![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
তিনি তার কবিতায় আধুনিক নগরসভ্যতা তথা সর্বব্যাপী নাগরিক উৎক্ষেপের যুগে ক্ষয়িষ্ণু গ্রামীণ জীবন ও ধসে-পড়া গ্রামকে উত্থাপন করাতে অনেক সম্পাদক তাকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি তাদের বহুবার বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, গ্রাম বলতে তিনি যূথবদ্ধ আদিম মানবজীবনকে বুঝেন না বরং এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় যেসব নরনারী ধনতান্ত্রিক নগর সভ্যতার বিরুদ্ধে গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলেছেন তারা আসলে গ্রামেরই লোক। জসীমউদদীন ও জীবনানন্দের মতো তিনিও বেছে নিয়েছিলেন লোকজীবন তার উৎসমূল। আজ যারা তাকে মৌলবাদীদের কবি বলেন তারা সে-সব অর্বাচিনের মতো যারা বাঙালি হয়ে নিন্দে বাংলাকে, মুসলমান হয়ে ঘৃণা করে ইসলামকে, হিন্দু হয়ে ঘৃণা করে গীতাকে। তার বিপুল স্বশিক্ষা, সচেতনতা বোধের প্রকাশ দেখি এখানে। ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে নিয়েছেন সনেটের উপকরণ। অতীতকে বাদ দিয়ে কোন কিছু নয় প্রকাশ করেছেন সেটাই।
আবাল্য শুনেছি মেয়ে বাংলাদেশ জ্ঞানীর আঁতুড়
অধীর বৃষ্টির মাঝে জন্ম নেন শত মহীরূহ
জ্ঞানের প্রকোষ্ঠে দেখো, ঝোলে আজ বিষণ্ন বাদুড়
অতীতে বিশ্বাস রাখা হে সুশীলা, কেমন দুরূহ?
কী করে মানবো বলো, শ্রীজ্ঞানের জন্মভূমি এই
শীলভদ্র নিয়েছিলো নিঃশ্বাসের প্রথম বাতাস,
অতীতকে বাদ দিলে আজ তার কোনো কিছু নেই
বিদ্যালয়ে কেশে ওঠে গুটিকয় সিনানথ্রোপাস।
সোনালি কাবিন-১১
সোনালি কাবিন নামের সনেটগুলোর সাথে বাংলা সাহিত্যে কোন কিছুর তুলনা করা চলে না। সবগুলো সনেটই অনবদ্য। মাইকেল মুধুসূদন দত্তের সনেটগুলোর মতো শ্লীল নয় বলে মনে হতে পারে। তবে আল মাহমুদের ভাষা নতুন, ধারা নতুন।
চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাঁজ
উগোল মাছের মাংস তুপ্ত হোক তোমার কাদায়,
ঠোঁটের এ লাক্ষারসে সিক্ত করে নর্ম কারুকাজ
দ্রুত ডুবে যাই এসো ঘূর্ণ্যমান রক্তের ধাঁধায়।
সোনালি কাবিন-০৩
অনেকগুলো কবিতাতেই নারীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ভালবাসার সলাজ প্রকাশ নয়। ভালবাসার মূল লক্ষ্য যে প্লেটনিক কিছু নয়, সবটাই ফ্রয়েডীয় তা তিনি সনেটে স্পষ্ট প্রকাশ করেছেন।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা
সোনালি কাবিন-০১
আল মাহমুদ একদা সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, দৈনিক গণকণ্ঠের সম্পাদক ছিলেন এবং এসএসসি পাশ করেননি নজরুলের মতো তা আজ বিশ্বাস করা সহজ নয় কিন' সবই সত্য। যারা তাঁকে অস্বীকার করতে চান তারা তাঁর লোক লোকান্তর, কালের কলস এবং সোনালি কাবিন সনেটগুচ্ছসহ কাব্যগ্রন'টি অস্বীকার করতে চান। এটা যে সোনার পাথরবাটি তা ওরা বুঝে না। তার সোনালি কাবিন শুধু বস'বাদী, প্রেম আর কামেই সীমাবদ্ধ নয়, তার সোনালী কাবিনের ১৪টি সনেটে রয়েছে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে দৃঢ় উচ্চারণ। ধর্মকে করতে চেয়েছেন ফসলের সুষম বণ্টন।
শ্রমিক সাম্যের মন্ত্রে কিরাতের উঠিয়েছে হাত
হিয়েনসাঙের দেশে শান্তি নামে দেখো প্রিয়তমা,
এশিয়ায় যারা আনে কর্মজীবী সাম্যের দাওয়াত
তাদের পোশাকে এসো এঁটে দিই বীরের তকোমা।
আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,
পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণির উচ্ছেদ,
এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ
যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।
তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী
খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ,
শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি
তারো বেশি ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ,
সলাজ সাহস নিয়ে ধরে আছি পটময় শাড়ি
সুকণ্ঠি কবুল করো, এই অধমই তোমার মরদ।
সোনালি কাবিন-১০
এই চৌদ্দটি সনেটের সাথে কার তুলনা করবো? বিনয় মজুমদারের ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন'র ৭৭টি কবিতার সাথে তুলনা করা যায় অথবা শামসুর রাহমানের স্বাধীনতা নিয়ে লেখা কবিতাগুলোর সাথে। যার সাথেই তুলনা করি না কেন- জীবনানন্দের নৈসর্গিক কবিতাগুলো কিংবা নজরুলের বিদ্রোহীসহ অগ্নিবীণা। শুধু বলতে পারি, আল মাহমুদকে রাখতে হবে ওসবের কাতারেই। তাকে অস্বীকার করার সাথে সাথে অস্বীকার করতে হবে বাংলা সাহিত্যকে। বর্তমান জীবীতদের মধ্যে আল মাহমুদই শ্রেষ্ঠ, আল মাহমুদই প্রধান কবি।
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
মুজিব রহমান বলেছেন: তাকে কবি হিসাবেই চিনতে চাই। তাঁর কিছু ছোট গল্প পড়েছি। এই জীবনে বহু বাজে উপন্যাস পড়েছি, আর পরতে চাই না। তাঁর প্রথম তিনটি কাব্য গ্রন্থ দিয়েই তাঁকে বিবেচনা করতে চাই। সে তাঁর মত বদলেছে সেটা তাঁর বিষয়। এতে সোনালি কাবিনের গুরুত্ব কমে যায় নি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আল মাহমুদের উপন্যাসগুলো পড়ে তার প্রতি যে সম্মান থাকা দরকার তা কমে গেছে। তার উপন্যাস সমগ্র লাইব্রেরি থেকে এনে পড়েছিলাম। কমিউনিস্ট পচলে যে দুর্গন্ধ ছড়ায় তার উতকৃষ্ট প্রমাণ আল মাহমুদ।
তার কিছু গল্প অসাধারণ মানতেই হবে। যেমন জলবেশ্যা। পানকউড়ির রক্ত সত্যিই অসাধারণ এক গল্পগ্রন্থ। পানকউড়ি বানানটা ঠিক হল না। ফোন থেকে কমেণ্ট করছি।
কিন্তু বর্তমানে তার অবস্থান নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট নন।
সোনালি কাবিনই তার শ্রেষ্ঠ ফসল।
আপনাকে তার উপন্যাসগুলো পড়তে রিকমান্ড করছি।