নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ১২)

০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:২৬

ফ্রান্সে বৃদ্ধ বয়সে অধিকাংশ মানুষ একা থাকেন।এখানে যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে।সন্তানেরা বড় হলে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়।এমন সামাজিক বাস্তবতায় শেষ বয়সের একা মানুষটির অসুস্থতা নিয়ে চিন্তা হওয়ার কথা। তিনি অসুস্থ হলে কে তার পাশে থাকবে?কে হসপিটালে নিয়ে যাবে? চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে? ইত্যাদি। কিন্তু, এ জাতীয় চিন্তা এই ভূখণ্ডের একজন মানুষকে কখনো করতে হয় না। এই সমস্ত চিন্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে আমাদের দেশে একজন সন্তান অসুস্থ হলে তার পিতা মাতা তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য যে ধরণের প্রচেষ্টা চালায়, এখানে রাষ্ট্র তেমন ভাবেই একজন অসুস্থ নাগরিকে সুস্থ করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়।প্রতিটি নাগরিকের বিপদের ডাকে সাড়া দেবার জন্য রাষ্ট্র সর্বদা তৎপর থাকে। চিকিৎসা খাতে নিয়োজিত প্রতিটি কর্মী তার পেশাদারিত্ব শতভাগ প্রয়োগ করে মানুষকে সেবা দেবার প্রচেষ্টা চালায়।এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মীর সততা, নিষ্ঠা,মানবিকতা ও আন্তরিকতা যেমন রয়েছে, সেই সাথে রাষ্ট্রের নির্দেশিত আইনের যথাযত প্রয়োগের বিষয়টিও তাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হয়।যদি কারো অবহেলায় কোন নাগরিকের অপমৃত্যু হয় এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে দোষী ব্যক্তি যে পদাধিকারের মানুষই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে।রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে দেশের প্রতিটি বিভাগ যে কোন সঙ্কটে যোদ্ধার মত ঝাঁপিয়ে পড়তে সদা প্রস্তুত। তারই প্রমাণ মিলল করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ সহ অন্যান্য খাতের কার্যক্রম দেখে।

সঙ্কটকালীন সময়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের জনবলের সক্ষমতার চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় কয়েকগুণ বেশী ছিল। ফরাসি সরকার নানা ভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা কৌশল অবলম্বন করছে। একদিকে জনগণের জীবন মরণ সঙ্কট অন্যদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট।দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। শ্রমিক সঙ্কটে কৃষি ফসল মাঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লক ডাউনের কারণে বন্ধ হওয়া সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন সরকারকে টানতে হচ্ছে, সেই সাথে দেশের চিকিৎসা খাতের ব্যয় বেড়েছে। এখানে জনগণের বিপদ মানে সরকারের বিপদ, আবার সরকারের বিপদ মানে জনগণের বিপদ। তাই জনগণের বিপদে রাষ্ট্র সরব, আবার রাষ্ট্রের বিপদে জনগণ সরব। রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকার অস্থায়ী কিন্তু রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন, নানাবিধ সরকারী প্রতিষ্ঠান,প্রাকৃতিক সম্পদ,অবকাঠামো স্থায়ী এবং তার মালিকানা সবার। তাই কোন কারণে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন সম্ভাবনা দেখা দিলে এ ব্যাপারে সরকারের সাথে সাথে জনগণের উদ্বিগ্নতাও বাড়ে।এর প্রমাণ মেলে দেশের সঙ্কটকালীন সময়ে সরকারের নানাবিধ কাজে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের চিত্র দেখে। যখন ফরাসি সরকার সাধারণ মানুষকে গৃহবন্দি করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে, যখন মানুষ জীবন হারানোর ভয়ে শঙ্কিত, তখন দেশের স্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স, এম্বুলেন্স সার্ভিসে কর্মরত কর্মীগণ ভয়কে জয় করে বিরামহীন ভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে সেবা প্রদান করে চলেছে। যারা এই খাতে চুক্তিবদ্ধ চাকুরী করেন তাদের হয়তো কর্মের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।কিন্তু যাদের বাধ্যবাধকতা নেই ,নিজেকে রক্ষা করাই যাদের মুখ্য দায়িত্ব, সেই সব মানুষের সাহসিকতা সত্যি ভাবিয়ে তোলে ।

মানুষ কত মহান হতে পারে, তা দেখার সুযোগ মেলে মানুষের দুর্যোগকালীন সময়ে।বয়স যাদের পঁয়ষট্টি ঊর্ধ্ব,এই দুর্যোগকালীন সময়ে জীবন যাদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।যদি আক্রান্ত হয় করোনা ভাইরাসে, তবে জীবন ফিরে পাওয়া অনেকটাই লটারির মত। তাতে কি, জীবনতো স্থায়ী নয়,একদিন অসীম শূন্যের দিকে ধাবিত হতেই হবে অনিবার্য।যাত্রা পূর্বে যদি রেখে যাওয়া যায় কোন মহত্ত্বের নিদর্শন তবেই না সার্থক জীবন।বলছি ,কর্মজীবন থেকে অবসরে চলে যাওয়া ফরাসি ডাক্তার নার্সদের মহত্ত্ব গাথার কথা । যে সময় ঘরে বসে পেনশনের টাকায় আরাম আয়েশ করার কথা,সর্বোচ্চ সতর্কতায় ঘরের খিল মেরে নিজেকে সাবধানে রাখার কথা অথচ মানুষের ঘোর বিপদের দিনে এইসব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলো ঘরে বসে থাকেনি,মানবিক বোধের তাড়নায় অবসর ভেঙে আবার শুভ্র পোষাকে এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে ফিরে আসে হসপিটালে,দাঁড়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু মানুষের বিছানার পাশে।নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অন্যের জীবনের আলো ফোটানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে সেবা দিতে শুরু করে বিরামহীন ভাবে। এদের মধ্যে ছিলোনা কোন খ্রীষ্টীয়ান, মুসলিম,ইহুদী, হিন্দু,বুড্ডিস্ট,নাস্তিক অথবা সাদা বা কালো রঙের বিশেষ গোত্র প্রীতি।একটাই তাড়া মানুষকে বাঁচাতে হবে।চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ডাক্তার নার্সের ইতোমধ্যে মৃত্যু হয়েছে, সে সংবাদ জেনেও তারা ভীত না হয়ে অবসর ভেঙ্গে স্ব পেশায় প্রত্যাবর্তন করেন।পরবর্তীতে এদের মধ্যে থেকে মৃত্যু মুখে পড়তে হয় কয়েকেজন ডাক্তার ও নার্সের।ঐ সময় ফরাসি সরকার তাদের মহত্ত্বকে বীরের মর্যাদায় স্মরণ করেন।
অবসর নেয়া ফ্রান্সের সবচেয়ে বয়স্ক ডাক্তার ক্রিস্তিয়ান সেনে Dr. Christian Chesnay।বয়স একশ ছুঁই ছুঁই।তিনি জানেন, করোনা ভাইরাস তার জন্য সবচেয়ে বেশী ভয়ংকর। তবুও তিনি ফ্রান্সের ভাল দো মারণ Val-de-Marne অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য অবসর ভেঙ্গে পুনরায় স্বপেশায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ঘোষণা দেন এই মহামারি চলে গেলে তিনি পুনরায় অবসরে চলে যাবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ব্যাপারটি জেনে আশ্চর্য হন। তার সম্মানার্থে পহেলা মে শ্রম দিবসে তাকে এলিজে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান এবং ফরাসি জনগণের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ফ্রান্সের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ( Agnès Buzyn) আনিয়েস বুজা। তিনিও রাজনীতি ফেলে( Hospital D'instruction Des Armées Percy) হসপিটাল পেরসিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেবার জন্য যোগদান করেন এবং ঘোষণা দেন সামনের মহামারীর দিনগুলিতে আমার প্রথম পরিচয় হবে আমি একজন ডাক্তার।
এমন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষদের সম্মান প্রদর্শনের যথাযত বিশেষ কোন শব্দ অভিধানে আছে কি ? আমার জানা নেই।

যাদের ঘরে বসে কম্পিউটার গেমসে ব্যস্ত সময় পার করার কথা, অথবা কোন বন্ধুর টেলিফোনে আবেগ মিশ্রিত কথায় বুঁদ হয়ে কল্পনার ভেলায় ভেসে বেড়ানোর কথা ,জীবনের এই সোনালী সময়ে বাকী জীবন উপভোগের কথা ভেবে বিপদসংকুল পথ এড়িয়ে চলার কথা, তাদেরই মধ্য থেকে সময়ের সাহসী তরুণ তরুণীদের অনেকেই সকল ভয়কে তুচ্ছ করে করোনা মহামারী রুখতে ফরাসি মেডিকেল টিমের সহযোগী হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করেছে।ভেবে প্রশান্তিতে ভরে উঠেছে বুক, এদের হাতেই আগামীর দেশ, রচিত হবে আগামীর মানবিক ও প্রাণবিক পৃথিবী ……

এপ্রিল মাস,ফ্রান্সে স্ট্রবেরি ফলের পাকার মৌসুম। পাকা ফলগুলো শ্রমিক সঙ্কটের কারণে মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকদের সহায়তার জন্য জনগণের কাছে স্বেচ্ছা শ্রমের আহ্বান জানান। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইডে জমা পড়ে লক্ষাধিক মানুষের স্বেচ্ছা শ্রম দেবার আবেদন।
এমন দৃষ্টান্তগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে একটি মানবিক রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র পরিণত হয়ে ওঠে একটি পরিবার রাষ্ট্রে।সুতরাং, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের একে ওপরের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও প্রচেষ্টায় যেমন ভালো রাখা সম্ভব একটি যৌথ পরিবার, তেমনি রাষ্ট্র নামক বৃহত্তর পরিবারকেও।

করোনাকালে কিছু কিছু মানুষের মহানুভবতার কথা সত্যি আগামীর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তাওসিচ লিও ভারাডকার ছিলেন পেশায় একজন চিকিৎসক। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের পূর্বে টানা সাত বছর মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।২০১৩ সালে মেডিক্যাল রেজিস্টার থেকে তার নাম কাটা পড়ে। কিন্তু, দেশের সামগ্রিক দুর্যোগের কথা ভেবে আবারো তার নিবন্ধন করেন। ঘোষণা দেন, তিনিও ডাক্তারদের পাশে থেকে সরাসরি করোনা আক্রান্ত মানুষদের সপ্তাহে একদিন চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন।

স্পোর্টিং লিসবনের প্রেসিডেন্ট ফ্রেদেরিকো ভারান্দাস দেশের প্রয়োজনে আবারো গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে চিকিৎসা পেশায় ফেরেন।
এদের মত অন্য পেশায় নিয়োজিত ও বড় আসনে অধিষ্ঠিত চিকিৎসা জ্ঞান অর্জনকারী অনেক মহান মানুষ নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে সাদা পোশাকে মুমূর্ষু মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যাদের নাম হয়তো কোন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়নি। তা তারা চায়ও নি। শুধুই মানবিকতার টানে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

আমরা অনেকেই নিজেকে মহান ভেবে শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই করি। মনে হয়েছে, ওদের মহত্ত্বের বিশালতার কাছে দাঁড়িয়ে একবার নিজেকে পরিমাপ করে নেবার সময় হয়তো এবার এসেছে। আমার
নিজেকেই মনেই হয় ওদের মহত্ত্বের উচ্চতার কাছে কি ক্ষুদ্র ,নগণ্য মানুষ আমি !

করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ১১)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ১০)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৯)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৮)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৭)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৬)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৪)
করোনা কালের ডায়েরি (পর্ব ৫)
করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -১ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -২ )করোনা কালের ডায়েরি। (পর্ব -৩ )

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: বিদেশের এই একটা বিষয় আমার ভালো লাগে না। ছেলে মেয়ে বড় হলে আলাদা থাকে। আমরা সারা জীবন ১৪ গোষ্ঠি একসাথে থেকে অভ্যাস।

০৭ ই মে, ২০২১ রাত ২:১০

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বিষয়টি অন্য রকম লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবন যাপন ও সামাজিক ব্যবস্থায় মধ্যে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ফরাসি সমাজে ছেলে মেয়ে বড় হলে আলাদা থাকলেও পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে ।পিতামাতারও সন্তানের প্রতি যথেষ্ট মমত্ববোধ রয়েছে।

২| ০৭ ই মে, ২০২১ সকাল ৭:২০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

আপনি কি প্যারিসে থাকেন?

০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:৫৪

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: হ্যাঁ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.