নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা। শেষ পর্ব

২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

মার্জিত পোশাক উন্নত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ আর শৃঙ্খলিত জীবন যাপনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। সমাজের নানা ধর্মীয় বিশ্বাস, অবিশ্বাস,রুচি পছন্দ,পেশা ও সংস্কৃতিগত কারণে একটি রাষ্ট্রে মধ্যে বসবাসরত মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ ও জীবন যাপনের মধ্যে বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়, এই বৈচিত্র্যতাই যেন একটি রাষ্ট্রের সৌন্দর্য।এই প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের জীবনযাপন প্রণালীর প্রতি একে ওপরের শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টি ভঙ্গি একটি সহনশীল সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওপরদিকে প্রতিটি বৈচিত্র্যময় মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারের রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে নিরপেক্ষ।

আমি যে দেশটিতে থাকি, এখানে নারী পুরুষের যৌনতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিশেষ কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবাহ বাধ্যতামূলক নয়। দুইজন মানুষের সম্মতি বা ইচ্ছাই যৌনতার আইনগত অনুমোদন দেয়।তবে ১৫ বছরের নিচে কোন শিশুর সঙ্গে প্রাপ্ত বয়স্ক কোন মানুষের যৌন সম্পর্ক স্থাপন অপরাধ । কিন্তু ১৫ বছরের নিচে দুজন মানুষের সম্মতি যৌন সম্পর্ক বৈধ।সেই যৌন সম্পর্ক একজোড়া নারী পুরুষ বিবাহ করে করবে অথবা বিবাহ বহির্ভূত ভাবে করবে তা একান্তই তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। যৌনতার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিয়ম কানুনের সঙ্গে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই।পাপ পূর্ণ, বিশ্বাস অবিশ্বাস একান্তই ব্যক্তির।রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র অনুমোদিত প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইন বিরুদ্ধ প্রতিটি কর্মের বিচার সুনিশ্চিতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আস্থা ধরে রাখা।এখানে যৌন স্বাধীনতা আছে কিন্তু বর্বরতা নেই।ধর্ষণ বা যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ বিদ্যমান থাকায় ধর্ষণের মত সামাজিক অপরাধ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মত নয়।রাস্তায় বা গণপরিবহণে যৌন হয়রানির জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে অপরাধ বিবেচনায় যৌন নিপীড়ককে ৯০ থেকে ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।হয়রানির স্বীকার কোন মহিলা জরুরী পুলিশ সেবা নম্বরে কল করলে যৌন নিপীড়কে তাৎক্ষণিক এই শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।আইন আদালত পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে বড় শাস্তি পুলিশের রেকর্ড বইতে এই অপরাধ লিপিবদ্ধ হওয়ায় ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় অনেক নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখী হওয়ার ঝুঁকি অপরাধীর মাথার উপর ঝুলতে থাকে। যা এই দেশের প্রাত্যহিক নাগরিক জীবনে কারাগারের বন্দী দশার চেয়ে বেশি ভয়ংকর।আমাদের দেশে কোন নাগরিকের কোন প্রশাসনিক প্রয়োজনে চারিত্রিক সনদের প্রয়োজন হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাছে যেতে হয়।সমাজের সর্বোচ্চ খারাপ মানুষ বা অপরাধীও যদি এই সব প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয় তবে দায়িত্বশীল চেয়ারম্যান বা মেয়র চোখ বন্ধ করে ঐ খারাপ মানুষকে উত্তম চরিত্রের সনদপত্র দিয়ে দেয়।ফলে সমাজের সর্বোচ্চ অপরাধীর রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা পেতে বাধা পেতে হয় না।সুতরাং সমাজের ভালো ও খারাপ মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের বিশেষ কোন পার্থক্যের দৃষ্টি নেই।যার দরুন আমাদের দেশে একজন সন্ত্রাসী, ঋণ খেলাপি,দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী,ধর্ষণকারীর মত খারাপ মানুষেরা রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি হয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের প্রতি চোখ রাঙায় পারে।ফরাসি দেশেও প্রশাসনিক নানাবিধ প্রয়োজনে একজন নাগরিকের চারিত্রিক সনদের প্রয়োজন হয়,যেমন ব্যাংক ঋণ নেয়া, নির্বাচনে প্রতিনিধি হওয়া,নাগরিকত্বের আবেদন করা সহ বহুবিধ প্রয়োজনে এই সনদের প্রয়োজন হয়। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সনদটি স্থানীয় প্রশাসনের কোন সংস্থা প্রদান করে না, প্রদান করে এখানকার পুলিশ প্রশাসন। কারণ একজন মানুষের দৃশ্যমান বা ধরাপড়া অপরাধ ও অপকর্মের রেকর্ড পুলিশের নথিতে লিপিবদ্ধ থাকে। তাই একজন নাগরিক যখন এমন সনদের জন্য পুলিশ প্রশাসনের নিকট আবেদন করে তখন ঐ নাগরিকের ব্যক্তিগত রেকর্ড পর্যবেক্ষণ এবং নির্দিষ্ট আইন অনুসরণের মাধ্যমে আবেদনকারীকে চারিত্রিক সনদপত্র সরবরাহ করা হয়। যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তারা বিশ্বাস করেন, প্রতিটি মানুষের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিটি ভালো মন্দ কর্মের হিসাব লিপিবদ্ধ করেন দুই কাঁধে অবস্থান নেয়া কেরামিন ও কাতেবিন নামে দুই ফেরেশতা। তাদের এই রেকর্ডকৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে হাশরের ময়দানের বিচারে দিনে নির্ধারণ হবে একজন মানুষের বেহেশত ও দোযখ।ধর্ম বিশ্বাসের মতই ফরাসি দেশের একজন নাগরিকের রাষ্ট্র নির্দেশিত ভালো ও মন্দ কর্ম রেকর্ডের দায়িত্বে থাকেন পুলিশ প্রশাসন।প্রতিটি নাগরিকের নাগরিকত্ব নম্বর পুলিশ প্রশাসনের সার্ভারের প্রবেশ করে সার্চ দিলেই কম্পিউটার মনিটরে ভেসে ওঠে ফরাসি বৃত্তের একজন মানুষের ন্যায় অন্যায়ের খতিয়ান।সেই খতিয়ান অনুযায়ী ফলাফলও ভোগ করতে হয় প্রত্যেকের। ধর্ম বর্ণ, শ্রেণী পেশার ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযত প্রয়োগের কারণে সামাজিক অপরাধের হার এখানে নিম্নমুখী।এজন্য এখানে একজন নারীকে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,অফিস বা কর্মস্থলে যৌন হয়রানির মত বর্বরতার ভয়ে থাকতে হয়না।কোন মেয়ে যদি অর্ধনগ্ন হয়ে মধ্য রাত্রে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ায় তাহলে তার দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে কেউ তাকাবে না, কেউ তাকালে বা খারাপ ইচ্ছে পোষণ করলেও আইনের ভয়ে তাকে স্পর্শ করবেনা। পৃথিবীর নানা জাতিগোষ্ঠী,ধর্ম, বর্ণের মানুষের বসবাস এই ভূখণ্ডে।প্রত্যেকের জীবন যাপন অভ্যাস অনুযায়ী পোশাকের স্বাধীনতা রয়েছে,এখানে অনেক নারীই একটু খোলামেলা পোষাকের জীবন যাপনে অভ্যস্ত তাই বলে তার প্রদর্শিত শরীর দেখে পশুর মত ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত দেখা মেলে না। শিক্ষিত ও সুসভ্য জাতির মানুষ নিজের স্বাধীনতাকে উপভোগের ব্যাপারে যেমন সচেতন তেমনি অন্যের স্বাধীনতার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হয়। যা ফরাসি দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন যাপন ও আচার আচরণে প্রতি মুহূর্তে ফুটে ওঠে।বনের হিংস্র বাঘ বা সিংহের শাবককে যদি একটি মানব পরিবারে আদর যত্নে বড় করে তোলা যায় তাহলে দেখা যাবে বড় হওয়া পর ঐ পূর্ণাঙ্গ বাঘ বা সিংহের মধ্যে সহজাত হিংস্রতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং হিংস্রতার পরিবর্তে মানুষের সঙ্গে বসবাস করারা দরুন উল্টো মানবিক আচরণ করছে। একটি সুসভ্য জাতি বিনির্মাণের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে শ্রেণীর ঊর্ধ্বে গিয়ে আইনের যথার্থ প্রয়োগ।একটি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বিচার ব্যবস্থা স্বচ্ছ হয় তাহলে ঐ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আইন ও বিচারের ভয়ে এবং কোন এক সময় নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় দরুন অন্যায় করা ভুলে যায়।এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সুসভ্য সমাজ।

ব্যক্তিগত ভাবে একবার আমার ফরাসি জেলখানা দেখার সুযোগ হয়েছিল।এক পরিচিত ছোট ভাই কোন এক কারণে ফরাসি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় প্রেরিত হয়।একদিন প্রোগ্রাম করে এখানকার কয়েকজন বন্ধু মিলে তাকে দেখতে জেলখানায় যাই। জেলখানার প্রবেশমুখে আমাদের মত অন্যান্য কারাবাসী স্বজনদের ভির।অনেকগুলো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কঠোর সতর্কতার মধ্যদিয়ে আমরা জেলখানায় প্রবেশ করলাম।একজন পুলিশ আমাদের সঙ্গে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রুমে বসতে দিলো। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাদের ঐ ভাইটিকে নিয়ে আসা হল কথা বলার জন্য।আমরা জানতে চাইলাম,সে কেমন আছে সে? পুলিশ কোন খারাপ আচরণ করছে কিনা?কয়েদ খানায় তার সঙ্গে কারা আছে? ইত্যাদি। তাকে কিভাবে মুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করে আমরা চলে এসেছিলাম।ঐ দিন ঐ ভাইয়ের সঙ্গে অল্প কিছুক্ষণের আলোচনায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা শুনে এখানকার জেলখানা সম্পর্কে দারুণ কিছু তথ্য জানতে পেরেছিলাম।

সে জানিয়েছিল, ফরাসি জেলখানায় তার দিন কাটছিল একজন অতিথির মতই। কয়েদিদের সঙ্গে কোন অমানবিক আচরণ হয় কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য জেলখানার মধ্যেই মানবধিকার সংস্থার কর্মী রয়েছে যারা কয়েদিদের পর্যবেক্ষণ করেন, তাই ভেতরে ভয়ের কোন কারণ ছিলনা। তার অন্যান্য কয়েদি বন্ধুদের সবাই ভিনদেশি,অর্থাৎ আলজেরিয়া,মরক্কো,তিউনিসিয়া,পাকিস্থান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জনগণ।তার কয়েদী বন্ধুদের কেউ ফরাসি বংশোদ্ভূত নয়।কয়েদিরা বাইরে যে যাই করুক কিন্তু ভেতরে সবাই বন্ধুর মত ছিল।

আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম ফরাসি জেলখানায় ফরাসি আসামী নেই জেনে। কারণ আমি তখন এই দেশে নতুন। এই দেশের মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে বাস্তব ধারণে ছিলনা। তবে আজ বুঝি ফরাসি জেলখানায় কেন ফরাসি বংশোদ্ভূত কয়েদি খুঁজে পাওয়া যায়না।প্রায় দশ বছরের ফরাসি ভূখণ্ডের জীবন যাপন থেকে এই দেশের সমাজ ও সমাজের মানুষ সম্পর্কে কিছু বাস্তব সত্য আবিষ্কার করেছি।তাহলো অধিকাংশ ফরাসিদের মধ্যে মিথ্যে বলার প্রবণতা নেই, অন্যকে ঠকানোর প্রবণতা নেই, অন্যের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের প্রবণতা নেই,ওজনে কম দেবার প্রবণতা নেই,খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা নেই,অন্যের সঙ্গে ছল-চাতুরীর প্রবণতা নেই,অর্থ ও ক্ষমতা বড়াই করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের প্রবণতা নেই, আর ধর্ষণের মত এমন বর্বরর আচরণ হয়তো চিন্তাই করতে পারে না। একটা সমাজের মানুষের এমন চারিত্রিক গুনের অধিকারী হওয়ার জন্য অনেক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে।ফরাসিরা বই পড়া জাতি। আমরা বলতে পারি পড়াশুনার ভেতর দিয়ে তারা এমন নৈতিক গুনের অধিকারী হয়েছে। এ কথার অবশ্যই যৌক্তিকতা রয়েছে, কারণ জ্ঞান চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষ মহামহিম গুনের অধিকারী হয়।এ কথা ধ্রুব সত্য।ধর্মীয় পরিচয়ের দিক থেকে ফ্রান্সের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খ্রিস্টান হলেও বৃহৎ অংশ ধর্মীয় রীতিনীতি ও আনুষ্ঠানিকতা পালন না করে না।আবার অবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।অনেক বিখ্যাত ক্যাথলিক গির্জায় ধার্মিকদের চেয়ে পর্যটকদের ভীর বেশী লক্ষ্য করা যায়।তবুও এদেশে সুসভ্য সমাজ বিদ্যমান। আমি মনে করি মানুষ মূলত সুসভ্য হয় একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে। যা ফরাসি দেশে বিদ্যমান। এই দেশের মূলমন্ত্র সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। যা তারা ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে।এখন এই তিনটি শব্দের মধ্যে ফরাসি নাগরিকের জীবনের যে স্বাদ অন্তর্নিহিত রয়েছে তা দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে আরম্ভ করে তৃনমূলের একজন মানুষ পর্যন্ত সমান ভাবে উপভোগ করে। যা সম্ভব হয়েছে নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে।রাষ্ট্রের আইনের বেড়াজালে সবাই একই ভাবে আবদ্ধ।ফলে কেউ ক্ষমতাবান হলেও ক্ষমতার অপব্যবহারের দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা দেখায় না পরিণতির ভয়ে।দীর্ঘদিনের এমন নিয়ন্ত্রিত শাসন কাঠামোর মধ্যে বসবাস করতে করতে ফরাসি জনগোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা চেতনা ও ধ্যান ধারণায় সততা এবং মানবতা জাগ্রত হয়েছে, ফলে সহজাত ভাবে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা ন্যায় সঙ্গত আচরণ প্রকাশ পায়। সারা পৃথিবীর নানা বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস এই ভূখণ্ডে।অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মানুষকে বাদ দিয়ে যদি দেশটির প্রতিচ্ছবি কল্পনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে যে এই দেশটির পুলিশ প্রশাসন ও আইন আদালত বিভাগের খুব একটা প্রয়োজন পড়ছে না, এই বিভাগগুলোর কাজ তিনভাগ কমে গেছে।

ফ্রান্সে উদার ও রক্ষণশীল সমাজের মাঝে উগ্র জীবন যাপনও রয়েছে তবে কারো দ্বারা কারো স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা নেই।

যৌনতা প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান। যে সমাজ যৌনতার স্বাধীনতা দেয় সেই সমাজে যৌনতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয়ে ওঠে।যৌন স্বাধীনতা বলতে যতেচ্ছ যৌনাচার নয়।মনে হতে পারে এমন সমাজের মানুষ পশুপাখির মত যেখানে সেখানে যৌন সঙ্গম করে বেড়ায়।বস্তুত এমন চিন্তার সঙ্গে বাস্তবতার বিন্দু পরিমাণ কোন মিল নেই।ফ্রান্সে দীর্ঘ দিনের বসবাসের অভিজ্ঞতায় এমন চিত্র কখনো আমার চোখে ধরা পড়েনি।রক্ষণশীল সমাজে যেমন দুইজন মানুষ ভালবেসে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে,কারো প্রয়োজন হলে পতিতালয়ে গিয়ে যৌনতা কেনে।প্রেমিক প্রেমিকা পার্কের নির্জন ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে চুপিসারে অভিসার করে। এখনেও তেমন। পার্থক্য শুধু এতোটুকু এমন রাষ্ট্রে একজোড়া মানুষ বিবাহ বহির্ভূত ভাবে দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে।এমন দাম্পত্যের ফলে কোন শিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটলে সেই শিশু রাষ্ট্রের অন্যান্য শিশুর মত সামাজিক ভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার লাভ করে।কোন পার্থক্য করা হয় না।

যে সমাজ যৌন স্বাধীনতায় রক্ষণশীল সে সমাজে যৌনতা আড়ালে হয় ফলে রক্ষণশীলতার পর্দায় ঢেকে থাকার কারণে বাস্তব চিত্র দেখা যায়না।অর্থাৎ এমন সমাজে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের অনুমোদন না থাকায় এমন সম্পর্কগুলো অতি আড়ালে সম্পাদিত হওয়ার প্রধান কারণ।ফলে এমন সমাজ বা রাষ্ট্রে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের কারণে কোন শিশুর আগমন ঘটলে সেই শিশুর স্থান হয় ডাস্টবিনে। কারণ রক্ষণশীল রাষ্ট্র ও সমাজ এমন শিশুর সম অধিকার নিয়ে সামাজিক ভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার সংরক্ষণ করে না।

কোন সমাজ ভালো, কোন সমাজ মন্দ, কোন সমাজ ব্যবস্থা আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা উচিত সেই পরামর্শ বা বিচারের দায়িত্বে উপরোক্ত কথাগুলো উল্লেখ করিনি। একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ঐ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের জীবনাচার,কৃষ্টি কালচার,রীতিনীতির উপর ভর করে। তাই কোন প্রথা ভালো, কোন প্রথা মন্দ তা নির্ধারণ করবে ঐ সমাজ বা রাষ্ট্রের মানুষ।এতো বড় পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের বসবাস।বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সামাজিক রীতিনীতি,সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এক একটা সমাজ ও রাষ্ট্র স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত।
কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য আমাদের সমাজে কোন নারী ধর্ষিত হলে ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক,আধুনিক জীবন যাপন,ধর্মীয় বিধিবিধান বহির্ভূত জীবন যাপন ইত্যাদি বিষয়কে সামনে এনে আমরা ধর্ষণকে পরিত্রাণ দেবার চেষ্টায় মেতে উঠি।যা বাস্তবতার সঙ্গে এমন অভিযোগের বড় রকমের কোন সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়না।

ধর্মীয় নীতি আদর্শ ও বিধিবিধান অনেক ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার মানে এই নয় রাষ্ট্র ও সমাজের সকল সমস্যার সমাধান এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে, শুধু বিশেষ আদর্শ অনুসরণ করলেই সুন্দর ও শান্তির সমাজ বিনির্মাণ করা যাবে।

এমন যদি হতো তবে ইসলাম ধর্মের পুণ্যভূমি সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশী নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়ে দেশে ফিরত না।যেখানে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মধ্যে তাদের মাতৃভাষায় ধর্মীয় আদর্শ,ন্যায়,নীতি ও মানুষে মানুষের সমতা ও মানবতার বানী শোনানো হয়।
এমন যদি হতো, তাহলে ভারতের ধর্মগুরু রাম রহিম কর্তৃক পূজারীদের ধর্ষণের গোপন যৌন রাজত্ব গড়ে উঠত না।
ভারতের কেরালায় রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিশপ কর্তৃক নান ধর্ষণের স্বীকার হয়ে বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে হতোনা।
দেশের বোরকা পরা পর্দাশীল নারীরা ধর্ষিত হতোনা।
প্রতিদিন সংবাদ পত্রের পাতায় দাঁড়ি,টুপী, জোব্বা পরা দরবেশ সুরতের মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু ছাত্র বলৎকারের সংবাদ শুনে আশ্চর্য হতে হতো না।
তাই যদি হতো, তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের নারীরা স্বল্প বসনের পোশাক পরার দরুন প্রতিদিন ধর্ষণের স্বীকার হয়ে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতো।

একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলতার জন্য কি প্রথা বা নিয়মনীতিকে বৈধতা দিতে হবে তা ঐ সমাজের মানুষের জীবনাচারকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করবে। তাদের গবেষণালব্ধ তত্ত্বকে বিচার বিবেচনা করে রাজনীতিবিদরা আইন বানাবে এবং প্রশাসন সেই আইন নিরপেক্ষ ভাবে প্রয়োগ করবে। এটাই প্রক্রিয়া।

একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি বিশৃঙ্খলার মূল কারণ থাকে অর্থনৈতিক বৈষম্য।যে রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য যত বেশী সেই রাষ্ট্রে অপরাধের হার ততো বেশী।এর প্রধান কারণ একটি রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক শ্রেণী বৈষম্য গড়ে ওঠে দীর্ঘদিনের বিরাজমান অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সূত্রপাত হয় যখন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি আইন, শাসন বিচার বিভাগ ভেঙ্গে পড়তে থাকে।এই তিনটি স্তর যখন রোগাক্রান্ত হয়ে যায় তবে ঐ রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের দুর্ভোগের কোন সীমা থাকে না। যে দুর্ভোগের ক্রান্তিকালের মধ্যে কাটছে বাংলাদেশের মানুষের জীবন। তাই, শুধু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আইন করে এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলে যারা আশা করে যারা বসে আছেন তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। যদিনা রাষ্ট্রের রোগাক্রান্ত আইন,শাসন ও বিচার বিভাগকে পরিপূর্ণ ভাবে আরোগ্য লাভ করানো না যায় তবে ধারাবাহিক গুম,খুন,দুর্নীতি,ঘুষের মতই ধর্ষণের মত বীভৎসতা থেকে রেহাই মিলবেনা।এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা। পর্ব -১
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা। পর্ব -২
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা। পর্ব -৩
প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আশাকরি, ব্লগারেরা আপনার লেখা পড়েছেন, নারী নির্যাতন কমবে।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: আপনার আশাবাদের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: সব গুলো পর্ব আমি পড়েছি। এতে আমি খুশি।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৫

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:০৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আমরাও প্রচুর পড়ি তবে মাদ্রাসায়।মক্তবেও প্রচুর পড়া হয় কিন্তু অর্থ বুঝি না।অর্থ বুঝার জন্য পড়াও হয় না,পড়া হয় সওয়াব পাবার জন্য।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:২৬

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: খুবই বাস্তব সম্মত কথা বলেছেন। যদি অর্থ বুঝে পড়ত তাহলে মূল্যবোধগুলো ধারণ করে পালন করার চেষ্টা করতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.