নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার চিন্তাভাবনা, আমার অবচেতন মন, আমার নিঃশব্দে প্রচন্ড কোলাহল হয় এক অজানা-অচেনা শব্দদূষণে।আমি বিমুগ্ধ, বিমোহিত হয়ে শুনে যাই শুধু।একটার পর একটা শব্দ যেন বাতাসে ভেসে আসে।আমি স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে ভেসে যাই।সময় সময় ঠাহর করতে পারিনা নিজের টুকরো-টুকরো এবং খন্ড-খন্ড স্মৃতিগুলোকে।আমি একেলা থেকে যাই, ভেবে যাই কোলাহলে আমার এই নিঃশব্দ স্বতস্ফুর্ত রুপ কি ভয়াবহই না হতে পারে।বিষন্ন আর ঢুলোঢুলো চুখদুটোতে চশমার বারান্দা দিয়ে আমি দূর-দূরান্ত দেখার চেষ্টা করি।নদীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত।সন্ধ্যায় জোয়ার-ভাটার সাথে বাতাসের তীব্র বেগে একসময় পিছনে যেতে বাধ্য হই।আমি ভয় পাই, পিছিয়ে যাই, ধরা পরে যাই এই নিষ্পাপ প্রকৃতির কাছে, চোখদুটো দিয়ে জলের কয়েক ফোঁটা পড়তেই আমি বুঝে নেই আমার হারিয়ে ফেলা আনন্দঘন শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন কে।এরপর আস্তে করে চশমাটা খুলে আটকে দেই গড়িয়ে আসা জলটুকুকে, আবার পথচলা আরম্ভ করি এমন নিঃশব্দে।আমি হাঁটতে থাকি, চলতে থাকি সমস্ত মায়া ডিঙিয়ে।আমি আবাক হই প্রতিদিন আয়নায় নিজেই নিজের প্রতিবিম্ব দেখে।
রাত তিনটে বেজে সাতাশ মিনিট।আঙুলগুলো মুঠোফোনের নীল স্ক্রিনের কি-বোর্ড স্পর্শ করেই চলেছে।একটা কবিতা লিখছি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দিলাম।এখন সময় রাত তিনটে বেজে তেত্রিশ মিনিট।একটু মৃদ হেসে নিলাম, সময়ের পার্থক্য ছয় মিনিট কিন্তু স্মৃতিতে এর পার্থক্য প্রায় ছয় বছরের।ঠিক এই দিন, এই রাত্রিতে, একটা ভাঙ্গন, ঠিক তাও নয় বরং একপক্ষীয়, সমবেদনা নিজের জন্য আজ খুব করে।কবিতাটির উপর হাত বুলাচ্ছি আর কি সব ভাবছি।
“এখন সময় রাত তিনটে সাতাশ
আমি দেরি করে ফেললাম
ঠিক যেমনটা সেদিন মেঘ করেছিলো
কিন্তু,
অনুভূতিটা আজ আরো গাঢ়
এটা কি তুমি?
হয়তো, হয়তো নও!
মন ভুলানো বাতাস
তোমার মতোই নিঃশব্দে
একবার এসেছিলো এর আগেও
সময়টা গড়িয়ে এখন তিনটে তেত্রিশ
আমি আবারো দেরি করে ফেললাম
ঠিক যেমনটা সেদিন মেঘ করেছিলো।”
কম্পন অনুভূতি হলো মুঠোফোনে।ফোনকল এক পরিচিত নম্বর থেকে।আমি সত্যিই আজ একটা ফোনকল এই মানুষটার কাছে থেকে খুব করে প্রত্যাশা করেছিলাম।অদ্ভূত সুন্দর তার ব্যক্তিত্ত্ব।যত দেখি তত মুগ্ধ হয়ে যাই।
আমিঃ হ্যালো?
সেঃ এত দ্রুত ফোনটা রিসিভ করলি যে! অপেক্ষায় ছিলি মনে হচ্ছিলো?
আমিঃ নিজেকে লুকিয়ে লাভ কি।সত্যিই অপেক্ষা করছিলাম।
সেঃ কি ব্যাপার বলতো? কন্ঠটা এমন শোনাচ্ছে কেন? বাবাকে মিস করছিস?
আমিঃ বাবাকে তো সবসময় মিস করি।একটু বেশিই ভালোবাসতাম তাকে।আর তারপর নিজের চোখের সামনে তিনি চলে গেলেন।যদি আমার কোন ক্ষমতা থাকতো? আমি যেতে দিতাম তুই বল?
সেঃ শান্ত হো।কবিতাটা আমার ভালো লেগেছে।
আমিঃ বলছিস?
সেঃ হুম, বলছি।কিন্তু এখনো তুই পিছনে ফিরে তাকাস?
আমিঃ হ্যা, এখনো তাকাই।এখনো আমার ভিতর কোথাও না কোথাও বলে যায় যে, সে আসবে।একদিন নিশ্চিত ফিরে আসবে।
সেঃ তাহলে আমি? আমার পরিচিতি কি কোনদিন তোর কাছে পাবো না?
আমিঃ জানিনা।মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে জানিস।আর সেই সীমাবদ্ধতাকে ভেঙ্গে কিছু বলে দেয়া অন্যায় হয়ে যায়।আমি কারো প্রতি অন্যায় করতে চাই না।
সেঃ তাহলে এসব নাটক? দেখা করা, কথা বলা, একসাথে হাঁটতে গিয়ে মনের নিংড়ানো অনুভূতিগুলো ভাগাভাগি করা।এসবের কি কোন মানে নেই?
আমিঃ জানিনা।ফোনটা রাখছি।শুভ রাত্রি।
আজ কয়েক বছরবাদে পরিচিত এই মুখটির সাথে আমার আবার দেখা।সবকিছু পাল্টে গেছে।কোনকিছুই আর আগের মত নেই।চা অর্ডার করতে গিয়ে অনুভব করলাম, হঠাৎ করে আরো এককাপ “র”-চা এর প্রয়োজন বৃদ্ধি পেয়েছে।ঠোঁটের কোণায় মেয়েটার এখনো আগের মতো হাসি লেগে আছে।আগের মতোই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।আর আমি আগের মতোই যা-তা।ওর এই হাসিটা এখন আর একলা নীরবে নিঃশব্দে দেখার অধিকার আমার নেই।পাশের অগন্তুক সেই অধিকারটুকু ছিনিয়ে নিয়েছে।
“ঐ মেয়েটার কি খবর? যোগাযোগ হয় তোদের?”-বলে উঠলো সে।
“হুম, আসলে আমার একটু খরা চলছিলো তাই একটু বন্যার দরকার হয়ে পড়ে।আর তিনি সেই বন্যার জলে ভেসে গেছেন।”-এটা বলেই মৃদ মৃদ হাসছিলাম আমি।
এরপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরুপ তিনজন একসাথে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম।
চোখের কোণায় ক্লান্তির জল অনুভব করছিলাম।আর মনে মনে দ্বিতীয় বর্ষে স্যারের বলা সেই একটা কথা আওড়াচ্ছিলাম, “খেলার সময় খেলতে হবে, খুব করে খেলতে হবে”।
[Inspired by true events]
ছবি কৃতিত্বঃ ইন্টারনেট বন্ধু।
©somewhere in net ltd.