নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত দুটো বেজে পাঁচ মিনিট।জেগে আছি।নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় আমি একজন সাডিস্ট।কখনো কখনো নির্দিষ্ট কারণে মন খারাপ থাকে আর কখনো কখনো এমনিই, কোনো রকম কোনো কারণ ছাড়াই মনটা ভীষণ খারাপ থাকে।আজ অবশ্য এক বিশেষ কারনে মন খারাপ।
ওর নাম প্রিয়া।
কি! সুন্দর নয় নামটা?
আমার জীবনের সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে পছন্দের নাম এটি।ম্যাসেঞ্জারে পরে থাকা কিছু ম্যাসেজ আমি আজ চেক করছিলাম।দুজনের রসবোধক কথাগুলোর মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কখন জানি।এখন আবার চাপা কষ্ট এসে হানা দিচ্ছে।স্মৃতিগুলো উস্কানিমূলক বার্তা পাঠাচ্ছে মস্তিষ্কে।তাই হয়তো মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো।
খানিকবাদে ফোনে একটা অদ্ভূত শব্দ হলো।মনে হয় কেউ কোনো বার্তা পাঠিয়েছে।তাই তাড়াহুড়ো করে তা দেখতে গেলাম।কিন্তু বার্তাটি দেখেই চোখ তার জায়গায় অনড় হয়ে গেলো।
“Do you want to play the Game?”-এই বার্তাটি এসেছে এক অদ্ভুত নম্বর থেকে।নম্বরটি মাত্র চার ডিজিটের।শুরু থেকে, ২৪৮৯।আমি যতদূর জানি, যে কোন আইডির নামের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বর্ণমালা প্রযোজ্য।কোন ধরণের সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়।কিন্তু এটা এক অদ্ভূত আইডি।এখানে নামের বদলে সংখ্যা দেখতে পাচ্ছি।ভাবছিলাম এটা হয়তো বিশেষ কোন ব্যক্তির আইডি হবে।যে কিনা নিজের নাম গোপন রেখে অন্যদের সাথে মজা তুলতে চায়।তাই আমি খুব বেশি একটা দেরি না করে বার্তাটির প্রত্যুত্তর দিলাম, “Yes..... but who are you?”-লিখে।কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম তার উল্টোটি ঘটলো।কোথায় আমরা বেশ মজার মজার কনভারসেশনে যাবো, একটু স্প্যামিং করবেন, আমায় ঠকিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন।আর আমি ঐ বিশেষ ব্যক্তিকেও দেখিয়ে দেবো যে, সবাই আপনার মত ঢোল নয়।কিন্তু হলো তার উল্টো।অদ্ভূত আইডির মালিকটি আমায় লিখে বসলো,“Welcome to Hell”- এর সাথে এক অদ্ভূত ইমোটিকন ব্যবহার করা হয়েছে, যা আমি আগে কখনো দেখিনি।কিন্তু এর মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝলাম না।তাই শুরু হয়ে গেলো গোগল সার্চ।এই নম্বর থেকে আর কাকে কাকে বার্তা পাঠানো হয়েছে? কাকে কাকে ফাঁসানো হয়েছে? আর এদের আসল উদ্দেশ্যটা কি?
হঠাৎ করে এক ইউটিউব চ্যানেল লাইভে চলে এসেছে।চ্যানেলের নাম,
“২৪৮৯-সাবধান!”
এই নামটা দেখেই ভিতরটা কেঁপে উঠলো।ভয়ে একবার শিহরিত হলো পুরো শরীরটা।ভিডিওটি ওপেন করতেই দেখা গেলো চারপাশে পরে আছে মারাত্মক জখম হওয়া কিছু মানুষ।খুব সম্ভববত ওরা সবাই মারা গেছে।কারো পা কেটে নেয়া হয়েছে, কারো হাত নেই, কারো চেহারাটা আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে, কারো মাথায় রড প্রবেশ করানো হয়েছে।কিন্তু আরো একটি অদ্ভূত ব্যাপার হলো যে, কারো শরীরে রক্তের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।বেশ সুন্দর করে মম দিয়ে একেক জনকে একেকটা মূর্তি বানিয়ে রাখা হয়েছে।একবার এই চ্যানেলের রিপোর্টারের কথা ভেবেও মাথা ঘুরে উঠলো।কীভাবে তিনি এত সাহস নিয়ে এসব লাশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন আর কথা বলছেন।তার সাবধানী কন্ঠ আস্তে আস্তে আরো সাবধানী হওয়া শুরু করলো,
“আপনি কি আজ ২৪৮৯ এই নম্বর থেকে কোন বার্তা পেয়েছেন? যদি পেয়ে থাকেন তাহলে তার কোন উত্তর দিবেন না।কারণ ওপাশে অপেক্ষা করছে আপনার যমদূত।উত্তর দেবার সাথে সাথে আপনার নাম-ঠিকানা এমনকি আপনার ফোনও তাদের কব্জায় চলে যাবে।নিয়ন্ত্রণে থাকবে না আপনার মুঠোফোনের পাওয়ার বোতামটাও(অপশন)।”
কথাটি শোনার পরপরই আমি আমার মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ দিলাম।কিন্তু না, কোন অপশন-ই মোবাইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠছেনা।আমি একসময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।ভিতরটায় মৃদ-মৃদ কাঁপুনি লক্ষ্য করলাম।তাই আরো একবার চেষ্টা করলাম মোবাইল ফোনটি বন্ধ করার জন্য।এরপর আরো একবার, আরো একবার এবং আরো একবার।কিন্তু কোনোভাবেই মোবাইল ফোনটি বন্ধ করতে পারছিনা।হঠাৎ আরো একটি বার্তা আসলো ঐ নম্বর থেকে, একটা ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে।আর উপরে লেখা হয়েছে, Level-1।
একসময় মাথায় আসলো এটা কি ব্লু-হোয়েল! এরকম কোন গেইম না কি! একটা লেভেল শেষ করে তারপর আরেকটা লেভেল, এভাবে পঞ্চাশ তম লেভেলে গিয়ে মরবো;তাও আবার আত্মহত্যা।একটু হাসিও পেলো।ধূর ছাই! আমি আত্মহত্যা করবো কোন দুঃখে!
ডকুমেন্টটি ওপেন করা হলো না।পাছে আবার বিপদ বাড়ে সেজন্য।বরং ফোনটা একপাশে রেখে কম্বল মুড়ি দিয়ে মাত্র ঘুমাতে যাবো।ঠিক তখনই মোবাইল ফোনটি আরো একবার বিপ দিলো।ফোন প্যাটার্ন মিলাতেই আবার ভেসে উঠলো একই নম্বর থেকে পাঠানো আরো একটি বার্তা।এবার আমার চোখ ছানাবড় হয়ে গেলো।বার্তাটি হলো,
“We hired Devil-256473 to murder you. You’re going to die, soon. Get ready to die in peace.”
শুধু তাই নয়, বার্তাটিতে আইডির নাম মেনশন করা হয়েছে।তাই সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলাম বার্তাটিতে উল্লেখিত আইডিতে।চলে গেলাম আইডির এ্যাবাউটে।যদিও এই ডেভিল নামের মানুষটিকে আমি পুরুষ মনে করেছিলাম; কিন্তু ইনি একজন মহিলা।তাই ভয় না পেয়ে উল্টো মজা পেলাম।আর যাইহোক, আজ আমার সাথে চরম রকমের মজা তুলছে ওপারে থাকা মানুষটি।দেখতে ইচ্ছে হলো কোন সুন্দরী এই মহান কাজ সম্পন্ন করবেন।তাই চলে গেলাম তার প্রোফাইল ফটোতে।কিন্তু কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।অন্ধকারের মধ্যে কালো কোর্ট পরা একজন মহিলা বসে আছেন।পাশে এক অনেক শাখা বিশিষ্ট লম্বা মৃত গাছ।চোখমুখ সাদা, এছাড়া আর কিছুই স্পষ্ট নয়।তাছাড়া ঐ আইডি থেকে আরো কিছু তথ্য পেলাম।তিনি আমার বন্ধু তালিকায় রয়েছেন।টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন,
“Going to murder you Mr. Rijvi Hasan.”
বুঝলাম, কিন্তু এত সহজে মেনে নেই কি করে! তাই আবার গোগল সার্চ দিলাম।এবার বেশ কয়েকটি পেইজ এই নামে খুঁজে পেলাম।মাত্র কয়েকমিনিট আগে আপডেট করা হয়েছে প্রত্যেকটা পেইজ।না, এটা ব্লু হোয়েল গেইম না।এই চক্রটি পুরোপুরি আলাদা।এরা একেবারে প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছে।খুন করছে প্রতিদিন এক লাখেরও বেশি মানুষকে।খুব দ্রুত আমাদের পৃথিবীটা এদের কব্জায় চলে যাবে।বিভিন্ন ভেরিফাইড পেইজ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, “Please! Don’t reply.....don’t reply.....don’t reply.....”
এবার সত্যি সত্যিই মৃত্যু ভয়টা পেয়ে বসলো।
হাতে রয়েছে মাত্র এই রাতটুকু।যেভাবে চারপাশে মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে আগামীকাল বেঁচে থাকবো বলে মনে হচ্ছে না।হঠাৎ করে শৈশবের স্মৃতিগুলোতে ফিরে গেলাম।দেখতে পেলাম একপাশে আমার বাবা আর একপাশে আমার মা আমার হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে হাঁটছেন।চোখেমুখে আমার কি যে আনন্দ।এই তো আমার বাবা আছে আমার পাশে, আমার মা আছে আমার পাশে;আমার আবার কীসের ভয়।কিন্তু সেই চেতনাও বেশি সময় টিকলো না।একসময় বুঝলাম, বাবা অনেক আগেই তো চলে গেছেন।আমি বড় হয়ে গেছি।বৃদ্ধ মা পাশের রুমে একা একা ঘুমান।কি জানি তার কষ্ট হয় কি না! শুধু দায়িত্বগুলো কোন অভিযোগ ছাড়াই পালন করতে দেখেছি।আজও রাতে খাবার দেবার সময় বলে গেলেন, “প্রিয়া ভালো মেয়ে।অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে।আর তুই এত মিষ্টি একটা ছেলে যে, তোকে ছাড়া প্রিয়া থাকতে পারে না কি! দেখিস, একদিন ঠিকই চলে আসবে সব মান-অভিমান ভুলে”।
আজ খুব ইচ্ছে করছিলো মায়ের পাশে গিয়ে ঘুমাবো।অনেকদিন হলো মায়ের আচলের ওই মায়ামাখা ভালোবাসার গন্ধটুকু নেওয়া হয় না।তাই আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠলাম, তারপর দরজায় কড়া নাড়তেই বুঝলাম মা এখনো জেগে আছে।মনে হচ্ছিলো নক করার আগেই ঐ বৃদ্ধ মহিলাটা, হ্যাঁ আমার মা, বলে উঠলো,
“রিজভী, দরজা খোলা-ই আছে বাবা।ভিতরে আয়।”
তারপর সারারাত মা আমার চুলে আঙুল বুলিয়ে দিলো।আর একটু পর পর বলছে,
“তুই না অনেক শক্ত একটা ছেলে।এত সহজে ভেঙ্গে পরলে চলে।আমি এখুনি প্রিয়াকে একটা ফোন করছি”।আমি বললাম, “না মা, তুমি ওকে একদম ফোন করছো না”।কিন্তু মা শুনলেন না, উঠে গেলেন বিছানা ছেড়ে।তারপর কাঁপা-কাঁপা হাতে ডায়েল ঘুরিয়ে ফোন করলেন প্রিয়াকে।
আমি শুধু তখন ভাবছিলাম যদি আমি বলি, মা আগামীকাল আমার জীবনের শেষদিন তাহলে আমার মা এখন ঠিক কি কি করবেন! শেষমেশ বলা হলো না সত্যটা।
সুপ্রিয় পাঠক, ঠিক এমনই ছিলো গতকাল রাতের স্বপ্নটা।
আমি রিজভী হাসান, সবার মঙ্গল কামনা করছি।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৯
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ।আপনার সাথে পরিচিত হয়ে আমারও ভালো লাগলো।
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪০
ইব্রাহীম আই কে বলেছেন: ভাই খুব রোমাঞ্চকর একটা স্বপ্ন দেখেছেন। হয়ত খুব বেশি কিছুনা একটা উপন্যাস প্রত্যাশা করছি আপনার থেকে। এই কাহিনীটা নিয়ে।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:২৬
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ।থিমটি নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা তো যায়-ই।আপনি যখন বললেন তখন অবশ্যই ভেবে দেখবো।শুভকামনা।
৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০৬
Ashfi Tuhin বলেছেন: চমৎকার।।
পড়ার মত আনন্দ পৃথিবীর কোথাও নেই।।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:২৭
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার সাথে সহমত ব্যক্ত করছি।
৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:০২
শায়মা বলেছেন: স্বপ্নটা মজার.....
তবে এই টাইপ ব্লু হ্যোয়েল বা মার্ডার ইন হেল টাইপ গেইম বা স্বপ্নে আর দু বছরের বাচ্চারাও ভুলবে না !
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১৭
মি. বিকেল বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি পরিষ্কার নয়।ঝেড়ে কাশলে ভালো হয়।ধন্যবাদ।
৫| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার চিন্তাশক্তি ভালো।
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১৭
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪৬
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার লেখা। স্বপ্নটা দারুণ। আপনার সাথে পরিচয় হয়নি। পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগলো।