নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা। পর্ব -১

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:১৯

ধর্ষণ বাংলাদেশের একটি দীর্ঘদিনের সংক্রমিত সামাজিক সমস্যা । বিভিন্নজন এটিকে বিশেষ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। কিন্তু এটি ঘুস, দুর্নীতি,লুণ্ঠন, চুরি, অপহরণ, হত্যা,কালোবাজারি মত অনন্যা অপরাধের মতই একটি সামাজিক অপরাধ।যা রাষ্ট্রের বল্গাহীন অনিয়ম অব্যবস্থার কারণে অন্যান্য অপরাধ যেভাবে সংগঠিত হয় এটিও তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।

আমাদের দেশের সামাজিক বাস্তবতায় নীরবে নিভৃতে প্রতিদিন কেউনা কেউ ধর্ষিত হয়। কিন্তু কারও ঘটনা যখন প্রকাশ্যে চলে আসে তখন আমরা প্রতিবাদমুখর হই।রাজপথে ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদী শ্লোগান দেই, ফেচবুকে নিজের মত করে প্রতিবাদ জানাই। বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ষণের কারণ, প্রতিরোধ নিয়ে মতামত দেই।এই মতামতগুলো মূলত একান্তই প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবন যাপন ও বিশ্বাস নির্ভর।গবেষণা নির্ভর ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।আমাদের সমাজে ধর্ষণের জন্য কেউ কেউ নারীর পোশাককে দায়ী করে থাকি, কখনো নারীর আধুনিক জীবন যাপনকে দায়ী করি, নারী স্বাধীনতাকে দায়ী করি, ধর্মীয় বিধিবিধান বহির্ভূত জীবন যাপনকেও সমাজের বড় অংশ অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে।অনেক সময় একটি ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসলে অনেক সময় ধর্ষকের অপরাধকে গৌণ মনে করে উল্লেখিত কারণ সামনে এনে ধর্ষিত নারীর দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়।দেশের নারীবাদীদের বড় অংশ পুরুষকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে সরাসরি পুরুষের বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা বা মনোবৃত্তিকে ধর্ষণের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করে থাকে।কোন এক সময় আমি নিজেও ধর্ষণের কারণ হিসেবে অন্যান্যদের মত করেই ভাবতাম। কিন্তু এখন ধর্ষণের উল্লেখিত কারণগুলোর একটিকেও মুখ্য কারণ হিসেবে মনে করি না।

নারী পুরুষের শত্রু নয়, পুরুষ নারীর শত্রু নয়।নারী ধর্ষিত হলেই পুরুষকে নারীর শত্রু ভাবা একটি উন্মাদ চিন্তা । নারী পুরুষ মিলেই সমাজ রাষ্ট্র এবং পৃথিবী। দিন শেষে পুরুষ নারীর কাঁধে মাথা রেখে জীবনের প্রশান্তি খোঁজে, নারীও একজন পুরুষের মাঝে খোঁজে জীবনের সুখ।ধর্ষণ মূলত একটি অপরাধ। সেটিকে শুধু অপরাধ ভাবাই উত্তম। সেই অপরাধ নির্মূলের জন্য ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য নারী পুরুষের হাতে হাত রেখে প্রতিবাদ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা অপরিহার্য।

ধর্ষণ হচ্ছে সবল কর্তৃক দুর্বলের উপর নির্মম বর্বরতা,একজন মানুষের নিজের মত বেঁছে থাকার স্বাধীনতার উপর আগ্রাসন।আমাদের সমাজে এমন বর্বরতা সর্বনিম্ন স্তরের মানসিকতা সম্পন্ন শারীরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে সবল মানুষদের দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে।এটি রাষ্ট্র ও সমাজের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। একজোড়া নারী পুরুষ সামাজিক,রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে একে ওপরের সম্মতিক্রমে ও ইচ্ছের পোষণ করে যৌন সঙ্গমে মিলিত হওয়া মধ্যে সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। এই কর্মটি যখন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নিয়ম উপেক্ষা করে কারো উপর বলপূর্বক ও জোরজবরদস্তি করে করা হয় তখনই এটি ধর্ষণ। ধর্ষণ শুধু নারীই হয়না,স্থান ভেদে পুরুষও হয়, কখনো স্বয়ং রাষ্ট্রও ধর্ষণের স্বীকার হয়।তবে যে রাষ্ট্র নিজেই ধর্ষণের স্বীকার সেই রাষ্ট্রের প্রতিটি নারী পুরুষ প্রতি মুহূর্তে ধর্ষণের ঝুঁকির মধ্যে থাকবে এবং ধর্ষণের স্বীকার হবে, এটা অস্বাভাবিক নয়।একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি বিশৃঙ্খলার পেছনে একটি সূত্র থাকে সেই বিশৃঙ্খলার নাভিমূলে পৌছুতে না পারলে এবং সেই সূত্র অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, দুই একটি ঘটনার দেখানো বিচার করে এবং কঠোর আইন বানিয়ে এর স্থায়ী সমাধান আদৌ সম্ভব নয়।

নিয়ম বহির্ভূত বলপূর্বক যৌনসঙ্গমকে যদি ধর্ষণ বলা যায় তাহলে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অসম্মান করে বলপূর্বক রাষ্ট্র ক্ষমতা লুণ্ঠন করাকে রাষ্ট্র ধর্ষণ বললে খুব অসঙ্গত হবে বলে আমি মনে করি না।

আমাদের সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই ধর্ষণসহ নানা ধরণের অত্যাচারের স্বীকার হয়।পুরুষ ধর্ষণের আনুপাতিক হার উল্লেখ করার মত নয় । আমাদের প্রথমেই জানা দরকার, আমাদের সমাজে নারীরা কেন ধর্ষণ ও অত্যাচারের স্বীকার হয় ?

আমাদের দেশের নারীদের পুরুষ নিয়ন্ত্রিত বা শাসিত সমাজের মধ্যে বসবাস।দেশের অধিকাংশ নারী পুরুষের মুখাপেক্ষী ও আর্থিক ভাবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল। ফলে আমাদের দেশের নারীরা মানসিক ভাবে দুর্বল। তাকে বাঁচতে হলে অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বাঁচতে হবে, এই মানসিকতা নিয়েই দেশের অধিকাংশ নারীকে ছোট থেকে বেড়ে উঠতে হয়।এমন সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেশের অধিকাংশ পুরুষের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত নয়। তারা নারীকে দুর্বল মানুষ ভেবে থাকে।এর বড় কারণ নারীর প্রতিরোধ, প্রতিবাদ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি ও আইন কানুন তার অনুকূলে নয়।

দেশের অনেক শিক্ষিত গৃহিণী নারী রয়েছে যারা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী নয় অর্থাৎ স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল।এমন নারীরা যখন বিভিন্ন কারণে স্বামীহীন হয়ে পড়ে তখন নিজের ও বাচ্চাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব ঐ নারীর ঘাড়ে এসে পড়ে।আমাদের দেশে ইচ্ছে করলেই মধ্য বয়সের শিক্ষিত নারীর চাকুরী বা কাজের সুযোগ নেই।অনেক চাকুরীর ক্ষেত্রে একজন নারীর শিক্ষা ও যোগ্যতার চেয়ে তার শারীরিক সৌন্দর্য ও বয়সকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এমন ক্ষেত্রগুলোতে যোগ্যতা থাকলে একজন বিপদগ্রস্ত মধ্য বয়সী নারীকে কাজের সুযোগ দেয়া হয় না। স্বাধীন ভাবে কিছু করার জন্য যে অর্থ দরকার সেটাও যাদের নেই। এমন নারীদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সৎ উপায়ে কিছু করার জন্য পরিবার ও সমাজের অনেকের কাছে দ্বারস্থ হতে হয়। এমন অনেক শিক্ষিত নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সমাজের অনেক মুখোশধারী সাধু মানুষদের দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়।যা লোকলজ্জা ও ভয় ভীতির কারণে এই অন্যায়কে মেনে নিয়ে মুখবুজে জীবন যাপন করতে হয় অনেক নারীর।
তাছাড়া, প্রাইভেট সেক্টরের চাকুরীর ক্ষেত্রগুলোতে একজন কর্মীর চাকুরী থাকা না থাকা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি ও মালিকদের ইচ্ছে অনিচ্ছার উপর।কোন কর্মী যদি কোন কারণে চাকুরী হারায় তাহলে বেকার কালীন সময়ের এই সেক্টরের কর্মীদের জন্য রাষ্ট্রের কোন প্রণোদনার ব্যবস্থা নাই।বড় ধরনের এই অনিশ্চয়তা এই সেক্টরের শিক্ষিত নারী কর্মীদের নিভৃতে যৌন হয়রানির ক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছে।

দারিদ্র্যতার কারণে অন্যের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে অনেক মেয়েকে গৃহকর্তা কর্তৃক ধর্ষণ এবং গৃহকর্ত্রী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়।এমন শ্রেণীর নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয় কোন প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকায় পেটের প্রয়োজনে যাবতীয় অন্যায় সহ্য করেই কাজ করতে হয়।

সমাজের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নারীর শরীরটাই যেন নারীর পরাধীনতা,নিজের মত করে জীবন যাপনের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।সমাজের চার পাশের শিয়াল শকুন মনোবৃত্তির মানুষদের শ্যেন দৃষ্টির মধ্যেই তাদের জীবনের যাপন করতে হয়। এমন নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হলেও সামাজিক অবস্থানের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে পারে না, কেউ দ্বারস্থ হলেও তার সামাজিক ও আর্থিক অবস্থানের কারণে বিচারের রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী অপরাধীর পক্ষে যেতে দেখা যায়।

তৃনমূল নারীদের দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীর কাজ করতে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও যৌনদাসীতে পরিণত হয়ে নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে প্রতিনিয়ত দেশে ফিরে আসে আমাদের বাংলাদেশের নারীরা।

আমাদের যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো তা জন্মগত ভাবেই একজন নারীর স্বাধীন ভাবে অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার প্রতিকূলে।
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:৫২

জগতারন বলেছেন:
আমার খুউব ভালো লাগল এই লেখাটী।
জানি না কেন এটি প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সরানো হলো।
লেখকের প্রতি সুভেচ্ছা জানাচ্ছি এমন একটি পোষ্ট দেয়ার জন্য।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:০৮

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: আপনাকেও শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ ।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ ভোর ৫:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


যারা আমার কমেন্ট মুছেছেন, তাদের অনেকের লেখা তেমন পপুলার হয়নি

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:২০

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: প্রিয় চাঁদগাজী ভাই, লেখা পপুলার করা এবং নিজে পপুলার হওয়ার জন্য লিখিনা। সামাজিক দায়বদ্ধতার তাড়না থেকে লিখি। বন্ধনহীন বিবেক বিবেচনায় কোন কথা বলা ও লেখার মধ্যে আত্মার সুখ লুকিয়ে থাকে। সেই সুখের জন্যই লিখি। ধন্যবাদ আপনাকে ...

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষন।

মৌলিক জায়গা গুলো ঠিক করলে সকল অপরাধই আনুপাতিক হারে কমে আসবে।
সরকার নিজেই যখন রাষ্ট্রের সে সকল জায়গাগুলোকে দুর্বল করে দেয় নিজের অন্যায় ক্ষমতা লিপ্সার জন্য
তখন পরিণতিতো এমনই হবার কথা।
উপসর্গ নয় রোগের চিকিৎসা জরুরী।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:২১

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: যথার্থ বলেছেন, একমত আপনার সঙ্গে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা আপনার জন্য।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আমাদের দেশটা নিয়ে আশাবাদী।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: কেন যেন মনে হয় আশার আলো নিভে আসছে। সেই আলো যেন একেবারেই যেন নিভে না যায়, সেই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরী মনে হয়। ধন্যবাদ ভাই... শুভকামনা রইলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.