নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোকিত জীবনের খোঁজে

মোতাহের হোসেন সোহেল

আমি একজন বাংলাদেশী মুসলমান। মুসলমান হিসাবে আমি গর্বিত। আমি মনে করি সব সমস্যার সমাধান শুধু কোরআন দিতে পারে। আসুন কোরআন পড়ি ও বুঝতে চেষটা করি। আসুন সকল রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে দেশকে ভালবাসি।

মোতাহের হোসেন সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৩

আজ নিবন্ধের শুরুতেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করতে চাই। সবাই জানেন, তার নেতৃত্বে গঠিত প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৭২-৭৫) দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র পর্যন্ত বিতর্কিত অনেক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এসবের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিব আবার এমন কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিলেন, যেগুলো প্রথম থেকে প্রশংসিত হয়ে এসেছে। বাংলাদেশকে ওআইসি বা ইসলামী সম্মেলন সংস্থার সদস্য বানানো ছিল এরকম একটি পদক্ষেপ। এটা ১৯৭৪ সালের ঘটনা। সেবার ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল পাকিস্তানের লাহোর নগরীতে। তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সমস্যারই মীমাংসা হয়নি। বড় কথা, পাকিস্তান যেমন বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, বাংলাদেশও তেমনি খণ্ডিত পাকিস্তানকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। সৌদি আরবসহ অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রেরও স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশ।

অমন এক অবস্থার মধ্যে আয়োজিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে বিদ্যমান তিক্ততার কারণে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে লাহোরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তার ওপর ছিল ভারতের কঠিন বিরোধিতা। ভারত চায়নি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক বা বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক। সরকার বিরোধী প্রধান নেতা হলেও মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী সে সময় শেখ মুজিবের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শোনা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কোনো এক স্থানে ভাসানী-মুজিবের গোপন বৈঠক হয়েছিল। মওলানা ভাসানীর সমর্থন ও অনুপ্রেরণায় সে বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব লাহোর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যাওয়ার বিষয়টিকে সহজ ও সম্ভব করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেছিলেন ওআইসির নেতারা। তাদের মধ্যস্থতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব লাহোরের উদ্দেশে যাত্রা করার পর পাকিস্তান বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। শেখ মুজিব তখন আকাশে, বিমানের ভেতরে। এর আগের কিছু কৌতূহলোদ্দীপক তথ্যও সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নাকি বহুবার চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের নাগাল পাননি। অর্থাত্ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন ওঠাননি। ফলে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে শেখ মুজিবকে সরাসরি নিষেধ করাটাও সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে সত্যিই অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে ৯০ ভাগ মুসলমানের রাষ্ট্র বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ পেয়েছিল। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনাই বটে।

এখানে অকারণে ঘটনাটা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে না। মাত্র ক’দিন আগে, ৬-৭ ফেব্রুয়ারি মিসরের রাজধানী কায়রোতে সেই একই ওআইসির আরেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫৭টি ইসলামী ও মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা চলে গেছেন পিতার নেয়া পদক্ষেপের বিপরীত অবস্থানে। ওআইসির কায়রো শীর্ষ সম্মেলনে তিনি অংশ নেননি। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। উল্লেখ্য, ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনই একমাত্র অনুষ্ঠান বা উপলক্ষ নয়, মাস দেড়েক আগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা ডি-এইটের যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানেও যোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী। এই সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি। তার সঙ্গেও যথেষ্ট সম্মানজনক আচরণ করা হয়নি বলে কূটনৈতিক বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নেয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশকে সুকৌশলে সরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর পেছনে নির্ধারক রাষ্ট্র হিসেবে রয়েছে ভারত আর ভারতের পক্ষে ভূমিকা পালন করে চলেছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যকার একটি বিশেষ গোষ্ঠী। তাদের উদ্যোগেই সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এমনভাবে লোকজন নিযুক্তি দেয়া হয়েছে যাতে এমনকি প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন। এ শুধু অনুমাননির্ভর মন্তব্য নয়, প্রকাশিত বিভিন্ন খবরেও এর সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। যেমন সম্প্রতি দৈনিক আমার দেশ-এ প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন তিনজন বিশেষ কর্তাব্যক্তির আধিপত্যের অধীন হয়ে পড়েছে যারা শুধু ক্ষমতাসীন দলের অতি প্রিয় ও বিশ্বস্ত নন, গোপনে ভারতের স্বার্থ উদ্ধারেও ব্যস্ত। তিনজনই নিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন করে প্রশাসনিক সার্ভিস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে আসন গেড়েছেন। অথচ আইন হলো, অন্য কোনো ক্যাডারের অফিসারকে প্রথমত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্তি দেয়া হয় না। কোনো কারণে নিযুক্তি দেয়া হলেও মন্ত্রণালয়ের হার্ট বা হৃিপণ্ড হিসেবে চিহ্নিত প্রশাসনের দায়িত্বে বসানো হয় না। অন্যদিকে ওই তিনজনকে শুধু নিযুক্তি দেয়া হয়নি, বসানোও হয়েছে মহাপরিচালকের অবস্থানে। একজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। দ্বিতীয় জনকে মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মহাপরিচালক পদে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় জন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পরিচালকের পদ। দলবাজির দৃষ্টিকোণ থেকে নিযুক্তি দেয়ার কারণে শুধু নয়, আপত্তি উঠেছে পেশাদারিত্ব এবং আইন ও নিয়মের দৃষ্টিকোণ থেকেও। প্রশাসন থেকে আগত তিনজনের কারণে পদ ও পদোন্নতি পাওয়ার ন্যায্য অধিকার থেকে সুযোগবঞ্চিত হয়েছেন ফরেন সার্ভিসের ক্যাডাররা। তাদের হাতে তুলে দেয়া দায়িত্ব ও ক্ষমতাও যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ। যেমন প্রশাসন বিভাগকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোন অফিসারকে পদোন্নতি দেয়া হবে, কাকে বিদেশের কোন মিশনে পাঠানো হবে, মিশনগুলো কোন নীতি ও কৌশলের ভিত্তিতে কার্যক্রম চালাবে, কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন রাখতে হবে—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রশাসন বিভাগের। সেখানেই এমন একজনকে বসানো হয়েছে, কূটনীতিতে যার কোনো অতীত অভিজ্ঞতা নেই। অর্থ বিভাগও অমন একজনই চালাচ্ছেন।

অন্য কিছু বিশেষ কারণেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের মধ্যে হতাশা ও বিক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। এরকম একটি কারণ হলো, আলোচ্য তিন সৌভাগ্যবানই নিজেদের সীমানার বাইরে গিয়ে অনেক বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন। অফিসারদের মোটিভেশনও তারাই দিচ্ছেন। কেন ভারতের হাইকমিশনের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর করা দরকার, কেন ভারতীয় কূটনীতিকদের আস্থা অর্জন করা জরুরি—এসব বিষয়ে ধমক ও যত্নের সঙ্গে ‘জ্ঞান’ দিচ্ছেন তারা। ভারতের ব্যাপারে প্রচুর আগ্রহ দেখালেও একই কর্তাব্যক্তিরা কিন্তু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে নিয়মিতভাবে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের। ইউরোপ-আমেরিকার কোনো দেশেও নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করার এবং দেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা। বলা হচ্ছে, মূলত এই তিনজনের কারণে সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্কে মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এরই প্রমাণ পাওয়া গেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে। এতে সদস্য সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দিলেও যাননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। অথচ আগেই বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্য বানিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সমস্যার মীমাংসা না হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব লাহোরে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে মরহুম নেতার সুকন্যার আমলে দেশকে ওআইসি থেকেই সুকৌশলে সরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কও তলানিতে এসে ঠেকেছে। এসবের পেছনেও আলোচ্য তিনজনসহ ভারতপন্থীরাই ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

আপত্তি ও উদ্বেগের কারণ শুধু এটুকুই নয়। দেখা যাচ্ছে, মূলত ভারতপন্থীদের নীতি ও কৌশলের কারণে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত অসম্মানজনক অবস্থানে নেমে আসছে। বাংলাদেশের কোনো দাবি পূরণ করা দূরে থাক, ভারতীয়রা এমনকি যথেচ্ছভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করারও ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের কিছু কথার উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ সফরশেষে ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি বলে বসেছেন, কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত কিশোরী ফেলানী সম্পর্কে তার নাকি ‘কিছুই’ জানা নেই! গত বছরের জানুয়ারিতে সংঘটিত যে হত্যাকাণ্ড এবং হত্যার পর নিহত কিশোরী ফেলানীকে কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার যে নৃশংস ঘটনা সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সে ঘটনা সম্পর্কে ‘কিছুই’ জানা না থাকাটা সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র সচিবের জন্য নিঃসন্দেহে এক বিরাট অযোগ্যতা। এই একটি কারণে তার চাকরিও চলে যাওয়া উচিত। কথাটা মিস্টার মাথাইয়েরও জানা না থাকার কথা নয়—বিশেষ করে হত্যা যেখানে তার নিজের দেশের ঘাতক বাহিনীই করেছিল। একই কারণে ধরে নেয়া যায়, সব জেনেশুনেও মিস্টার মাথাই দিব্যি মিথ্যা বলে গেছেন। বিশ্লেষণে দেখা যাবে, বড় প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বাংলাদেশকে তিনি প্রকৃতপক্ষে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করেছেন। অর্থাত্ সমান পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে সামান্য গুরুত্ব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি তিনি।

জাতীয় স্বার্থ ও মান-সম্মানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আপত্তিজনক। কিন্তু বিষয়টিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট সবাই। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চয়ই পুনরুল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। সবকিছুর পেছনে রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারতপন্থীরা। তাছাড়া, সরকারের ভারতপ্রীতিও নতুন কোনো বিষয় নয় বরং পিলখানা হত্যাকাণ্ড থেকে ট্রানজিটের আড়ালে করিডোর দেয়া এবং নতুন করে সীমান্ত চুক্তি ও বন্দীবিনিময় চুক্তি করা পর্যন্ত সর্বতোভাবেই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ও হচ্ছে যে, বাংলাদেশ ভারতের ইচ্ছাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন যারা চালাচ্ছেন তাদের পক্ষে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে এমন কোনো চিন্তাও করা সম্ভব নয়। মূলত সেজন্যই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রীতিমত অসম্মানজনক অবস্থায় নেমে আসতে হয়েছে। সেটাও এমন অবস্থা—ভারতীয়রা যখন বাংলাদেশের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারছেন। এজন্য তাই বলে ভারতীয়দের শুধু দোষ দেয়ার সুযোগ নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও ভারতীয়দের ঘাড়ে ওঠাতেই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিএসএফকে দেয়া ওপেন লাইসেন্সের কথা উল্লেখ করতেই হবে। মাত্র কিছুদিন আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে দিল্লি সফরে গিয়ে তিনি এই মর্মে ‘অনুমতি’ দিয়ে এসেছেন যে, আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বিএসএফ গুলি ছুড়তে অর্থাত্ বাংলাদেশীদের হত্যা করতে পারবে। বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করার অনুমতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর ফলে বিএসএফ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, কিন্তু জবাবে বিজিবি বা বাংলাদেশীরা কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানুষ হত্যার অনুমতি দিলেও তেমন কোনো অনুমতি ভারতের পক্ষ থেকে বিজিবিকে দেয়া হয়নি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো ‘উদারতাও’ দেখায়নি তারা। প্রতিটি উপলক্ষে ভারতীয়দের বরং নিজেদের তথা বিএসএফের সমর্থনেই বলতে শোনা গেছে। যেমন বিএসএফের সাবেক মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তব ঢাকা সফরে এসে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা প্রসঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলে গেছেন, এগুলো হত্যাকাণ্ড নয়, সবই নাকি ‘মৃত্যু’! বিএসএফ নাকি হত্যার উদ্দেশ্যে কোনো গুলি করে না! সে কারণে ‘নিহত হয়েছে’ না বলে ‘মারা গেছে’ বলারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। বিএসএফের এই মহাপরিচালক সে সময় বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা ‘শূন্যের কোঠায়’ নামিয়ে আনারও আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে আশ্বাস আসলে যে নিতান্ত অভিনয় ছিল, তার প্রমাণ তো বাংলাদেশীদের হাড়ে হাড়েই পেতে হচ্ছে। দু’একদিন পরপরই সীমান্তে মারা যাচ্ছে বাংলাদেশীরা। অন্যদিকে কর্তব্য যেখানে ছিল বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা, আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে উল্টো হত্যাকাণ্ডকেই ‘জায়েজ’ ঘোষণা করে এসেছেন। মন্ত্রীর মাধ্যমে প্রকাশিত সরকারের এ মনোভাবেরই সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ। একই অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবও ঢাকায় দাঁড়িয়ে দিব্যি বলতে পেরেছেন, ফেলানীর হত্যা সম্পর্কে তিনি নাকি ‘কিছুই’ জানেন না!

বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ এমনকি জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করার চেষ্টাতেও হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থায় পৌঁছে যাবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, বাংলাদেশকে বরং দেশটির ইচ্ছাধীন রাষ্ট্রের পর্যায়ে নেমে আসতে হবে। একযোগে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সারা বিশ্ব থেকেও। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ততাপূর্ণ হয়ে উঠবে।



সূত্রঃ আমার দেশ; ২১/০২/২০১৩

শা হ আ হ ম দ রে জা : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৮

ডাব্বা বলেছেন: শেখ মুজিবর রহমানের যে গাটস্‌ ছিল, এখনকার পাগল ছাগল গুলোর তার কণামাত্র নেই।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৯

বীরেনদ্র বলেছেন: Pakistan recognised Bangladesh only after Sheikh Mujib was overthrown in 1975,and other muslim countries like Saudi Arabia etc followed .

So be true to what u say. The same thing you people have been telling since the time when the present govt came to power.

Nothing has happened and nothing will happen so I suggest you to keep away from baseless concoctions.

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫৪

আলুমিয়া বলেছেন: আপনার লেখাটা একটু পড়েই আপনার প্রোফাইলটা পড়লাম। লিখেছেন.......

'আমি একজন বাংলাদেশী মুসলমান। মুসলমান হিসাবে আমি গর্বিত"

-মানুষ গর্ব করে যেটা কষ্ট করে অর্জন করা যায় তা নিয়ে। আর যা আল্লাহ দিয়ে দেয় তা নিয়ে গর্ব করা যায় না। আর ভাল মুসলমান কিছু নিয়েই গর্ব করে না। কারন গর্বটা মানুষের জন্য না। কোরান আর হাদিস আর একটু বেশি করে পড়েন আর বুঝেন।

আজ নিবন্ধের শুরুতেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের........................

আপনার লেখাটা এটুকু পড়ে আর পড়তে ইচ্ছা হয়নি, বলেনত কেন?

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১০

অগাস্টাস লিওনাইডাস বলেছেন: সক্কাল সক্কাল খালি ফেডে হাসাইলেন... =p~ =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.