নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী।কূপমণ্ডুকতা ঘৃণা করি।ভালোবাসি সাহিত্য।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল

বলার মত কিছুই নই আমি।একজন মহামূর্খ।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শালিস

০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ২:১৮

চৈত্রের সকালবেলায় প্রখর রোদের তাপকে ধোঁকা দিয়ে একতলা দালানের ছায়ায় বসে শামছু হাজী যখন দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে ফুরুৎ শব্দ করে ময়লা খয়েরী রঙের পানের পিক ফেলে তখন রোদের তাপ সহ্য করতে করতে ক্লান্ত জলিল আপন মনে ভাবতে থাকে এই পানের পিকের রং আর রক্তের রং কি এক?সে কিছুই মনে করতে পারে না।তার তখন গরুর রক্ত,মুরগীর রক্ত যা সে প্রায়শই দেখে সেসব রক্তের রঙের সাথে মেলাতে চেষ্টা করে।সে যখন গরু ও মুরগীর রক্তের রঙের সাথে পানের পিকের রং মেলায় তখন শামছু মুখে পান নিয়ে জাবর কাটতে কাটতে আরও পানের পিক তৈরি হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে থাকে।একসময় জলিল একটা উপসংহারে আসে।দুটোর রং এক নয়।পানের পিক ময়লা রঙের।রক্ত বিশুদ্ধ গাঢ়।তারপরও সে সন্তুষ্ট হতে পারে না।”গরু মুরগীর রক্তের সাথে মিল খুঁজলে কি মানুষের রক্তের সাথে মিল পাওয়া যাবে?"

যখন এসব কথা ভাবতে থাকে তখন সে অনুভব করে তার কানের নিচ থেকে তরলের একটা ধারা বয়ে যাচ্ছে।সে দেখার চেষ্টা করে।কিন্তু পারে না।সারা শরীরে ব্যাথা তার।সেটা সময়ের সাথে সাথে তীব্রতর হচ্ছে।তাকে যখন দুজন লোক মারছিল তখন সে এত ব্যাথা অনুভব করে নি।এমনকি বাঁশের সাথে বাঁধার সময়ও।কানের নিচে চড় খেয়েছে কয়েকটা।সেখানে রক্তপাত হচ্ছে।এটা তার জন্য নতুন না।মাঝে মাঝেই প্যাসেঞ্জারের সাথে বচসা হয় তার।তখন দুই-একটা কানের নিচে খায় অবধারিতভাবেই।সেও কিছু মনে করে না। মাঝে মাঝে তার মনে হয় চড় খাওয়া তার কর্তব্য।চড় খাওয়ার জন্যই সে রিকশাচালক হয়েছে।তবে আজ একটু বেশিই পড়েছে চড়।কানের মধ্যে একটা শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে।কেমন যেন সেটা!!আগে কখনো শোনে নি।কানটা টনটন করছে।তীব্র ব্যাথা সেখানে।শামছু হাজী তখন থেকেই পান চিবিয়ে যাচ্ছে।তাকে দেখে বাপের ষাড়ের কথা মনে পড়ে জলিলের।ষাড়টা মাঠের আইলে বসে আছে।জাবর কাটছে।সে সামনে গিয়ে বসে ষাড়ের জাবর কাটা দেখে।তাকে জিজ্ঞাসা করে, "কী বাল যে চাবাস হারাদিন!কিয়ের এতো মজা?" বলে হাসতে থাকে সে।

"নির্লজ্জ মাদারচোদ হাসে ক্যা?"

বজ্রকণ্ঠ ভেসে আসে শামছু হাজীর।"হজ্ব কইরা আইছি দেইখ্যা খানকির পোলারে গালি দিলাম না।নাইলে ওজু করাইয়া আনতাম অরে।"তখনই জলিলের সামনে থেকে ষাড় অদৃশ্য হয়ে যায়।আশেপাশে তাকানোর চেষ্টা করে।পাশেই তার বউকে আবিষ্কার করে।চুল এলোমেলো হয়ে আছে।জামাও ছেড়া দু-এক জায়গায়।তাকেও মেরেছে বোধহয়।মারলেই বা কী? এসব তার বউয়ের কাছে ডালভাত।গতকালই খুন্তির ছ্যাকা খেয়ে এসেছে বাড়ির কর্তৃর হাতে।পান থেকে চুন খসলেই মার খায়।তারপরও সে বাড়িতে কাজ করে তার বউ।বাড়ির মালিকটা ভালো।জলিলের বউয়ের দিকে কোনও কুনজর দেয় না।সামনেই আসেনি আজ পর্যন্ত। বউয়ের চেহারাটা ফুলে আছে।"কখন মারলো ওকে? জলিল যখন জ্ঞান হারিয়েছিল তখিন মেরে থাকতে পারে।বউয়ের কপালডা সেই!!আমি ছাড়া সবার মাইর খাইছে।আমিই মারলাম না খালি।" হঠাৎ করেই নাউজুবিল্লাহ বলে নিজের জিহ্বা কাটে জলিল।"বউ মারমু ক্যা? ধুরর!!! কত কষ্ট করে আমার লাইগ্যা!!"বউকে দেখে তার এলাকার পাগলনীর কথা মনে পড়ে।সামনে গেলেই ইট,মাটির দলা ছুড়ে মারতো। গালি গালাজ তো ছিলই।বউকে উদ্দেশ্য করে সে বলে বসলো,"পাগলনী, পাগলনী"। বউ সাড়া দিলো না।জলিলের রাগ হলো।ভাবলো হাত দিয়ে ঠ্যালা মারবে।কিন্তু হাত নাড়াতেই পারলো না।হাত দুটো পেছনে নিয়ে বাঁশের সাথে বাঁধা।কব্জিতে ব্যাথা পাচ্ছে প্রচণ্ড।রাগের মাথায় সাত্তারের সাথে মারামারি করেছিল সে।এতদূর গড়াবে ব্যাপারটা সে ভাবতে পারেনি।

"আরে মিয়া এত দেরি করলা কিয়ের লাইগ্যা? তোমার লাইগ্যা কতক্ষণ বইয়া থাকমু?" শামছু হাজী অনুযোগ করে হাজী মন্টুর প্রতি।মন্টু অনেক দেরি করে ফেলেছে আজ।চালের গুদামের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল অনেক।কীসব ভেজাল ধরতে এসেছে পুলিশ।তাদের ম্যানেজ করতে সময় লেগেছে।সুদখোর শামছু এসবের কী বুঝবে! মনে মনে ভাবতে থাকে মন্টু।শামছুর এই অনুযোগে জলিলের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে।মন্টু হাজী আসার পর শামছু হাজী বললো,"বিচার শুরু করো মিয়ারা।"যখন একথা বললো শামছু তখন জলিল ভাবতে শুরু করে"তাইলে এতক্ষণ কী হইলো? এই মাইর কি হুদাই খাইলাম?" মন্টু হাজী বিচার শুরু করলো।অভিযোগ করেছে বাহারের মা।অভিযোগ জলিল আর জলিলের বউয়ের বিরুদ্ধে। জলিলের বউ বাহারের মায়ের দিকে পিড়ি ছুড়ে মেরেছে।অল্পের জন্য তার হাতটা ভেঙে যায় নি।তার দুই ছেলে বিদেশে থাকে।তারাও চলে আসতে চেয়েছে ঘটনা শুনে।কত্তবড় সাহস বেটির!!! বাহারের মা, শামছু,মন্টু সকলেই একমত পোষণ করে এ ব্যাপারে।সাংঘাতিক অপরাধ।বাহারের মায়ের সম্মানহানি হয়েছে।পিড়ি ছুড়ে মেরেছে ফকিন্নিটা।মরেও তো যেতে পারতো বাহারের মা।তখনই হঠাৎ কথা বলে ওঠে জলিলের বউ।

"বুড়ি মাগী আমার জামাইরে মারছে ক্যা?"

" ফকিন্নির বাচ্চা আবার মুখের উপরে কথা কয়!! হ্যায় তর জামাইরে মারছে দেইখ্যা তুইও মারবি??" হুঙ্কার দিয়ে ওঠে শামছু।

"আমার জামাই আর সাত্তার মারামারি করছে।বুড়ি মাগীর তাতে কী?মাগীর ঘরের মাগী মারামারি না ঠ্যাকাইয়া আমার জামাইরে মারছে।আমার জামাই ভালো দেইখ্যা মাগীরে কিছু কয় নাই।" শামছুর হুঙ্কারে দমে না গিয়ে দ্বিগুণ তেজে বললো জলিলের বউ।

সাথে সাথে কেঁদে ওঠে বাহারের মা।"দ্যাখলেন আপনেরা দ্যাখলেন!!! কেমন বেদ্দপ দ্যাখলেন???"

"তর গায়ে যে আমার বটী টা ফিক্কা মারি নাই এইটাই তর ভাগ্য"। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো জলিলের বউ।

শামছু উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলো" আর সহ্য করা যায় না।খানকি মাগী বেশি বাড়ছে।জলিলের বান খুইল্লা দে।মাগীরে আগে শায়েস্তা করতে হইবো।"

বাঁধন খোলার পর জলিলকে মন্টু হাজী বললো,"শাসন কর তর বউরে।এডাই বিচার।তরা গরীব মানুষ দেইখ্যা ছাইড়া দিলাম।" বাকীরাও একমত পোষণ করলো।বর্তমান সময়ে এমন নিরপেক্ষ আর দয়ার্দ্র বিচার দেখা যায় না।জলিলের সারা শরীর আগে থেকেই ব্যাথা করছিল।সে ভাবছিল, বাপের ষাড়টাকে মারলে সেটা কোনও শব্দ করতো না।তাই ব্যাথা পায়নি মনে করে আবার মারতো সে।তার বউওও হয়তো ষাড়টার মতো নিঃশব্দে পড়ে থাকে।নইলে সবার মাইর ক্যামনে খায়।মাথা ঝিমঝিম করে জলিলের।আচ্ছা,আমি মারলে কি বউ ব্যাথা পাইবো?ব্যাথা পাইলেই বা কী? সবাই মারে।আমি না মারলে তো আরেকজন মারবো।আমিই বা বাদ থাকমু ক্যা?আমার বউ আমার মাইরই খাউক। "শয়তানের বাইচ্চা ক্যামন পঁচা পঁচছে সে গায়ে মাছি বইছে!!!" জলিলের কানের গোড়ায় জমে থাকা রক্তের ওপর মাছি বসেছিল।"পঁচা জিনিসেই তো মাছি বহে মিয়া"।মন্টু হাজীকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলে শামছু হাসতে থাকে।তাদের কথা অগ্রাহ্য করে গায়ের ব্যাথা উপেক্ষা করে জলিল যখন তার বউকে মারতে থাকলো তখন সেই মাছিটা উড়ে গিয়ে শামছুর গায়ে বসলো।মন্টু হাজী হাসতে হাসতে বললো,"মিয়া তুমিও তো পঁইচ্যা গেছ।" তখন শামছু বললো,"মাছির এক ডানায় থাকে জীবাণু অন্য ডানায় থাকে ঔষধ। জীবাণু ওয়ালা ডানা জলিলের গায়ে লাগাইছে। আমার গায়ে ঔষধ ওয়ালাডা লাগাইছে।বুঝলা মিয়া?" বলে কালো দাঁতগুলো বের করে হাসতে থাকে শামছু।যখন একথা বলে হাসতে থাকে শামছু তখন গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে বউকে মারতে থাকে জলিল।যখন জলিলের বউ নিঃশব্দে মার খেতে থাকে তখন সেখানকার উপস্থিত জনতা এই ভেবে পুলকিত হয় যে,ন্যায় বিচার হয়েছে।"ইনসাফ হইছে।" বলে বাহারের মা-ও তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। মারার সময় জলিলের ভাবনার জগৎ আবার দখল করে তার বাপের ষাড়।ষাড়টাকে সে মারতে থাকে।ষাড়টা কোনও শব্দ করছে না।সে আবার ভাবতে থাকে ষাড়টা হয়তো ব্যাথা পাচ্ছে না।নইলে হাম্বা বলে ডাকতো।তাই সে মনে মনে ঠিক করে নেয় যতক্ষণ পর্যন্ত ষাড়টা হাম্বা বলে ডাক না দেবে ততক্ষণ সে ষাড়টাকে মারতে থাকবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:১০

অশুভ বলেছেন: গল্পের প্লট, শব্দের গাথুনি আর গল্প বলার ধরণ। এক কথায় চমৎকার। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি?

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:২৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: য়াবারও ধন্যবাদ আপনাকে।আমি ব্লগের নিয়মিত পাঠক ছিলাম আগে।যদিও অতিথি হিসেবে।ব্লগে নিবন্ধন করেছি দুই মাস হলো। প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ পেয়েছি গতকাল থেকে।

২| ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৪৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা ও বিলম্বিত অভিনন্দন!
গল্পের চরিত্রগুলো বড় বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে এ ছোটগল্পটিতে। আপনার লেখার হাত খুব ভালো।

২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৫৪

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়। এত পুরাতন একটি পোস্ট সময় করে পড়ে মন্তব্য করেছেন।আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.