নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৮)

২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১২

সমস্ত ফ্রান্সের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে।মার্চের শেষের দিক থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। প্রথম দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক Jérome Saloman যখন প্রতিদিনের করোনা পরিস্থিতির পর্যালোচনা ও পরিসংখ্যান নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় উপস্থিত হতেন তখন তার মুখের এককোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠত, কথায় আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা প্রকাশ পেত।কিন্তু এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে তার মুখে আর হাসি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা, মুখে ফুটে উঠে ক্লান্তি ও বিষণ্ণতার ছাপ।একটি নিম্ন জন্মহারের দেশে প্রতিদিন পাঁচ ছয়শত মানুষের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে হাজির হওয়া কোন স্বাভাবিক বিষয় নয়। এ সময় দেশের চিকিৎসক শ্রেণীর মধ্যে করোনা চিকিৎসা নিয়ে চলছে নানা পর্যালোচনা কিন্তু সঠিক সমাধান নেই কারো হাতে।ফরাসি সরকার দিশেহারা হয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে বার বার আলোচনায় বসছে।এর মধ্যে ফ্রান্সের মার্সেই শহরের Institut Hospitalo-Universitaire de Marseille এর পরিচালক প্রফেসর Didier Raoult করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর প্রায় সত্তর বছর ধরে ম্যালেরিয়া নির্মূলে ব্যবহৃত ক্লোরোকুইন প্রয়োগের পরামর্শ দেন।তিনি দাবী করেন, এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত যেসব ব্যক্তির উপর এই ঔষধটি প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন।তার এই মন্তব্যের পর, এই ঔষধটি করোনা নির্মূলের মোক্ষম ঔষধ হিসেবে ডাক্তাররা ব্যবহার করবে কিনা, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফ্রান্সের চিকিৎসক মহলে তর্ক বিতর্ক তুমুলে পৌঁছায়। এই সময়টাতে সমস্ত ফরাসি মিডিয়ার হিরো প্রফেসর দিদিয়ে রাউল।তিনি যেন অথৈই সমুদ্রের মাঝে দিকহারা ভাসমান তরির একমাত্র মাঝি। তার জীবনের বিভিন্ন গবেষণা ও চলমান করোনা ভাইরাস নিয়ে পর্যালোচনার প্রতিবেদন প্রতিদিন কোননা কোন টিভি চ্যানেল প্রচার করছে। Nice শহরের মেয়র Estrosi করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়।তার শরীরে la chloroquine ব্যবহারের পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।সরকারী অনুমোদন না থাকলে তিনি তার শহরে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর এই ঔষধটি প্রয়োগের ইচ্ছা পোষণ করেন।

কয়েকদিনের তর্কবিতর্কের পর অবশেষে ফরাসি সরকার করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে la chloroquine ঔষধটিকে ডাক্তারদেরকে ব্যবস্থাপত্র লিখতে অনুমোদন দেয়।পরবর্তীতে যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের শরীরে এই ঔষধটি প্রয়োগ শুরু হয়।
পহেলা এপ্রিল ২০২০, ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০৩২ জনে

এ সময়ে ফ্রান্সের ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস এলাকায় করোনা রুগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। হসপিটালের বেড,চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা কর্মী রুগীর তুলনায় সীমাবদ্ধতার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানকল্পে সরকারকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয়।এপ্রিলের শুরুতে ফ্রান্সের যে সব অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের হার কম এবং হসপিটালগুলোর ব্যস্ততা কম রয়েছে সেই সব অঞ্চলের হসপিটালগুলোতে ইল্‌-দ্য-ফ্রঁস থেকে রুগী হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ জন্য ফ্রান্সের দ্রুত গতির ট্রেন টিজিভি’র বগীগুলোতে তৈরি করা হয় ভ্রাম্যমাণ হসপিটাল।বগীগুলো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করা হয়। কয়েকটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। প্রত্যেকটি টিমে একজন করে অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট-রেসিসিটিটার,একজন ইন্টার্নশীপ ডাক্তার,একজন অচেতন প্রক্রিয়াকরণ বিশেষজ্ঞ নার্স এবং তিনজন সাধারণ নার্সের সমন্বয়ে এই টিম গঠন করা হয়।নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের অনেক রুগীকে পশ্চিম ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলের অনেক হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়।এই রুগী হস্তান্তর প্রক্রিয়া অভিযানে আরও যোগ দেয় ফ্রান্সের আর্মি এভিয়েশন, নেভী, ও বিমান বাহিনী। যারা হেলিকপ্টার ও নৌ জাহাজের মাধ্যমে ফ্রান্সের পার্শ্ববর্তী দেশ সুইজারল্যান্ড, জার্মানি,লুক্সেমবুর্গ ইত্যাদি দেশগুলোর হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ফ্রান্সের করোনা আক্রান্ত মানুষগুদের হস্তান্তর অব্যাহত রাখেন।জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে সংক্রমের হার বেশী থাকলেও মৃত্যুর হার ছিল কম। তাদের আগাম কিছু পদক্ষেপের কারণে ক্ষতির হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পেরেছিল।যে ব্যাপারে ফ্রান্স ছিল অনেকটাই পেছনে। জার্মানি এক সময় ফ্রান্সের ঘোর শত্রু হলেও এই বিপদের দিনে ফ্রান্সের মানুষের পাশে থেকে জার্মান সরকার সেবা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ কখনো শত্রু হলে সে সারা জীবনের শত্রু নয়, কখনো পরম বন্ধুর হাতও বাড়িয়ে দিতে পারে।ফ্রান্সের এই সংকটময় সময়ে জার্মানরা তারই প্রমাণ রেখেছে এবং এটাই হওয়া উচিত। তবে এই মানুসিকতা অর্জনের জন্য দরকার শিক্ষা ও প্রজ্ঞা, যা পৃথিবীর শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত দেশগুলোর মানুষ এই মানুসিকতার উচ্চ স্তরে পৌছুতে পেরেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এই মানুসিকতার স্তর থেকে এখনো শত শত মাইল দূরে।তার প্রমাণ বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বৈরী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক।

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৭)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৬)
করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -১ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -২ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -৩ )
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৪)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৫)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬

শেরজা তপন বলেছেন: এটা কি গত বছরের না এবছরের পরিসংখ্যান?

২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:১২

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: এটা ২০২০ সালের ঘটনা। করোনার প্রারম্ভের সময় ।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৩৯

Smart বলেছেন: ইমানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কেন করবেন https://dirilisertugrulforbd.blogspot.com/2021/04/blog-post_20.html

৩| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.