী জমিগুলোও কেনা দরকার। এজন্যই ডেকে পাঠিয়ে ছেন, এখনো না আসার কারণ ভাবছিলেন। এই ভাবনার মধ্যে শহর আলী নমস্কার কর্তাবাবু বলে তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কর্তাবাবু তার রক্ষী শম্ভুনাথ দাসকে ইশারা দিলে সে একটি ছালার বস্তা ছুড়ে দেয়। কর্তাবাবু বলে, কাটকির পো বয়।
শহর আলী বলে, কর্তাবাবু এতকাল বলতেন, হেকের পো, আইজ আবার কইলেন কাটকির পো। এইডার মানে কি আবার?
কর্তাবাবু মনে মনে ভাবে, নাটকির পো আবার মানে খুঁজস, মানে আর কি, মাইনষের পুলা নস সেটাই। কিন্তু মুখে বলে, আরে এক কথাই। মনে থাকে না সব কিছু। তা তর বউয়ের নাকি অসুখ। টাকার জন্য চিকিৎসা করাস না, এইডা কথা হইল। টাকা লাগলে বলবি। খাওয়া আর চিকিৎসাটা বন্ধ করবি না।
শহর আলীও বুঝে কাটকির পো মানে মানুষের পুলা নয়। কাচুমাচু করে বলে, বাঘড়ার মানিক ডাক্তারের কাছে নিছিলাম। বলছে ঢাকা নিতে। জমি বেচলে খামু কি?
কর্তাবাবু বলে, আরে তরা কি ফালাইন্না। জমি লাগবো না, টাকা নিস। যখন অইবো তখন ফেরত দিস। কালকেই নিয়ে যাস। আর শুনলাম তর পুলাডা নাকি লেখাপড়ায় ভাল। ভাগ্যকুলের হরেন্দ্র বাবুর স্কুলে ফাইভে ফাস্ট হইছে। অরে আমার কাছে পাঠিয়ে দিস। লেখাপড়া করাইয়া কি করবি, দেশে কী চাকরি আছে? কালই নিয়ে আছিস। আর চা খেয়ে যাস।
সে শম্ভুনাথকে ইশারা করলে, মাটির ভারে করে এক কাপ চা এনে দেয়। চা খাওয়ার আগেই কর্তাবাবু উঠে যায়।
শহর আলী বিদায় নিলে সে আবারো চেয়ারে এসে বসে। শম্ভুনাথ বলে, কর্তা কামডা কি ঠিক অইল?
হরপ্রসাদ সেন খুবই বিরক্ত হলেন। তবুও বললেন, তো র কাজ অর্ডার পালন করা। প্রশ্ন করা না। আর করবি না। অর পোলাডার মাথা ভাল। কাটকির পোলারা শিক্ষিত হলে, হিন্দুরা এদেশে থাকতে পারবে না। এজন্য ওর পোলার লেখাপড়া শেষ করলাম। আর টাকা নিলে দিবো কিভাবে? সুদ কোনও দিনই দিতে পারবে না। জমিই দিবে শেষ পর্যন্ত।
শম্ভুনাথ খুবই খুশি ৬ষথগাঙ্গে প্রণাম জানিয়ে কৃতজ্ঞতা জানায়। হরপ্রসাদ ঘরে ঢুকে তার মা সুবর্ণলতাকে বলে, শম্ভুর বউকে একটু ঘরে পাঠাও আর আমার বউকে চেচামেচি করতে না করবা। সুবর্ণলতা বলে, বাবারে এগুলোতো ধর্মে সইবো না। অরা ছেআটজাত।
হরপ্রসাদের রক্তচোখের দিকে তাকিয়ে মা নিরবে †বরিয়ে যায় তার কিছুক্ষণ পরেই শম্ভুর বউ গীতারাণী ঘরে ঢুকে নিজেই ছিটকিনি আটকিয়ে দেয়। গীতারাণী বলে, কর্তাবাবু আপনার মা আর স্ত্রী সারাদিনই দিকদারী করে, পিকপারে। একটা বিহিত করেন। আমাকে বিয়ে করে নেন।
কথাটা হরপ্রসাদের মনে ধরে। সে বলে, মা আর বউকে শিক্ষা দেয়ার জন্য হলেও তরে বিয়ে করবো। কালই করবো।
পরদিনই ব্রাহ্মণ ঠাকুরকে ডাকিয়ে গীতারাণীকে বিয়ে করে ফেলল হরপ্রসাদ। বিয়ে করার কয়েক মাস পরই সে টের পেল, গীতারাণীর প্রতি তার ভালবাসা উধাও হয়ে গেছে। এখন তার ভাললাগা গেছে শম্ভুর নতুন বউ লক্ষীরাণীর দিকে। তাই গীতার চেয়ে লক্ষীরই তার ঘরে ডাক পড়ে বেশি। বছর ঘুরতেই যেদিন গীতার পুত্র হল মাকে নির্দেশ দিল গীতার পুলাকে নিয়ে আসো।
সুবর্ণলতা বলে, ছডি ঘর থেকে এক মাসের আগে কাউকে ঘরে আনতে পারবি না। আনলে আমার মরা মুখ দেখবি। তর অনেক অনাচার সহ্য করেছি, আর না।
হরপ্রসাদ হেরে যাওয়ার পাত্র নয়। নমসূদ্রের পেটে তার সন্তান হবে, আর সে হবে তার উত্তরাধিকার তা সে মেনে নিতে পারবে না। সে নিজেই ছডি ঘরে ঢুকে। গীতারাণী পুত্রকে রেখে বাইরে গিয়েছে। পাশে রয়েছে শম্ভুর বউ লক্ষীরাণী। এক থাবা দিয়ে পুত্রকে নিয়ে ছালার বস্তায় ভরেই এক আছাড় দেয়। ফেলে দিয়ে আসে পেছনের জঙ্গলে। এইরাতে শেয়ালদের সাবাড় করতে সময় লাগবে না। ঘরে ফেরার পথে শোনতে পায় ছডি ঘর থেকে আসা কান্নার রুল । ভ্রক্ষেপহীনভাবে ঘরে ঢুকতে গিয়েই থমকে যায় হরপ্রসাদ। তার মায়ের হাতে রামদা। মায়ের এই অগ্নিমূর্তি সে কখনো দেখেনি। মা বলে, তোর অনাচার অনেক সহ্য করেছি। তোকে জন্ম দিয়ে যে অপরাধ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ব তোকে খুন করেই করবো। সুবর্ণলতার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। সে পুত্রের দিকে এগিয়ে গেলে চতুর হরপ্রসাদ সেই রাম দা ধরে ফেলে কোপ বসিয়ে দেয় মাকেই। মায়ের মৃত্যু হলে তাকে ফেলে দিয়ে আসে পায়খানায়। সকালেই প্রচার দেয়, তার মা আর সন্তানকে ভুতে মেরে ফেলেছে।
এটা যে সত্য নয় তা সবাই বুঝলো কিন্তু এতে কারও কিছু যায় আসে না। ভারত ভাগ হওয়ার আগেই এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দেশ ছাড়ে হরপ্রসাদ সেন। সেই বাড়ি দখলে নেয় শহর আলী ও তার ছেলে । শহর আলীর সেই ছেলে মহর আলীই শুধু মনে রেখেছিল এইসব ঘটনা। তার মৃত্যুতে হরপ্রসাদ সেনের সেইসব ইতিকথারও পরিসমাপ্তি ঘটল।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫

সুলতানা রহমান বলেছেন: সত্যি ঘটনা?

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০০

মুজিব রহমান বলেছেন: এরকম ঘটনা অনেক শুনেছি, কিন্তু এটা একদম গল্প।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮

মোঃ-আনারুল ইসলাম বলেছেন: গল্পকার আপনার গল্প ভালো লেগেছে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০১

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ, উৎসাহ বোধ করছি।

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এরকম অনেক হয়েছে| হিন্দু যেমন মুসলিম মেরেছে, মুসলিমও হিন্দু মেরেছে| এখানে কোন পক্ষকে কম দোষী বলা যাবে না|
গল্পের বুনন সুন্দর| সেই সময় আর প্রেক্ষাপটটা সুন্দর এঁকেছেন

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার সাথে একমত পোষণ করছি।

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: এসব গল্প আগে অনেক শুনেছি। বাস্তবতার আলোকে লেখা গল্পটা ভাল লেগেছে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ, উৎসাহ বোধ করছি।

৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

সুমন কর বলেছেন: ভালো হয়েছে।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ, উৎসাহ বোধ করছি।

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: গল্পটা সুন্দর।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ, উৎসাহ বোধ করছি।

৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭

খালেদ আহমদ বলেছেন: ভাল হয়েছে।

৮| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২২

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.