নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শরৎচন্দ্র ও হুমায়ূন আহমেদ

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৫

সাম্প্রতিক কয়েক দশক যাবৎ বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদকে নিয়েই এই আলোচনা। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুপরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়, পশ্চিমবঙ্গের লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, হুমায়ূণ শরৎচন্দ্রকে জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছেন। এতে অবশ্য মিমাংশিত হয়নি বরং আলোচনা আরো বেড়েছে। অনেকে দুই শতাব্দীর এই দুই মহান লেখককে নিয়ে জনপ্রিয়তার তুলনা করা যায়না বলেও মত দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদ এর জনপ্রিয়তা তার জীবীতকালে ছিলেন কিংবদন্তিতূল্য। বাংলা সাহিত্যে এতোটা জনপ্রিয় হতে আর কাউকেই দেখা যায়নি। কিন' শরৎচন্দ্র তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন শতবর্ষব্যাপী। তাই বিতর্ক থেমে যায়নি।
শরৎচন্দ্রের জন্ম ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে। হুমায়ূন আহমদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে, শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর ১০ বছর পরে। শরৎচন্দ্র হুমায়ূনের চেয়ে ৭২ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছেন। শুধু সময়ের মধ্যেই নয়, পার্থক্য রয়েছে আরো অনেক দিকে। শরৎচন্দ্র জন্মেছেন দারিদ্রতার মধ্যে। জীবন ধারণ ও লেখাপড়ার জন্য ২০ বছর পর্যন্ত থেকেছেন মামাবাড়ি ভাগলপুরে। হুমায়ূন জন্মেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার শিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা এবং আর্থিক সঙ্গতি ছিল। তিনিও দুই বছর মামা বাড়িতে ছিলেন, মায়ের অসুস'তার কারণে। শরৎচন্দ্র বার্মা গিয়ে সরকারী কেরাণীর চাকুরিতে যোগ দেন এবং কিছুদিন পরে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে লেখালেখিকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। হুমায়ূনের সাথে মিলে যায়। সেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং একসময় চাকুরি ছেড়ে দিয়ে লেখালেখিকেই পেশা হিসাবে নেন। তারা দুজনেই দুটি করে বিয়ে করেছেন। শরৎচন্দ্রের প্রথম স্ত্রী শান্তি দেবী বার্মাতেই প্লেগে মারা গেলে তিনি কলকতায় ফিরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন হিরন্ময়ী দেবী (মুখ্যদা)কে। আর হুমায়ূন- প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান সুস'্য থাকা অবস'ায়, ছোট মেয়ের বান্ধবী মেহের আফরোজ শাওনের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেন। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করেন এবং পরবর্তীতে তালাক দিয়ে শাওনকে বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে একটি বড় মিল হল, দুজনেই ষাটোর্ধ বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শরৎচন্দ্র ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ৬১ বছর বয়সে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মারা যান। হুমায়ূন আহমেদ গত ১৯ জুলাই বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার সংক্রমনের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতায় নিউইয়র্কে ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হল, তারা দুজনই তাদের সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ছিলেন।
শরৎচন্দ্রের জীবনকাল পুরোটাই বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথের জীবনকালের মধ্যে। হুমায়ূন এর সময় প্রধান কবি ছিলেন শামসুর রাহমান। ফলে তাদের তুলনাটা শুধুই কথাসাহিত্যে করা যায়। বাংলা সাহিত্যের প্রধান প্রধান উপন্যাসগুলো তারা কেউই লিখেন নি। সেক্ষেত্রে তুলনাটা আবার শুধুই কথাসাহিত্যের জনপ্রিয়তার মধ্যে করতে হয়।
হুমায়ূন আহমেদের রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩২২টি আর শরৎচন্দ্রের মোট রচনার সংখ্যা এর এক অষ্টমাংশেরও কম। হুমায়ূনের উপন্যাস দুই শতাধীক। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস এর এক-দশমাংশ মাত্র। হুমায়ূন প্রথম লেখেন উপন্যাস- ‘নন্দিত নরকে’ ১৯৭২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে আর শরৎ লেখেন ১৯০৪ সালে ছোটগল্প ‘মন্দির’। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮। প্রথম লেখায় দুজনই আলোচিত হন। মন্দির লিখে শরৎচন্দ্র পুরস্কারও জিতে নেন। ‘নন্দিত নরক’কে অনেকে হুমায়ূনের সেরা লেখা হিসাবে মনে করেন। শরৎচন্দ্র পিতার মৃত্যুর পর ১৯০৩ সালে কলেজে পড়া বন্ধ করে বার্মা চলে যান। তবে এরও আগে তিনি ১৯০১ সালে দেবদাস লিখেন যদিও এটি প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। এই হিসাবে তাঁর প্রথম লেখাটিও সেরা লেখা।
শরৎচন্দ্রের জনপ্রিয়তা দুই বাংলাতেই সমান। এছাড়া ত্রিপুরাসহ বাংলাভাষাভাষি সর্বত্র তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। হুমায়ূনের পিছিয়ে পড়া এখানেই। হুমায়ূণ বাংলাদেশে এবং বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশিদের নিকটই তুমুল জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গে তার জনপ্রিয়তাটা অনেক কম। তাঁর মৃত্যুর সংবাদও পশ্চিমবঙ্গের কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। যদিও পশ্চিমবঙ্গের সেরা সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় শারদীয় সংখ্যায় তার লেখা উপন্যাস পরপর আট বছর ছাপানো হয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয়তায় ওখানকার প্রধান লেখকদের ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। এপার বাংলায় একসময় ওপার বাংলার ঔপন্যাসিকরাই প্রভাব বিস্তার করতেন। হুমায়ূন সেই ধারাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন এপার বাংলা শুধুই হুমায়ূনময়।
শরৎচন্দ্র শত বছর যাবৎ তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমান দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক লেখকই মাঝেমধ্যে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হন, কদিন আলোচনায় থেকে হারিয়ে যান। যাযাবরের ‘দৃষ্টিপাত’, বেদুইন সামাদের ‘বেলাশেষে’, মৈত্রীয় দেবীর ‘নহন্যতে’ যে জনপ্রিয়তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল তা থাকেনি। শতবছর পরে হুমায়ূন জনপ্রিয় থাকবেন কিনা এটা এখনই কোনভাবে বলা যায় না। দেবদাস লেখা হয়েছে একশ এগারো বছর আগে। দেবদাস এখনও ট্রেডমার্ক। ব্যর্থপ্রেমিকরা দেবদাস সেজে এখনো তৃপ্তি বোধ করেন। কারো বেশভূষা দেবদাসের মতো দেখলেই মানুষ বলেন, দেবদাস হয়েছে। দেবদাস নামে রয়েছে একটি মাত্র উপন্যাস। অনেকে হুমায়ূনের ‘হিমু’ চরিত্রটির দীর্ঘজীবীতার কথা বলেন। ‘হিমু’ একটি সিরিজ উপন্যাসের চরিত্র। এই সিরিজে যত উপন্যাস রয়েছে তার সংখ্যা শরৎচন্দ্রের মোট উপন্যাসের চেয়েও বেশি। হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে, স্যান্ডেল পায় দেয় না, বোহেমিয়ান জীবন যাপন করে। তাঁর রসবোধ অসাধারণ এবং ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় প্রখর ও ব্যাখ্যাতিত। হিমুকে হলুদবেশে বেশ কয়েক বছর যাবৎই খুঁজে পাওয়া যায় বইমেলা এবং অন্যান্য স'ানে। হিমু সাধারণ মানুষের নিকট খুব বেশি মুর্তিমান হয়ে এখনো উঠেনি। সম্ভাবনা রয়েছে উঠার। কিন' তাঁর নিশ্চয়তা নেই। দেবদাস এখানে অনন্য। বাংলা সাহিত্যে ‘দস্যুবনহুর’সহ অনেক বহুল পঠিত ও জনপ্রিয় চরিত্র অনেকেই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির পরবর্তী যুগেই আর এগুলো জনপ্রিয় থাকেনি। তাই এখানে তুলনাটা করতে হবে, নিশ্চয়তার সাথে সম্ভাবনার। তবে সেই সম্ভাবনা নিশ্চয়তায় পরিণত হওয়ার মতোই। কারণ হুমায়ূন বাংলা সাহিত্যের ভাষাই বদলে দিয়েছেন। এই নতুন সূচনা বন্ধ হওয়ার নয়। শুধু হিমু নয়, মিসির আলি, শুভ্রসহ হুমায়ূনের অনেকগুলো চরিত্র তুমুল জনপ্রিয়। তাঁর এতো বই হওয়া সত্ত্বেও পাঠকরা বছর জুড়েই অপেক্ষায় থাকতো তাঁর নতুন বইয়ের জন্য। এতো জনপ্রিয়তা জীবীত শরৎচন্দ্র পাননি।
হরলাল রায়ের ব্যাকরণ বইতে একটি রচনা ছিল, ‘আমার প্রিয় উপন্যাস’। শরৎচন্দ্রের ‘দত্তা’ নিয়ে রচনাটি লেখা হয়েছিল। দত্তা আমারও প্রিয় উপন্যাসগুলোর একটি। কদিন আগে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। তার কক্ষের ছোট পাঠাগারটির প্রায় সব বইই পড়া। হুমায়ূন আহমেদের বই বেশি। পড়ার জন্য বেছে নিলাম সেই দত্তাকেই। বইটি এতোই ভাললাগতো যে, এর আগেও ২৫/৩০ বার পড়েছি। বইটি শুরু করেই মনে হল, প্রধান শিক্ষক ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে না আসলেই ভাল হয়। বইটি পড়ে শেষ করার পরই প্রধান শিক্ষক এলেন। হুমায়ূনের বইয়ের ক্ষেত্রেও এরকম হয়েছে। তখন নটরডেম কলেজে পড়ি। বায়লজি পরিক্ষার আগে হুমায়ূনের কয়েকটি বই হাতে এলো। পাঠ্যবই বাদ রেখে বইগুলো পড়ে শেষ করলাম। কিন' হুমায়ূনের কোন বইকি ৩/৪ বার পড়া সম্ভব? পড়া হয়নি, হুমায়ূন ভক্ত এমন কারো কথা শুনিনি। হুমায়ূন জনপ্রিয় হওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের নিকট শরৎচন্দ্রই প্রধান জনপ্রিয় ছিলেন। শরৎচন্দ্রের বই এখনকার তরুণরাও পড়ে। একজন তরুণ হয়তো শরৎচন্দ্রের একটি বই পড়ার সাথে হুমায়ূনের ২০টি বই পড়ে। হুমায়ূনের বইয়ের সংখ্যা অনেক বেশি বলেই এটা হয়নি। এখন তিনি সাম্প্রতিক, প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক। হুমায়ূনের ভাষা অধিকতর গতিশীল। পড়তে গিয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়না, রসময় এবং মজার। অনেকে বলেন হুমায়ূনে লেখায় গল্প প্রধান। আসলে হুমায়ূনের লেখায় কথা প্রধান। দৃশ্যের বর্ণনার চেয়ে পাত্র-পাত্রীদের কথপোকথনই প্রধান। কথপোকথন আকর্ষণীয়। হুমায়ূনের গল্পে একটি গল্পের সূচনা এবং সমাপ্তির পূর্ণতা অনেক সময় থাকে না। তিনি কথা দিয়েই পাঠককে ধরে রাখেন। শরৎচন্দ্রের মূল আকর্ষণ গল্প। দু‘জনেরই ছিল উপস'াপনার জাদুকরি কৌশল। শরৎচন্দ্র গ্রামীণ বাঙালি সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রায়ই কুসংস্কার এবং নিপিড়নের বিরুদ্ধে লিখেছেন। হুমায়ূন রাজনৈতিক এবং সামাজিক দায় এড়িয়ে গেছেন। হুমায়ূন তার সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দিতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণভাবেই সফল। তার বই পড়ে, নাটক-সিনেমা দেখে মানুষ আনন্দ পেয়েছে। আজকের ছেলেমেয়েরা জোছনা দেখতে চায়, বৃষ্টিতে ভিজতে চায়, হিমু হতে চায়- হলুদ পাঞ্জাবি পরে, মিছির আলীর মতো লজিক খুঁজে হুমায়ূন পড়েই। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন সমকালীন সবাইকে। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন, যাকে একরূপ জাদুবাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। তার গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তার বর্ণনা পরিমিত। সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তার ছিল। শরৎচন্দ্রের ভাষাও সহজ, সরল এবং সাবলিল।
হুমায়ূন আহমেদের বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা তৈরির ক্ষেত্রে বইমেলা এবং পত্রপত্রিকা ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বিগত বছরগুলোতে প্রতিটি বইমেলাতেই হুমায়ূন মধ্যমণি হয়ে থাকতেন। তাকে নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলতেই থাকতো। নাটক-চলচ্চিত্রও তাকে পাঠক-পরিচিতি দিয়েছে। পাঠকের কাছে তিনি অনেক সহজেই পৌঁছাতে পেরেছেন। আবার তাঁর কারণেই বইমেলা জমজমাট হয়েছে। পাঠকদের লাইনধরে তাঁর বই কিনতে দেখা গেছে। শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রে এই সুযোগ ছিলনা। পাঠকই তাঁকে অন্য পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তৈরি হয়েছিল শরৎসাহিত্য বলে আলাদা ধরনের সাহিত্যের।
হুমায়ূনের ছোটগল্প উপন্যাসের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয়। ছোটগল্পে তিনি এক নিপুণ শিল্পী। তাঁর অনেক ছোটগল্প নিয়ে টিভি নাটক হয়েছে। শরৎচন্দ্রেরও ছোট ও বড় গল্প জনপ্রিয়। তাঁর গল্প পাঠ্যপুস্তকে স'ান পেয়েছে। ছোটগল্প মহেশকে নিয়ে জনপ্রিয় গান রচিত হয়েছে। নাটক সিনেমাও হয়েছে। হুমায়ূণ নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি নিজেই নিজের উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এগুলো হল- আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবন মেঘের দিনে, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল, নয় নাম্বার বিপদ সংকেত ও ঘেটুপুত্র কমলা। চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে আবারো হলমুখী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্ছিত্র। এগুলো হল ‘দূরত্ব’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘নিরন্তর’ ‘সাজঘর’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, শঙ্খনীল কারাগার, প্রিয়তমেষু।
তিনি লিখেন টেলিভিশনের অসামান্য সাড়াজাগানো জনপ্রিয় কয়েকটি ধারাবাহিক- ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’ ‘অয়োময়’ ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘আজ রবিবার’। এর বাইরেও তিনি অসংখ্য টিভি নাটক রচনা করেছেন এবং নিজে নির্মাণও করেছেন।
শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ও গল্প থেকে ৫০টির বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এক দেবদাসকে নিয়েই ভারত বাংলাদেশে ৮/৯টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হিন্দি, বাংলা, তেলেগু, তামিলসহ বিভিন্ন ভাষায় তাঁর প্রধান উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তাঁর সব চলচ্চিত্রই বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত। হিন্দি ভাষায় শাহরুখ খান, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ও মাধুরী দিক্ষিত অভিনীত ‘দেবদাস’ বিপুল ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র। ভারতে সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে এটি। এর সাথে হুমায়ূনের চলচ্চিত্রের তুলনা হয়না। পশ্চিমবঙ্গে সুচিত্রা সেন ও সৌমিত্র চ্যাটার্জির অভিনয়ে ‘দত্তা’ নির্মিত হয়। বাংলাদেশেও শরৎচন্দ্রের দেবদাসের তিনটি ভার্সন ছাড়াও দত্তা(বিজয়া) নির্মিত হয়। দেবদাস চরিত্রে বুলবুল আহমেদের স্মরণীয় অভিনয় এখনো মানুষ মনে রেখেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বহুভাষায় পরিণীতা, বিন্দুর ছেলে, শোভদা, বিরাজবৌ ইত্যাদি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।
বর্তমান সময়ে অবশ্যই শরৎচন্দ্রের চেয়ে হুমায়ূন বেশি পঠিত হয়। এটাই দুজনের তুলনার একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। শরৎচন্দ্রের সময়ে তিনি ঘরে ঘরে জনপ্রিয় ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা সেই সময়ের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। এই দুটিকে মানদণ্ড ধরলেও হুমায়ূন বেশি জনপ্রিয়। শরৎচন্দ্রের মতো শতাধিক বছর হুমায়ূণ তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে কিনা সেটাও বড় বিষয়। এটা দুজনের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ধরলে, বলতে হবে হিসাবের সময় এখনো আসেনি। হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা সাময়িক উত্তেজনা না অতলান্তিক গভীর তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। বাংলাদেশে হুমায়ূনসাহিত্য কিছুকাল আগেও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। এখনো ভাটা কিনা বলার সময় শেষ হয়নি, তাতে শরৎসাহিত্যের শতবর্ষের জনপ্রিয়তাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৪

জাহী তানভি বলেছেন: দারুন পোস্ট ।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৬

শায়মা বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা।:)

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৭

রাজু বলেছেন: nice

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুমায়ূন জনপ্রিয়তায় শরতচন্দ্রকে ছাড়িয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে। আমার মতে, হুমায়ুনের যত বই এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, আর পাঁচ ভাগের এক ভাগও শরত এক শতাব্দী ধরে বিক্রি হয়নি।
অবশ্য মানের দিক থেকে বললে, হুমায়ূন একজন নিম্ন মানের লেখক, শরত অনেক উপরে তার চেয়ে। অনেক উপরে। তাই তুলনাটা হয় না

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫

মুজিব রহমান বলেছেন: হুমায়ূনের বই অনেক বেশি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.