নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী।কূপমণ্ডুকতা ঘৃণা করি।ভালোবাসি সাহিত্য।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল

বলার মত কিছুই নই আমি।একজন মহামূর্খ।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রজনী আখ্যান

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪২



বিরতিহীন ঠাস ঠাস শব্দ হচ্ছে দরজায়। বরাবরের মতো ঠক ঠক নয়। শব্দের মাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।শুনে মনে হচ্ছে কেউ দরজাটি ভাঙার প্রবল অভিপ্রায়ে আঘাত করে চলেছে।নিরীহ দরজাটির যদি প্রাণ থাকতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে মারের চোটে অজ্ঞান হয়ে যেত। কিন্তু দরজাটি স্টিল শিটের হওয়ায় যন্ত্রণাদায়ক শব্দ করে চলেছে। সারাদিন ডিউটি করে এসে একটূ ঘুমিয়েছিলো সালেহা।শব্দের তীব্রতায় তার ঘুম ভেঙে যায় । শব্দ শুনে সে ভয় পেয়ে যায়।ঘর অন্ধকার।সে মোবাইলের স্ক্রিনে সময় দেখে নেয়। রাত দুইটা। সময় দেখার পরেই তার ভয়ার্ত ভাব কেটে যায়।এবার খিচড়ে ওঠে তার মেজাজ।

"গোলামের পুতে এহন ঘরে আইছে।"

বলেই দরজা খুলতে চলে যায় সে। যাকে ভেবে দরজা খুলেছে সেই ছিলো বাইরে দাঁড়িয়ে।আল-আমিন।তার স্বামী।টকটকে লাল চোখদুটো আধবোজা হয়ে আছে। সে দরজার পাশের টিনের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।পড়ে যাচ্ছিলো একটু পরপর।টিনের মধ্যে ঝনঝন শব্দের একটা স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো।দরজা খোলা মাত্রই সে উঠে দাঁড়িয়ে টকটকে লাল চোখদুটো বিস্ফোরিত করে তাকালো সালেহার দিকে।

'খানকি মাগী মইরা গেছিলি?? দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে ক্যা?'

"ডিউটি কইরা আইয়া ঘুমাইছি।তর লাহান টইটই কইরা বেড়াই আমি গোলামের পুত??"

সালেহার এই তীব্র ভর্ৎসনাময় জবাবে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে আল-আমিন। সালেহাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।ঘরে ঢুকেই আলনায় একটি নতুন গেঞ্জি দেখতে পায়। দেখেই পুরাতন একটা সন্দেহ নতুন করে দানা বাঁধে তার মনে। সে পুরো ঘর এলোমেলো করতে থাকে প্রবল রাগে।যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে।না পেয়ে তার ক্রোধ আরও বেড়ে যায়।সবকিছু মেঝেতে আছড়ে ফেলতে থাকে।রাগে গজগজ করতে থাকে আল-আমিন। আল-আমিনের ধাক্কায় মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলো সালেহা। সেখানে বসে বসে সে দেখতে থাকে তার স্বামীর কাণ্ড। দরজা খুলে তার স্বামীর টকটকে লাল বিষাক্ত চোখ দেখেই সে বুঝে গিয়েছিলো তার স্বামী আজ আবার ঝাক্কি খেয়ে এসেছে।প্রায়ই খায়।তখন তার স্বামীর মাথা ঠিক থাকে না।এসেই উল্টোপাল্টা কাজ করতে থাকে।গালিগালাজ তো স্বাভাবিক সময়েও করে।সেটা তার কাছে নতুন কিছু না। সেও চুপ করে থাকে না।গালির তুবড়ি ছোটায়।তার কামাই খায় আবার তাকেই গালি দেয়।এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না সালেহা। সালেহার গালি খেয়ে আবার আল-আমিনের পুরুষ সত্তা আঘাত পায়।তার ভেতরের জানোয়ার জেগে ওঠে। সালেহা গালি দিলেই তাকে ধরে মারে আল-আমিন। সালেহা প্রতিরোধ করতে যায়।কিন্তু আল আমিনের শক্তির সাথে পেরে ওঠে না।ফলে তাকে মার খেতে হয়। থাকার মধ্যে মুখটা ছাড়া আর কিছু নেই সালেহার।মার খেয়ে সে চিৎকার করে কাঁদে। গালিগালাজ করতে থাকে আল-আমিনকে। গালিগালাজের মধ্যে মধ্যে আবার আল্লাহর কাছে বিচার দেয়।

"তর বিচার আল্লায় করবো।তর মাতায় ঠাডা পড়বো।যেই হাত দিয়া আমারে মারছছ হেই হাত পঁচবো তর।শইল থিক্যা খইস্যা পড়বো।"

কিন্তু আল্লাহ পাক তার কথা শোনে না।আল-আমিনের মাথায় কখনো বজ্রপাত হয়নি কিংবা আল-আমিনের হাত খসে পড়ে নি।বিচার দিয়ে উল্টো বেশি মার খায় সালেহা। তার ছেলেমেয়েগুলো উঠে কাঁদতে থাকে তখন। তাদের চিৎকার অসহ্য লাগে আল-আমিনের। ছেলেটার বয়স ছয় বছর,আর মেয়েটার চার। তাদের কান্না থামানোর জন্য তাদেরও মারে আল-আমিন।ছেলেটা বাবার মতিগতি বুঝতে শিখেছে সামান্য।মার খেয়ে চুপ হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটা আরও জোরে চিৎকার করতে থাকে।এতে আল-আমিনের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়।আবার যখন মারতে যায় তখন সালেহা উঠে এসে মেয়েকে রক্ষা করে।তাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তার কান্না থামায়।এসব লঙ্কাকাণ্ডের পর আল-আমিন ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল বেলা সে একদম অন্য মানুষ। পরিপাটি হয়ে চুল আচড়ে,গেঞ্জি আর ছেড়া জিন্স পরে বের হয়ে যায় ঘর থেকে।সারাদিন তার আর কোনও খোঁজ থাকে না।রাতের বেলায় ফিরে এসে এসব কাণ্ড করে।

আজ ছেলেমেয়েরা বাসায় নেই।সালেহার মায়ের কাছে গেছে তারা। সারাদিন ডিউটি করে আসার পর সে অনেক পরিশ্রম করে ঘরটাকে গুছিয়েছিলো। আল-আমিন সেগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। সালেহার আর সহ্য হয় না।সে এবার চিৎকার করে ওঠে।

"ঘর আউলছ ক্যা মাগীর পুত? ঘর গুছাইয়া দেখছছ কোনওদিন??"

"তর নতুন জামাইরে কই হামলাইয়া থুইছছ? মনে করছছ কি?আমি ভোদাই? এই গেঞ্জি তো আমার না।ক। কই হামলাইছছ?নাকি আমি আহনের আগেই ভাগাইয়া দিছছ!আইজকা ত পোলামাইয়াও বাইত নাই।এইডাই তো সুযোগ।"

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না সালেহা। সে এজীবনে আল-আমিন ছাড়া অন্য কোনও পুরুষকে ভালোবাসেনি।আল-আমিন ছিলো তার স্বপ্নের পুরুষ।একেবারে তামিল নায়কদের মতো দেখতে।তার তামিল নায়কদের খুবই ভালো লাগে। শ্যামলা চেহারা,মাথার সামনের দিকে বড় চুল,সেই চুলে আবার নায়কদের মতো বাদামী রঙ করা, আটোসাটো গেঞ্জি,ছেড়া জিন্স চোখে সানগ্লাস এভাবেই দেখেছিলো তাকে প্রথম দিন। গার্মেন্টসের গেট দিয়ে ঢোকার সময় তাকে দেখেছিলো। গেটের পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিলো সে।সেটাও তামিল নায়কদের স্টাইলে। সিগারেট ফোঁকা শেষ হলেই সে তাদের পেছনে পেছনেই ঢুকেছিলো। একই গার্মেন্টসে চাকুরি করে তারা।কিন্তু আগে কখনো দেখে নি।হয়তো অন্য ফ্লোরে চাকুরি করে। দুদিন পর গার্মেন্টস ছুটির পর তাকে আবার দেখতে পায় সালেহা। সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।তখনই তাকে উদ্দেশ্য করে শিস দেয় আল-আমিন।কিছু কথাও বলে ।অসভ্য টাইপের কথা। সে এগুলোকে কোনও একটা তামিল সিনেমার সাথে মেলাবার চেষ্টা করে।পেয়েও যায়।তার মনে হয় ছেলেটা তাকে পছন্দ করে। সেদিনের পর থেকে সে আরও একটু পরিপাটি হয়ে যাতায়াত করতে থাকে কর্মস্থলে। একদিন বিকেলে আরও কিছু মেয়ের সাথে শাড়ি পরে ঘুরতে বের হয়েছিলো সে। তখনই হঠাৎ সে তার কোমরে ব্যাথা অনুভব করে।বুঝতে পারে কেউ তাকে চিমটি কেটেছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে আল-আমিন দৌড়ে পালাচ্ছে আর দূরে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গীরা হাততালি দিয়ে হইহই করছে। সালেহা গালি দিলো তার উদ্দেশ্যে।রেগে গেছে সে। সাথের মেয়েরা তাকে নিবৃত্ত করে। এর মধ্যে একজন ফোড়ন কেঁটে বলে, “তোমারে তো মনে ধইরা গেছে পোলার”। সালেহা বলে,”কি সব যা তা কস।“ তখন আরেকজন বলে বসে “ক্যা ?তামিল ছবিতে দ্যাহছ নাই? নায়ক নায়িকার কোমরে চিমটি মাইরা খারাইয়া থাহে!এই ব্যাডা ডরাইল্লা দেইখ্যাই দৌড় দিছে।“ বলেই হেসে কুটিকুটি হয় সকলে।সালেহার চিন্তার জগতে থাকে আল-আমিন।একদিন পহেলা বৈশাখে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে তামিল নায়কদের মত সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার করে তাকে প্রেম নিবেদন করে আল-আমিন। সে অভিভূত হয়ে তা গ্রহন করেছিলো। অল্প কিছুদিন পরেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। প্রথম প্রথম তাদের সংসার ভালোই চলছিলো।আল-আমিন একজন দায়িত্বশীল স্বা্মীর ভূমিকাই পালন করেছিলো।অনেক স্বপ্ন দেখেছিলো তারা।

একদিন রাতে আল-আমিন ঢুলতে ঢুলতে বাড়ি ফেরে।এরকমটা কখনোই দেখে নি আগে।চোখদুটো হালকা লাল ছিলো সেদিন। কারণ জিজ্ঞাসার পর বলেছিলো,

“সাইদের লগে ইট্টু ঝাক্কি খাইয়া আইলাম।“

“ঝাক্কি?হেইডা আবার কি? কৌতুহল প্রকাশ করে সালেহা।

“স্পিড/টাইগারের ভিত্তে ট্যাবলেট মিলাইয়া ঝাক্কি মাইরা গলাইয়া হালায়।হেব্বি পিনিক হয়।আমি অল্প খাইছি।তাতেই বমি কইরা শ্যাষ।কানে ধরছি আর কোনওদিন খামু না।“

কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হয় সালেহা। ঝাক্কি!!! কী অদ্ভূত আর হাস্যকর নাম!!! আল-আমিনকে নেশা করার অপরাধে কিছু বলতে চেয়েছিলো সে।কিন্তু তার দিকে চেয়ে থেমে যায়।অবস্থা দেখে কষ্ট পায় সে। “আহারে ! বমি করতে গিয়া কতই না কষ্ট পাইছে!!’ আল-আমিনের কষ্টের সমব্যাথী হতে চায় সে।আর আল-আমিন যেহেতু বলেছে আর কখনো খাবে না তাই তাকে মাফ করে দেয়াই যায়। এটা ভেবেই সে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সালেহা।

আল-আমিন তার কথা রাখে নি।রাতের পর রাত আল-আমিন দেরি করে বাড়ি ফিরতে থাকে। তার চোখের লাল রঙ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে হতে পিশাচের চোখের মতো বিষাক্ত লালে পরিণত হতে থাকে। চোখের সাথে সাথে তার স্বভাবও পরিবর্তিত হয়র পিশাচের স্বভাবে পরিণত হয়।প্রায়ই গালাগালি,মারামারি।প্রথম যেদিন তাকে মেরেছিল আল-আমিন সেদিন সালেহা তার মায়ের কাছে ফোন করে কান্নাকাটি করেছিলো। মা তাকে স্বান্তনা দিয়ে বলেছিলো “ব্যাডারা ইট্টু মারেই। সব ঠিক হইয়া যাইবো।“ কিন্তু সেটা আর ঠিক হয়নি।ভেবেছিলো বাচ্চাকাচ্চা হলে সে পথে আসবে।তাকে ভালো না বাসুক।অন্ততঃ বাচ্চাদের মুখের দিকে চেয়ে সে ঠিক হবে। কিন্তু সালেহার ছেলের পর মেয়ে হলো,তারা বর হতে লাগলো,আল-আমিনের কোনও পরিবর্তন হলো না। আল-আমিন আর সালেহা একই গার্মেন্টসে কাজ করতো। নেশা করার কিছুদিন পরই তার চাকরি চলে যায়।জানা গেল আল-আমিন প্রোডাকশন থেকে মালামাল চুরি করে বাইরে বিক্রি করতো।তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হয়েছে।সালেহা দিনরাত পরিশ্রম করতে লাগলো সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য।ওভারটাইম করতে লাগলো প্রায়ই। এরপর অনেক কষ্ট করে একটা ছোট চায়ের দোকান দিয়ে দিলো আল-আমিনকে। কিন্তু সেই দোকান চললো না।চলবে কী করে ?আল-আমিন ঘুম থেকে ওঠে দশটায়। এগারোটায় দোকান খুলে একটায় বন্ধ করে।আবার তিনটায় দোকান খুলে ছয়টায় বন্ধ করে নেশা করতে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় সালেহা। বিক্রির টাকার সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে একটা ব্যাটারিচালিত অটো কিনে দেয় তাকে। রোজগার চলছিলো অটো দিয়ে।কিন্তু একরাতে অটোতে বসে ট্যাবলেট খাওয়ার সময় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায় আল-আমিন। অটোসহই আল-আমিনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সালেহা থানায় গিয়ে অনেক অনুনয় করার পর আল-আমিনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।কিন্তু অটো ছাড়ে না।অনেক টাকা দাবি করে বসে পুলিশ।এত টাকা ছিলো না সালেহার কাছে। অগত্যা শুধু আল-আমিনকে নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলো সেদিন।

এরপর থেকে আল-আমিন একেবারেই বেপরোয়া হয়ে গেছে।নেশা করে বাড়ি ফিরে গালাগালি মারামারি হতেই থাকলো। কিন্তু সালেহা থামলো না।বাচ্চাগুলোর দিকে মনোযোগ দিলো সে। সকালে রান্না করে রেখে কাজে চলে যায় সালেহা।সেগুলো সকালে খায় বাচ্চারা।ছেলেটা প্রাইমারিতে পড়ে।পড়াশোনায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তাই তার জন্য একটা টিউশনিরও ব্যবস্থা করেছে সে।মেয়েটা ছেলেটার সাথে সাথেই থাকে। দুপুরে সে বাসায় আসে।ছেলেমেয়েদের সাথে সাথে সেও খায়।তারপর আবার চলে যায়।এরপর কাজ শেষে বাসায় ফিরে এসে ঘর গুছিয়ে রাতের খাবার রান্না করে। আর রাত গভীর হলেই আল-আমিনের তাণ্ডব।এসব অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে তার জন্য।কিন্তু তারপরও তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় একটা সময়।তখনই সে গালিগালাজ করে আর মার খায়।কিন্তু তারপরও সে কখনও অন্য লোকের কথা ভাবেনি।নিজের সংসার নিয়েই ভেবেছে।ফুটপাতে গেঞ্জিটা দেখে পছন্দ হয়েছিলো সালেহার।তাই সে এটা কিনে নিয়ে এসেছিলো আল-আমিনের জন্য।ভেবেছিলো আল-আমিন খুশি হবে।কিন্তু তা আর হলো কই? উল্টো অপবাদ দিলো তাকে। সহ্য করতে পারে না সালেহা। ক্রোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আল-আমিনের ওপর।তার গায়ে কিল-ঘুষি মারে।চেহারা খামচে দিতে চেষ্টা করে।চিৎকার করে বলতে থাকে'

“হারামির বাচ্চা,কি কইলি এইডা? এত মাইর খাইয়া তর সংসারে রইছি এই কতা হুননের লাইগ্যা?”

বরাবরের মতোই শক্তিতে পেরে ওঠে না আল-আমিনের সাথে। আল-আমিন তাকে ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়।মেঝেতে শুয়ে কাঁদতে থাকে সালেহা।আল-আমিনের কোনও বিকার নেই তাতে।সে বেসামাল হয়ে শুয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমন্ত আল-আমিনকে দেখে সালেহার মনে হয় “কিছুক্ষণ আগের মানুষ আর এই মানুষের কী তফাৎ!!” সে এতদিন আশায় বুক বেঁধে ছিলো।হয়তো সামনেও বাঁধবে।একদিন হয়তো আল-আমিনের ভেতরের জানোয়ারটা এভাবে ঘুমিয়ে পড়বে চিরকালের মতো,হয়তোবা কখনোই ঘুমাবে না।কিন্তু সালেহার সংগ্রাম কখনো শেষ হবে না। সে মেঝে থেকে উঠে আবার ঘর গোছানো শুরু করে। ঘর গুছিয়ে আবার শুয়ে পড়ে সে। তার মুখটা ব্যাথায় টনটন করতে থাকে। এমন সময় তার মনে পড়ে তার মায়ের স্বান্তনাবাণী “ব্যাডারা ইট্টু মারেই। সব ঠিক হইয়া যাইবো।“ মায়ের কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সালেহা।তাকে সকালে উঠতে হবে।ডিউটি আছে।

সমাপ্ত

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংলার মেয়েদের জীবনে শান্তি নেই

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,নিম্নবিত্ত সব জায়গায় অশান্তি।যদিও কারণ ভিন্ন।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: “ব্যাডারা ইট্টু মারেই এই এক কথায় সালেহার জীবন শেষ!

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই বাক্যটা প্রায় সব নিম্নবিত্ত নারীই জীবনে একবার হলেও শুনে থাকে।স্বামীর হাতে মার খাওয়া তাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়।বাকিদের কথা জানি না।

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গল্পটা সুন্দর লিখেছেন, একেবারে জীবন থেকে নেয়া। শুধু নিম্ন বা মধ্যবিত্তরাই না, আমাদের সব নারীই 'ব্যাডারা ইট্টু মারেই'-কে মেনে নিয়ে জীবন শুরু করেন এবং মারধোর খেয়েই 'মধুর' জীবন সমাপ্ত করেন। চমৎকার গল্প।

একটা ছোট্ট খটকা লেগেছে। সালেহার ব্যাপারে আল-আমিনকে আগে কোনো সন্দেহ করার কিছু পেলাম না। সেদিন রাতে নতুন গেঞ্জিটা দেখেই তার হুট করে রেগে যাওয়াটা সেজন্য একটু খটকার মতো লাগলো।

শুভেচ্ছা রইল।

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০২

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ওটা সালেহাকে মারার একটা অজুহাত হিসেবে এনেছি। সালেহাও প্রথম শুনেছে সেটা। এজন্যই এতটা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আপনার "কুটি মিয়ার যাত্রা দেখা" গল্পটাও ভালো লেগেছে।কতক্ষণ লেগেছে হিসেব করিনি। ওখানে গতকাল একটা মন্তব্য করে এসেছি।

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আচ্ছা করোনায় কতজন পোষাক শ্রমিক মারা গিয়েছে

৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪৬

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এটা শুনিনি কোথাও।টিভিতে তো শুধু নেতা,সাংবাদিক,পুলিশ আর ডাক্তারদের মৃত্যু আলাদাভাবে দেখায়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৮

আখেনাটেন বলেছেন: একটু নিচের দিকের কর্মজীবী মহিলাদের নিদারুন চিত্র এঁকেছেন। অনেকেই হয়ত এরকম লাইফই লিড করছে। ব্যথাতুর। বিধ্বস্ত। নিরস। অনিশ্চিত জীবন।

সুন্দর একটি লেখা পাঠের সুযোগ দেওয়ায় ধন্যবাদ। লিখতে থাকুন।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪০

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এদের সংগ্রাম সহজে শেষ হয় না। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েদের জীবনে পুরো অশান্তি আসে বিয়ে করার পর। স্বামী ভালো হলে ভাগ্য ভালো। তা না হলে সারা জীবন কাঁদতে হয়।

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩০

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: জ্বি।তারা জীবনের তিনভাগের একভাগ সময় ভালোভাবে কাটায়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: তমাল

সেলাই সৈনিকের জীবন তুলে ধরেছেন। সালেহাকে সন্দেহ করার আরও দু’একটা কারণ দেখানো যেত।

গল্পটা ভালই বলা চলে।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এটা আসলে কোনও কারণ ছাড়াই মারার অজুহাত হিসেবে দেখাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সেভাবে হয়ে ওঠেনি।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

৮| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৫

আমি সাজিদ বলেছেন: কত সালেহা যে এভাবে কেঁদে মরে !

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এরা মারা না যাওয়া পর্যন্ত কষ্ট সহ্য করে।সংগ্রাম শেষ হয় না সহসা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৯| ২৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী গল্প, বাস্তব জীবন থেকে নেয়া। তবে মেয়েরা ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হবার পর থেকে এখন অবশ্য পরিস্থি্তির কিছুটা হলেও উন্নতি হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি।
গল্পে তৃতীয় প্লাস। + +

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৯

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: বহুদিন পরে ব্লগে এসে দেখি বরাবরের মতোই বহু পুরাতন পোস্ট কষ্ট করে খুঁজে নিয়ে পড়ে আপনি আপনার মূল্যবান মন্তব্য রেখে গেছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এতকাল দেরি করে উত্তর দেওয়ায় আমি যারপরনাই দু:খিত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.