নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিভারগড এক অনন্য থ্রিলার

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০১

বিশ্বসাহিত্যের অনেক বইই মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার লেখক উইলবার স্মিথ এর ‘রিভার গড’ পড়ে বিমোহিত ও বিস্মিত হয়েছিলাম অনেক বেশি। ‘রিভার গড’ উপন্যাসের কয়েক পাতা পড়ার পড়েই মনে হলো অসাধারণ বই। এটা পড়ে শেষ করতেই হবে। কর্মব্যস' থাকায় একটানা পড়া সম্ভব নয়। ভাবলাম ৭দিন লাগবে ৪১৫পাতার বইটি পড়ে শেষ করতে। মনে হলো এই ৭টি দিন বেঁচে থাকা প্রয়োজন। তাই স্রস্টার কাছে আয়ু কামনা করলাম ৭দিনের। এর আগে মারা গেলে একটি বিরাট অতৃপ্তি নিয়ে মারা যাবো। বেঁচে থেকে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করছি।
রিভার গড এর লেখক উইলবার স্মিথ আফ্রিকান। জন্ম ১৯৩৩ সালে জাম্বিয়ায়। অবশ্য জাম্বিয়ার তখনকার নাম ছিল রোডেশিয়া। জীবনের সবটুকু সময় কাটিয়েছেন আফ্রিকায়। আফ্রিকার প্রতি তাঁর অনুরাগ গভীর। লেখাপড়া করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রথম বই ‘হোয়েন দ্য লায়ন ঢিডস’ বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। শুরুতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তিনি আফ্রিকার সৌন্দর্যতা, বন্যতা, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা, রাজনীতি এবং ভালবাসা ফুটিয়ে তুলেন তাঁর উপন্যাসের বিশাল ক্যানভাসে। বই লিখেছেন ত্রিশটির বেশি। সবগুলোই বেস্টসেলার। আফ্রিকার বন্যপ্রাণী এবং প্রকৃতি বিষয়ে তাঁর রয়েছে অগাধ জ্ঞান। তাঁর সাফারীর বর্ণনা মনোমুগ্ধকর। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের টেবল মাউন্টেন-এ বসাবাস করতেন।
উপন্যাসটির ৪১৩ পৃষ্ঠা পড়ে শেষ করে মুগ্ধ হয়ে দেখবেন আরেক বিস্ময়। এর পরের দুই পাতা লেখকের বক্তব্য-
‘১৯৮৮ সালের ৫ জানুয়ারি, মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডুরেইদ-ইবনে-আল সিমা, নীলনদের পশ্চিশ তীরে ভ্যালি অব নোবলস এ একটি প্রাচীন সমাধি খুঁড়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। সমাধির যে গলিপথ মূল সমাধি প্রকোষ্ঠে চলে গিয়েছিল, তার দেয়াল এবং ছাদের অপূব চিত্রকর্ম দেখে ড. ডুরেইদ-এর তাক লেগে গিয়েছিলো। চিরজীবন ভাস্কর্য এবং দেয়ালচিত্র নিয়ে কাজ করেও এতো অসাধারণ এবং নিখুঁত শিল্পকর্মের দেখা পাননি তিনি এর আগে। পরে তিনি আমাকে জানিয়েছেন, তৎক্ষণাৎ তাঁর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিস্কারের বোধ জেগেছিলো। দেয়ালে আঁকা হায়ারোগ্লিফিকস- এর মধ্যে রাজকীয় বর্ণমালায় উল্লেখ ছিলো তখনো পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত এক মিশরীয় রাণীর কথা। ড. সিমা সাফল্যের সাথে সেই সমাধির নির্মাণ-তারিখ উদ্ধার কতে সক্ষম হয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৮০। সমাধি আবিস্কারের এক বছর পরে দেয়ালের হায়ারোগ্লিফিকস-এর ছবি তোলার সময় দেয়ালের এক অংশের প্লাস্টার ধ্বসে পড়ে। লুকানো ছোট্ট একটা প্রকোষ্ঠের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সেই প্রকোষ্ঠের ভেতরে দশটি অ্যালাবাস্টারের ভাস খুঁজে পান। তার ভেতরে সংরক্ষিত স্ক্রোলগুলো অনুবাদের সময় ড. সিমা আমার সাহায্য কামনা করেন। কায়রো জাদুঘর এবং বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ঈজিপ্টলজিস্টদের সহায়তায় পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিলো মূল স্ক্রোলগুলোর।
বর্তমান সময়ের উপযোগী করে সেই স্ক্রোলগুলোর কাহিনী নতুন করে বলার জন্যে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন ড. সিমা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাব্যিক স্বাধীনতা নিয়েছি আমি, উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, দূরত্ব এবং ওজনের হিসেব উল্লেখের সময় বর্তমানে প্রচলিত মাপ ব্যবহার করেছি বিভিন্ন স'ানে। টাইটা‘র ব্যবহার না করা কিছু শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন- বর্বর, পতিতা, যৌতুক। তবে আমার ধারণা টাইটা‘র শব্দভাণ্ডার বড় হলে সে নিজেও এই শব্দগুলো ব্যবহার করতো। অবাক লাগে ভাবলে, মানুষের আবেগ এবং অনুপ্রেরণার উৎস এতো হাজার বছরেও একটুও পরিবর্তন হয়নি। হয়তো আজকের দিন পর্যন্তও আবিসিনিয়া‘র পর্বতে, নীলনদের উৎসমুখের সন্নিকটে কোনো স'ানে, ফারাও মামোসের অলঙ্ঘিত সমাধিতে শায়িত আছে ট্যানাসের মমিকৃত দেহ।’
এখন কি মনে হবে? এতক্ষণ ৪ হাজার বছর আগের যে মনোমুগ্ধকর গল্পের বর্ণনা পড়লেন তা গল্প নয় ইতিহাস। লেখকের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করিনি। যা জানি তা হল, হায়ারোগ্লিফের শুরু ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। ফারাও মেনেসের রাজত্বকালে এ লিপির সূচনা হয়। এ লিখন পদ্ধতিতে ছিল প্রায় ২ হাজার ধরনের প্রতীক। এ ভাষার সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১৭৯৯ সালের ১৫ জুলাই মিশরের বন্দরনগর রাশিদে উন্মোচিত হলো একটি শিলাখণ্ড। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তার শাশিদ শহর দখলে নিয়ে জুলিয়ান দুর্গ সংস্কার করাতে গেলে বেরিয়ে আসে একটি শিলাখণ্ড। রোসেটা স্টোন নামে পরিচিত এই শিলাখণ্ডের কল্যাণেই হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়। এ লিপি ফারাওদের রাজত্বকালের নানা ঘটনা, যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনি লিখে রাখতেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি গল্প না ইতিহাস এই বিতর্কের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি একটি অনন্য উপন্যাস। পুরো উপন্যাসটি টাইটা নামের এক ক্রিতদাসের মুখে বয়ান করা হয়েছে। টাইটা একাধারে দার্শনিক, কবি, চিকিৎসক, চিত্রশিল্পী, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং আরো বহুকিছু। এইসব গুণই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, বিভিন্ন প্রতিকূলতায়। তার প্রেমিকাকে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্রেমিক টাইটাকে করা হয়েছিল খোজা। টাইটা অপুরুষ হলেও নারী দেহ আস্বাদনের পরেই খোজা করার ছুড়ি চালানো হয়েছিল তার উপর। তার প্রথম মালিক- ইনটেফ এর নির্দেশেই হয়েছিল। ইনটেফ একাধারে গে, দস্যু, লোভী, ষড়যন্ত্রী এবং পুরো কাহিনীর নায়িকা লসট্রিস এর পিতা। লসট্রিস সৌন্দর্যতায় তুলনাহীন, সাহসী এবং গুণী। লসট্রিসকে ভালবাসে দুই জন। টাইটার ভালবাসা অন্যরকম। টাইটা খোজা। তার ভালবাসা শরীর কেন্দ্রীক হওয়ার উপায় নেই। লসট্রিসের শৈশব থেকেই টাইটা তাকে শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন এবং ভালবেসেছেন। লসট্রিসকে উন্মাদের মতো ভালবাসতো যুদ্ধা ট্যানাস। ইনটেফ ট্যানাসের পিতাকেও হত্যা করেছিল। কিন' অভিনয় করেছিল বন্ধুর মতো। টাইটা ওদের ভালবাসার পথ সবসময় সুগম করেছে। ফারাও এর কোন সন্তান ছিল না। টাইটা ফারাওকে পুত্র জন্মদানের উপযোগী যে নারীর বর্ণনা দিয়েছির। ঘটনাক্রমে ফারাও-এর চোখে সেই নারী হিসাবে ধরা পরে লসট্রিস। টাইটা অনেক কৌশল করেও লসট্রিসকে রানী হওয়া রোধ করতে পারেনি। কিন' লসট্রিস এবং ট্যানাসের মধ্যে ভালবাসা এবং শারীরিক সম্পর্ক স'াপন করিয়েছেন নিপুণ দক্ষতায়। ফলে ট্যানাস এর ঔরসজাত সন্তান মেমনন এর পিতা হন ফারাও। হিকসস বাহিনীর হাতে মিশরের ফারাও পরাজিত এবং নিহত হয়। মিশর ছেড়ে ট্যানাস-লসট্রিস-টাইটাদের পালিয়ে যেতে হয় দক্ষিণে নীলনদের উৎস অভিমুখে জলপ্রপাত পেরিয়ে। ট্যানাস-লসট্রিসের মিলনে আরো দুটি কন্যার জন্ম হলেও রানীকে কৌশলে রক্ষা করে টাইটা। এক যুদ্ধে ট্যানাস মারা গেলে টাইটা কৌশল করে ফারাও লাশের বদলে শবাধারে রেখে দেয় ট্যানাসের লাশ। এভাবেই ফারাও মামোসের অলঙ্ঘিত সমাধিতে শায়িত থাকে ট্যানাসেস মমিকৃত দেহ। মেমনন টাইটাদের রণকৌশলে মিশর থেকে পালাতে বাধ্য হয় হিকসস বাহিনী। পুরো কাহিনী জুড়েই রয়েছে টাইটার বুদ্ধিমত্তার স্ফূরণ, ট্যানাসের তরবারীর ঝলকানী এবং লসট্রিসের সৌন্দর্যতা। আর ফারাও-র আমলের মিশরকে জীবন্ত করেছেন লেখক। চার হাজার বছরের আগের মিশরীয় সভ্যতা, সেই সময়ের মানুষের জীবন, বোধ, দুবৃত্তের বিরুদ্ধে লড়াই, যুদ্ধকৌশল কিংবা লোভ, ষড়যন্ত্র এবং প্রেমের টানটান বর্ণনা ভেসে থাকবে চোখের সামনে। আপনার চোখের সামনে দিয়েই এগিয়ে যাবে প্রাচীন মিশরের এই ভালবাসা আর যুদ্ধের উপাখ্যান। একপাতা পড়লেই এই উপন্যাস ছেড়ে উঠা সম্ভব নয়। উপন্যাস শেষ করলেও কখনোই আপনার মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যাবে না টাইটা-লসট্রিস- ট্যানাস-মেমনন। আর শেষ হবে না মুগ্ধতা, কি করে লেখা যায় ‘রিভার গড’। এতো বই পড়া না, যেন ফারাও-র সাম্রাজে ঘুরে বেড়ানো। একি সত্যি! একি ইতিহাস! নাকি কিংবদন্তি, নাকি সব কিছু মিলেমিশে একাকার অনন্য-অসাধারণ এবং এক নিখুঁত বর্ণনাশৈলীর উপন্যাস।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: এই বই এর বাংলা অনুবাদ আছে ভাই?

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭

মুজিব রহমান বলেছেন: আমি বাংলা অনুবাদই পড়েছি

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩২

নীল আকাশ বলেছেন: A time to die - এ টাইম টু ডাই
The seventh Scroll - দ্য সেভেন্থ স্ক্রোল
The Quest - দ্য কোয়েস্ট
এই সিরিজ টা কয়েকটা পর্বে শেষ হয়েছে। বাকি গুলি পরে দেখেন। সব গুলিই দারুন । আমি এক কথায় ভক্ত হয়ে গেছি উলবার স্মীথ্ের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.