নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অতি সাধারণ। তাই সাধারণের মাঝেই ডুবে থাকতে ভালোবাসি।

মি. বিকেল

লেখক ও অভিনেতা

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

“পাওয়ার অব হ্যাবিট” বই রিভিউ – চার্লস ডুহিগ

২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৩



অভ্যাস আসলে কী? আপনি আপনার অভ্যাস কীভাবে বদলাতে পারবেন? কীভাবে আমাদের অভ্যাস আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করবে? না কি আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে? Charles Duhigg –এর লেখা বই The Power of Habit (২০১২) –এ আমাদের অভ্যাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এই বইটি বিশ্বজুড়ে সেরা বই সমূহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

আজ আমি এই বইটি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করতে যাচ্ছি। হয়তো আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বদলাতে পারবো না কিন্তু আমাদের অভ্যাস তো বদলাতে পারবো। আর সেটাই বা কম কীসে! এ বিষয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালাম কালাম সাহেব বলেছেন,

“YOU CANNOT CHANGE YOUR FUTURE, YOU CAN CHANGE YOUR HABITS. AND SURELY YOUR HABITS WILL CHANGE YOUR FUTURE” ― DR. ABDUL KALAM

তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের অভ্যাস পরিবর্তনপূর্বক আমরা ব্যক্তি জীবনে যা চাই ঠিক তাই পেতে পারি? সেজন্য এই বইটি পড়তে হবে। আমি চেষ্টা করছি এই বই সম্পর্কে লেখকের আমাদের কিছু অভ্যাস নিয়ে যে চিন্তাভাবনা তা নিয়ে আলোচনা করার।


“পাওয়ার অব হ্যাবিট” বই রিভিউ
দেরি না করে শুরু করা যাক, The Power of Habit (২০১২) বইটিতে লেখক ৩টি ধাপের কথা আমাদের বলেছেন।

প্রথম ধাপ: রুটিন ও পুরস্কার
দ্বিতীয় ধাপ: প্রাত্যাহিক রুটিন
তৃতীয় ধাপ: স্ব-ইচ্ছা/ইচ্ছাশক্তি (উইল পাওয়ার)

এই তিনটি ধাপের মধ্যে তৃতীয় ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি আমাদের কোন কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে খুব সহজেই আমরা সেটা কে আমাদের ব্যক্তিজীবনে প্রতিস্থাপন করতে পারবো এবং আমাদের অভ্যাস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাবে।

অভ্যাস মূলত কী?
অভ্যাস হচ্ছে যে কাজগুলো আমরা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি সেসব বিষয়। শুধু তাই নয় সেসব বিষয় বা কাজ করার জন্য এক ধরণের আসক্তি আমাদের মনে জন্মায়। আর সমস্ত জরুরী কাজ রেখে সেই সব কাজে ব্যস্ত থাকতে আমাদের মন আমাদের বাধ্য করে। আবার অভ্যাস বলতেই যে খারাপ কিছু কে বোঝায় তা কিন্তু একেবারেই নয়। কিছু অভ্যাস ভালো হতে পারে। ঠিক তেমনি কিছু অভ্যাস খারাপও হতে পারে। আর এই খারাপ অভ্যাস কে বদলানোও যেতে পারে।

আমাদের সাথে যেটাই ঘটুক না কেন সেটা মূলত আমাদের অভ্যাসের কারণেই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের ১৬ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ৫ ঘন্টা এমন কিছু কাজে ব্যয় করেন যা অদৌ কোন কাজের মধ্যেই পড়ে না। আর এতে করে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লেখক তিনি তার বইতে আবিষ্কার করে দেখিয়েছেন অনর্থক কাজে সময় নষ্ট হওয়া সম্পর্কে।

তিনি তার বই The Power of Habit (২০১২) –তে উল্লেখ করেছেন, অভ্যাস তখনই হয় যখন কোন কাজের প্রতি আমাদের নেশা তৈরি হয়ে যায় অথবা উক্ত কাজের প্রতি আমাদের এক ধরণের সন্তুষ্টি মিলে যায় যাকে আবার ভিন্ন শব্দে রিওয়ার্ড বলছেন তিনি।

আবার এমন কিছু কাজ আছে যেসব কাজ আমাদের জন্য জরুরী। তাই আমরা নিয়মিত সেসব কাজ করতে থাকি। একটা সময় পর সে কাজগুলো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। এখন যেসব কাজ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তখন আমাদের মস্তিষ্ক মাত্র দুইবার কাজ করে

১. উক্ত কাজ শুরুর আগে
২. উক্ত কাজ শেষ করবার পর

কিন্তু যখন আমার সে কাজ করছিলাম তখন আমাদের মনে এক ধরণের আনন্দ অনুভূত হতে থাকে। যার ফলে যে সময়টা নষ্ট হয়ে গেছে সে সম্পর্কে আমাদের খেয়াল থাকে না। তখন আমরা এটা ভেবে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হতে থাকি যে, আমি এটা কেন করলাম? কিন্তু এই অনুতপ্ত হওয়াটা বেশিদিন টিকে না। ফলে ঐ একই কাজ আমরা পরেরদিন আবার করতে থাকি এবং পুনরায় নিজেকে দোষারোপ করতে থাকি। এখন এই অভ্যাস ত্যাগ করা মুশকিল হয়ে যায় আমাদের জন্য।

উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, আপনি খুব সকালে উঠে এক কাপ চা পান করে থাকেন। যেটা আসলে স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয়। কিন্তু আপনার এতে একরকম আনন্দ অনুভূত হয়। তাই আপনি এই কাজটির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকেন ফলে একসময় সকালে এক কাপ চা না খেলে আপনার যেন চলেই না।

আর এটাই একসময় ভংকর অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে আপনি এই কাজ নিয়মিত করতে থাকেন। এমনকি এই কাজ আপনার ডেইলি রুটিনে চলে আসে। আপনার চায়ের স্বাদ ও গন্ধ ভালো লাগতে শুরু করে। আর প্রত্যেকদিন আপনি চান বা না চান আপনার মনে আসতে থাকে যে, আপনার সকালে চা খেতে হবে। এখন যেখানে আপনি এক কাপ চা খেতেন তা বাড়তে বাড়তে দুই বা তিনকাপ হয়ে যেতে পারে। সিগারেটের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক এমনই। নষ্ট হয় স্বাস্থ্য ও সময়।

কিন্তু আপনি এসব থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। প্রথমেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে, আমার এই দৈনন্দিন কাজের জন্য কি কি ক্ষতি হচ্ছে? এবং তার পূর্ণ একটি তালিকা। এখন যখনই আপনি কোন খারাপ বা বাজে অভ্যাসে পড়তে যাচ্ছেন তখন আপনাকে সেটার লাভ-ক্ষতি বিচার করতে হবে।

শুধু তাই নয়, এই অভ্যাস আপনার ভবিষ্যতে কি ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে সে সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। খারাপ বা বাজে অভ্যাস আপনাকে ক্রমান্বয়ে খারাপ দিকে নিয়ে যেতে থাকবে। একসময় আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে পাবেন।


এখন খারাপ অভ্যাস থেকে বের হবেন কি করে?
কারণ কোন অভ্যাস কে তাৎক্ষণিক হটানো যায় না। তার জন্য সময় লাগে। শুধু তাই নয় সেজন্য শক্ত উইল পাওয়ার লাগে। নিজ ইচ্ছাশক্তি ছাড়া আমরা কোন খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্তি পাবো না। সেজন্য ধীরে ধীরে আমাদের সামনে এগোতে হবে। যেমন ধরুন, আজ আপনি যদি ১০টি সিগারেট পান করে থাকেন তাহলে পরের দিন চেষ্টা করুন ৮-৯টা পান করার। এভাবে ক্রমান্বয়ে আপনি আপনার বাজে অভ্যাসটুকু দূর করতে পারবেন।

এজন্য আপনার বেশ কিছুদিন সময় লেগে যাবে। ঠিকাছে, লাগতে দিন কিন্তু মনে বিশ্বাস রাখুন আপনি পারবেন। যাইহোক, এরপর লেখক জোর দিয়েছেন আমাদের উইল পাওয়ার (Will Power) –এর উপর। লেখক বলছেন, যদি আপনার ইচ্ছাশক্তি বেশ স্ট্রং হয় তাহলে আপনি আপনার বাজে অভ্যাস থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। শুধু অভ্যাস-ই নয়, জীবনে যে কোন মুশকিল কাজে সফল হতে গেলে আপনার উইল পাওয়ার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।


কিন্তু স্ট্রং উইল পাওয়ার (Strong Will Power) পাবেন কীভাবে?
দেখুন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন তো অনেক দেখা যায়। নিজেকে নিয়ে অনেক বড় বড় চিন্তাও করা যায়। কিন্তু কাজের বেলায় ঠনঠনাঠন হলে আপনার স্বপ্ন বাস্তবতায় রুপ নেবে কি করে। তাই লেখক বলছেন, “আপনার সমস্ত শক্তি আপনার কাজে লাগিয়ে দিন, দেখবেন আপনি সফল হয়েছেন। শুধু তাই নয় নয় আপনার স্ট্রং উইল পাওয়ার –ও তৈরি হয়ে গেছে।”

তবে প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কোন নির্দিষ্ট কাজ আপনাকে কেন করতে হবে? আর সেই কাজ করার ফলে আপনার জীবনে কি পরিবর্তন আসবে? আপনার ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে? কেন ঐ নির্দিষ্ট কাজটি আপনার জন্য জরুরী? এই সব প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে আপনার নিশানা। বদলে যেতে পারে আপনার জীবনের প্রত্যহ দিনের রুটিন।

পাশাপাশি সেই সব অভ্যাস নিজের মধ্যে প্রতিস্থাপন করতে পারবেন, যা আপনার ইচ্ছে বা স্বপ্ন এবং এমন অভ্যাস নিজের মধ্যে গ্রথিত করুন যা আপনাকে ভালো ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়।


পরিশেষ
এই ছিলো মোটামুটি Charles Duhigg –এর লেখা বই The Power of Habit (২০১২) –এর সারসংক্ষেপ। আশা করছি আপনার ভালো লেগেছে। মন্তব্যে আপনার মতামত আমাকে লেখায় উৎসাহিত করে। সুতরাং মন খুলে আপনার মতামত লিখুন মন্তব্য সেকশনে। ধন্যবাদ।


- মেহেদি হাসান(Mehedi Hasan)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২০

রাজীব নুর বলেছেন: এই বই পড়বে স্কুলের বাচ্চারা।

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৩৮

শায়মা বলেছেন: ভেরী গুড।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২৬

মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.