নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

পহেলা মে ১৯৭১ (এক বিরঙ্গনার গল্প……) পর্ব- ১

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩

স্বপ্নার মন আজ বিসন্নতায় ভরা। শ্রাবনের সমস্ত মেঘ যেন আজ তার মুখে ভর করেছে। সেই কাক ডাকা ভোর হতে দক্ষিণের জানালা খুলে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে বসে আছে। হয়ত এভাবেই সন্ধ্যা অবধি বসে থাকবে। কারো সাথে কথা বলবেনা, কেউ তার সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবেনা। এমনকি স্বপ্নার স্বামী প্রফেসর স্বপ্নীলও। কারন স্বপ্নীল জানে স্বপ্নার জীবনের আজকের দিনের কালো ইতিহাস। প্রতিবছর মে মাসের ১ তারিখ আসলেই স্বপ্নার এ ধরনের অস্বাভাবিক আচরন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঘটে যাওয়া দুর্বিসহ ঘটনা স্বপ্নার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। স্মৃতিচারিত স্বপ্না নিরব নিথর হয়ে যায়।



১৯৭০ সাল তখন স্বপ্না রাজবাড়ী কলেজের স্কুল উত্তীর্ণ সদ্য একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। যৌবনে পা রাখা যৌবন উত্তাল তরঙ্গে উদ্ভাসিত অষ্টাদশী কন্যা। তার সমস্ত শরীরে যেন যৌবন ঢেউ খেলতো। কাঁচা হলুদের মত গায়ের রং, কালো আর বাদামী রংয়ের সংমিশ্রিত কেশ, ভাসা ভাসা ডাগর দুটি চোখ সব মিলিয়ে স্বপ্না ছিলো বিধাতার সৃষ্ট অনিন্দ্য সুন্দর জীবন্ত এক ভাস্কর্য্য। সংগত কারনে সিলিমপুর গ্রামের অনেক যুবকের স্বপ্নের প্রিয় মানুষ ছিলো স্বপ্না।

স্বপ্নার জন্ম প্রাচীনপন্থী রক্ষণশীল এক পরিবারে। তার জীবন ছিলো পরিবারের কিছু নিয়ম কানুন দ্বারা ছকে বাধা। যৌবনের উচ্ছলতা ও চঞ্চলতার স্বাভাবিক গতি এই নিয়ম কানুনের কাছে প্রতিনিয়ত বাধা পড়ে স্বপ্নার। স্বপ্নার ইচ্ছে করে, ভর দুপুরে নদীতে সাঁতার কাটতে,জোস্নাস্নাত রাতে একা একা পাইচারী করতে , তার কল্পনার অচেনা যুবকের হাত ধরে গ্রামের শস্য ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে। কিন্তু স্বপ্নার ইচ্ছেগুলো প্রতিনিয়ত হৃদয়ের গভিরে গুমরে কাঁদে।



একদিন বর্ষার আলোঝলমল বিকেলে স্বপ্না আর সাথী নদীর ধারে ঘুরতে বেড়িয়েছে । কিছু দূর যেতেই সাথী স্বপ্নাকে বলে , স্বপ্না দেখ খেজুর গাছের তলায় একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটি গাছের নিচে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে খোলা ডায়েরীতে কিছু লিখছে আর তার পাশ দিয়ে পদ্মার খোলা জল কলধ্বনী তুলে বয়ে চলছে। কৌতুহলের বর্ষবতী হয়ে ছেলেটির প্রায় কাছে আসে ওরা দুজন। সাথী স্বপ্নাকে বলে , এই কবি মশাইকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়না, স্বপ্না তুই যদি ঐ ছেলেটির সাথে কথা বলতে পারিস তাহলে মনে করবো তোর মধ্যে সাহস বলে কিছু জন্ম নিয়েছে। সাথীর এই কথায় স্বপ্নার আত্নবোধে একটু আঘাত লাগে তাই জিদ করেই স্বপ্না ছেলেটির কাছে গিয়ে দাড়ায় এবং দুরু দুরু বুকে কাঁপা কন্ঠে ছেলেটিকে বলে,আমি স্বপ্না, নদীর ঘাটের ঐ পাশের বাড়ীটা আমাদের, আপনাকে পূর্বে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়না,কোথায় এসেছেন ?

কথাগুলো শুনে ছেলেটি বেশ কিছুক্ষণ স্বপ্নার দিকে হতবম্বের মত তাকিয়ে থেকে বলে, আমি স্বপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি,পাশের চরনারায়নপুরে আমার বাড়ী,বেশ কিছু দিন গ্রামে থাকার জন্য এসেছি। এরকম আরো কিছু কথোপকথোনের পর স্বপ্না সাথীকে নিয়ে চলে আসে। স্বপ্না চলে যাওয়ার পর,স্বপন অনেকটা ঘোরের মধ্যে কিছু সময় পার করে এবং মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে বলে, বিধাতা এই অপরুপা সুন্দরীকে তুমি কোথা থেকে আমার সামনে হাজির করলে ?এতো বেহেস্তের হুর পরিদের রুপ এর কাছে হার মানবে।



বাড়ী ফিরে অন্যরকম এক ভালোলাগা অনুভূতিতে আচ্ছাদিত হতে থাকে স্বপনের সমস্ত দেহ মন। সারা রাত কিছুতেই চোখের পাতা এক করতে পারেনা। কখনো কল্পনায় স্বপ্নাকে নিয়ে ভেসে বেড়ায় হংস বলাকার মত মেঘের ভেলায়, আবার বাস্তবতায়।

এর পরেরদিন থেকে স্বপন প্রতিদিন বিকেল বেলায় রুটিন করে নদীর পাড়ের ঐ খেজুর গাছতলায় আসে এবং স্বপ্নার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। যদি কখনো স্বপ্না ও সাথী নদীর ধারে ঘুরতে বের হয় তখন পলকহীন দৃষ্টিতে স্বপ্নাকে অবগাহন করে এক বিষন্ন মন নিয়ে বাড়ী ফেরে স্বপন। এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছুদিন।

প্রতিদিন নদীর ধারের একই স্থানে স্বপনের বসে থাকা , পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কারন স্বপ্না কিছুটা উপলব্ধি করতে পারে।স্বপ্নার কাছে স্বপনের চাহনিকে মনে হয় হাজার বছরের ক্ষুধাতুর কোন প্রেমিকের দৃষ্টি।



একদিন কলেজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে স্বপ্না বান্ধবী রুবিনা স্বপ্নার হাতে একটা রঙিন খাম দিয়ে বলে , স্বপন ভাই এই চিঠিটা তোকে দিয়েছে। স্বপ্না রুবিনাকে জিজ্ঞাসা করে , কোন স্বপন ?

চিঠিটা খুললে বুঝতে পারবি ,এই বলে রুবিনা স্বপ্নার কাছ থেকে বিদায় নেয়…….



স্বপ্না বাসায় ফিরে খামটি খুললে দেখতে পায় সাদা কাগজের এক পৃষ্ঠায় গোটানো সুন্দর হাতের লেখা একটি চিঠি….



প্রিয়তমা স্বপ্না ,

হৃদয়ের গভীরে তোমার জন্য ভালোবাসার যে পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে তা গ্র্রহন করিও। প্রথম যেদিন তোমার সাথে নদীর ধারে কিছু বাক্যালাপ হয়েছিলো ঐ দিন থেকে নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি। মনের মধ্যে আজ প্রেমপোঁকা দারুন ভাবে বাঁসা বেধেছে । ভালোবাসার এক নিদারুন কষ্টে কাটছে আমার প্রতিটি প্রহর। এই কষ্ট উপসমের কোন উপায় না পেয়ে তোমাকে আমার অনুভূতি ও অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে বাধ্য হলাম। এমন পরিস্থিতিতে আমাকে ভালোবাসো , আর নাহয় দেহ থেকে প্রানটা কেড়ে নিয়ে ভালোবাসার এই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে আমাকে মুক্তি দাও। আমার চাচাতো বোন রুবিনা তোমার বান্ধবী জানতে পেরে ওর মাধ্যমেই চিঠিটা পাঠালাম , আশা করি রুবিনার মাধ্যমেই অতি দ্রুত একটা শুভ প্রতিউত্তর পাবো…….

ইতি

তোমার ভালোবাসার প্রত্যাশায় ব্যাকুল স্বপন।



চিঠিটি পড়ার পর স্বপ্নার বুঝতে দেরি হলোনা যে এটা কার চিঠি । স্বপ্নার মধ্যে এক অজানা ভয় ভীতি এবং সংকিত শিহরণে শরীর হিম হয়ে আসে। এমন অনুভূতি আগে কখনো সে বোধ করেনি। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে।তার কি করা উচিত। একদিকে পরিবারের রক্তচক্ষু শাসন বাঁধন , অন্যদিকে তার যৌবনের প্রথম কোন পছন্দের পুরুষের ভালোবাসার আহবান।

চিঠিটা পড়ার পর থেকে স্বপ্নার আচরণের মধ্যে এধরনের অস্বাভাবিকতা ফুটে উঠেছে। মাঝে মাঝে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন হয়ে বসে থাকা,খাওয়া দাওয়ায় অনিহা ,কেউ তাকে ডাকলে ঠিক মত সাড়া না দেয়া। ব্যাপারটা পরিবারের লোক বুঝতে পেরে ,স্বপ্নাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে স্বপ্না নানা কথায় এড়িয়ে যায়।

টানা পাঁচ দিন মনের সাথে যুদ্ধ করে এক মধ্যে রাতে হঠাৎ পড়ার টেবিলে বসে স্বপনের চিঠির প্রতি উত্তর লিখতে বসে স্বপ্না। জানালা খোলা, জোস্নালোকিত রাত,নদীর শান্ত জলধারা স্পর্শ করে বয়ে আসছে সিন্ধ শীতল বাতাস, সাথে আবেগী হৃদয় নিয়ে চিঠি লেখা শেষ করে ঘুমানোর চেষ্টা কিন্তু কিছুতেই দুচোখের পাতা এক করতে পারেনা স্বপ্না।

পরের দিন স্বপ্না কলেজে গিয়ে চিঠিটা রুবিনার হাতে দিয়ে স্বপনকে পৌঁছে দিতে বলে……….



চলমান................................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.