নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাভ জিহাদঃ শুধুই ভোটের রাজনীতি!

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৬


শুধু ভিন্ন ধর্মের কারণে প্রাপ্ত বয়ষ্ক দুজন মানুষকে জীবনসঙ্গি পছন্দের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নামই ‘লাভ-জিহাদ’। সবসময়ই প্রেম ভালবাসাকে কঠিন করে দিতে চায় ধর্মান্ধ শক্তি। তবে এর একতরফা শিকার হচ্ছে মুসলিম পুরুষরা। আশার কথা এতো বাঁধার মধ্যেও দিনকে দিন আন্তঃবিয়ের সংখ্যা বাড়ছে। ধর্মীয় বিদ্বেষ কমিয়ে এক মানবিক সমাজ গঠনের জন্য এটা একটি ভাল পথ। অথচ হিন্দুত্ববাদী বিজেপি রাজনৈতিক কারণেই লাভ-জিহাদের ধুয়া তুলে ধর্মান্ধ ও পারস্পরিক ঘৃণার সমাজ ব্যবস্থা কায়েম রাখতে চায়।

ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ভালবেসে বিয়ে করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন এমন মানুষ সাহায্য পাওয়ার আশায় আসেন ধানাক নামক একটি এনজিওর কাছে। এনজিওটির প্রতিষ্ঠাতা আসিফ ইকবাল বিবিসিকে বলেন, ‘হিন্দু পরিবার বলুন আর মুসলিম পরিবারই বলুন তারা কেউই চায় না তাদের সন্তানরা অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করুক। বিয়ে ঠেকাতে পরিবারগুলো যে কোনো পন্থা নিতে প্রস্তুত। এমনকি তারা নিজেদের মেয়ের দুর্নাম ছড়াতেও পিছপা হয় না, যাতে মেয়ের প্রেমিক পিছিয়ে যায়। তথাকথিত এই লাভ-জিহাদ’ এই ধরনের আন্তঃধর্ম প্রেম আটকানোর আরেক চেষ্টা’।কট্টর হিন্দু দলগুলো লাভ-জিহাদ তত্ত্ব ছড়িয়ে দিয়ে বলছে, ‘মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্য প্রেমের ছল দেখিয়ে তাদের বিয়ে করে’। কেউ কেউ আরো অভিযোগ করে বলে, ‘এজন্য মুসলিম তরুণদের অর্থ দেয়া হয় যাতে তারা হিন্দু নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুসলিম বানাতে পারে’। এসব তত্ত্ব একেবারেই বানোয়াট এবং মিথ্যার বেসাতি ছাড়া কিছুই নয়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গবেষণা করে লিখেছেন, ‘মিথ অব লাভ জিহাদ’। তিনি বলেছেন- যখন কোন মুসলিম নারী কোন হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করে তখন হিন্দু উগ্র গোষ্ঠীগুলো তাকে প্রেম হিসেবে বর্ণনা করে। যদি উল্টোটা হয় অর্থাৎ কোন মুসলিম পুরুষ কোন হিন্দু নারীকে প্রেম করে বিয়ে করে তখন তারা জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ করে। মুসলিম যুবককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে আটক করে। লাভ-জিহাদ বিরোধী আইনে মুসলিম যুবকদের আটক করার ঘটনা ঘটছে। দিবালোকের মতোই সত্য যে, শুধুমাত্র মুসলিমদের হিন্দু নারী বিয়ে করা থেকে বিরত রাখতেই এমন অসভ্য আইন করেছে ভারতের কয়েকটি রাজ্য সরকার। তারা ভালবাসাকে ফেলে দিয়েছে চরম বিপদে। যদিও দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই ভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিয়ের প্রচলন খুবই নগণ্য। হয়তো শতকরা ১ শতাংশেরও কম। হিটলারও এমন আইন করেছিল যাতে ইহুদিরা জার্মান খৃস্টান নারীকে বিয়ে করতে না পারে। হিটলারের জামানায় বহু ইহুদী পুরুষকেই এজন্য নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছিল। এজন্যই অনেকে মোদির মুখে হিটলারের প্রতিচ্ছবি দেখে। হিটলারের ধারায় ভারতের কয়েকটি রাজ্য সরকার ইতোমধ্যেই লাভ জিহাদকে জামিন-অযোগ্য ধারা গণ্য করে দীর্ঘমেয়াদি সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে।

ভারতে হাজারোভাবে মুসলিমদের নিপীড়ন করা হয়। এক গোমাংশ রাখার অভিযোগেই কমপক্ষে ৪৩ জনকে হত্যা এবং বহুজনকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। লাভ জিহাদ মুসলিমদের নিপীড়নের আরেকটি অধ্যায় মাত্র। কোন মেয়ে কোন মুসলিম ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করলেই হিন্দুত্ববাদীরা মিথ্যা দাবী করে একে ‘অপহরণ ও জোর করে ধর্মান্তকরণ’ এর অভিযোগ আনে। সামাজিকভাবে ছেলেটিকে নির্যাতন করে মেয়েটিকে তথাকথিত উদ্ধারের নাটক সাজায়। পুলিশও মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আর কোন হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ে বিয়ে করে হিন্দু বানাতে পারলে সেটাকে ‘ঘরওয়াপসি’ মানে ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে আনা মনে করে খুশি হয়ে উঠে। ঘরে আনা বলতে তারা বুঝায়- ভারতে একসময় মুসলিমরা হিন্দুই ছিল তাই আবারো হিন্দু হওয়া মানে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসা। ভয়ঙ্কর হিন্দু মৌলবাদীদের ভয়ঙ্কর ভাবনা।

বছর তিনেক আগেও যে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছিল তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করে হত্যার আহবান জানিয়েছিল হিন্দুত্ব বার্তা নামের একটি ফেসবুক পাতা। এমনকি মুসলিম স্বামীদের ফেসবুক আইডির লিংকও দিয়ে দেয়া হয়েছিল। এটা নতুন কিছু নয়, ভারতে এমন শতশত ফেসবুক পেজে লাভ জিহাদের ধুয়া তুলে ‘আন্তঃ ধর্মীয় বিয়ে’ এর বিরুদ্ধে সহিংসতার উস্কানি দেয়। বাংলাদেশেও লাভ জিহাদ নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে ভুল তথ্য প্রচলিত রয়েছে। হিন্দু নারী বিয়ে করার জন্য ভারতে অনেকগুলো হত্যার ঘটনাই ঘটেছে। বিপরীতে শুধু হিন্দু নারীদের মুসলিম বানানোর অসৎ উদ্দেশ্যেই তাদের ভালবাসার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে মুসলিম বানায়- এমন অভিযোগের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে, কোন নির্বাচন সামনে আসলেই লাভ জিহাদকে সামনে আনা হয়ে থাকে। এজন্য তারা পোস্টারও লাগায়, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারে প্রচার চালানো হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া গুরুত্ব দিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার করে। ভোটের রাজনীতির বলি হচ্ছে মুসলিম প্রেমিক পুরুষ। অনেকেই বলেন, ভারতে স্পেশাল মেরেজ এক্টেই তারা বিয়ে করতে পারেন। ধর্ম বদলাতে হয় কেন? বাস্তবিক এই আইনেই রয়েছে জটিলতা। ভিন্ন ধর্মের জুটি বিয়ে করতে চাইলে এক মাস আগে নোটিশ দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি হিন্দু মেয়ের পরিবারকে জানিয়ে দেয় তাতে তারা বিয়ে তো করতেই পারেন না যথারীতি ঝামেলায় পড়ে মুসলিম ছেলেটি। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েটি তার ধর্ম বদলে ফেলেছে। বিয়ের পরে যেহেতু তাকে ছেলেটির পরিবারের সাথে থাকতে হয় তাই ছেলের ধর্ম গ্রহণই তারা সহজ মনে করে। অর্থাৎ ছেলে হিন্দু হলে মুসলিম মেয়ে হিন্দু হয়ে যায় আর ছেলে মুসলিম হলে হিন্দু মেয়েটিও মুসলিম হয়ে যায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


নববর্ষের শুভেচ্ছে!
আপনি কি কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকেন?

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৭

মুজিব রহমান বলেছেন: একটি বিষয় নিয়ে কয়েকটি পোস্ট না দিতে পারলে ভাত হজম হয় না।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সকল জিহাদই খারাপ।মানুষের সাথে মানুষের ভালবাসা বন্ধুত্ব গড়ে উঠুক ধর্ম বর্ন সকলের সাথে সকলের।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৮

মুজিব রহমান বলেছেন: সহমত। মানবতার বিরুদ্ধেই জিহাদ করা হয়।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: জিহাদ শব্দটাই আমার অপছন্দ।

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। দুঃসহ স্মৃতিময় একটি বছরের পুরোটাই গোটা বিশ্ব যেভাবে কাটিয়েছে আশাকরি সেই ভয়াবহ স্মৃতি কাটিয়ে আমরা ২০২১ সালে অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় থাকবো। ২০২১ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক এই কামনা করি।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৯

মুজিব রহমান বলেছেন: শুভ হোক আপনার প্রতিটি বছর।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১৫

রানার ব্লগ বলেছেন: একজন মানুষের যেকোনো ধর্ম পালনের বা ধর্ম পালন না করার যেমন স্বধিনতা আছে ঠিক তেমনি যেকোনো ধর্মের অনুসারী কে বিয়ে করার স্বধিনতাও আছে। এই স্বধিনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২১

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
লাভ জিহাদ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই আন্তঃধর্মের বিয়ে বন্ধ করা। ওদের ভণ্ডামীপূর্ণ তীব্র হিন্দুত্ববাদী চেতনাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.