নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -২ )

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৫

আমার এলাকার এক বড় ভাই,নাম মুজিবর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার। সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জাতীসংঘ মিশনে দায়িত্বরত রয়েছেন।এক মাসের ছুটিতে ঘুরতে এসেছেন প্যারিসে। তার পরিকল্পনা ছিল এখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশ ঘুরে বেড়াবেন।কিন্তু,করোনা সংকটের কারণে আটকা পড়ে আছেন প্যারিসে।ওনাকে পূর্বে সরাসরি কখনো দেখিনি। বাড়ী করেছেন আমাদের এলাকায়। সেই ২০০৫ সালের পর থেকে রাজবাড়ীর বাইরে রয়েছি যার ফলে আমাদের এলাকা নতুন বসতি স্থাপন করা অনেকেই আমার অচেনা।আবার ষোল বছর পূর্বে যে শিশু মায়ের কোলে ছিল সেই শিশু এখন যুবক কিংবা যুবতী হয়ে উঠেছে তারাও আমাকে চেনেনা।মুজিবর ভাইয়ের আর একটি বড় পরিচয় হল তিনি আমার বড় বোনের মেয়েবেলার সই ময়না আপার স্বামী।আমাদের ছেলেবেলার ওই সময়ে স্কুলের বন্ধু কিংবা খেলার সাথীদের মধ্যে যার সাথে বেশী সখ্যতা গড়ে উঠত তখন এক মেয়ে অন্য মেয়ের সাথে সই ,এক ছেলে অন্য ছেলের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোস্তো পাততো।এই সম্পর্কগুলো হতো অন্য বন্ধুদের থেকে একটু বিশেষ এবং ভিন্ন ধরণের।অনেকটা আত্মীয়তা সম্পর্কের মত।ছেলে মেয়েদের সই কিংবা দোস্তো সম্পর্কের সুবাদে অভিভাবকদের মধ্যেও আলাদা সখ্যতা গড়ে উঠত,উপহার বিনিময় হতো,এক বাড়ীর সদস্যরা অন্য বাড়িতে আমন্ত্রিত হতো।ময়না আপা আমার বোনের সই হওয়ার সুবাদে ছোটবেলায় তাদের বাড়িতে অনেক যাওয়া হয়েছে,খাওয়া হয়েছে।সেই সুবাদে ময়না আপাদের পরিবারকে আত্মীয়র মত ভাবতাম, ফলে ওনার পরিবারের সবাইকে আমার ভালোভাবে চেনা জানা। মুজিবর ভাইকে রোববার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম আমার কুটিরে। দুপুর একটার দিকে দানুভ মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে মেট্রোর প্রবেশ দ্বারে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকার কথা থাকলেও উনি পৌঁছুলেন পনেরো মিনিট পরে।ওনাকে নিয়ে বাসায় এসে একটু গল্পগুজব খাওয়া দাওয়া হল।আমার দীর্ঘ বারান্দার সাজানো ফুলের বাগান ঘুরে দেখে ওনার মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন।সুদীর্ঘকাল পরে ময়না আপার সাথে হোয়াসআপে ভিডিও ফোনালাপ হল।উনি এখন ওনার নিজের বাসায় একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালান।দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে ওনাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমার আবাস এলাকা ঘুরে দেখাতে।এর মধ্যেই আইফেল টাওয়ার,ল্যুভর মিউজিয়াম সহ প্যারিসের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপায়হীন হয়ে আমি ওনাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পাহাড় অরণ্যে ঘেরা বুতসুমো পার্কে।আলো ঝলমল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন,অনেক দিনের মেঘে ঢাকা সূর্য মেঘ ভেদ করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।এখানে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন হল প্রকৃতির বিশেষ উপহার।মানুষ বছরের অধিকাংশ সময় পার করে শীতল মেঘাচ্ছন্ন প্রকৃতির মাঝে।অধীর প্রতীক্ষা থাকে একটু উষ্ণ আলো ঝলমলে দিনের।রোববারের দিনটি প্যারিসে এলো বর্ণনার মতই ভিন্ন রূপে।মানুষ এমন একটি দিনের আগমনে ভুলে গিয়েছিলো করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কথা, সরকার নির্দেশিত সতর্কতা,বিধিনিষেধ সব কিছু। মানুষের চেহারার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ আতংকের ছাপ পাওয়া গেলনা।পাহাড়ের ঢালু ভূমির উপর মকমলের মাদুরের মত দূর্বা ঢাকা ঘাস,তার উপর স্বল্প বসনে নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে শত শত মানুষ।পার্কের অলিগলির রাস্তাগুলোতে অনেকটা গায়ের সাথে গা লাগানো মানুষের লাইন।এমন চিত্র দেখে আমি অনেকটাই হতবাক হলাম। মুজিবুর ভাইয়ের সাথে হাঁটছি কিন্তু ভেতর থেকে প্রতি মুহূর্তে সতর্কতার সংকেত দিয়ে যাচ্ছে । যদিও ওনার মধ্যে তেমন কোন আতংকের বহিঃপ্রকাশ দেখা মিলল না।উনি ঘুরতে এসেছেন, নতুন নগর প্রকৃতির সৌন্দর্যে উড়ে গেছে ওনার ভেতরের ভয়ভীতি।আমি এখানকার জীবন যাপনে অভ্যস্ত।টেলিভিশনে নিয়মিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সংবাদ দেখে আসছি এবং সরকারের নির্দেশবলি অনুসরণ করে চলাফেরা করছি মার্চ মাসের শুরু থেকেই।আমাদের পরিবারের সবার পকেটে হ্যান্ড স্যানিটেশন জেল থাকে।আমার মেয়ে মিশেল সুযোগ পেলেই হাতে মাখে।মেট্রো বাসে খুব সতর্কতার সহিত চলছি অনেক আগে থেকেই।এভাবে চলাফেরা করতে করতে পরিবারের তিনজনই অনেকটা শুচিবাইগ্রস্ত মানুষ হয়ে উঠেছি ইতোমধ্যে।

কিভাবে,কবে এলাম এই দেশে,কিভাবে হয়ে উঠলাম এই ভূখণ্ডের একজন মানুষ,এই দেশের চাকুরী,বেতন,সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে মুজিবুর ভাইয়ের কৌতূহলভরা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বুতসুমো পার্ক থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম পার্ক দ্যো লা ভিলাত।সেখান থেকে পার্ক বুত দু সাপু রুস।সব খানেই লোকারণ্যে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যে নামার আগে ওনাকে নিয়ে ফিরে এলাম বাসায়।টিভি ছেড়ে ছোফায় বসতেই টিভি পর্দায় বিএফএম চ্যানেলে ভেসে উঠলো বুতসুমো পার্কের ছবি।যেখান থেকে আমরা কয়েক ঘণ্টা আগে ঘুরে এলাম।এমন পরিস্থিতিতে পার্কে মানুষের এমন উপচে পড়া ভীর দেখে আগামীর করোনা ভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে চলছে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ তাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে।এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ফরাসি জনগণের এমন আক্কেল জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড দেখে সরকারও বেশ শঙ্কিত হয়ে উঠলো এবং বিশেষজ্ঞদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা গুরুত্বের সহিত আমলে নিলেন।ঐদিন রাতেই ঘোষণা আসলো ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ জাতির উদ্দেশ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভাষণ দেবেন।ইতোমধ্যে মানুষের সকল জনাকীর্ণ স্থলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে,করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা পাঁচ হাজারের উপরে,প্রাণহানীর সংখ্যাও কম নয়, তাই মানুষ ধরেই নিয়েছিলো সরকার দীর্ঘমেয়াদী কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।সেই অনুমানকে মাথায় রেখে ১৬ মার্চ সকাল থেকেই সকলের মধ্যে শুরু হলো এক ধরণের যুদ্ধ আতংক।নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী,শুকনো খাবার ইত্যাদি মজুদের জন্য ট্রলি হাতে সবার ভিড় জমেগেলো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে।দোকানের তাকে রাখা পণ্য সামগ্রী যতটুকু যার চোখে পড়ছে সবটুকুরই সে দখল নিয়ে নিচ্ছে।আমার জীবদ্দশায় কখনো যুদ্ধ পরিস্থিতি বাস্তবে দেখা হয়নি।১৬ তারিখের সারা দিনের চিত্র থেকে আমার কল্পনায় ভেসে উঠলো যুদ্ধপূর্ব কোন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অসহায় দৃশ্যপট।আমার স্ত্রীও বেশ কয়েকটি দোকান থেকে কয়েক বার উদভ্রান্তের মত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে এনে আবার ছুটতে লাগলো ভুলে যাওয়া জিনিসপত্র কিনতে।দিন শেষে তার মজুদপণ্য দেখে তাকে ডাকাত দলের একজন বীর সদস্য মনে হল।যে মানুষ পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের ভয়ে বাসের এক স্টপেজ যেতে প্রায় দুই ইউরোর একটি টিকেট খরচ করে সেই মানুষ ভবিষ্যৎ সংকটের কথা ভেবে ঐদিন সাহসী ডাকাতের মত প্যারিসের দোকানপাট লুটে নিয়ে এসেছে।বিশ্বাস হচ্ছিলো না কিভাবে পারলো সে! মনে হল বাঁচার তাগিদে খাদ্যের জন্য বাঘ যেমন হিংস্র হয়ে ওঠে, সংকটময় মুহূর্তে একজন ভীতু মানুষও বীর হয়ে উঠতে পারে।
করোনা আক্রান্ত পৃথিবীর দিনগুলো। (পর্ব -১ )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:০৩

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.