নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ১০)

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩১

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের লড়াই কৌশলের বর্ণনা পূর্বে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা একটু বর্ণনা করে নিলে অনুধাবন করতে অনেকটা সহজ হবে।

অনেক ছোটোখাটো শারীরিক সমস্যায় অনেকবার এখানকার ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি।আমি জীবনের অধিকাংশ সময় জন্মভূমি বাংলাদেশে অতিবাহিত করে এসেছি,ফলে আমার কাছে নিজের জন্মভূমির রীতিনীতি ও সমাজ সংস্কৃতির সাথে ফ্রান্সের পার্থক্যটা খুব সহজেই ধরা পরে।পার্থক্যগুলো ফরাসি জীবন ধারায় স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে বিশেষ।

প্রথমত আমি লক্ষ্য করেছি ,এখানকার ডাক্তাররা মনে করে না,তিনি একটি বিশেষ পেশার মানুষ।তাদের আচরণে প্রকাশ পায়, তার পেশাটা সমাজের অন্যান্য পেশার মতই একটি সাধারণ পেশা।তাই অন্য যে কোন পেশার মানুষদের সাথে যখন মিলিত হয় তখন পেশাগত অহংকার বা দম্ভ ফুটে ওঠেনা তাদের কথা বা কর্মকাণ্ডে।তারা ভাবে আমি যেমন আমার পেশাগত দায়িত্বের মধ্যদিয়ে মানুষের সেবা ও দেশের জন্য অবদান রাখছি, অন্য প্রতিটি পেশার মানুষও তার অবস্থান থেকে মানুষের সেবা ও দেশের জন্য অবদান রাখছে।

সম্বোধনের ক্ষেত্রে, সম্বোধন সূচক শব্দটি চিকিৎসক এবং রোগী উভয়েরই এক,ছেলেদের ক্ষেত্রে মসিও,মেয়েদের ক্ষেত্রে মাদাম।রোগীর সামাজিক স্তর যেটাই হোকনা কেন।অর্থাৎ রোগী এই দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারে আবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী হতে পারে।এ ক্ষেত্রে সম্মান সূচক সম্বোধনের বিন্দুমাত্র হেরফের হবে না।ডাক্তার এবং রোগী একই সম্মান সূচক শব্দে একে অপরকে সম্বোধন করবে।মসিও অর্থ স্যার,মাদাম অর্থ ম্যাডাম।তবে পেশাগত কাজের তাৎপর্য অনুধাবন করে ফরাসি জনগণ ডাক্তার এবং নার্সদের অন্তরের গভীর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে থাকে।
এখানকার ডাক্তার মনে করে রোগী অর্থ প্রদান করে আমার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছে সুতরাং আমার সর্বচ্চো পেশাগত সেবা নিশ্চিতের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে।
ডক্টর চেম্বারে নেয়া এপয়েন্টমেন্টের নির্ধারিত সময় কখনো কোন চিকিৎসক ইচ্ছে করলেই কোন বিশেষ মানুষের জন্য পরিবর্তন করতে পারবেনা। বিশেষ কারণে পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই ডাক্তার তার রোগীকে কারণ দর্শীয়ে অনুরোধ করবে।
রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত সময়ে ডাক্তার রোগীর সমস্যাগুলো অতি যত্নের সহিত শুনে ব্যবস্থা পত্র লিখবে।প্রয়োজন হলে আরও বেশী সময় ব্যয় করবে,পরবর্তী রোগী দেখার জন্য কখনোই তাড়াহুড়া করবেনা।

এখানকার জীবন যাপনে এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়।তবে নিজের বাস্তব বিপদে পড়া এক রাতের গল্পের ভেতর দিয়ে এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা বোঝাতে চাই।

২০১৪ সালের শেষের দিকে আমার স্ত্রী সন্তান বাংলাদেশ থেকে নতুন এসেছে।চলছে এখানকার খাবার -দাবার ও আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেবার চেষ্টা।আমরা প্যারিসের মঁনমার্ত এ Montmartre একটি স্টুডিও বাসায় ভাড়া থাকি।প্যারিস তখন প্রশাসনিক সতর্কতার নগরী।কারণ ৭ জানুয়ারি ২০১৫ ব্যাঙ্গত্বক ম্যাগাজিন শার্লি এবডো’র অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সহ ১২ জনকে। হামলা চালায় ইহুদী মালিকানাধীন সুপার মার্কেটে।ফলে প্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চলছে ফরাসি প্রশাসনের অতিরিক্ত নজরদারি।আমার বাসা প্যারিসের অন্যতম পর্যটন নিদর্শন সাক্রে ক্রোর বাসিলিকা Sacré-Cœur Basilica (খ্রিস্ট ধর্মীয় গির্জা) পাশে।এই ঘটনার কিছুদিন পর আমার বাসার নিচ তলার স্থাপন করা হয় ফ্রেঞ্চ আর্মির এক সেকশনের একটি সেনা ক্যাম্প।আমার ধারণা, এখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দুটি কারণ ছিল, প্রথমত আমরা যে প্রতিষ্ঠানের বাসায় ভাড়া থাকি, প্রতিষ্ঠানটি ইহুদী কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত, দ্বিতীয়ত এই এলাকাটি প্যারিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা। এই এলাকায় সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বিবেচনা করেই সার্বক্ষণিক সেনা নজরদারীর আওতায় এনে বিশেষ নিরাপত্তায় জোরদার করা হয়।প্যারিসে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারির হামলার রেশ না কাটতেই একই বছরের ১৩ নভেম্বর ঘটে আর একটি নারকীয় ঘটনা।যা ফ্রান্সের ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বার রেস্তোরা, কনসার্ট হলসহ অন্তত ছয়টি স্থানে একযোগে হামলা চালিয়ে ১২৭ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। আটজন হত্যাকারীও নিহত হয় যার মধ্যে সাতজনই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়।

১৩ নভেম্বরের শুক্রবার, ফ্রান্স জার্মানীর প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠলো প্যারিস এ্যাটাক।একটু অবিশ্বাসবোধ নিয়ে ফরাসি ভাষায় বোঝার চেষ্টা করছিলাম কি ঘটেছে।ফ্রান্স জার্মানির কাছে ২-০ গোলে ম্যাচ জিতেছে কিন্তু ম্যাচ পরবর্তী খেলার বিশ্লেষন, পুরস্কার বিতরণী,দর্শকদের বিজয় উল্লাসের কোন মুহুর্ত আর টেলিভিশনের প্রচার না দেখে মনে হলো সত্যি প্যারিসের বুকে কোন অশুভ তান্ডব চলছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলের পর্দায় ভেসে আসতে লাগলো ঘটে যাওয়া নির্মমতার বাস্তব চিত্র এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা।যা দেখে মনে হচ্ছিলো রোমাঞ্চোকর নগরী যেন রনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।মনের মধ্যে কিছুটা আশংকাবোধ কাজ করছিলো কারণ প্যারিসের গুরত্বপূর্ণ জনবহুল স্থান ও এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় একের পর এক মৃত্যুর সংখ্যা গননা করে টিভি চ্যানেলগুলো সংবাদ পরিবেশন করে চলছে।

এই ঘটনার পর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর প্রথমবারের মত সারা দেশ জুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল কলেজ ও সকল পর্যটনস্থান। পুলিশ বাহিনীকে দেয়া হয় বিশেষ ক্ষমতা।

প্যারিসে শুরু হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি।যেটা পূর্বে কখন ছিলনা।প্যারিস এমন এক নগরী যে শহরে এই দেশের বৈধ অবৈধ উভয় শ্রেণির মানুষ অবাধে বিচরণ করতে পারে। আমার এত বছরের প্যারিসে বসবাসরত জীবনে পুলিশ কখন পরিচয়পত্র চেক করেনি, কিন্তু এই ঘটনার কিছুদিন পর আমার বাসার সামনে চারজন সিভিল পুলিশ আমাকে তাদের পরিচয় দেখিয়ে আমার পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে বলে।আমি তাদের দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার পরিচয় দেখানোর পর মেরছি/ধন্যবাদ বলে ছেড়ে দেয়।একটি সন্দেহের নগরীতে পরিণত হয়েছিল প্যারিস।আমার বাসার নিচে ও আশেপাশে সেনা প্রহরা আরও জোরদার করা হয়।আমরা প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাইরে ঘুরতে যেতাম না। মাঝে মাঝে স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে পর্যটন স্থানগুলোতে ঘুরতে যেতাম, তা একেবারে বন্ধ করে দিলাম।ডিসেম্বরের শেষের দিকের এক মধ্যরাতে আমার মেয়ে মিশেল ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে বমি করা শুরু করল।কিছুক্ষণ বমি করার পর আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু পনের বিশ মিনিট পর আবার বিছানায় বসে বমি করে। এভাবে প্রায় পাঁচবার বমি করল।রাত প্রায় দুটো বাজে , আমাদের দুজন গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম।হঠাৎ করে কেন এমন হল? সারাদিন স্কুল করেছে। বাসায় এসে অন্যান্য দিনের মত খেলাধুলা করেছে, কোন অসুস্থতাবোধ চোখে পড়েনি। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নম্বরে ফোন দেব কিন্তু আমার ফরাসি ভাষা জ্ঞান তখন খুব দুর্বল অবস্থায় যা দিয়ে ভালোভাবে ওদেরকে বোঝান সম্ভব নয়।বাচ্চার সমস্যা নিয়ে এই গভীর চিন্তার মধ্যে আমার স্ত্রী জান্নাত সেও বমি করতে শুরু করল।তারও একই অবস্থা, দশ মিনিট পর পর বমি করতে লাগলো। দারুণ এক সংকটময় মুহূর্ত তৈরি হল। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আমি এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এলাম।আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় অভ্যরথনা কক্ষে নৈশ প্রহরায় রয়েছেন একজন সেনা কর্মকর্তা। আমি তাকে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার সংমিশ্রণে সমস্যা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। ভদ্রলোক বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নম্বরে তার অফিশিয়াল ফোন থেকে কল করলেন ।পনেরো মিনিটের মধ্যে আমাদের প্রবেশদ্বারের সামনে এম্বুলেন্স চলে এলো।এম্বুলেন্স রাস্তায় পার্ক করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেবার জন্য দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী আমাদের এপার্টমেন্টে প্রবেশ করলো।সবকিছু শুনে ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তারা দ্রুত হসপিটালে নেবার সিদ্ধান্ত নিলো, আমাকেও সঙ্গে যেতে বলল।ইতোমধ্যে দুজনই বমি করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়েকে আমি কোলে করলাম এবং আমার স্ত্রী ধীরে ধীরে হেঁটে এম্বুলেন্সে গিয়ে বসল।এম্বুলেন্স হসপিটালের উদ্দেশে রওনা হল, কিন্তু কোন হসপিটালে যাচ্ছে আমরা তা জানিনা। এম্বুলেন্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী দুজনকে দুটো কাগজের বমি করার পাত্র দিলো। এম্বুলেন্স ঘুমিয়ে পড়া নিস্তব্ধ শহরের পথ বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে দুজন বমি বমি করতে করতে আরও নেতিয়ে পড়ছে আর আমার মধ্যে দুশ্চিন্তার মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।চালকের পাশে বসা স্বাস্থ্যকর্মী আমাদের সিএমইউ বা স্বাস্থ্যবীমার কাগজ দেখতে চাইল। আমি ডকুমেন্টটি তাকে দেবার পর ডকুমেন্টেরের মেয়াদের তারিখ পরীক্ষা করে পুনরায় আমাকে ফেরত দিলেন। এরমধ্যে এম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল একটি হসপিটালের সামনে।এম্বুলেন্স থেকে আমাকে এবং মিশেলকে নামিয়ে নিয়ে গেলো হসপিটালের অভ্যর্থনা কক্ষে। ডেস্কে কর্মরত কর্মীর কাছে আমাদের দুজনকে বুঝিয়ে দিয়ে লোকটি চলে গেলো।বুঝতে পারলাম না জান্নাতকে কেন এই হসপিটালে ভর্তি করা হলনা।সে এই দেশে নতুন মানুষ, তার উপর ভাষা জানে।তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হল, একা একা কিভাবে সবকিছু সামলাবে এই ভেবে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। অভ্যরথনা ডেস্কের প্রক্রিয়া শেষ করার পর মিশেল ও আমাকে বসতে বলা হল পাশের অপেক্ষমাণ কক্ষে।এখানে আমার মত আরও অনেক মানুষ অসুস্থ শিশু নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় রয়েছেন। বুঝতে পারলাম এটি শিশু হসপিটাল।হসপিটালের নাম অপিতাল রবার্ট দো ব্রে।প্যারিসের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত।ডাক্তারের সাক্ষাতের অপেক্ষায় প্রায় এক ঘণ্টা পার হয়ে গেলো।এরমধ্যে মিশেল বেশ কয়েকবার বমি করে ফেলেছে। মিশেলের মত আরও কয়েকটি শিশু একই ভাবে বমি করছে। একটি শিশু বমি করতে করতে ফ্লোরে গড়াগড়ি শুরু করে দিলো।মনে হল এটি সিজনাল ভাইরাস জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা। ভাবলাম হয়তো স্বাস্থ্যকর্মীরা জান্নাতকে এরমধ্যে অন্য হসপিটালে নিয়ে গেছে। তাই পরিস্থিতি জানার জন্য ওকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ পেলাম।একটু চিন্তা হল আবার মনে হল হয়তো ডাক্তারের কাছে রয়েছে এজন্য ফোন বন্ধ রেখেছে।অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে আমাদের সিরিয়াল নম্বর মনিটরে ভেসে উঠলো। মিশেলকে নিয়ে ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করলাম। এক তরুণ ডাক্তার সমস্যা শুনে ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মিশেলকে একটা ঔষধ খাইয়ে দিলো এবং একটি প্রেসক্রিপশন লিখে ঔষধগুলো নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে বলল। আশ্বস্ত করলো, ভয়ের কোন কারণ নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।

ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর মিশেল আর বমি করলো না। ভোর পাঁচটা বাজে আমরা দুজন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়লাম।আবারো জান্নাতের নম্বরে ফোন করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ পেলাম। চিন্তা করছি, বেচারি কোথায় আছে? কিভাবে আছে ? তা একেবারেই অজানা। এই অন্ধকার রাতে মিশেলকে সাথে নিয়ে কোন হসপিটালে যাওয়াও সম্ভব নয়। কারণ রাতভর বমি করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবুও রাস্তায় আমার সাথে হাঁটছে আর সুস্থ মানুষের মত কৌতূহলী নানা প্রশ্ন করছে। মনে হচ্ছে ওর কিছুই হয়নি। ভোর পাঁচটা ত্রিশ মিনিট থেকে মেট্রো ট্রেন সার্ভিস চালু হয় । আমরা পোর্ট দ্যে লীলা এসে পনেরো মিনিট ট্রেনের অপেক্ষা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভাবলাম, বাসায় পৌঁছে মিশেলকে খাইয়ে দাইয়ে ওর বন্ধু মারিয়ানাদের বাসায় রেখে জান্নাতকে খুঁজতে বের হবো।সকাল সাড়ে ছটায় বাসায় বাসায় এসে দেখি জান্নাত বাসায়। জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার তোমাকে ফোনে পেলাম না, সামগ্রীক অবস্থা বল। ও বলল, ফোন বাসায় ছিল এবং ফোনে কোন চার্জ ছিল না আর এম্বুলেন্স আমাকে দ্রুত সেন্ট-ওয়া’র কাছের একটি হসপিটালে নিয়ে যায়। ওখানে জরুরি বিভাগের ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ঔষদ খাইয়ে বমি করা বন্ধ করে। পরে ডাক্তার বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই প্রেসক্রিপশনের ঔষদগুলো নিয়ম করে খাবেন, এখন একাই বাসায় চলে যেতে পারবেন আশা করি।পরে হসপিটাল থেকে মানুষকে জিজ্ঞেস করে করে বাসায় চলে এসেছি।
হতাশা ও দুশ্চিন্তার রাত পাড়ি দিয়ে পরের দিন ভোরের রাঙা সূর্যের আলোয় নতুন দিন শুরু হলো আমাদের। ঔষদ খেয়ে দুজনই সুস্থ হয়ে উঠলো।

ভেতরে কৃতজ্ঞতা বোধ অনুভব হল, এই বিপদে আমার কোন বন্ধু, আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজন পড়ে নাই। এম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য বিশেষ কোন ভিআইপি মানুষের রেফারেন্স প্রয়োজন হয়নি। শুধু আমি এই ভূখণ্ডের বিপদগ্রস্ত মানুষ, এই খবর শুনে গভীর রাতে ছুটে এসেছে স্বাস্থ্যকর্মীর গাড়ী। তারা যে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের হসপিটালে নিয়ে গেলো, এর জন্য তারা কখনো আমাদের প্রশ্ন করে জানতে চাননি, আপনাদের পেশা কি? শিক্ষা কি ? কোন দেশের মানুষ ? যখন আমার এবং মিশেলকে এক হসপিটালে রেখে জান্নাতকে অন্য হসপিটালে নিয়ে গেলো তখন আমার মধ্য কোন নিরাপত্তা শঙ্কা জাগেনি,কারণ সেই আস্থা রয়েছে এই দেশের আইন ও পেশাদারিত্বের উপর। জান্নাতের মুখে সব বিবরণ শুনে সেই আস্থা আরও বেড়ে গেলো।ওই রাতে যদি হেলিকপ্টার প্রয়োজন হতো,তাহলে ওদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য হেলিকপ্টার নামত আমাদের বিল্ডিঙয়ের ছাদে। জীবনের মূল্যকে গুরুত্ব দিয়ে এই রাষ্ট্র এভাবেই মানুষের পাশে থাকে সব সময়। বিপদগ্রস্ত মানুষটির পকেটে চিকিৎসা ব্যয়ের অর্থ আছে কিনা, সেটা পরে বিবেচ্য। প্রথমে জীবন, পরে অর্থ।
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৯)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৮)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৭)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৬)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৪)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৫)
করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -১ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -২ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -৩ )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: করোণা কালের ডায়েরী আমি প্রথম থেকেই পড়ছি। ভালো লাগছে।

০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১:০২

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রিয় রাজীব নুর ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.