নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাক্ষর শব্দের গুরত্ব অনেক। এর মাধ্যমে দেনা-পাওনা যেমন জুড়ে যায়, ঠিক তেমনি সেই দেনা পাওনা চুকেও যায়। হোক সেটা সম্পর্ক বা সম্পদ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এবার আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন একটি দেনা-পাওনার হিসেব চুকাতে। (তালাক-ই-তৌফিজ) মুসলিম আইন অনুযায়ী হচ্ছে ব্যাপারটা। কিন্তু আবার আদালতে নোটিশ পাঠাবার কারণ আমার জানা নেই।
আর ঐ নোটিশটি এখন আমার হাতে। এখানে আমার একটা স্বাক্ষর লাগবে সমস্ত বিষয় রফাদফা করতে। তারপর কাজীর কাছে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বুঝি না! এত দীর্ঘ প্রক্রিয়া কেন? একটা স্বাক্ষর দিয়ে দেবো আর মুক্তি পেয়ে যাবো! ধূর!
সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারছি না যে, আমি কি এই স্বাক্ষরটা করতে পারবো?
রাত দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মাথার উপর বিদ্যুতের পাখাটা অনবরত ঘুরছে। তবুও ঘামছি। শহরের চারপাশে শব্দের ডেসিবল কমে আসছে।
আচ্ছা? রেণু কি সত্যিই চায় যে, এই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাক? দীর্ঘ পাঁচ বছরের সংসার অথচ এখানে একটা মাত্র সিগনেচার সবকিছুর ইতি টানতে চলেছে। ফাঁকা ফ্ল্যাট জানান দিচ্ছে রেণুর উর্বর ও উষ্ণ অনুপস্থিতি।
বন্ধু বলেছিলো, “তুই একজন ইনসিকিউর হ্যাজবেন্ড! বুঝলি? তোর সবখানে সমস্যা। স্নাপচ্যাট থেকে বর্তমানের টেলিগ্রামেও। আমার মাথায় আসে না এত ছেলে এই পৃথিবীতে থাকতে রেণু কেনো তোকে পছন্দ করলো?”
আমি চুপচাপ বন্ধু রেহানের কথাগুলো শুনছিলাম। বেশিরভাগ সময়েই বেকার বকবক করতে থাকে আমার সাথে। আমার যুক্তির একটা পাল্টা যুক্তি না দেখাতে পারলে তার যেনো দিনটা ভালো যায় না।
একসময় শান্ত হয়ে রেহান কে বললাম, “আচ্ছা, তোর এসব ভালো লাগে? ফেসবুক প্রোফাইলে এসে ওর ফটোতে এতগুলোন লাভ রিয়েক্ট? কি একটা অবস্থা! বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েও পুরো বিশ্ববিদ্যালয় মাথায় তুলে গান করতো, এত এত ফ্রেন্ড। হ্যাঁ, আমার ঈর্ষা হয়। মাথাটা তখন খারাপ হয়েছিলো, শেষ যেদিন ওর এক ফটোতে কেউ একজন লিখেছিলো, আমার রাজ্যের রাণী হবে? সময় সময় তো এটাও মনে হয়, রেণু কি আমার বউ? না কি আস্ত একটা ইন্সুইরেন্স কোম্পানি? মানে যে কেউ তার একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে”।
কিন্তু বুঝতে পারছি না, বুঝতে পারছি না স্বাক্ষর দিতে এত সময় কেন লাগছে আমার! আমি এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই। একেবারে ওর সাথে জোড়া পুরোপুরি দায়ভার থেকে।
রেণু তো সেদিনও সুন্দরী ছিলো যেদিন ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো। খুব সম্ভবত অত মিষ্টি করে আমার সাথে আজ পর্যন্ত কেউ কথা বলেনি।
- সো, ইউ আর সুরিয়া, রাইট?
- নাহ্! বাংলায় ওটা সূর্য হয়।
- দুঃখিত! আমি রেণু।
তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো আমার সাথে হ্যান্ডশেক করবার জন্য। চোখে মুখে মিষ্টি হাসি। ওদিকে আমি আমার কেডস্ জোড়ার ফিতে লাগিয়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম শ্যামলা বর্ণের এক মেয়ের ওপর হালকা সকালের সূর্যের কিরণ ঢেউ খেলে যাচ্ছে। অনেকটা জলছবির মতন।
রেণু : হুম, এভাবে তাকিয়ে থাকলে আজকের প্রথম ক্লাসটা মিস হয়ে যাবে মি. সূর্য।
সূর্য : ঠিকাছে, নিয়ম বদলানো গেলো। আমি সুরিয়া, হ্যালো…
রেণু : রেণু
সূর্য : কোন বিভাগ?
রেণু : বাংলা বিভাগ
সূর্য : কিন্তু ইংরেজিতে প্রথম পরিচয় একটু বেমানান হয়ে গেলো না? রেণু?
রেণু : নাহ্! তুমি তো পড় ইংরেজি বিভাগে তাই তোমার মত চিন্তা করছিলাম।
সূর্য : তাহলে কেমন হয় আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের তোমার প্রথম ক্লাস তুমি যদি করতে চাও তো?
রেণু : নিশ্চয়, খারাপ হয় না।
রেণু তখন মাত্র প্রথম বর্ষে। আমি দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম। তারপর আমরা করিম স্যারের ক্লাস করছিলাম। একসাথে পাশপাশি বসা আমাদেরকে দেখে তিনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতেন। কিন্তু মনে হলো, এতে তার কিছুই এসে বা গেল না। তিনি তার মত ইডিপাস কমপ্লেক্স দিয়ে ক্লাস শুরু করলেন।
সেদিন রেণুর অবস্থা দেখার মতন ছিলো। কপাল ঘর্মাক্ত, আস্তে আস্তে গাল বেয়ে ঘাম যেন চুয়ে পড়ছে। একটুপর তো বাধ্য হয়ে স্যারকেই বললো, “এ কেমন সাহিত্য! মায়ের সাথে ছেলের সেক্স! আবার তারও বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে!”
স্যার মুচকি মুচকি হাসছিলেন। একটুপর স্যার রেণু কে বললেন, “আপনি কোন বিভাগ থেকে?”
রেণু অবাক হয়ে গেলো স্যারের এই পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দেখে। তিনি তো প্রথাবিরোধী লোক ছিলেন। উপস্থিতির পার্সেন্টেজ নিয়ে জোর করে কাউকে তিনি তার ক্লাসে হাজির হতে বাধ্য করতেন না।
রেণু এবার বেশ ভয়ে ভয়ে, “স্যার! আমি রেণু। বাংলা বিভাগ থেকে”।
স্যার সেদিন টেক্সটের ব্যাখ্যা না দিয়ে চলে গেলেন ভিন্ন প্রসঙ্গে। তারও আগে বইটা উল্টো করে টেবিলে রাখলেন। তিনি ক্লাসে পায়চারি করতে লাগলেন আর কিছু কথা বলছিলেন।
“তেলাপোকা ৪০ দিন পর্যন্ত না খেয়েও বাঁচতে পারে, আর মানুষ সেখানে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দিন। আর গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করার আগে একটা সাইন বোর্ড দেখা যায় ওখানে ইংরেজিতে লেখা থাকে ডেঞ্জার জোন। পাশাপাশি একটা ক্রস চিহ্ন দেওয়া থাকে। কেন? তুমি জানো রেণু?”
রেণু : স্যার! মাফ করবেন, আপনি কি বলছেন তার কিছুই বুঝতে পারছি না।
স্যার : ঠিক তাই। এমন ভাবেই তুমি ইডিপাস কমপ্লেক্স টেক্সট বুঝতে পারছো না। কারণ ঐ ক্রস চিহ্ন দিয়ে যে কোনো ভাষাভাষীকে বুঝানো যায় যে, আর এক পাও এগোনো যাবে না। আমরা সবসময় আমাদের কমফোর্টেবল অঞ্চলে থাকতে চাই… সেটা আমি, তুমি এমনকি তোমার পাশে বসা নাট্যব্যক্তিত্ব যে তোমায় এখানে নিয়ে এসেছে।
এরপর রেণু আর কখনো সাহস পায়নি আমার সাথে ইংরেজি বিভাগের ক্লাসে বসতে। ব্রিটিশদের প্রতি তার চরম বিদ্বেষ। সেটাও একটা কারণ হতে পারে।
কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রেমটা হলো, মঞ্চ নাটকেও আমি তখন সবাইকে মাতিয়ে তুলেছিলাম আমার অভিনয়ে। একসাথে রিক্সায় শহর ঘুরেছি হাতে হাত রেখে। ডিজিটাল দেশ, শতাধিক সেলফি তুলে গোগল ফটোস কে জানিয়ে দিয়েছিলাম এসব সংরক্ষণ করতে তাদের আলাদা হার্ডডিস্কের প্রয়োজন পড়তে পারে।
অন্যদিকে রেণুও প্রমিজিং গায়িকা আমাদের ক্যাম্পাসে। ওর গান মানেই জমজমাট কিছু। কিন্তু ভিতরে ভিতরে দুজনের প্রতি আগ্রহ কিছুটা কমে আসে। এক পর্যায়ে প্রায় নাই হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে বুঝতে পারি, সামনের দিনে পাশাপাশি হাঁটার মত কেউ থাকলো কি তবে!
হ্যাঁ, রেণুরও এমনটাই মনে হয়েছিলো। কারণ, আজীবন তো কিছুই থাকে না। সেখানে ক্ষুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গ্লামার বেশিদিন টিকসই হলো না। পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষে দুজনেই একটি ব্যাংকে জয়েন করি। এখানকার এই বাস্তবধর্মী জীবনের সাথে ফেলে আসা ক্যাম্পাস জীবনের বিশাল তফাৎ।
খুব সম্ভবত আমাদের প্রগতিশীল ও মুক্তমনা প্রকৃতির ধরে নিত যে কেউ। কিন্তু কর্মজীবনে এসে বুঝলাম আমরা কত সংকীর্ণমনা। ছোট ছোট বিষয়ে ঝগড়া হতে শুরু হলো। শেষমেশ এই নোটিশ পাবো বলে ভাবিনি। দুইজনের জেদ আর ব্যক্তি পরিচয়ের গর্বে আজ সম্পর্ক হুমকির মুখে।
এসব স্মৃতি বারবার রিভিশন দিতে দিতে চোখে জল চলে আসলো। রেণু নয় তবে কে? বা রেণুর বিকল্প! আদতে নেই তো। জীবনে প্রথমবারের মত প্রচন্ড নিজেকে একা মনে হলো। হাত থেকে রেণুর দেওয়া জেলপেন মেঝেতে পড়ে গেল, সাথে সাথে আমারও দু’চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসলো। জলের গ্লাস ভাঙার শব্দ কানে এলো। টের পেলাম আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।
ছবি : সংগৃহিত
২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০৭
মি. বিকেল বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই ছবিটির ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য ছিলো না।
২| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৪১
রানার ব্লগ বলেছেন: মাঝে মাঝে ছেড়ে যাওয়া ভালো এতে জীবনের চাকা থেমে থাকে না নতুন উদ্যমে চলার স্পৃহা পায়।
২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০৮
মি. বিকেল বলেছেন: আপনি হয়তো ঠিক বলেছেন।
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৩| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:৩৬
শেরজা তপন বলেছেন: প্রথমটা হোল মোহ আর শেষেরটা বাস্তবতা
প্রেম করে বিয়ে করার এই একটা বড় সমস্যা
২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১০
মি. বিকেল বলেছেন: গল্প হিসেবে সেটাই, তাছাড়া বাস্তব উপলব্ধিও তাই বলে।
মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৪৮
আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: বিয়ে করা সহজ, টিকিয়ে রাখা কঠিন। প্রতিটা দিন প্রতিটা আচরন খেয়াল রাখতে হয় যেন জীবনসঙ্গী(নী)র সাথে ঝামেলা না হয়। মহা ঝামেলার বিষয়
২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১১
মি. বিকেল বলেছেন: আমি এখনো অবিবাবিত। অনুগ্রহ করে এমন ভয় দেখাবেন না। তাহলে বিয়েতে উৎসাহ পাবো না।
যাইহোক, ধন্যবাদ।
৫| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।
রেনুকেও ভালো লেগেছে।
২৫ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১২
মি. বিকেল বলেছেন: আপনি সবসময় আমার ব্লগ পড়েন, এটা আমার ভালোলাগা।
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানবেন।
৬| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: প্রেম করার সময় মানে প্রেমিক-প্রেমিকা থাকাকালীন সবই ভাল লাগে এবং উভয়ের প্রতি উভয়ের অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে এবং যে কোন খারাপ অভ্যাসকেও তখন প্রতিভা বা ব্যতিক্রম বলে নয়। আর সেই মনের এমন অবস্থা হয় "রাস্তার নেড়ি কুকুরকে ও আদর করতে ইচছা করে এবং কাকের কর্কশ সুরকেও সুমধুর " মনে হয়।
আর প্রেমের বেদনাদায়ক (যদিও বিবাহকে প্রেমের চূড়ান্ত সাফল্য বলে মনে করা হয় তবে বাস্তবতা ভিন্ন ) সমাপ্তির পর একের মাঝে অন্যে তখন " রাস্তার নেড়ি কুকুর এবং কাকের কর্কশ সুরকে " আবিষ্কার করে থাকে । আর এত সব হ্যাপা সামিলয়ে যারা চোখ-নাক-কান বুঝে সংসার নামক কারাগারে দিনাতিপাত করতে পারে তারাই দিনশেষে সফল দম্পতি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
আর যারা তা পারেনা (প্রত্যাশা ভংগের বেদনায় যারা অধিক এবং সবসময় কাতর হয়ে পড়ে) তারা তার থেকে মুক্তি খুজে তালাক নামক আরেক বেদনাদায়ক পদ্ধতির মাঝে।আর এ যেন অনেকটা শখের করাতের মত। সংসারেও (মিলে-মিশে থেকে) শান্তি মিলেনা আর তালাক দিয়েও শান্তি (ম্যাডাম) কে খুজে পাওয়া যায়না।
মানব জীবন !!! আহা বড়ই অম্ল-মধুর (চুকা-মিঠা)জীবন।
০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:২০
মি. বিকেল বলেছেন: Speechless... I just love this comment. Thanks a lot.
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৩১
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ছবিটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের। এবং কার্জন হলের। ছবিটি দেখলে ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের বলে ভ্রম হতে পারে। কারন ভূতত্ত্ব বিভাগটি একটি এল শেপ অবকাঠানো্। যাইহোক বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মনে পড়ে গেল। আপনার ছবি দেখে।