নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যানভাস

৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:০৫




গল্পে আসো না তুমি, স্বপ্নে আসো।আর এজন্য তোমার মুখটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়, কৃত্রিম প্রজেকশন হলে হয়তো মুখটা স্পষ্ট করে দেখতে পারতাম, সে সৌভাগ্য হয়নি এখনো।তোমাকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে।এরপর রং তুলি দিয়ে আঁকি তোমার সাথে দেখা হওয়া স্বপ্নের সমস্ত রঙ আমার ক্যানভাসে।যদি কোনদিন বাস্তবে দেখা হয়ে যায় তো!
ব্যস! এটুকুই সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছি নিজেকে।

শেষ ক্যানভাসে এত লাল রঙয়ের ব্যবহার শেষে একটা ভয়ানক ছবি নিজেকে উপহার দিয়েছিলাম।তোমার চোখদুটো ফ্যাকাসে।ভীতু হরিণের মত চোখ নিয়ে সন্ধ্যায় কোন এক ল্যামপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে আছো।মাথা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে তা কপালে এসে জমা হয়েছে।হ্যাঁ, খুব সম্ভবত তুমি পালাচ্ছিলে।কিন্তু কেন? সেসব ঠিক মনে পড়ছে না।লম্বা চুলগুলো একটু পরপর গুছিয়ে পেছনে সরিয়ে দিচ্ছিলে যাতে দৌড়াতে কোন সমস্যা না হয়।

গত স্বপ্ন এমন বিশ্রী-ই ছিলো।খানিকসময় মন খারাপ করে থাকার পর তোমার শুভ্র চেহারায় লাল চিহ্ন নিয়ে আর ভাবতে ইচ্ছে করেনি।আচ্ছা, তুমি কি সেদিন পালাতে পেরেছিলে? না কি ওদের কাছে ধরাশয়ী হয়ে আছো? না কি এটা স্রেফ একটা স্বপ্ন?

তোমার মৃত্যুর কথা আমি এমনিতেও চিন্তা করতে পারি না।আসলে অবসাদ, প্রচণ্ড অবসাদে আমি বিচ্ছিন্ন একটা সত্তা।আমার এত ভাবাভাবিতে কাজ নেই।ইন্টারনেট দুনিয়াতে প্রবেশ করতেই দেখলাম, এই ছবিটির দাম উঠেছে এক হাজার ডলারে।চোখটা ছানাবড়া হয়ে গেলো।আমি কি এটা সত্যি দেখছি! আমার আঁকানো ছবি এই প্রথমবার কেউ এক হাজার ডলার দিয়ে কিনতে চেয়েছে! অবিশ্বাস্য!

সেদিন থেকেই নিজেকে উঁচু মানের শিল্পী বলে মনে হলো।ঝটপট ছবিটার আরো একটা কপি করে নিলাম।আর অর্ডারটা আমি গ্রহণ করেছি বলে আমি তাকে আমার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিলাম।যদিও আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে।যেমন- অনলাইনের প্রোডাক্টগুলো যারা কিনছে তাদের সাথে সরাসরি আমাদের টাকার সম্পর্ক, মানে ব্যবসার সম্পর্ক এবং এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক একটু গোপন রাখা হয়।হাজারো পেইন্টিং এর একটা বিশাল অন্তর্জাল এটা, স্রেফ কৃত্রিম কিছু আবেগ বিক্রি।নির্ভেজাল প্রোফেশনাল।তারপরেও, পেইন্টার চাইলে সে তার খরিদ্দারের অনুমতি সাপেক্ষে দেখা করতে পারবে।আর আমি তাই করলাম।

সপ্তাহ প্রায় শেষ, এক সন্ধ্যায়।
হাত খরচের জন্য চা খাওয়ার দশটাকা খুচরে আছে মনে হয়।বোকার মত কাজ হয়ে গেছে! বিলম্ব না করে সোল্ড আউট করে দেওয়ায় ভালো ছিলো।আজকাল বড্ডবেশি ভুলভাল কাজ করছি।

গরম চা, হাতে নিয়ে বসতেই একটা ফোন কল পেলাম।অচেনা নম্বর থেকে।দেরি না করে রিসিভ করলাম।

- জ্বী, রেহান বলছি...
- আমি প্রমিতা বলছিলাম।আপনার শহরে এসেছি গত দু’দিন আগে।একটু ব্যস্ত ছিলাম যে জন্য আপনার পেইন্টিংটা আর নেওয়া হয়নি।
- ইটস্ ওকে! মিসেস...
- না, ওটা মিস
- হ্যাঁ, মিস প্রমিতা।আপনি কেমন আছেন?
- ভালো আছি, তবে আপনি একটু শহরের দিকে আসতে পারবেন?
- এখুনি?
- হ্যাঁ, আমি আসলে আগামীকাল আবার ঢাকায় ফিরে যাবো।
- ওহ্ প্রমিতা, আপনি বরং শহর থেকে অল্প একটু দূরে এক চায়ের দোকানে আসুন।আমি যেতে পারছিনা।তাছাড়া আপনার পেইন্টিংটাও নিয়ে বাহিরে বের হইনি।
- কোথায়?
- আমি ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি।ফোন স্ক্রিনের গোগল ম্যাপ ধরে চলে আসুন।
- ওকে, আমি যাচ্ছি।

এই সন্ধ্যায় পেইন্টিংটা আরো ভয়াবহ সুন্দর লাগছে।আশা করছি উনার ভালো লাগবে।একটু বাদেই পাশে একটা রিক্সা দাঁড়ালো।আর তারপর যা ঘটলো এমন কিছুর জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।জ্যান্ত একটা মানুষের এমন বিভীষিকাময় পেইন্টিং আঁকিয়ে নিজের-ই লজ্জা করছে।হ্যাঁ, প্রমিতা হলো আমার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়েটা।গোছানো শাড়ি পরে সামনে হাঁটতেই পেইন্টিংটা দেখিয়ে ঈশারা করলাম।উনি বুঝতে পারলেন।তারপর উনার ঠোঁটে একটা হাসির তরঙ্গ বয়ে গেলো।

- শুভ সন্ধ্যা
- হ্যাঁ, শুভ সন্ধ্যা।চা খাবেন?
- কেন নয়? বলুন?
- আপনি কি চা খান?
- র’চা, চিনি কম এবং কড়া লিকার
- হ্যালো মামা, দুটো চা ধরেন তো।আচ্ছা, প্রমিতা, এমন নোংরা ঢোকের চায়ের দোকানে চা খেয়ে অভ্যেস আছে তো?
- না নেই
- তাহলে অন্য কোন জায়গায় যাই বরং?
- সেটারও দরকার নেই।চা এখানেই খাবো সাথে গল্পটাও এখানেই করতে চাই।
- কি গল্প?
- কাউকে না দেখেই তার ছবি আঁকানো যায়? যেমনটা আপনি এঁকেছেন।
- ঠিক জানিনা, মনের ক্যানভাসে অনেক রঙ খেলা করে, জানেন? কখন কোন রঙের সংমিশ্রনে একটা সুশ্রী অবকাঠামো তৈরি হয়ে যায় সেটা বলা দুরূহ।
- ভালোবাসেন?

প্রথমে মনে হয়েছিলো সত্যিটা বলে দেই।কিন্তু ভাবলাম সত্যিটা উনাকে হয়তো সুখে রাখবে না।তাই উত্তর মনের অজান্তেই পরিবর্তন হয়ে গেলো।

- জ্বী? কিছু বললেন?

প্রমিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে শুধু বললো, “নাহ্, তেমন কিছু না”।আমি বললাম, “আপনাকে এই ছবির জন্য কোন পেইমেন্ট দিতে হবে না, এটা রাখুন”।কিন্তু প্রমিতা সেটা করলো না।এরপর ম্যানিব্যাগ হাতড়াতে লাগলো, সেখানে ত্রিশ হাজার টাকার তিনটে বাণ্ডিল আমার সামনে এগিয়ে ধরলো।অনেক চেষ্টা করলাম নিজের সাথে, কিন্তু “না” করতে পারলাম না।

স্থির দাঁড়িয়ে দেখলাম প্রমিতার প্রস্থান, চোখে হালকা অভিমানের ছাপ।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:৪৩

বাকপ্রবাস বলেছেন: ভাল লেগেছে

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০২

ফয়সাল রকি বলেছেন: পেমেন্ট নিতে হয়, সেটা যে রুপেই হোক না কেনো!

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.